আমাদের রাজনীতিতে নব সম্ভাবনার দীগন্ত উম্মুচিত হউক নতুন রাষ্ট্রপতির শপথের মাধ্যমে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৫২:২৮ দুপুর

আমাদের সাবেক স্পিকার ও নব রাষ্ট্রপতির কয়েকটি কথা আমাকে অনুপ্রানিত করেছে যে,তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছিলেন তার দীর্ঘ সংসদ জীবনের কর্মময় জীবনের কথা আর সাহায্য ছেয়েছেন যারা এর আগে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।এই কথাগুলো তার মর্যাদাকে যে উঁচু করেছে তা নয় অনেক পাঠককে আশার বানিও তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন।আমরা আশা করবো তিনি তার বাকি জীবন জন জীবনের জন্য ন্যায়নিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবেন।আমাদের গোটা জাতি আজ অপেক্ষা করছে মহান মানুষদের সংস্পর্ষের।যারা কথায় নয় কাজে এগিয়ে নিয়ে যাবে।আমরা সুন্দর কথা শুনতে শুনতে অস্হির হয়ে পড়েছি।কোন নেতৃত্বই আমাদের সাধারন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে আসতে পারেনি।কবি বলেছিলেন,আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে,কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।

আমাদের সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতিদ্বন্দি মনভাবের কারনে বাংলাদেশের অবস্হান এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হছ্ছে।সামাজিক অবস্হা গত কয়েকমাসে এত নিম্নগামি হয়েছে যে এখন জাতি দিন দিন বিভক্তির দিকে যাছ্ছে। সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে অনাস্থা ও অসহিষ্ণুতার কারণে সংসদীয় গণতন্ত্র তার প্রত্যাশা পূরণে যেমন ব্যর্থ হয়েছে তেমনি দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের জাঁতাকলে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাও নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে।কোথায়ও কোন শৃংখলা নেই।চেইন ওফ কমান্ড মনে হছ্ছে ভেংগে যাছ্ছে আর প্রশাসন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হছ্ছে যার ফলে তারা জাতির নিরাপত্বা দিতে ব্যার্থ হছ্ছে।একটা স্বাধীন দেশে এ রকম নৈরাজ্যকর অবস্হা মেনে নেয়া যায় না।আমরা যারা সামান্য চিন্তাশীল তারা ও বিভক্ত হয়ে পড়েছি।আমাদের বুদ্ধি বিবেক এতই লোপ পাছ্ছে যে আমরা ভাল কথাগুলো সরকার ও সমাজের কাছে পৌঁছাতে ব্যার্থ হছ্ছি।একটা সভ্য সমাজে কি করে মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে।এই যে গত কয়েকমাস ধরে মানুষগুলো চলে গেল তারা তো আমাদেরই মুসলিম ভাই।আমাদের সহিষ্নুতা নেই , একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, দেশের সম্পদ রক্ষার প্রতি কোন আগ্রহ নেই তাহলে গনতন্ত্রের চর্চাই তো নেই।ইসলামের চর্চা তো আরো ব্যাপক।সমাজে সাধারন যে বসবাস তার কিছু নিয়ম নীতিও যদি আমরা পালন করতাম তাহলে কি সমাজে কেউ অবহেলিত হতো? একে অন্যকে ভালবাসা,একে অন্যের সুখ দু:খে খোজখবর নেয়া,কোন অন্যায়ের চিন্তা না করা।অন্তত আমি যদি এভাবে চিন্তা করি যে,কারো উপকার নাই বা করতে পারলাম কারো ক্ষতি করবোনা।তাহলেওতো সমাজ সুন্দর হয়ে যাওয়ার কথা।আল্লাহ পাক সৃষ্টিগতভাবে পরীক্ষা করার জন্য সমাজে ধনী গরিবের সৃষ্টি করছেন।ধনী ব্যাক্তি যেমন তার সম্পদের সুসমবন্টনের মাধ্যমে ধৈর্যধারন করবেন তেমনি একজন গরীবকেও তার রবের প্রতি ধৈর্যধারন করতে হবে।আর ইসলামে এজন্যই যাকাত ব্যাবস্হা গ্রহন করা হয়েছে যেন ধনীর মাল গরীবের মধ্যে বন্টন হয়ে গরীবরা ধনীদের কাতারে চলে আসে।এ ব্যাবস্হাটি সমাজে কার্যকর নাথাকায় বন্চিতদের অবস্হান দিন দিন বৃদ্ধি পাছ্ছে আর তার বিস্ফোরন আমরা পৃথিবিব্যাপী লক্ষ্য করছি।

মানবরচিত বিধানের সব শাসকরাই কম বেশী ব্যার্থ হয়েছে সমাজ বিনির্মানে।আমাদের স্বাধীনতার চারদশক অতিক্রান্ত হওয়ার পর সে জাতির নাগরিকদের মানবিক অধিকারসমূহ এভাবে ব্যাহত ভূ-লুণ্ঠিত হতে পারে না। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও-না-কোথাও সাধারণ মানুষের লাশ পড়ছে। কখনো নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে, কখনো রাজনৈতিক সহিংসতার তা-বে, কখনো অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের পরিকল্পিত নাশকতায় বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা। অনেক সম্ভাবনা সত্ত্বেও এখনো বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর তালিকার নিম্নস্তরেই ঠাঁই পাচ্ছে বাংলাদেশ, এখনো দেশের বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে, এখনো আমরা মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। এহেন বাস্তবতাকে সামনে রেখেই আমাদের সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন আগামী দশকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে ২০২১ সালে একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপরেখা জনগণের সামনে মেলে ধরছেন, ঠিক তখন তাদেরই খামখেয়ালিপনা ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের কারণে এক অভাবনীয় অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।হিংসা, অনৈক্য, বিভাজন ও নানা চড়াই-উৎরাই, ঘাত-প্রতিঘাত ডিঙ্গিয়ে ঐক্য, সম্ভাবনার পথে এগিয়ে চলাই সভ্যতার ইতিহাস। দেশের প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় যখন নানাবিধ অসঙ্গতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, রাষ্ট্র ও সরকার যখন ব্যর্থ হয়, তখন দেশের সাধারণ মানুষ নতুন শক্তির জন্য উদগ্রীব থাকেন এবং কখনো কখনো সাধারণ জনগণ নিজেরাই নতুন শক্তির জন্ম দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতার কারণে জনগণের কাংখিত বিকল্প শক্তির উন্মেষে নাগরিক সমাজের ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের চলমান বাস্তবতায় রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর মত দেশের নাগরিক সমাজও স্পষ্টত দুইটি শিবিরে বিভাজিত হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা ও অনিশ্চয়তার কবলে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক অস্বস্তিকর নাভিঃশ্বাস অবস্থায় শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগারদের ইসলাম বিদ্বেষী অপপ্রচারে প্রথমবারের মতো দেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে ফুঁসে উঠতে দেখেছি আমরা। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান ও আন্দোলন যখন ইসলাম বিদ্বেষী মোড়ক লাভ করেছে এবং সরকারের প্রভাবশালী মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন লাভ করেছে, তখন দেশের ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতাও ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হয়ে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে একটি অভাবনীয় শক্তির উন্মেষ ঘটিয়েছে।

হঠাৎ করে গত ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকামুখী লংমার্চে জনতার যে মহাপ্লাবন দেখা গেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে তা ব্যতিক্রমী ঘটনা। সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আয়োজনে গত অর্ধ শতাব্দীতে ঢাকায় অনেক মহাসমাবেশ হয়েছে। কিন্তু এত প্রতিবন্ধকতা ও হুমকি উপেক্ষা করে শত শত কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে অরাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর এত বড় মহাসমাবেশে সমবেত হওয়ার ঘটনা বিরল। সরকারের পক্ষ থেকে বাধা বিপত্তি ও নানা আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠার পর হেফাজতের মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছিল এবং তাদের দেয়া ১৩ দফা দাবি গুরুত্বের সাথে বিবেচনার আশ্বাসের মধ্যদিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করা হয়েছিল। তবে হেফাজতের লংমার্চ মহাসমাবেশের একদিন পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছিলেন হেফাজতের দাবি বাংলার মানুষ কোনদিন মেনে নেবে না।জনাব আশরাফুল সাহেব একটা সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করে ও একটা মহান দায়িত্ব পালন করে কি করে বললেন হেফাযত লেংগুর উঠিয়ে চলে গেছে।এতে তিনি একজন রাজনৈতিক নেতার প্রজ্গার পরিচয় দিতে ব্যার্থ হয়েছেন।আবার মেনন সাহেব বলেছেন হেফাজতের ১৩টি নীতি মেনে নিলে দেশ ১৩ বছর পিছিয়ে যাবে।দেশের জন গন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে সম্মানজনক কথা আশা করে।এ ধরনের নেতাগন চিরন্তন জীবন লাভ করতে পারেন না। একটা সময় পর লোকজন তাদের ভুলে যাবে এটাই স্বাভাবিক।এরপর দেশের অন্য যে কোন রাজনৈতিক ইস্যুর মতো হেফাজতে ইসলামের এই ইস্যুগুলোও ইতোমধ্যে নানাভাবে অপব্যাখ্যার শিকার হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন সময়ে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে ১৩ দফার পক্ষে রাউন্ড টেবিল ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন ও বিভ্রান্তি নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরিকল্পিত অপপ্রচার বন্ধ হয়নি।প্রকৃতপক্ষে হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো কোন বিপ্লবী দাবি নয়, এ কারণেই সরকারি দলের মধ্যেই এসব দাবির পক্ষে-বিপক্ষে ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া গেছে। তাদের অন্যতম দফা নাস্তিক-ব্লগারদের শাস্তির দাবির প্রতি বাহ্যিকভাবে সরকারের কোন দ্বিমত নেই, ইতিমধ্যে কয়েকজন ধর্মবিদ্বেষী ব্লগারকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে তাই প্রতীয়মান হয়। প্রথম দফা ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ সংবিধানে পুনঃ প্রতিষ্ঠার যে দাবি মানে হচ্ছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে এই শব্দবন্ধ আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাসূল প্রেমিক ধর্মপ্রাণ মানুষের উপর পুলিশি নির্যাতন ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ বন্ধ করা, আলেম-ওলামাদের অযথা হয়রানি বন্ধ করে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেয়া, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কর্মকান্ড পরিচালনায় বাধাবিপত্তি দূর করা, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, ব্যভিচার ও বিজাতীয় সংস্কৃতি বন্ধের দাবি, দাড়ি-টুপিওয়ালা ধার্মিক লোকদের নিয়ে গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ধর্মবিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার তৎপরতা বন্ধের দাবি ইত্যাদি দাবিগুলোর কোনটিকেই অযৌক্তিক প্রমাণের সুযোগ নেই।

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির কোথাও নারী প্রগতি বিরোধী বা নারীদের কর্মক্ষেত্র থেকে বিরত রাখার কোন শব্দ না থাকলেও বাম রাজনীতিকদের মদদপুষ্ট এক শ্রেণীর এনজিও মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের একটি অংশ দেশের কর্মজীবী নারী শ্রমিকদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও এ ব্যাপারে পড়াশুনা না করে বামদের পক্ষে কথা বলেছেন। শাহবাগের নাস্তিক ব্লগারদের প্রচ্ছন্ন সমর্থক, তথাকথিত প্রগতিশীলতার ধ্বজাধারী নাগরিক সমাজের চিহ্নিত সদস্যরা যখন ইসলামের অনুশাসনকে প্রকারান্তরে মধ্যযুগীয় বলে চিৎকার করছেন, ঠিক তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী মদিনা সনদ অনুসারে দেশ চলবে বলে হঠাৎ ঘোষণা করলেন। হেফাজতে ইসলামের দাবির বিরুদ্ধে বিষোদগারে তাদের উচ্চকণ্ঠ শোনা গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর ক্ষীণকণ্ঠেও তাদের কোন প্রতিবাদ বা প্রতিক্রিয়া শোনা যায়নি।একদিকে ইসলামবিদ্বেষীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দান, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সংবিধান থেকে ইসলামী মূল্যবোধের অপসারণ অন্যদিকে মদিনা সনদের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি ও ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এক ধরনের স্ববিরোধিতা হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে যে যাই বলুন, বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে ইসলাম যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তা আবারো প্রমাণিত হলো।এটি নবী সা: হতে একটি দলিল যার ভিত্তিতে মু'মিন,কুরাইশ ও মদিনার গোত্রভুক্ত মুসলিম এবং যারা তাদের অনুসারি কিংবা তাদের সাথে কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ,তাদের সকলের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারিত হয়।তারা সকলে মিলে এক জাতি গোষ্ঠি ও একটি উম্মাহ হিসাবে পরিগনিত।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের শরিক বাম রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক নাগরিক সমাজের ব্যাপক অপপ্রচার সত্ত্বেও এবং হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের পর দেশের শাসক রাজনৈতিকদলগুলোর মধ্যে এই বাস্তবতা নতুনভাবে উপলব্ধ হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। তারা যখন হেফাজতে ইসলামের যৌক্তিক ও সাধারণ দাবিগুলোকে মধ্যযুগীয়, দেশের অর্থনীতি ও নারী প্রগতির অন্তরায় বলে আখ্যায়িত করছেন তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘দেশ চলবে মদিনা সনদের ভিত্তিতে।’সমাজে রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐক্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে মদিনা সনদই সম্ভবত সবচেয়ে প্রাচীনতম সামাজিক-রাজনৈতিক চার্টার। এটি বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবেও স্বীকৃত। মদিনা চার্টারের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, পরস্পরের প্রতি হিংসা-হানাহানি, রক্তপাত ও উৎখাতের রাজনীতির বদলে সকল মতপার্থক্য সত্ত্বেও মুসলমান, ইহুদি, খ্রিস্টানদের নিজ নিজ ধর্মীয় আত্মপরিচয় অক্ষুন্ন রেখেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করার নিশ্চয়তা। পশ্চিমা দুনিয়া নিজেদেরকে মানবাধিকার রক্ষার প্রবক্তা হিসেবে দাবি করলেও ইউরোপ-আমেরিকায় মানবাধিকার ও উদারনৈতিক রাজনীতি প্রর্বতনের বহু আগে ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনা সনদ তথা প্রথম ইসলামিক সংবিধান এবং বিদায় হজের ভাষণে সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা উচ্চারিত হয়েছিল সপ্তম শতকে (৬২২ খ্রি.) ইসলামের নবী যখন মদিনা সনদ ঘোষণা করেন তখন চার্চ ও সামন্তবাদের কঠোর অনুশাসনে পশ্চিমা সমাজ শৃঙ্খলিত ছিল। মদিনা সনদের ৬শ’ বছর পর ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে মানবাধিকারের প্রথম সনদ ম্যাগনাকার্টা ঘোষিত হয়। ব্রিটিশ বিল রাইটস ঘোষিত হয় ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে এবং মার্কিন বিল অব রাইটস ঘোষিত হয় এর ১০০ বছর পর ১৭৮৯ সালে। তবে এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোন নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। এক শতাব্দী আগেও ইউরোপ আমেরিকায় নারী ও কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার ছিল না। সাংবিধানিকভাবে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষকে সেখানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নিশ্চয়তা দেয়া হলেও ধর্ম-বর্ণ ও লিঙ্গভেদের কারণে এখনো নানা রকম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে মানুষ।

প্রধানমন্ত্রী যখন মদিনা সনদের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, এর অর্থ হচ্ছে এখন থেকে দেশে হিংসা ও ঘৃণা নির্মূল এবং ধর্মবিদ্বেষের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না বা বন্ধ করা হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ইভ-টিজিং, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ আমাদের জন্য বড় ধরনের সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন শহরে গণধর্ষণ ও নারী নিগ্রহের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার হার উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর আগে এইডস’র মতো মরণব্যাধি মহামারির আকার ধারণ করলে বিভিন্ন দেশের সরকার এবং এনজিও’র পক্ষ থেকে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। ইসলামের নির্দেশিত পর্দাপ্রথা এবং বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক বন্ধের ইসলামের কঠোর অনুশাসনকে যারা নারী প্রগতির অন্তরায় বলে প্রচার করছেন, ইভটিজিং, ধর্ষণ ও নারী নিগ্রহ বন্ধে তারা কোন বিকল্প পন্থা দেখাতে পারেননি। অর্থনীতি, রাজনীতি ও জীবনাচারে পশ্চিমা পুঁজিবাদী সংস্কৃতির অনুকৃতি নারীদেরকে উলঙ্গ ও মর্যাদাহীন করে তুলেছে। সস্তা বিনোদন ও বিজ্ঞাপনের কল্যাণে নারীরা পণ্যে পরিণত হয়েছে।ভারতীয় চলচ্চিত্রে গত কয়েকবছর থেকে যে অশ্লিল আইটেম গান পরিবেশিত হছ্ছে তা আমাদের উপমহাদেশ তথা বিশ্বব্যাপী সমাজের নব প্রজন্মকে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে বাধাগ্রস্ত করে তুলেছে যার ফলেই সমাজে মরনব্যাধি ধর্ষন চলছে অবিরত যা থেকে রক্ষা পাছ্ছে না অবুঝ শিশুরা। ইসলাম যেমন নারীর শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে তেমনি নারীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক অধিকার এবং কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে একটি ন্যায়সঙ্গত ভারসাম্যপূর্ণ বা ইনসাফ ভিত্তিক নির্দেশনা বহাল করেছে। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে, দেশে যখন রাজনৈতিক সহিংসতায় শত শত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র ও সার্বজনীন মানবাধিকার চরম হুমকির সম্মুখীন তখন দেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা হেফাজতে ইসলামের দাবিকে মধ্যযুগীয় আখ্যা দিয়ে দেশের ওলামা মাশায়েখদের বিরুদ্ধে সহিংস বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হিসেবে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মদিনা সনদের সার্বজনীনতায় বিশ্বাস করেন। মদিনা সনদের ৪৭টি অনুচ্ছেদের ২৩টিতে প্রথম ইসলামিক রাষ্ট্রে মুসলমানদের নানা গোষ্ঠী, মুহাজির, আনসারসহ শাসক ও প্রজাদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ও দায়-দায়িত্বের বিষয় বর্ণিত হয়েছে, আর ২৪টি অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে ইহুদি, খ্রিস্টানসহ অমুসলিমদের নাগরিক অধিকার ও দায় দায়িত্ব সম্পর্কে। পশ্চিমা বিশ্ব যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত, ধর্ম ও লিঙ্গ বৈষম্যের ভিত্তিতে শাসকরা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতো যথেচ্ছভাবে। এমনই অন্ধকার সময়ে সবচেয়ে পতিত আরব সমাজে ইসলামের নবী সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা দিয়েছেন মদিনা সনদ ও বিদায় হজ্জের ভাষণের মধ্য দিয়ে। এ কারণেই বিশ্বের অনেক বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও সমাজতাত্ত্বিক তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সত্যিকারের গণতন্ত্র এবং পালার্মেন্টারি (শুরা) ব্যবস্থাও মদিনা সনদের বিশেষ অবদান। আমাদের নাগরিক সমাজের যে সকল সদস্য ইসলামের অনুশাসনকে মধ্যযুগীয় বলে আখ্যায়িত করছেন তারা ইসলাম এবং এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগ, মূল্যবোধ ও সামাজিক শৃঙ্খলা সম্পর্কে কোন ধারনা রাখেন বলে মনে হয় না।আমি আশা করি কোরআন ও ছহি সূন্নাহ থেকে দূরে থেকে কথা বলার চেয়ে তার সংস্পর্শে এসে জেনে বুঝে কথা বললে জাতি যেমন উপকৃত হবে তেমনি যারা ক্ষীন জ্গান রেখে কথা বলেন তারাও তাদের জীবনকে উর্বর করতে পারবেন।জাতির এ দু:সময়ে ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে আমাদের এক হয়ে সামাজিক সাধারন নীতি গুলো মেনে চললে আমরা অন্তত সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা পাব বলে বিশ্বাস করি।আমরা একজন প্রজ্গা সম্পন্ন অভিভাবক পেয়েছি এবং আশা করছি তিনি সামনের দিন গুলো সবার সমন্বয়ের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এই প্রত্যাশা আমাদের সবার।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File