হেফাজতের মাধ্যমে তৃতীয় শক্তির উত্থান হতে পারে বলে গুন্জন শুনা যায়।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:০৩:৫৫ বিকাল

আমাদের উপমহাদেশের প্রান্তিক মানুষেরা যুগ যুগ ধরে নীপিড়িত ও নিষ্পেষিত।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মানুষের যে আকাংখ্যা ছিল তা রাজনৈতিক গোষ্ঠির উদাসিনতা ও ক্ষমতা দখলের উচ্চাভিলাসের কারনে ব্যার্থতায় পর্যবসিত হয়।আমাদের এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির দিকে তাকালে দেখা যায় বিভিন্ন ধর্মের একত্রে বসবাস।এখানে ধর্মের কারনে কোন বিছ্ছিন্নতা দেখা যায় নি।ইদানিং যে বিছ্ছিন্ন ঘটনা গুলো ঘটেছে তার সাথে রাজনৈতিক কারন অবশ্যই জড়িত।স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে যে রাজনৈতিক পরিচালনা এটা রাজনীতিবিদদের জন গনের সাথে এক ধরনের প্রহসন।৪১ বছর থেকেই আমরা শুনে আসছি, আন্দোলন হয়ে আসছে কিন্তু এই চেতনার বাস্তবায়ন কেউ করতে পারেনি।স্বাধীনতার চেতনা হলো জন গনের জীবন মানের উন্নয়ন।গ্রামীন জীবনে কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে।বরং বর্তমানের অপরাজনীতির চর্চা, ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস, লুটপাট, দলীয়করণ, দুর্নীতি, দলবাজি ও অপশাসনে সীমাহীন বঞ্চনার বিরুদ্ধে ফরিয়াদ নিয়ে কোটি কোটি মানুষ এখন আল্লাহর দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বেরিয়ে পড়েছে।এদেশের মানুষ না খেয়ে থাকলেও ধর্মিয় অনুভূতিতে আঘাত সহ্য করে না।তাছাড়া যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে তারা একধরনের মুসলিম নামের মুরতাদ।আমাদের অনেক বাম নেতা কথায় কথায় ইসলামকে জামাতের সাথে সম্পৃক্ত করে ইসলামের উপর কালিমা লেপন করেন।ইসলামে কোন সন্ত্রাস নেই এটা জেনে নিন।ইসলাম সম্পর্কে জেনে কথা বলুন। যারা ইসলামের নামে সন্ত্রাস করছে তারা ইসলামকে পিছিয়ে দিছ্ছে।তবে ইসলামের অনুসারিরা যদি ইসলামের পথে চলে তাহলে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করতে পারবে যেভাবে নবী সা: করেছেন।এটা স্বাভাবিক কথা যে,যারা ইসলামের কথা বলবে তাদের মুল একই হতে হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।যারা বাম চর্চা করেন তারা হয় ধনতন্ত্রের নতুবা সমাজতন্ত্রের ধরার চর্চা করেন।কিন্তু ইসলামের কথা শুনলে তাদের কেন গায়ে আগুন লেগে যায় এটা বুঝা খুব কঠিন।অনেক নেতাই জীবনে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেনি।রাজনীতিতে অনাদর্শিক এমন কয়েকজন অন্য আদর্শের কাছে মাথা নত করে নিজেদের কিছু স্বার্থসিদ্ধি করলেও জন গনের কাছে তারা মুল্যহীন হয়েছেন।ভোট প্রার্থনা করে তারা এমপি হওয়ার যে যোগ্য নন ইতিপূর্বে জন গন প্রমানিত করেছে।তাদের সম্ভ্রম থাকলে বড় বড় কথা বলা বন্ধ করা উচিত।এদেশের সাধারন মানুষ এই ঘুনে ধরা রাজনীতির কাছা কাছি নয়। তাই এই সাধারন মানুষগুলো তাদের ধর্মানুভূতিকে রক্ষার জন্য প্রয়াস চালিয়ে যাছ্ছে।এখন প্রশ্ন হলো তাদের পক্ষে কতটুকু এ আন্দোলন এগিয়ে নেয়া সম্ভব।তারা যদি তাদের নীতি ও ইসলামের সঠিক পথের উপর থাকে তাহলে দেশের একটা ইসলামিক শক্তিতে পরিনত হবে। আমাদের দেশে মক্কা মদিনার ইসলামের চর্চা কতটুকু সেটা ক্ষতিয়ে দেখার ও ব্যাপার রয়েছে।একবিংশ শতাব্দির কুরআন ও সূন্নাহর আলেমদের ইসলামি দর্শন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আমাদের ভারত উপমহাদেশে ইসলামকে ক্ষত বিক্ষত করেছে ইসলামের এই বিভাজিত শক্তিগুলো।ইসলাম অনুসরনের দুটি গাইড।একটি হলো কুরআন আর একটি রাসূল সা: এর ছহি সূন্নাহ।কুরআনে সূরা আন'আমের ১৫৯ আয়াত ও সূরা রুমের ৩২ আয়াতে নবী সা: স্পষ্ট ভাষায় বলে দেয়া হয়েছে যারা ইসলামকে বিভক্ত করেছে তাদের প্রতি তোমার কোন দায়িত্ব নেই।রাসূল সা: বলেছেন গোটা দুনিয়ার মুসলিম হলো একটি উম্মাহ।

উপমহাদেশে মাযহাবকে কেন্দ্র করে ইসলামের যে বিভাজন তৈরি হয়েছে তা আজ ইসলামকে তার মুল স্রোত থেকে সরিয়ে ফেলেছে।এখানে এখন ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন অবতার যার যার ইছ্ছা মত ধর্মকে অনুসরন করছে।আবার আর এক শ্রেনি আছে তারা সঠিক পথে কুরআন ও সূন্নাহ মেনে তাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করছে।কুরআনের ভাষায় এরা সঠিক পথের উপর অধিষ্ঠিত। মাযহাবের চার জন ঈমাম তারা অনুসরন করেছিলেন রাসূল সা: এর আদর্শ অর্থাৎ ছহি সূন্নাহ।তাদের মৃত্যুর কয়েকশ বছর পর অনুসারিরা কিতাব লিখেছে ও ছহি সূন্নাহ ছেড়ে দিয়ে তাদের ফিকহ বা কথাগুলোর অনুসরন করে বিভাজন তৈরি করেছে।ইংরেজ শাসনের ১৯০ বছরে তারা তাদের শাসন কাজের স্বার্থে মুসলমানদের মধ্য থেকে এক শ্রেনিকে বেচে নিয়েছে মুসলমানকে বিভক্ত করার জন্য।তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল গোলাম আহম্মদ ক্কাদিয়ানি যে ছিল হানাফি উলামা পরে হানাফি থেকে বের হয়ে নিজেকে নবী দাবি করেছিল ও ক্কাদিয়ানি গ্রুপের প্রনেতা।আর একজন আহম্মদ রেজা খান যে ছিল বেরুলেবি গ্রুপের প্রনেতা ও কবর পূজারি।এর পর ধীরে ধীরে ব্যাক্তি স্বার্থে ধর্মের আরো বিভাজন শুরু হলো।দেওবন্দি গ্রুপ ,ইলিয়াসি তাবলিগ, মওদুদির জামাত ও পিরতন্ত্র।আর পরিতন্ত্র এখন ছড়িয়ে গেছে দেশের আনাছে কানছে যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।তারা যে বিদাআতি ও শির্কিয় এবাদত করছে সেগুলো কোন ইসলামের কাজ নয়।উপমহাদেশের এই ইসলামিক দলগুলোর ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর আলেমদের ( আল্লামা নাছিরুদ্দিন আলবানি, আল্লামা শাইখ বিন বাজ, আল্লামা আব্দুল আজিজ আফিফি,আল্লামা আব্দুল আজিজ শেখ) প্রমুখের ফিখহ রয়েছে যে তারা যে ইবাদাত করছে তাতে কুসংস্কার রয়েছে।আর তারা কুরআন সূন্নাহ বাদ দিয়ে তাদের আলেমদের কিতাব পড়াশুনা করে যাতে রয়েছে শির্ক ও বিদাআত।

তাদের আক্কিদা ভিন্নমুখি এবং অন্তর্দন্দ ও ইসলামের এই বিভাজন থাকলেও ইসলামের উপর আঘাত সাধারন ভাবে মেনে নেয়ার মত নয়।সেজন্য আমরা দেখতে পাই যখনি ইসলামের উপর আঘাত আসে তারা এক হওয়ার চেষ্টা করে।

যুগ যুগ ধরে এই নিষ্পেষিত কওমি জন গোষ্ঠি সরকারের কাছে তাদের ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছে এবং আগামি ৫ই মের মধ্যে সরকারকে মেনে নেয়ার দাবি জানিয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বা তাদের এই ১৩ দফা দাবি যে হঠাৎ তৈরি হয়েছে তা নয়।ইসলামের উপর বার বার আঘাত ও গন জাগরন মন্চের ইসলাম বিদ্ধেশি মনোভাব ই তাদের অন্দোলনকে সাহস যুগিয়েছে।কেউ কেউ একে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের সাথে তুলনা করছেন কারন সেদিন যে বন্চিত জন গন রেসকোর্স ময়দানে একত্রিত হয়েছিল আজও তাদের সামনে এই বন্চনার সাথে ইসলামের মত আর একটি মহান মৌলিক বিষয় জড়িত হয়েছে।কেউ কেউ বলছে হেফাজত একসময় তৃতীয় শক্তিতে দাঁড়াবে।এটা কতটা সত্য তা বলা যাছ্ছে না।তবে তাদের যে শক্তি তৈরি হয়েছে তা সরকার ও বিরোধি শক্তির জন্য যে হুমকি তা সহজে বুঝা যায়।আর দেশের যে শোষিত শ্রেনী , প্রাক্তন সৎ আমলা ও কর্মচারি তারা সরকার ও বিরোধিদের চেয়ে তাদের দলকে যে সাফোর্ট দিবে তাও কিছুটা অনুমান করা যায়।সব মিলিয়ে এটা বলা যায় আগামি নির্বাচনে যারা জয়ি হবে তাদের পক্ষে হেফাজতের একটা বিরাট ভূমিকা কাজ করবে। তাদের ডেক্লারেশন ছিল অরাজনৈতিক সংগঠন এবং তারা দেশে ইসলামের হেফাজত চায়।আর তাদের অভূতপূর্ব উত্থানের পেছনে শক্তি যোগাচ্ছে মূলত আমাদের বিরাজমান বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সারাদেশে ছড়ানো-ছিটানো অসংখ্য কওমী মাদ্রাসা। এছাড়াও সাধারণ মানুষের সীমাহীন বঞ্চনাও তাদের ধর্মীয় সংগঠনগুলোর প্রতি আকৃষ্ট করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে গরিব মানুষের অধিকাংশই গ্রামে বাস করেন। পদে পদে তারা ‘ভিকটিম’ এবং তাদের মর্যাদা প্রতিনিয়ত ভূলুণ্ঠিত। তাদের দেখার যেন কেউ নেই। থানা সরকারি অফিস এমনকি নিম্ন আদালতে গেলে তাদের কাজ হয় না,কিংবা তারা প্রয়োজনীয় প্রতিকার পান না। কারণ তাদের উৎকোচ দেয়ার টাকা নেই, নেই তদবিরের কেউ। এমনকি সরকার ভিজিডি-ভিজিএফ কার্ড দলীয় কর্মীদের ‘পোষা’র কাজে ব্যবহার হওয়ার কারণে এগুলো থেকেও গরিব মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। গ্রামীণ শিক্ষার মানে ধস নামার ফলে তাদের সন্তান এখন পিয়ন-চাপরাশীর চাকরি ছাড়া অন্য কোনো চাকরির যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন না। নিয়োগ বাণিজ্য ও তদবিরতন্ত্রের দৌরাত্ম্যে যে চাকরিও তাদের সন্তানের জন্য আজ অনেকটা সোনার হরিণ। এ ধরনের সীমাহীন বঞ্চনার বিরুদ্ধে ফরিয়াদের কোন স্থান না থাকার কারণে তারা আল্লাহর মুখাপেক্ষী হন। এছাড়াও তারা বর্তমান সংঘাতময় রাজনীতির অবসান চায় ও চায় শান্তি। সাধারণ মানুষের এ ধরনের বঞ্চনা আমাদের দেশে ইসলামী জাগরণের জন্য উর্বর ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ফেলেছে।

দেশে এক অসহনীয় ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে এবং জাতিকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে নির্বাচনপূর্বকালীন করণীয়ের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণ, নির্বাচন আইনের সংস্কার ও এর যথার্থ প্রয়োগ, হলফনামার মাধ্যমে তথ্য প্রদানে কড়াকড়ি করা জরুরি। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে সরকার ও বিরোধী দলকে সংসদীয় সংস্কৃতিতে ফিরে যাওয়া উচিত।যে নামেই হোক না কেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। শুধু সংলাপ, আলোচনা হলে হবে না। সংলাপে ঠিক করতে হবে, ক্ষমতায় গেলে বিরোধী দলের প্রতি কেমন আচরণ হবে। এ বিষয়ে একটি আচরণবিধি তৈরি করতে হবে। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, নিরপেক্ষ সরকার-ব্যবস্থা না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এ বাস্তবতা দেশের সকলেই জানেন।আমাদের কতেক নেতৃবৃন্দ উসকানি মুলক বক্তব্য দিছ্ছেন যা দেশের জন্য কল্যান নয়।তাদের কথায় সহনশীলতা থাকতে হবে।ইসলমাকে কটাক্ষ করে কথা বলা কোন ভদ্রতার লক্ষন নয়।ইসলামের নামে যাদের জঙি তৈরি করা হয়েছে তারা দেশী এবং বেদেশী রাজনৈতিক সংগঠনের ছত্রছায়ায় অবস্হান করছে।যেখানে ইসলামের সত্যিকারের মানুষগুলো বসবাস করে সে লোকালয় হয়ে উঠে সত্যে উদ্ভাসিত।সুতরাং ইসলামকে নিয়ে গালিগালাজ না করে ইসলামের আদর্শের কাছে মাথা নত করাই একজন মুসলিমের ব্রত হওয়া উচিত।আর যাদের ইসলাম পছন্দ নয় তাদের কি উচিত ৯০% মুসলমানের দেশে বাস করা?

বিষয়: বিবিধ

১৬২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File