আপনার জীবনের স্পন্দন ফিরিয়ে দিবে আপনার আশে পাশের সামান্য জমি যদি সঠিক পরিকল্পনা নিতে পারেন।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৬ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:১২:০৫ দুপুর
বাংলাদেশ চির সবুজের দেশ।পৃথিবীর কোথাও এ দেশটির মত দেশ নেই।অসংখ্য নদীনালা , ডোবা পুকুর, খেত খামার ও সবুজে ঘেরা গাছ গাছালি।পরিচর্যা চাড়াই অনেক তৃনলতা ও গাছ গাছালি জন্মে যা উন্নত দেশে অবিরাম জনবল দিয়েও এ রকম জন্মাতে পারেনা।গত কয়েক দশক থেকে আমাদের যুবকদের কেউ কেউ এর কার্যকারিতা আমাদের গোছরে এনে দিয়েছে।অনেকে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে অল্প যায়গায় পরিকল্পনামাফিক বাগান করেছে যা তার জীবনের মোড় ফিরিয়ে দিয়েছে।আমাদের মিডিয়াতে "মাটি ও মানুষ" এ প্রোগ্রামটিতে ডিসপ্লে ও হছ্ছে।অনেকে বাড়ির ছাদে বাগান করেছে,হাস মুরগির খামার করেছে যা তাদের পরিবারের খরচ মেটাতে সহায়ক হছ্ছে।কিন্তু এর সংখ্যা অতি কম।আমাদের গ্রামে গন্জে অনেকের বিশাল সম্পদ পড়ে আছে অথচ তারা জীর্ন শীর্ন জীবন যাপন করছে।আমার দেশে ও বিদেশে এ রকম অনেক গুলো ছোট আঙিকের পারিবারিক প্রজেক্ট চোখে পড়েছে যা আমাদের চারপাশের সবাইকে জানানো দায়িত্ব মনে করছি যাতে করে আমরা আমাদের ছোট ছোট যায়গা গুলোকে খালি ফেলে না রেখে দেশের উৎপাদক শক্তির সাথে সমন্বয় সাধন করতে পারি।আমাদের বাংলাদেশি ভাইরা যারা দেশে কখনো এ কাজ গুলো করেনি তাদেরই কয়েকজনের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল যারা সৌদি পরিবারগুলোর কেয়ারটেকার হিসাবে কাজ করে।অনেকে বিশাল ভিলা দেখা শুনা করে যেখানে মালিকরা বছরে ২/৩ বারের বেশী আসে না।বাড়ির মালিককে খুশি করার জন্য হোক বা নিজের সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে হোক তারা পরিকল্পনা মাফিক এমন সুন্দর বাগান করেছে যা দেখার মত।অবশ্য মালিকরা এ দেখে পরে তাদের হস্ত প্রসারিত করেছে।
আমাদের বড় বড় কন্ট্রাক্ট গুলোর মধ্যে ভিলা সম্পর্কিত প্রজেক্ট ও রয়েছে।আমাদের একজন ইন্জিনিয়ার একদিন আমাকে বললো চল তোমাকে একটি ভিলায় নিয়ে যাব যেখানে তোমার দেশি একজন কেয়ারটেকার আছে।সে একটি বাগান করেছে দেখার মত।সাধারনত ঐ এলাকাগুলোতে সাধারন মানুষদের পারমিশন ছাড়া যাওয়া যায় না।যেহেতু ইন্জিনিয়ার সাহেবের পারমিশন আছে আমার আর বেগ পেতে হয়নি।ভিলাটি খুব যে বড় তা নয়। আমাদের দেশের দুই বিঘা পরিমান যায়গা।প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।সামনে গেইট।ভিতরে ঢুকলেই ডান পাশে এরাবিক সিকিউরিটি ,কেয়ারটেকার ও অন্যান্যদর থাকার ঘর।এর ভিতরে আর একটি মিনি গেইট।সেখান থেকে ভিতরে ডানদিকে গেলে ভিলা।সুইমিংপুল , একটা জিমনিসিয়াম ইত্যাদি।পূর্ব দক্ষিনে একটা খালি যায়গা তার মধ্যে পরিকল্পনা মাফিক পাকা রাস্তা ও তার পাশে মাঝে মাঝে চমৎকার খেজুর গাছ ও মাঝে মাঝে নিম গাছ লাগানো।ভিতরের রাস্তা দিয়ে বিকেলে হাঁটলে মনে হয় দক্ষীনা সমিরনে মন কেড়ে নেয়।দেয়ালের পাশ গুলোতে বিভিন্ন ফুলের সমারোহ যেন এক আবেশের সৃষ্টি করে।রাস্তা ছেড়ে যে যায়গাগুলো পড়েছিল তাতে মালিকদের কিছু করার মত পরিকল্পনা ছিল না।ছেলেটি ছিল যুবক ছুটিতে গিয়েছিল ৩ মাসের জন্য।আসার সময় দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের ফলের বিজ নিয়ে এসেছিল।এবার পরিকল্পনা মাফিক জমি তৈরি করে ফল , ফুল ও অনেকটা দূরবর্তি স্হানে একটি ছোট খামার করলো।কয়েকমাসের মধ্যে উৎপাদন শুরু হলো যে, এগুলো বিক্রয় করা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা।প্রথমে উৎপাদিত সব পন্য সম্ভার একটি গাড়িতে যখন মালিকের বাড়িতে পাঠালো, মালিক আশ্চর্য হয়ে পরের দিন চলে এলো।এসে ভিলার এই পরিবর্তন দেখে ছেলেটির বেতন ১২০০ রিয়াল থেকে ৩০০০ এ উন্নিত করে দিল।ছেলেটির মালিক বিশাল টাকার মালিক হলেও এগুলো করা তার শখে পরিনত হলো।অন্যান্য যারা ছিল এবার তাদেরও ছেলেটির সাথে ভিলার কাজে লাগিয়ে দিল।ছেলেটিকে কয়েকটি ভিসা দিয়ে তার মত কয়েকজনকে নিয়ে আসতে বললো।
ছয় মাস পর ছেলেটির মালিক তার অন্য ভিলাগুলোতে একইভাবে বাগান করার জন্য এগিয়ে গেল।শুনেছি এখন প্রায় ৫০ জনের মত লোক এভাবে কাজ করছে।আর ছেলেটিকে তার এ প্রজেক্ট গুলোর দায়িত্ব দিয়ে একজন ছোট খাট ব্যবস্হাপকের দায়িত্ব দিয়েছে।ছেলেটি এখন পরিবার নিয়ে থাকে ও ৬৫০০ রিয়াল বেতনে উন্নিত হয়েছে।কথা বলে জানতে পারলাম তার বাড়ির আশে পাশে যা যায়গা জমি ছিল তা সংস্কার করে সে একইভাবে দেশে একটা প্রজেক্ট করেছে যা থেকে তার পরিবারের সদস্যরা স্বছ্ছল জীবন যাপন করছে।পাঠকবৃন্দ,নিশ্চয়ই কাজটি প্রথমে সহজ ছিলনা। তাকে কঠোর পরিশ্রক করতে হয়েছিল।আমি এর পর আমাদের দেশে অনেক যায়গায় ঘুরে দেখেছি, তাদের সাথে কথা বলে দেখেছি।প্রথম কয়েকবছর একান্ত আগ্রহ ও অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করতে হয়।আমাদের প্রত্যেকের আশে পাশে কত যায়গা পড়ে আছে অথচ আমদের অনেকেই সামাজিক অসম্মানের কথা ভেবে এ কজাগুলো করে না।বিদেশে এসে এর চেয়ে অনেক খারাপ কাজ করতে হয়।আমাদের দেশের ক্লিনাররা বিদেশে যেভাবে গরমে আটঘন্টা পরিশ্রম করে তার অর্ধেক কাজ যদি তারা দেশে করে তাহলে তাদের জীবন মানকে অনেক উন্নীত করতে পারে।
আমাদের বেকার যুবকদের সরকার যদি কৃষিবিভাগের মাধ্যমে খন্ডকালীন প্রশিক্ষন দিয়ে ও ব্যবসায়িরা যদি উদ্যোগ নিয়ে এদের কাজে লাগায় তাহলে আমাদের দেশের এই অনাবাদি সম্পদ সোনায় পরিনত হবে।যদি পরিকল্পনা নেয়া হয় এক ইন্চি যায়গাও পড়ে থাকবে না তাহলে আমাদের শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার দরকার হবেনা।সরকার যদি পৃষ্ঠপোষকতা না করে তাহলে এ কাজ ব্যাক্তিগতভাবে সম্ভব নয়।দু:খের বিষয় হলো আমাদের কোন সরকার এখনো শহরেরই তেমন ভাল কোন পরিকল্পনা নিতে পারেনি।সেক্ষেত্রে গ্রামতো অনেক দূর।নগর পরিকল্পনা হচ্ছে কোনো একটি নগরে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে নাগরিকদের সব ধরনের সাধারণ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। সেখানে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানি, সুয়ারেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, খেলার মাঠ ও উপাসনালয় থেকে শুরু করে এ ধরনের সবকিছুই পরিকল্পিতভাবে থাকবে। এই বিষয়গুলোর কোনোটির গুরুত্বকেই ছোট করে দেখা যাবে না। একটি পরিকল্পিত নগরের জন্য কিছু স্ট্যান্ডার্ড বা মান রয়েছে, যা মেনে চলা হয়। নগরের আয়তনের সঙ্গে কত ভাগ রাস্তা থাকবে, কতটুকু খোলা জায়গা থাকবে, দোকানপাট কী পরিমাণ থাকবে, জনসংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে কয়টি স্কুল থাকবে, কয়টি কলেজ থাকবে—এ ধরনের নানা কিছু বিবেচনায় নিতে হয়। বর্তমান ঢাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে এটা মানতেই হচ্ছে যে নগর পরিকল্পনা বলতে যা বোঝায় তার কোনো ছাপই এখানে নেই। ঢাকা নগরের একটি পরিকল্পনা ১৯৫৯ সালে একটি ব্রিটিশ ফার্মের মাধ্যমে করা হয়েছিল। সেই প্ল্যান বা পরিকল্পনায় কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন হয়নি। যেসব জায়গায় বাড়িঘর করার কথা ছিল না সেসব জায়গায় বাড়িঘর হয়েছে। স্কুল-কলেজের জন্য যে জায়গা রাখা হয়েছিল, তা রাখা হয়নি। খাল-বিল যেসব ছিল তা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পরিকল্পনা আর বাস্তবের ঢাকার কোনো মিল নেই।
দেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গার জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন। আর আমাদের মতো দেশে যেখানে জনসংখ্যা অনেক বেশি ও জমির পরিমাণ খুবই কম, সেখানে এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি। আমাদের দেশ থেকে এখন অনেক লোক বিদেশে যাচ্ছে, সেখান থেকে টাকা কামাই করে এনে গ্রামে অনেক সময় ধানি জমি ও খেত ভরাট করে বাড়ি তৈরি করছে। যেকোনো মূল্যে এই বিষয়টি ঠেকাতে হবে। গ্রামের কৃষিজমি যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কোথায় বাড়ি করা যাবে, কোথায় যাবে না, করা গেলে কীভাবে করা যাবে, কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে,এসব ঠিক করতে হবে। তা না হলে অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা গড়ে উঠলে পরে তা সংশোধন করা কঠিন হয়ে পড়বে।আর তাদের উচিত এভাবে অপরিকল্পিত বাড়ি ঘর না করে গ্রামেও পরিকল্পিত ছোট ছোট খামার ও বাগান করা যায় যা থেকে ২/৩ পরিবার বাঁচতে পারে।আমাদের গ্রামকে যদি উন্নয়নমুখি না করা যায় তাহলে নগরায়নের সঠিক পরিকল্পনা করা যাবে না কারন দিন দিন গ্রামের মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ছে আর জীবনের তাগিদে তারা শহরে ভিঁড় জমাছ্ছে।তাই সরকারের ও আমাদের শিল্পপতিদের কাছে আবেদন থাকবে এর জন্য অচিরেই চিন্তাভাবনা করা।আর প্রান্তিক আমাদের জনসাধারনকেও বসে থাকলে চলবেনা, যার যতটুকু সামর্থ আছে যেন তার আশে পাশে যায়গা জমি গুলো উন্নয়ন করে জীবনের গতিকে তরান্নিত করেন।
বিষয়: বিবিধ
২৩০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন