মুসলিম যুবকদের আদর্শ ও ভূমিকা ( Role Models for Muslim Youth)

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:২৬:০৬ বিকাল

ইসলামের প্রাথমিকযুগে যখন আমাদের প্রিয় নবী সা: লোকজনদের ইসলামে আলিঙন করার ডাক দিলেন,তারা সহজে তা গ্রহন করেনি।ওমর রা: ছিলেন টগবগে যুবক।তার সামনে কথা বলার মত কুরাইশদের কারো ক্ষমতা ছিল না।তাকেই তারা পাঠিয়েছিল নবী সা: কে হত্বা করার জন্য।কিন্তু তিনি যখন নবী সা: এর কাছে গেলেন ধন্য হয়ে গেলেন দুনিয়া ও আখেরাতে।আর ইসলাম গ্রহন করার পর ইসলামের ব্যাপকতা লাভ করেছিল তার সময়ে।নবী সা: বলেছিলেন, আমার পরে কোন নবী আসবে না যদি নবী আসতো তাহলে ওমর নবী হয়ে যেত।রাসূল সা: ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্তর্ভুক্ত।তিনি ছিলেন যেমন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত তেমনি ছিলেন দৃড়চেতা।পিতা পিতামহের ধর্ম সম্পর্কে ছিলেন উদাসীন ও কুরাইশদের রক্তচক্ষুতে ছিলেন না ভীত।এ সবই ছিল একমাত্র আল্লাহর জন্য।কোন মানুষের প্রতি হিংসা বিদ্বেশ ছিলনা।তাদের সর্বপ্রকার অবরোধ ও অত্যাচার সহ্য করেছিলেন।যারা সত্যকে মেনে নিয়েছিল তাদের উপর জুলুম অত্যাচার বাড়িয়ে দিয়েছিল।বিলাল রা: কে সত্য স্বীকার করার দায়ে ঘোড়ায় বেঁধে ঘুরিয়েছিল লোকালয়ে।বুকের উপর পাথর ছেপে দিয়েছিল।নবী সা: ক্বাবার ছত্তরে একদিন বিশ্রাম নিছ্ছিলেন, খাব্বাব রা: এসে বলললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন,আমরা জুলুম অত্যাচার সইতে পারছিনা।রাসূল সা: উঠে বসলেন ও বললেন,তোমাদের পূর্বে যারা দ্বীন গ্রহন করতো তাদের তারা শূলে চড়াতো,তাদের মাথার উপর করাত রেখে দেহ বিছ্ছিন্ন করে ফেলতো কিন্তু তারা দ্বীন থেকে এক পাও সরে পড়তো না।এমন একদিন আসবে যেদিন মক্কা থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত মানুষ চলবে আল্লাহর ভয় ছাড়া তাদের আর কোন ভয় থাকবেনা।' তার ভবিষ্যৎ বানী রয়েছে আজ মুসলমানের সামনে।মুসলমানকে বিচলিত হলে চলবে না।সততার উপর প্রথিষঠিত থেকে পথ চলতে হবে।যদি বাধা আসে বিচক্ষনতার সাথে তার মোকাবিলা করতে হবে।যাদের দ্বারা ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তারা ছিল যুবক ও তাদের বয়স ছিল ৪০ এর নিছে।আর বয়স্করা হঠকারি এবং এখনো ইসলাম বিদ্ধেষিরা একই কাতারে সামিল।

সেই যুবকদের উপর যতই অত্যাচার বেড়েছিল ততই তারা গর্জে উঠেছিল কুরআনের মহিমায়।তাদের শক্তি যুগিয়েছে আকাশচুম্বি।এই জুলুম অত্যাচার চলেছিল মক্কায় ১৩টি বছর।রাসূল সা: মূর্তিকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করেছিলেন।

রাসূল সা: ততদিন মক্কায় অবস্হান করেছিলেন যতদিন তার জীবন নাশের আঘাত আসেনি।যখনই কুরাইশরা তার জীবন নাশের ফন্দি করলো তখন আল্লাহ তাকে জানিয়ে দিলেন ও তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন।ইসলামের ইতিহাসে এই হিযরত একটা মাইলফলক।অল্পদিনের মধ্যেই ইসলামের যে দুর্বলতা ছিল তা সবলে পরিনত হলো।কুরাইসদের সমস্ত মাস্টারপ্লান ব্যার্থতায় পর্যবসিত করেছিলেন ও সমস্ত ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত করেছিলেন আল্লাহ সোবহানাওয়াতাআলা।কুরাইশরা নবী সা: কে সত্যবাদি উপাদি দিয়েছিল।তারা তাদের অর্থ সম্পদ জমা রাখতো আমানত হিসেবে।যখন তিনি হিযরত করলেন আবু ইবনে আবুতালিবকে তার স্হলাভিসিক্ত করেছিলেন যেন তাদের আমানত পরিশোধ করে দেয়।আর তিনি সূরা ইয়াসিনের ৯ আয়াত পড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন যা ছিল,' আমরা তাদের সামনে ও পিছনে স্হাপন করেছি এক প্রাচীর,ফলে আমরা তাদের ঢেকে ফেলেছি তাই তারা দেখতে পায়না।' রাসূল সা: তার প্রিয় সাহাবী আবুবকর রা: ও আমির ইবনে ফোহাইরাকে সংগে নিয়ে গোপনে বেরিয়ে পড়লেন ও মক্কার নিকটে সোওর পর্বতের গুহায় অবস্হান করলেন।এদিকে কুরাইশরা ১০০ উট পুরস্কার ঘোষনা করলো যে ধরে আনতে পারে।এই সফরে যে চারজন মুসলিম যুবক ভূমিকা রেখেছিল তা ইতিহাসে অবিস্মরনীয়।আলি ইবনে আবুতালিব,আমির ইবনে ফোহাইরাহ,আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বাকর ও আসমা বিনতে আবু বকর। আলি ইবনে আবুতালিব তার নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও শুয়ে রয়েছিলেন রাসূল সা: এর বিছানায়।আমির ভেঁড়া ছরিয়ে বেড়িয়েছিল যাতে কোন পদচিহ্ন না দেখা যায়।আব্দুল্লাহ তার পিতা আবুবকরকে ও রাসূল সা: কে কুরাইশদের প্রতিরাতের ষড়যন্ত্রের খবর দিত,আসমা খাবার ও পানির যোগান দিত।একদিন আসমা তার খালি হাতে খাবার ও পানি টানতে না পেরে তার আহুর বেন্ড ছিঁড়ে খাবার বহন করেছিল এ দেখে রাসূল সা: বলেছিলেন,নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে এর বিনিময়ে জান্নাত দান করবেন।

রাসূল সা: এর এই হিজরত যুবকদের এতই অনুপ্রানিত করেছিল যে তারা ইসলামের বিজয়ের জন্য অনুরক্ত হয়ে গিয়েছিল আর এরই ফল দেখা গেল মক্কা বিজয়ে।মক্কায় ৩৬০টি মূর্তি ভাংগার আদেশ দেন নি তার কোন সাহাবিকে।বরং তাদের উপর জুলুম বেড়ে গেলে হিযরতের আদেশ দিয়েছেন আবিসিনিয়ায়।মুসলিমদের জন্য এখানে যে শিক্ষা রয়েছে তা বর্তমান মুসলিম চর্চা করছেনা।হুকুমাত তখনি আসবে যখন মানুষ তৈরি হবে।মদিনায় যখন মানুষ তৈরি হলো তখন দশ হাজার সাহাবিসহ এসে মক্কা বিজয় করেছিলেন।কুরাইশদের সাথে কোন ব্যাক্তিগত দন্দ ছিল না।দন্দটি ছিল আল্লাহর হুকুম মেনে নেয়া ও না নেয়ার মধ্যে।আজও ইসলামের সাথে যে লড়াই সেটা কোন ব্যাক্তিগত দন্দ নয়।আল্লাহর হুকুমকে বাস্তবায়ন করতে গেলে সমকালীন সব শক্তি বিরোধিতা করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যারা ইসলামের কাজ করবে তাদের দেখতে হবে আমরা সঠিক ডিরেক্শনে আছি কিনা।যুবকদের আত্মদান ও বলিষ্ঠ ভূমিকা সর্বকালে বিজয় এনে দিয়েছে।কিন্তু সে ভালবাসা থাকতে সৎপথে থেকে। কোন ধংসাত্মক পথ বেচে নিলে সেখানে কোন বিজয় নেই আর সে যুবকরা হবে ধংসশীল।যুবকরা হবে চারিত্রিক দিক থেকে শক্তিশালি ও ন্যায়ের পথে গতি আনয়নকারি।

সেজন্য আমাদের যুবকরা, যারা যে চেতনার জন্যই আন্দোলন করুক তাদের ভাবতে হবে আমরা কারো দ্বারা ব্যাবহার হছ্ছি কিনা।আমাদের যুবকরা যে বিপদগামি তা আমরা অনেকে টের পাছ্ছি কিন্তু অনেকে বলতে পারছে না।কেউ গনজাগরনের নামে , কেউ ইসলামের নামে যে ধ্বংসাত্মক অপকর্ম গুলো চালাছ্ছে তাদের ক্ষতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়ছে।যারা ইসলাম বিদ্বেশী তাদের কথা বলছি না কারন তারা তো ইসলাম বুঝে না।যারা ইসলামের কাজ করতে গিয়ে ইসলামকে ক্ষতবিক্ষত করছে তাদের ইসলামের নৈতিক আদর্শ সম্বন্ধে গভীর জ্গান আহরন করা জরুরি।ভেবে দেখুন,রাসূল সা: যখন হিজরত করলেন মক্কাবাসিদের আমানতকে কি সুন্দর করে আদায় করেছিলেন।মক্কা বিজয়ের দিন হাতে পেয়েও ক্ষমার আদর্শ স্হাপন করেছিলেন।ইসলামের কথা মুখে বলে নয় বাস্তবে প্রমান দেখাতে হবে।তিরমিযি শরিফে রাসূল সা: বলেন ক্কেয়ামতের দিন যুবকদের তাদের যৌবনের হিসাব দেয়া ছাড়া এক পা ও এগুতে পারবেনা।সেজন্য মুসলিম যুবকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা তারা যেন তাদের সঠিক মূল্যায়ন করেন এবং তাদের মেধা দেশ ও জাতির কল্যানের স্বার্থে ব্যায় করেন।

বিষয়: বিবিধ

১২১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File