ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করা ঈমানী দা্য়িত্ব।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:৪০:৪৪ দুপুর
সারা বিশ্বে তথা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে যে হারে অন্যায় ও অবিচার শুরু হয়েছে তাতে একথা সহজেই প্রশ্ন উঠে আসছে সমাজে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে কে? পরিবার না সমাজের লোকজন না সরকার? একথা নিয়ে বিতর্কের অবতারনা করে লাভ নেই।সূরা আল ইমরানের ১০৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক হওয়া চাই যারা আহ্বান করবে কল্যানের প্রতি, আর নির্দেশ দিবে ন্যায় পথের, আর নিষেধ করবে অন্যায় থেকে, এরাই হছ্ছে সফলকাম।এই কাজটি সমাজের অনেকেই করে থাকে তবে প্রকৃয়াটা ভিন্ন।তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব সবচয়ে বেশি এবং আল্লাহর কাছে তাদের জবাবদিহী করতে হবে যদি তা না করে।এই কাজটি সরকারের কাজের একটি অংশ কারন হলো সমাজকে অন্যায় থেকে যত বেশী বিরত রাখা যাবে ততবেশী নিয়মশৃংখলা সমাজে বজায় থাকবে ও অন্যায় কমে যাবে।সামাজিক অনাচার বৃদ্ধি হওয়ার কারন এখানে।যেখানে ইসলামিক শাসন বজায় আছে সেখানে সরকারের একটি বিভাগই থাকে "ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ" নামক বিভাগ যেমন সৌদি আরবে এ বিভাগটি রয়েছে যারা সব সময় টহল দিয়ে বেড়ায় কেউ কোন অন্যায় করছে কিনা , নামাজের সময়গুলোতে মসজিদে না গিয়ে বাইরে আড্ডা দিছ্ছে কিনা।আল্লাহ সূরা হজ্জের ৪১ আয়াতে মুসলিম শাসকদের ব্যাপারে বলছেন, আমরা যদি তাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করি তারা নমাজ কায়েম করবে,যাকাত আদায় করবে,ন্যায়ের আদেশ দিবে ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে।'
সমাজে যত বিভাজনই থাকুক এ কাজ যদি বন্ধ রাখা হয় তাহলে সমাজ ধংসের দিকে ধাবিত হবে।আমাদের সমাজে এ কাজটি আলেম উলামারা করে থাকেন।আর পরিবারকেন্দ্রিক কিছু কজাকর্ম চলে।আর এক শ্রেনী রয়েছে যারা এর বিপরীত পশ্চিমা ধ্বজাধারিদের থেকে ইমপোর্ট করা কালসারকে অবলম্বন করে জীবন পরিচালনা করছে।এরা ঠিক বিপরীত কাজটি করে বলেই অশ্লিলতা বাড়ছে।আমাদের সংবাদ পত্রে প্রতিদিন যে অপরাধ গুলো দেখতে পাছ্ছেন যেমন-ধর্ষন,সন্ত্রাসে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ নিহত,নকলে বাধা দিতে গিয়ে শিক্ষক লান্চিত,মা-বোনের সম্ভ্রম হানি,অপরাধি ধরতে গিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনির অকাল মৃত্যু,চুরি ডাকাতি ইত্যাদি।সাধারনভাবে এগুলোর প্রতিরোধ করা সরকারের কাজ।কিন্তু সরকারের সাথে জন গনকেও এগুলোতে পারিবারিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে।তাহলে সে সরকার থাকবে সবল।আমাদের সমস্যাটা হলো এখানে।এখন সন্ত্রাসি প্রতিপালিত হছ্ছে সরকারি ছত্র ছায়ায়।কারন হলো সরকার তার আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশে যুবলীগদের ব্যবহার করছে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার জন্য।এটা সব সরকারের সময়ে হয়ে থাকে আর এখন একটা ক্রনিক ডিজিজের মত অবস্হা তৈরি হয়েছে।সরকার যদি সৎ না হয়,তাহলে মিডিয়াতে যত কথাই বলুক তার সুফল আসবে না। মানুষের ভিতর এবং বাহির কাজের ক্ষেত্রে এক হতে হয়।
গত কয়েক মাসে দেশে যে ভয়াভহ অবস্হা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি তাতে যে নীরিহ মানুষগুলো প্রান হারালো এখানে আমরা কাকে দায়ি করবো।এদেশের সাধারন মানুষগুলোকে পূঁজি করে রাজনীতি চলছে আর তারা নিষ্পেশিত হছ্ছে।৭১ সালেও সাধারন মানুষগুলো দেশ মাতৃকাকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।কৃষক মাঠে কাজ করছিল, মুক্তিবাহিনীকে দেখে হালের গরু ছেলের হাতে দিয়ে যে যুদ্ধে চলে গেল আর ফিরে আসেনি।এই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন হয় নি।বিচার করে দেখুন, আমলাদের কয়জন এভাবে মৃত্যুবরন করে।তাদের পরিবার দেশের বাইরে লক্সারি জীবন যাপন করে।তাদের ছেলে মেয়েরা বিদেশে পড়াশুনা করে।আবার এসে বাবার রাজনৈতিক হাল ধরে।এভাবেই যুগ যুগ ধরে শোষিত হছ্ছে সাধারন মানুষগুলো।তাহলে তাদের যে ভাল কথাগুলো আমরা শুনছি এগুলো একধরনের প্রহসনমাত্র।
আজকে সমাজ এত ভীত সন্ত্রস্ত যে একজন লোক রাস্তায় পড়ে থাকলেও না দেখার ভান করে সরে পড়ে।তাদের একটি ভয় কাজ করছে যদি তাকে সাক্ষি দিতে হয়।যদি অপরাধি জেনে যায় তাহলে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে আর হছ্ছেও তা-ই।এ অবস্হা কতকাল চলতে থাকবে? আমরা যে আইনের শাসনের কথা বলি তার প্রতিফলন কোথায়ও আমরা দেখতে পাছ্ছি না।বিচারবিভাগের কোন স্বাধীনতা নেই।রাষ্ট্রের ইছ্ছার কাছে সবাই জিম্মি।এ অবস্হায় আমাদের সবাইকে সমাজে শৃংখলা নিয়ে আসার জন্য ন্যায়ের পথে কোন ধংসাত্মক কাজ না করে সরকারের সাথে বসে সব সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।আমরা কিরুপ সমাজে বাস করবো তা আমদের প্রথমে ঠিক করে নিতে হবে।সমাজ বিনির্মানের পদ্ধতি রয়েছে।ব্যাক্তি ,পরিবার ,সমাজ ,রাষ্ট্র ও সংবাদ মাধ্যম একযোগে কাজ করতে হবে।আমাদের রাষ্ট্র যন্ত্রের এই ইলিমেন্ট গুলো এখন বিছ্ছিন্ন।তাহলে কিভাবে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মান হবে।সবচেয়ে ক্ষতি করছে আমাদের মিডিয়া জগতগুলো।এদের অনেকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে সংবাদ পরিবেশন করছে।সে কারনে জন গন বিভ্রান্তির শীকার হছ্ছে । এই এক চোখা সংবাদ পরিবেশনে তারা যে নিজেরাই ক্ষতি গ্রস্ত হছ্ছেন তা নয়, পুরো জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করছেন।অবশ্যই তাদের এই অশুভ পথ পরিহার করে নৈতিকতার আদর্শে আদর্শিত হতে হবে।আমাদের অসংখ্য দৈনিক ,সাপ্তাহিক ,পাক্ষিক , মাসিক ,ত্রৈমাসিক পত্রিকা রয়েছে যারা বিজ্গাপনের নামে অশ্লিল চি্ত্র,মিথ্যা খবর পরিবেশন করে সমাজকে বিষিয়ে তুলছে তাদের এই অনৈতিক ব্যবসা সমপ্রসারন অচিরেই নিয়ন্ত্রন করা জরুরি হয়ে পড়ছে।গনমাধ্যমগুলো যদি ইতিবাচক রুপ দিতে পারে তাহলে সমাজ বিনির্মানের পথ সহজ হবে।আর এর মাধ্যমে একটা শুভ সামাজিক বিশ্বাস ও মুল্যবোধ গড়ে উঠবে।এই ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ সব ধর্ম ও বর্নের মানুষ মিলে একযোগে করতে হবে।
পবিত্র কুরআনে একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।আল্লাহ একটি জনপদকে ধংস করার জন্য ফেরেস্তা পাঠালেন।ফেরেস্তা ফিরে এসে জানালেন হে আল্লাহ সে জনপদে একজন লোক আছে যে আপনার ইবাদাত বন্দেগিতে নিয়োজিত। কি করে এমন একজন আপনার বান্দাকে ধংস করি?আল্লাহ আদেশ দিলেন যাও তাকে দিয়ে ধংসের সূচনা কর।কারন সে নিজে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছে।সমাজে তার চতুর্দিকে যে অশ্লিলতা ছড়িয়ে পড়েছে তার প্রতি তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।আমরা দেখছি পৃথিবির বিভিন্ন যায়গায় এরকম দুর্যোগ আসছে আর ভাল মন্দ সব মানুষকেই এর ফল ভোগ করতে হছ্ছে।অনেকে ভাবতে পারেন তাহলে ভাল মানুষগুলো ভাল কাজ করে কি লাভ করেছে? আল্লাহ ক্কিয়ামতের দিন এই ভাল মানুষগুলোকে তাদের নিয়াত ও ঈমানের কারনে রেহাই দিবেন ইনশাআ্ল্লাহ।তবে যতদিন কোন সমাজের মানুষ ভাল কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য কাজ করবে আল্লাহ সে সমাজ ধ্বংস করবেন না।আজ আমরা সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে এ কাজ করছিনা বলে অপরাধ বেড়েই চলছে।হাট বাজারে,অফিস আদালতে,সমাজ সংসারে,ঘুষ দুর্নিতি ,ভেজাল অনিয়ম,নীপিড়ন নির্যাতন,লান্চনা গন্জনা,লুন্ঠন সন্ত্রাস ও ভয় ভীতি এগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে সুন্দর আচরনের মাধ্যমে,প্রয়োজনবোধে লিফলেট ছাপিয়ে জনসচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে হবে।
এপ্রিলের ৬ তারিখে হেফাজতে ইসলামের ঢাকাগামী কাফেলার যে নতুন একটা সম্ভাবনা আমরা দেখলাম এটা যদি তারা একমাত্র ইসলামের চর্চার জন্য ধরে রাখতে পারে তাহলে ইসলামের জয় একদিন হবেই ইনশাআল্লাহ।আর তারা যদি গনতন্ত্রের ছ্ত্র ছায়ায় চলে যায় তাহলে তাদের এই জাগরনের কোন অর্থ নেই। ইসলামের কাজ করতে হবে আল্লাহ ও তার রাসূলের পথে। কোন বিশৃংখলা ও নৈরাজ্য করা যাবে না ইসলামের নামে।বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে এপ্রিলের ৬ তারিখে স্মরণকালের সর্ববৃহত্ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে দেখে পুরো দেশ ,ঢাকাবাসী তথা প্রবাসির বাংলার মুসলিমরা আবেগ ও বিস্ময়ে যথাক্রমে আপ্লুত ও বিমূঢ় হয়েছে। সকাল থেকেই বঙ্গোপসাগরের অন্তহীন ঢেউয়ের মতো তৌহিদি জনতার মিছিলের পর মিছিল আছড়ে পড়েছে রাজধানীর সমতটে। অযুত কণ্ঠের আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছে এই বিশাল নগরী। অভাবনীয় ইসলামি জাগরণদৃষ্টে আমরা, বিশ্বাসীরা উদ্বেলিত হয়েছি। দীর্ঘকালের ফেলে রাখা রুক্ষ, শুষ্ক ঈমানি জমিতে বর্ষার অবিরাম ধারার মতো আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ৪২ বছরের ইতিহাসে এই জনসমাবেশেকে রাসূল সা: এর লংমার্চের তুলনা করা চলে।কারন যে নির্দেশটি দেয়া হয়েছিল, তোমাদের সাথে থাকবে যায়নামাজ,তাছবিহ ও মিসওয়াক। যেখানে বাধা আসবে সেখানে বসে পড়বে।এটাই ইসলামের বারতা। ইসলামের ইতিহাস বলে মুহাদ্দিছিন গন সমকালীন শক্তির কাছ থেকে কখনো ক্ষমতা নেন নি বরং প্রত্যাক্ষান করেছেন ও তাদের সংস্কারের কথা বলেছেন।আমি ইসলামের এ গনজাগরনে বিশ্বাস করি এবং প্রত্যেক মুসলমানকে এভাবে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাই।
আমাদের সকলকে ভাবতে এ দেশ আমাদের দেশ। পৃথিবির কোথাও এমন সুন্দর দেশ নেই।শুধু আমাদের প্রয়োজন নৈতিকতা অর্জন ও তার সাথে দেশের জন্য জন্য কাজ করা।আমরা বিদেশে এসে অনেকে প্রচন্ড রোদে ৮/১০ ঘন্টা কাজ করছি অথচ দেশে গেলে নিজের ঘরের কাজটিও করছিনা এ কোন মানুষিকতা? আমাদের কে শ্রমের মর্যাদা দিতে হবে যেমন দিছ্ছি আমরা বিদেশে তেমনি দেশেও।আমাদের সরকারকে পথ দেখাতে হবে।প্রতিটি এমপি , মন্ত্রি ও দায়িত্নশীলদের এলাকায় গিয়ে তাদের এলাকা উন্নয়নে সহযোগিতা করলে এ সমস্যাগুলোর ধীরে ধীরে সমধান হতে পারে।আমাদের পরামর্শগুলো যেন হয় বাস্তব সম্মত।যা আমি নিজের জন্য পছন্দ করি তা যেন আমি সমাজের আর এক ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করি।এ নীতি যদি অবলম্বন করি তাহলে নিশ্চয়ই সমাজে দারিদ্রতা থাকবেনা ও আমরা একটা সবল জাতি হিসেবে পৃথিবীতে মর্যাদার আসনে আসীন হব ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১০৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন