ইসলাম ধর্মের সঠিক অনুশীলন একজন মানুষের চলার পথকে যেমন সহজ করে তেমনি তার অবদান দেশকেও উর্বর করে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:৫৯:৫৮ সন্ধ্যা
আল্লাহর নিকত থেকে মনোনীত ধর্ম হলো একমাত্র ইসলাম।সমাজ ব্যাবস্হা যা-ই হোক , পৃথিবির অবস্হান যেমনই হোক জ্গানীদের করনীয় কি? পৃথিবীতে জ্গানীদের যদি বিভাজন করি প্রধানত দুধরনের জ্গানী দেখতে পাই।এক ধরনের জ্গানী হলো ধর্মাবলম্বনে দিক্ষিত জ্গান লাভ কারি আর এক ধরন হলো দুনিয়ার জ্গান অনুসন্ধানি।ধর্মাবলম্বনে আবার শ্রেনী বিন্যাস করলে সেখানে তিন ধরনের জ্গানীর অনুসন্ধান মিলে।একভাগ হলো আসমানি কিতাবের অনুসরনকারি,দ্বিতীয় ভাগ পূর্ববর্তি আসমানি কিতাবকে বিকৃতকারি যেমন-ইহুদি ও খৃষ্টান , আর তৃতীয় ভাগ তাদের নিজেদের সৃষ্ট ধর্মের অনুসরনকারি যেমন-হিন্দু,বৌদ্ধ,জৈন ইত্যাদি।দুনিয়ার জ্গান অনুসন্ধানকারিদের আস্তিক ও নাস্তিক দুধরনের জ্গানী আছে যারা মানবকল্যানে নিজেদের মস্তিষ্কপ্রসূত জ্গান দ্বারা কল্যান করার প্রচেষ্টা করে।এদের অনেকে ধর্মে বিশ্বাসি নয় আবার কেউ ধর্মের ছত্র ছায়ায় বাস করে তবে ব্যাক্তি জীবনে ধর্ম পালন করে না।আল্লাহর কাছ থেকে নাজিলকৃত সর্বশেষ কিতাব হলো আলকুরআন ও তাঁর প্রেরিত শেষ পুরুষ হলো নবী মোহাম্মদ সা: যিনি ইসলাম ধর্মের প্রবক্তা।ইহুদি খৃষ্টানদের যেমন পাদ্রী রয়েছে তেমনি মুসলিমদের ও রয়েছে আলেম সমাজ।এই আলেম সমাজকে আমরা দু'ভাগে ভাগ করতে পারি।একভাগ হলো উলামায়ে রব্বানি বা আল্লাহ ওয়ালা আলেম আর একভাগ হলো উলামায়ে দুনিয়া।আল্লাহ ওয়ালা আলেমরা হলো খাঁটি আলেম যারা মানুষকে দেন কুরআন ও ছহি হাদিসের জ্গান।আর উলামায়ে দুনিয়া তারা হলো শির্ক ও বিদাআতের আলেম।নিজেদের প্রয়োজনে যখন যেখানে কথা বলার দরকার সেভাবে তারা করে থাকে। আবুদাউদে রাসূল সা: বলেছেন, ইহুদি বিভক্ত হবে ৭১ ভাগে , খৃষ্টান বিভক্ত হবে ৭২ ভাগে আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ ভাগে।ইহুদি , খৃষ্টান ও আমার উম্মতের ৭২ ভাগ যাবে জাহান্নামে আর এক ভাগ যাবে জান্নাতে।এই এক ভাগ হলো যারা রাসূল সা: পথে পথ চলেছেন অর্থাৎ সরল রাস্তা অবলম্বন করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদাতের জন্য।সূরা আয যারিয়ার ৫৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন ,'আমি মানুষ ও জ্জিনকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদাত করার জন্য।এই ইবাদাত হতে হবে একমাত্র রাসূল সা: এর অনুসরনে।ইসলামের প্রাথমিক যুগ গুলো পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই মুহাদ্দিছিন গন যে যেই পেশাতেই ছিলেন, তারা কুরআন ও সূন্নাহর অনুশীলন করে মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন।সমকালীন শাসকদের সাথে তারা কোন দ্বন্দ গড়ে তুলেন নি।নিজেরা কোন দল গড়ে তোলেন নি ইসলাম প্রচারের জন্য। ঈমাম আবু হানিফা (র) ছিলেন একজন কাপড়ের ব্যবাসায়ি।উমায়্যা শাসনের শেষ দিকে ও আব্বাছিয় শাসনের প্রথম দিকে দুই বারই তারা প্রধান বিচারপতির আসন অলংকৃত করার আমন্ত্রন করেছিলেন কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।তাকে তখন কার শাসকরা জেলে আবদ্ধ করেছিলেন ও যন্ত্রনা দিয়েছিলেন।তাদের জীবন ছিল দুনিয়ার লোভের উর্দ্ধে।আমাদের পুরো জীবনটা একটা আমানত।এই আমানতের কোন খেয়ানত করছি কিনা আমাদের ভেবে দেখা দরকার।বোখারি ও মুসলিম শরিফে রাসূল সা: বলেন,'ক্কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না বৃদ্ধ যেনাকারি,অহংকারি ফকির,মিথ্যাবাদি শাসক ,টাকনুর নিছে কাপড় পরিধানকারি,উপকার করে খোঁটাদানকারি ও মিথ্যা শপথ করে বিক্রয়কারির সাথে।আমাদের অনেক ক্রুতি বিচ্যুতি রয়েছে।আমাদের কাজ একে অন্যকে সংশোধন করা উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে।সূরা হুদের ৮৮ আয়াতে শোয়াইব আ: বলেন,'আমি শুধু চাই সংস্কার করতে যতটুকু সাধ্য আমার আছে,আমি আল্লাহর উপর ভরসা করি ও আমি আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে যে কোন পরিবর্তন আসে।প্রতিটি দেশে বিভিন্ন বভাগ যেমন-কৃষি ,বানিজ্য,চিকিৎসা,প্রকৌশল , বিজ্গান ও প্রযুক্তি,রাষ্ট্র পরিচালনা,সরকার ও রাজনীতি,আইন ও বিচার ইত্যাদি পেশার দায়িত্ব মানুষই পালন করে।তারা মুষলামান হলে ইসলামের আলোকে এই দায়িত্বগুলো পালন করবেন।উম্মতের ইসলামি শিক্ষার সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধন , ইলমে দ্বীনের প্রচার প্রসার আলেমদের কাজ।আলেমদের কর্মক্ষেত্র হলো মানুষ।মানুষের মধ্যে ঈমান , আক্কিদা ,উন্নত নৈতিকতা,পবিত্রতাবোধ,নিষ্কলুষ চেতনা জাগ্রত করা, ইবাদাত,মুআমালাত , মুশাআরাত শিক্ষাদানে মসজিদের ঈমাম ,খতিব ,মুআল্লিম ও মুবাল্লিগ গন যে সব কাজ করে থাকেন এ সব আলেমদেরই কাজ।মানুষকে ক্কালিমার দাওয়াত,শুদ্ধ কুরান শিক্ষা দান,মাসলা মাসায়েল,তফছির তরজমা,ফতোয়া,প্রশ্নের জবাব দেয়া,দৈনন্দিন জীবনে ধর্মিয় সমস্যাগুলোর সমাধান বিয়ে স্বাদি,লেনদেন।জন্ম মৃত্যু,দাফন কাফন,শির্ক বিদাআত,কুসংস্কার , রচম রেওয়াজ ,জাহেলি চেতনা অর্থাৎ এককথায় শরিয়তের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক গুলোর নির্দেশনা দেয়া আলেম সমাজেরই কাজ।ইসলামের মুল ৫টি কাজের মাধ্যমে মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলার দায়িত্ব আলেম সমাজের।
এখন একটু ভেবে দেখুন এ দায়িত্বগুলো আমরা তথা আমাদের আলেম সমাজ কতটুকু করছেন।আমাদের আলেম সমাজ বিভক্ত হয়ে ইসলাম প্রচার করছে অথচ রাসূল সা: বলেছেন আমার উম্মত একটিই উম্মত।জান্নাতের পথ এ দুনিয়ায় কাজ করেই অর্জন করতে হবে।ইহুদি খৃষ্টানরা যেমন জংগলে গিয়ে ইবাদাত করে আমাদের তো তেমন করলে চলবে না।আমাদের সংসার জীবন যাপনের মাধ্যমেই তা অর্জন করতে হবে।রাসূল সা: ফাতেমা (রা) কে বলেছেন , হে মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমা আমার কাছে যা চাও চেয়ে নাও।জান্নাত আমার কাছে চেওনা। আল্লাহর আযাব থেকে আমি বাঁচাতে পারবোনা।এই দুনিয়া হলো আখেরাতের কর্মক্ষেত্র।সমাজ পরিবর্তনে রাসূল সা: এর পদ্ধতি ও কর্মপন্হা হলো চিরন্তন।আমাদের দেশে প্রকৃত আলেম সামজ গড়ে না উঠার কারন হলো ইংরেজ শাসন আমলের ১৯০ বছরের রাজত্ব। তখন উপমহাদেশে তারা একশ্রেনীর বিদাআতি আলেম তৈরি করেছিল যারা ইসলামের শুধু ক্ষতি সাধনই করেনি বরং ছহি ইসলামের অনুশীলনে বাধা হয়ে আলেমে দ্বীনদের হত্মা করেছিল ইংরেজদের দ্বারা। আর শির্কি ও বিদাআতি প্রতিষঠান গড়ে তুলেছিল।গন তান্ত্রিক কোন সরকারই আরবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর নজর দেয়নি।আর মুসলিমদের মধ্যে যারা ধনাড্য ব্যাক্তিত্ব তারা ও এগিয়ে আসে নি উন্নত মানের মাদ্রাসা স্হাপনে যেখানে ছহি সূন্নাহের আলোকে শিক্ষা দান করবে।শুধু এই নয় সমাজে পরিবারের যে সন্তানটি অমেধাবি তাকে পাঠানো হয় মাদ্রাসায়।সে-ই বেরিয়ে আসে মুফতি হয়ে।তাহলে কে দিবে ফতোয়া? আমি বিষয়টিকে কটাক্ষ করছিনা। আমাদের সমাজে খাঁটি আলেম রয়েছেন, মুফতি রয়েছেন নিসন্দেহে।আমি বলছি সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা যা বাস্তব এবং আমি দেখে এসেছি জীবনের অনেক গুলো বছর জুড়ে।আমাদের সমালোচনা করার আগে ভাবতে হবে ইসলামি শিক্ষার জন্য আমাদের অবদান কতটুকু।
আমাদের একটি ছোট দেশ।এই দেশে আলেম উলামারা যেমন বিভক্ত তেমনি বিভক্ত অসংখ্য গনতান্ত্রিক দল।যে দেশে ১৫০ এর উপর দল রয়েছে সে দেশে উন্নতি হয় কি করে।ধরে নিলাম ইসলামি আইনকে গ্রহন করছে না আর ইসলামি শারিয়া কায়েম হওয়ার মত সে মানুষইতো এখনো তৈরি হয়নি।গনতান্ত্রিক ছত্রছায়ায় যারা ইসলাম কায়েমের চেষ্টা চালাছ্ছে সেটা কোন ইসলাম কায়েমের পথ নয়।ইসলামিক মডার্নিজম শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভ ছাড়া ইসলামের মৌলিক উন্নতি সাধন করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করিনা।বরং এতে ইসলামের সৌন্দর্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।আমরা তাদের কাজকর্ম থেকে দেখতে পাছ্ছি যে মানুষের জীবন যাছ্ছে , দেশে রাহাজানি বাড়ছে,জাতীয় সম্পদের ধংসসাধন হছ্ছে।ইসলামের উন্নতি চাইলে ইসলামিক মানুষগুলোকে এক হতে হবে।তানাহলে দেশে যে সরকারই আসুক তাদের ভাল কাজগুলোকে সমর্থন করতে হবে আর খারাপ কাজগুলোর জন্য বিবৃতি দিতে হবে , তাদের সাথে সহনশীলতার সাথে বসে জাতীয় সমস্যার সমাধান করতে হবে।এতে দেশে বিশৃংখলা হবে না ও জান মালের ক্ষতি হবে না।আর যারা সরকারে থাকবে বিরোধিদের শান্তিপুর্ন মিছিল মিটিং , দাবি দাওয়া ও তাদের অধিকার কে খর্ব না করে সহনশীলতার সাথে সমাধানের চেষ্টা করবে।আমরা যদি সবাই দেশের কল্যানের জন্যই কাজ করি তাহলেতো বিভেদ থাকতে পারে না।বিভেদ তখনি আসে যখন আমাদের মধ্যে স্বার্থপরতা থাকবে।আমাদের দেশে সম্পদেরঅভাব নেই। শুধু মাত্র পরিচর্যার অভাবে আমরা পৃথিবিতে দরিদ্র দেশের কাতারে অবস্হান করছি।আমাদের নৈতিকতার উম্মেষ ঘটাতে হবে।আমাদের সস্তা শ্রমিক পৃথিবির বিভিন্ন দেশে কঠোর পরিশ্রম করে টাকা উপার্যন করছে অথচ সরকার তাদের পৃষঠপোষকতা করলে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান হতে পারে।আমাদের দেশে গ্রামে গন্জে লাখ লাখ একর সম্পদ এখনো অনাবাদি রয়েছে যা থেকে বৈজ্গানিক উপায়ে উৎপাদিত কৃষি উপকরনাদির মাধ্যমে ১৬ কোটি নয় এর ডাবল খেয়ে পরে বাঁচতে পারে।একটি বাস্তব উদাহরন টেনে শেষ করবো।এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের যুবক এসেছিল অনেকদিন আগে।৩ বছর কাজ করার পর হাঁপিয়ে উঠেছিল।একদিন আমার অফিসে এসেছিল চাকুরির খোঁজে।সবকিছু জেনে তাকে আমি কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম তবে তাকে থাকতে হয়েছিল আরো দুবছর।তার বাড়ির আশে পাশে একটি ছোট পুকুর সহ কিছু খালি যায়গা ও ডোবা ছিল।পরামর্শটা ছিল এরকম।বাড়িতে তার আরো দুটি ভাই আছে।এক বছরের মধ্যে যায়গা গুলো ভরাট করা হলো । পুকুর সংস্কার করে মাছের পোনা ছাড়া হলো।পুকুরের পাড়ে স্বলপ পরিসরে হাসমুরগি ও দুটি গাভির চাষ শুরু করলো।কাজটা যখন একটু এগুলো ছেলেটি আড়াই বছরের মাথায় চলে গেল।উপজেলা থেকে কিছু প্রশিক্ষন নিয়ে পাশের যায়গা গুলোতে পরিকল্পনা মাফিক ফলের বাগান শুরু করলো।তিন বছরের মাথায় আমাকে ফোন করে জানালো স্যার আপনার পরামর্শে এখন আমি আমার পরিবারের খরচ মিটিয়ে ৬০ হাজার টাকা মাসে জমা করতে পারছি।আমাদের উদ্যোক্তার যেমন অভাব রয়েছে তেমনি রয়েছে উদ্যোগের।আমাদের সরকার আশা করি যুবকদের এভাবে কাজে লাগাতে পারে আর যুবকরাও তাদের জীবনের প্রয়োজনে এগিয়ে আসলে আমরা কেউ আর গরিব থাকবো বলে আমার মনে হয় না।তবে আমাদের দেশের স্বাধীনতার স্বাধ পাওয়ার জন্য , দেশের পুনর্গঠনের জন্য ৭১ এর মত দলমত নির্বিশেষে আর একটি ঝাঁপ দিতে হবে।আশা করি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত না থেকে অন্তত বড় বড় ইস্যুগুলোতে একমত হবেন এবং আমরা জন গন আপনাদের সাথে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করবো। তা নাহলে আমাদের গরিবত্বের ঘানি নিয়েই হাজার বছরের পথ চলতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন