ভোগবাদি সমাজের অভিশাপ মুসলিমের ঘরে ঘরে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:৫৫:০১ বিকাল

সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আসমান ও যমিন এবং তার ভিতর যা কিছু রয়েছে সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে আর অধিষ্ঠিত হয়েছেন আরশে।যিনি মানুষকে তার প্রতিনিধি ও সৃষ্টির সেরা করে বানিয়েছেন।তিনি দুনিয়ার মানুষের সার্বিক কল্যান এবং আখেরাতে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়ে চির সুখের জান্নাত দানের লক্ষে যুগে যুগে মানুষের পক্ষ থেকে নবী ও রাসূল মনোনীত করে তাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ও কল্যানকর আইন বিধান সম্বলিত জীবন ব্যাবস্হা পাঠিয়েছেন যা সূরা মা'য়েদার ৩ আয়াতে " ইসলাম" নামে আখ্যায়িত করেছেন।ইসলামই হলো একমাত্র শান্তির ধর্ম যা মানুষকে পূর্নাঙ দিক নির্দেশনা দিয়েছে।আর এ কারনে মুসলিম মাত্রই পরিপূর্ন আনুগত্যের শির নত করে দেয় ইসলামের কাছে।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমাদের মনে প্রানে বুঝতে হবে ইসলাম কোন পরিবার তন্ত্র নয় বা পারিবারিক ঐতিয্য নয় যা যুগ যুগ ধরে চলবে।ইসলাম হলো শান্তি আর মুসলিম হলো যে ইসলামের আনুগত্য করে।রাসূল সা: কে আল্লাহ সারা দুনিয়ার জন্য রহমত স্বরুপ ও উন্নত চরি্ত্র দিয়ে পাঠিয়েছেন।সূরা কলমের ৪ আয়াতে এর স্বীকৃতি দিয়েছেন,'আর নি:সন্দেহে তুমি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।সেই মহান চরিত্র দিয়ে তিনি একটি ইসলামি সমাজ বিনির্মান করেছিলেন যা রোজ ক্কিয়ামত পর্যন্ত টিম টিম করে জ্বলতে থাকবে।একে নির্বাপিত করার কোন শক্তি কারো নেই।সেই সমাজ ব্যাবস্হা শিখিয়েছে কিভাবে একটা জীবন চলবে,পরিবার গঠিত হবে,সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যাবস্হা কিভাবে চলবে।তার তিরোধানের পর তারই তৈরি করা ৪ জন সাহাবী বা সাথি ৩০ বছর দেখিয়েছেন একই পথ। কালের বিবর্তনে সমাজ ব্যাবস্হায় পরিবর্তন এসেছে মানুষের কর্ম ও চিন্তা চেতনার করানে।আল্লাহ স্বাধীন করে মানুষকে পাঠিয়েছেন।তিনি দুনিয়ার জীবনে ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন, বান্দাহ যেদিকে যেতে চায় সেদিকে তাকে যেতে দিবেন।কারন তার কর্মের বিচার ফায়সালার জন্য আখেরাতে একদিন নির্ধারিত আছে।সুতরাং এ জীবনে তিনি কাউকে বাধাগ্রস্হ করবেন না।

বর্তমান পৃথিবির প্রতিটি ভূখন্ড এক ভয়ংকর রোগের শীকার যা খুব কম মানুষই ভাবে।এই রোগ সংক্রমিত হছ্ছে ইসলামিক দেশ গুলোতে অনৈসলামিক দেশ থেকে।এগুলো সভ্যতার নামে আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ছে।এই রোগটিকে বলা হয় ভোগ বাদি সমাজের অভিশাপ(Curse of consumer society) যা আদর্শ হিসেবে অনুসরন করছে অধিকাংশ মানুষ।একটু পর্যালোচনা করে দেখুন আমাদের পরিবার ও সমাজকে।আপনি যদি সমাজের একটা পরিসংখ্যান নেন দেখবেন তাদের অধিকাংশই বলবে বস্তুবাদই আমাদের সুখ স্বাছ্ছন্দের কারন।তারা বলবে আমাদের সুখের দু'টিই বস্তু, টাকা ও সম্পদ।এই টাকা ও সম্পদের পিছনে ছুটতে গিয়ে হারিয়ে যাছ্ছে আমাদের জীবন প্রদীপ।আমি বলছিনা এ দুটো বস্তু থেকে আমরা উপকৃত হছ্ছি না।আপনার হালাল আয় যদি থাকে হালাল ব্যায় ও আপনি করবেন।এ পৃথিবীকে ভোগ করার অর্থ হলো আপনার ইবাদাত করতে গিয়ে যতটুকু আপনার প্রয়োজন তা-ই আপনি সংগ্রহ করবেন।যদি আপনার হালাল অনেক অর্জন হয় আপনাকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যায় ও করতে হবে।রাসূল সা: এর সাহাবিদের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা খেয়ে না খেয়ে দ্বীন চর্চা করেছেন।দুনিয়ার জীবন থেকে ততটুকু নিয়েছেন যতটুকু দ্বীন পালন করার জন্য প্রয়োজন ছিল।আমরা এ দুটো জিনিসকে এমনভাবে দেখছি যে প্রয়োজন থাকুক বা না-ই থাকুক টাকা ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছি।আমাদের আশে পাশে আত্মীয় ও প্রতিবেশি অভাবগ্রস্ত হলেও তা দেখছিনা।অথচ রাসূল সা: বলেছেন সেই ব্যাক্তি মু'মিন নয় যে খেয়ে ঘুমায় আর তার প্রতিবেশি না খেয়ে রাত যাপন করে।দেখুন সেযুগে সাহাবীরা কি ব্যাবহার করতেন তাদের প্রতিবেশির সাথে।আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক একজন সাহাবী।তার ছিল একজন ইহুদি প্রতিবেশি।দুজনের বাড়িটি ছোট ও এক বাড়ির সাথে আর এক বাড়ি লাগা।আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক কয়েকবার তাকে বাড়িটি বিক্রি করার জন্য প্রস্তাবও দিয়েছিলেন কিন্তু ইহুদি ব্যাক্তি রাজি ছিলনা।একবার ইহুদি সমস্যায় পড়ে বাড়িটি বিক্রি করার প্রস্তাব দিল।এবার আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক নিষেধ করলেন যে বাড়ি রাখবেননা।তখন ইহুদি বললো তুমি আমাকে কতবার বাড়ি বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছ এখন নিষেধ করছ যে বাড়ি ক্রয় করবে না। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক বললো আমি যখন ছেয়েছি তখন তুমি অভাবগ্রস্ত ছিলে না।এখন তোমাকে অসুবিধায় ফেলে আমি এ বাড়ি ক্রয় করতে পারি না।তুমি বরং কত টাকার দরকার টাকা নিয়ে যাও এবং এ বাড়িতেই থাক।সে সমাজে ইসলাম এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আমাদের এখন প্রতিযোগিতা চলছে কে কত বেশি সম্পদের মালিক হব।কে কত বেশি সমাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হব।বস্তুবাদের জিনিসগুলো দিয়ে কার ঘরে কত বেশি আধুনিকায়ন করবো।একটা দেশ উন্নতির শিখরে উঠার জন্য আর একটি দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করছে।আর আমরা ভাবছি ধন সম্পদ সমান সুখী জিবন যাপন।ধন সম্পদ কিভাবে সুখি জীবন যাপনের সমান তা আমাদের সমাজে প্রমান করার দরকার।গ্লোবালি নিউজ পর্যবেক্ষন করুন।আমাদের দেশের ডেইলি পেপারগুলো দেখুন কি পরিমান আত্মহত্মা হছ্ছে।সেখানে উচ্চ বিত্ত থেকে নিম্ন বিত্ত পর্যন্ত এ রোগের শীকার দেখতে পাছ্ছি।ধরে নিলাম নিম্নবিত্ত তাদের টানাপোড়নের কারনে এ জীবন থেকে সরে পড়ছে।কিন্তু যাদের হাতে বস্তুবাদের কোন কিছুর অভাব নেই তারা কেন এতে জড়াছ্ছে।কয়েকবছর আগের ঘটনা ভারতীয় একটি পত্রিকায় দেখলাম একজন দ্বাদশী বা চতুর্দশী আত্মহত্মা করেছে।কারন ছিল তার মা তাকে টিভি দেখতে বারন করেছে।বস্তুবাদের কোন কিছুরই অভাব ছিল না।আসলে আমরা যে মতবাদকে জীবন সঙি করে নিয়েছি সেখানে কোন সুখ নেই।এগুলো আমাদেরকে সাময়িক সুখ দিলেও আমাদের চিরন্তন সুখ কেড়ে নেয়।আমাদের যে প্রতিযোগিতা ছলছে সমাজিক বুরুক্রেসি নিয়ে তা আমাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে।টাকার মাধ্যমে আমরা লেটেষ্ট গাড়ি কিনছি , বাড়ি করছি, অভিজাত জিনিসপত্র খরিদ করছি,অবসর যাপনে ঘুরতে যাছ্ছি ,হোটেলে রাত যাপন করছি, মদ ও নৃত্যে মেতে উঠছি, সুন্দরি স্ত্রী পাওয়ার প্রতিযোগিতা করছি, সামজিক অনুষ্ঠান গুলোতে যোগদান করছি।আর ভোগবাদি সমাজ আমাদের এ জিনিসগুলো সরবরাহ করছে।এগুলো কি আমাদের প্রকৃত সুখ বয়ে আনছে?

পৃথিবীর সভ্য যে দেশগুলোকে মনে করছি আমরা অনেকে, সেখানের সমাজিক অবস্হার চিত্র পর্যালোচনা করুন দেখবেন মানবিক বিপর্যয় কি ভয়াবহ রুপ পরিগ্রহ করেছে।এমেরিকার খৃষ্টান ধর্মিয় লেখকদের লিখা পর্নোগ্রাফি পড়লে বুঝতে আপনাদের অসুবিধে হবে না সে সমাজ কত সভ্য।প্রায় ৭৫ মিলিয়ন হেভি ড্রান্কার ও ৯০ মিলিয়নের মত মহিলা অবিবাহিত যারা স্বামি খুঁজে পাছ্ছে না বিয়ে করার জন্য।আর তারা জড়িয়ে পড়ছে অবাধ যৌনতায়।সেখানে প্রতি এক মিনিটে একটা ধর্ষন হছ্ছে।কানাডায় প্রতি ৩ মিনিটে একটি ধর্ষন হছ্ছে।গোটা ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশ গুলোতে এক ভয়াবহ অবস্হা।একজনের পাশে আর একজন কুকাজ করছে কারো কিছু মনে হছ্ছে না কারন এটা তাদের ব্যাক্তি স্বাধিনতা।কিন্তু আপনি যদি মুসলিম হয়ে থাকেন কিভাবে মেনে নিছ্ছেন। আপনার চোখে প্রতিনিয়ত ব্যাভিচার প্রত্যক্ষ করছেন।পৃথিবী ব্যাপি যে অশ্লিল পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিটি সমাজে তার দায়ভাগ সিনেমা প্রডিউসার ও আর্টিষ্টদের মাথা পেতে নিতে হবে।অশ্লিল সিনেমা ও আইটেম যে গান গুলো অশ্লিল নৃত্য দ্বারা পরিবেশিত হছ্ছে এতে যুবকদের অধিকাংশ তাদের মুল্যবান ভবিষ্যৎ হারাছ্ছে।যার পরিনতি দেখতে পাছ্ছেন সমাজে ধর্ষনের হারের উর্ধগতিতে।ভারতীয় অশ্লীল পর্নোগ্রাফির অবস্হান বিশেষ করে আমাদের বাংলাভাষাভাষিদের সমাজে দ্রুতগতিতে অনুপ্রবেশ ঘটছে তার বিরুদ্ধে খুব কম মানুষই কথা বলছে।গত ডিসেম্বরে দিল্লিতে দামিনি নামে যে মেডিকেল ছাত্রিটি বলিদান হয়ে গেল এবং আমাদের দেশে পর পর অনেকগুলো ঘটনা ঘটলো তা বস্তুবাদের অভিশাপ নয় কি? অথচ শাহরুখ খানের মত লোকদের আবার পত্রিকায় ছাপাই গাইতে দেখেছি যে , সে নাকি ঐ সমাজের একজন হিসেবে লজ্জা বোধ করছে। তার ও তার সাথিদের অশ্লিল পর্নোগ্রাফিক সিনেমাগুলো এর জন্য দায়ি নয় কি? বলিউড সিনেমা ইদানিং যে সিনেমাগুলো নির্মান করে সেখানে একদিকে নেকেড ছবি অন্যদিকে একজন স্বামি - স্ত্রীর গোপনীয় বিষয়গুলো এখন খোলাখুলিই দেখাছ্ছে যা দেখে সুপ্ত যুবকরা জেগে উঠছে অসামাজিক কর্মকান্ডে।শুধু সিনেমাই নয় যৌনস্পর্শি বিজ্গাপন গুলো এখন যে কোন টিভির পর্দায় শোভা পাছ্ছে।আপনার শিশুদের ভবিষ্যৎ কি ভেবেছেন? অনেক বছর আগের ঘটনা।এক আত্মিয়র বাসায় একটি সিরিয়েল নাটক দেখছিলাম সবাই মিলে।নাটকের শেষপ্রান্তে এসে অভিনেত্রি ভোমির ভাব করলো।আমার আত্মিয়ার একটি ৮ বছরের মেয়ে বলে উঠলো, মা পরের সিরিয়েলে মহিলাটির বাচ্চা হবে।এ থেকে কি বুঝা যায় না তাদের জীবন একটু বড় হলে কোথায় গিয়ে পৌঁছবে।আর এখন চ্যানেল এর অভাব নেই।প্রায় প্রতিটি চ্যানেলেই অপসংস্কৃতি পরিবেশিত হছ্ছে।

আমরা অনেক কঠিন সময় পার করছি।আমাদের অনেক বড় জবাবদিহীতা অপেক্ষা করছে।আমাদের এ সব নিয়ন্ত্রনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।ঘরে ঘরে যদি আমরা এসব আপসংস্কৃতিকে বর্জন করি তাহলেই সম্ভব আমাদের পরিবেশকে পুষ্ট রাখা।আমরা মিডিয়াকে বন্ধ করতে পারবোনা কারন এর চাবি রয়েছে বিজাতিয়দের হাতে।আমাদের হাতে যে চাবি আছে সেটাকে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের পরিবেশকে সুস্হ রাখতে হবে।আর আমাদের বসে থাকলেই হবে না আমার ও আপনার আশে পাশে সবাইকে ভাল রাখার জন্য আপনিও একজন দায়িত্বশীল হিসেবে পরামর্শ দিন।এভাবেই আমরা কিছুটা ভাল থাকতে পারবো।

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File