নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পলিমাটির দেশ ভোলা জেলায় আমন্ত্রণ

লিখেছেন লিখেছেন সত্য বয়ান ২৪ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:০৭:৫৯ সন্ধ্যা



কেন আসবেন ভোলা জেলায় :

ভোলা বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাচীন গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ। খানকার সংস্কৃতিতে রয়েছে মিশ্র প্রভাব। মেঘনা, তেঁতুলিয়া বিধৌত বঙ্গোপসাগরের উপকুলে জেগে ওঠা প্রায় ৯০ মাইল দৈর্ঘ্য ও ২৫ মাইল প্রস্থ বিশিষ্ট এ ভূখন্ডের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যেদিকে চোখ যায় সব দিকে শুধু সমতল ভূমি। ফসলের দোলায়মান দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ দেখে মানুষের মনে জেগে ওঠে বাউলের গান ও রাখালের বাঁশীতে ভর করে মোহনীয় সুর। প্রাকৃতিক সুষমামন্ডিত এ এলাকার গাছ গাছালি, পাখির কুজন বারমাসি ফলমূল সত্যিই উল্লেখযোগ্য।

হিমালয় থেকে নেমে আসা ৩টি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র বাহিত পলি দিয়ে মোহনায় গড়ে উঠেছে এ দ্বীপ। সমুদ্র সমতল থেকে এর গড় উচ্চতা ১২ ফুটের মতো। নৃ-তত্ত্ব ও ভূ-তত্ত্ববিদরা মনে করেন ‘‘পূর্ব দিকে মেঘনা ও পশ্চিম দিকে তেঁতুলিয়া নদী বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এসে গতিবেগ হারিয়ে ফেলে। ফলে স্থানটিতে কালক্রমে পলি ও নদীতে বয়ে আসা বর্জ্য জমা হয়ে আজকের ভোলা নামক দ্বীপটির জন্ম।’’

ভোলার মেঘনা তেতুলিয়ার তীর ঘেষে রয়েছে ছোট ছোট জেলে পল্লী। মাছ ধরা মৌসুমকে সামনে রেখে পল্লীর মহিলা ও শিশু কিশোররা পালাগান গেয়ে রং বেরংয়ের সুতা দিয়ে জাল বোনে। এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এসব জাল টানানো হয়। তখন বাড়িতে বাড়িতে চলে উৎসব। এছাড়াও রয়েছে ভোলার দক্ষিণে নৈসর্গিক দৃশ্য সম্বলিত চর কুকরী মুকরী, ঢালচর, লতার চর ও চর নিজাম সহ অসংখ্য চর। এ চরগুলো হলো পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।

এখানে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলেও অনেক জমিদার বাড়ি সগৌরবে দাড়িয়ে আছে। যেমন- মানিকা মিয়া বাড়ি, কুতুবা মিয়া বাড়ি, দেউলা তালুকদার বাড়ি, পরান তালুকদার বাড়ি, রজনী করের বাড়ি ইত্যাদি। তবে দৌলতখানের জমিদার কালা রায়ের বাড়ি ছিল বিখ্যাত। তার প্রাসাদে হতো বাইজী ও ক্লাসিকাল ঢঙের ওস্তাদদের গান। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এ বাড়ি। এছাড়া জাগ্রত মাজার হচ্ছে হযরত উজির চান করনীর মাজার।

ভোলার ঘুইঙ্গার হাটের মিষ্টি ও ঘোষের দধির সুনাম দীর্ঘকাল ধরে। অতিথি আপ্যায়ন ও জামাই বরণে ভোলাবাসীর প্রথম পছন্দ এ দধি ও মিষ্টি। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এ মিষ্টি ও দধি উপঢৌকন হিসেবে পাঠানো হয়।

ভোলায় এককালে লবণ তৈরি হতো। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি খাল দিয়ে ভোলার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে লবণাক্ত পানি আটকিয়ে আগুনে জ্বাল দিয়ে লবণ তৈরি করা হতো। অধিকাংশ লবণ তখন তজুমদ্দিন, মির্জাকালুতে বিক্রি হতো। ব্রিটিশ সরকার লবণ কর বৃদ্ধি ও নানা বিধি-নিষেধ আরাপ করলে ১৯৩০ সালে ভোলায় লবণ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৩০ সালের ১লা বৈশাখ পুলিশের গুলিতে ২জন মারাও যায়। পরে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও সে স্মৃতি আজো অম্লান হয়ে আছে।

ভোলা একটি গ্যাস সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ভোলা শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ডে ১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে। এ গ্যাস দিয়ে ভোলার চাহিদা মিটিয়েও বাইরে পাঠানো যায়। এ গ্যাস দিয়ে ইতোমধ্যেই একটি সার কারখানা স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

ভোলা মহিষের বাথানের জন্য বিখ্যাত। ভোলার বিভিন্ন চরে অর্ধশতাধিক মহিষের বাথান আছে। এসব বাথান থেকে প্রতিদিন শত শত কেজি দুধ উৎপাদিত হয় এবং এ দুধ থেকেই তৈরি হয় বিখ্যাত মহিষের দধি, পনির ও ঘি। এসব দধি, পনির ও ঘি ভোলার বাইরেও পাঠানো হয় বিক্রির জন্য।

ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা ছিল পর্তুগীজ দস্যুদের দখলে। পরে এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন বসতি স্থাপন করে। এখানে কান লম্বা, কেশর ভরা বিখ্যাত জাতের কুকুর ছিল। এখন বিলুপ্ত প্রায়। এখানে পর্তুগীজের তৈরি করা প্যাগোডার ধ্বংসাবশেষ রয়ে গেছে।

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, মেজর হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম মহানায়ক জননেতা তোফায়েল আহমেদ, ঢাকার সাবেক মেয়র ও মন্ত্রী প্রয়াত বিজেপি চেয়ারম্যান নাজিউর রহমান মঞ্জু, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রগামী সৈনিক বিপ্লবী কমরেড নলিনী দাস, জাতীয় মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হক এবং প্রাক্তন পানি সম্পদ ও ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত রাজনীতিবিদ মোশারেফ হোসেন শাহজাহান সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক গুণীজন উপহার দিয়েছে প্রাকৃতিক নৈসর্গের লীলাভূমি এ ভোলা।



ভোলায় যাবেন যেভাবে :


ঢাকা থেকে নদী পথে ভোলার দূরত্ব ১৯৫কি.মি.। ঢাকা থেকে ভোলার উদ্দেশ্যে দৈনিক কয়েকটি লঞ্চ চলাচল করে। তন্মধ্যে এম.ভি ভোলা, সম্পদ, লালি, বালিয়া ও চিতা অন্যতম। লঞ্চগুলো সাধারনত সন্ধ্যা ৬টার সময় গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করে । ৮/৯ ঘন্টা নদী ভ্রমন শেষে ভোলায় পৌছে যায়।

বাসযোগে বরিশাল হয়ে সড়কপথে দূরত্ব ২৪৭কি.মি.(৭/৮ ঘন্টা) এবং লক্ষীপুর মজু চৌধুরীর হাট হয়ে দূরত্ব ২৪০কি.মি.(৬/৭ ঘন্টা)।

প্রথম শ্রেনীর আসনে গেলে ভাড়া বাবদ প্রায় ১০০০ টাকা খরচ হতে পারে ।

যোগাযোগের মাধ্যম সম্পর্কে তথ্যাবলী নিম্নরুপ-

এমভি ভোলা

যোগাযোগ: ০৪৯১-৬১২৩৬

১ম শ্রেণী ভাড়া -৯০০/-

৩য় শ্রেণী ভাড়া - ২০২/-

এমভি সম্পদ

যোগাযোগ: ০৪৯১-৬১২৩৬

এমভি শ্রীনগর

যোগাযোগ: ০৪৯১- ৬২৫২৩

এমভি কর্ণফুলী

যোগাযোগ: ০৪৯১- ৫১৩৫৪

এমভি বালীয়া

যোগাযোগ: ০১৭১১৯০৫৪৭১

এমভি লালী

যোগাযোগ: ০১৭১১৯০৫৪৭১

১ম শ্রেণী -৯০০/-

৩য় শ্রেণী- ২০২/-

বন্দর নগরী চট্রগ্রামের সাথে যোগাযোগ:

সী ট্রাক ও বাসযোগে ভায়া লক্ষীপুর-৬/৭ ঘন্টা।

বিভাগীয় শহর বরিশালের সাথে যোগাযোগ:

লঞ্চযোগে ২:২০ঘন্টা,স্পিড বোট ৪৫ মিনিট

অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ:

ভোলা জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ খুবই ভাল। ১টি উপজেলা ছাড়া অন্য ৬টি উপজেলায় বাস/জীপযোগে যাতায়াত করা যায়। মনপুরা উপজেলায় সী-ট্রাক যোগে যেতে হয়।

থাকবেন যেখানে:

জেলায় আগত অতিথিদের জন্য জেলা সদরে ১টি সার্কিট হাউজ ও বাকি ৬টি উপজেলায় জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রনাধীন ৬টি ডাকবাংলো রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ব্যক্তি মালিকাধীন হোটেল সমূহ । নিম্নে ব্যক্তি মালিকাধীন হোটেল সমূহের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া হল:

হোটেল জেড ইন্টারন্যাশানাল

জাহাঙ্গীর প্লাজা, সদর রোড, ভোলা

সিঙ্গেল- ৩৫০/-নন এসি

ডাবল-৬০০/- নন এসি

সেমিডাবল - ১০০০/-এসি

ডাবল - ১২০০/- এসি

হোটেল আহসান

কে জাহান মার্কেট সংলগ্ন, সদর রোড, ভোলা।

নন এসি

সিঙ্গেল- ৪০/-

ডাবল-১০০/-

০১১৯১৪২৬৩২২

হোটেল জাহান

কে জাহান মার্কেট, ২য় তলা সদর রোড, ভোলা।

সিঙ্গেল- ৩০০/-

ডাবল -৭০০/-

০১৭১৬৮৭৯৯৭৫

হোটেল শীশ মহল

কালীনাথ রায়ের বাজার সংলগ্ন, মহাজন পট্রি, সদর রোড, ভোলা।

সিঙ্গেল - ১০০/-

ডাবল - ২৫০/-

০৭১৮৩৩৫৩১১

মোটেল প্রিন্স

হাবিব মেডিকেল এর পার্শ্বে সদর রোড, ভোলা।

সিঙ্গেল - ১০০/-

ডাবল - ২০০/-

০১৭১২৭৬২৩৫৪

হোটেল গোল্ডেন প্লাজা

সদর রোড মহিলা কালেজ হোস্টেল সংলগ্ন ভোলা।

নন এসি

সিঙ্গেল - ৬০/-

ডাবল - ১২০/-

০১৭২৬৬৬৭২১৮

মাহবুবা ইন্টারন্যাশনাল

সদর রোড মাহবুবা মার্কেট ৩য় তলা, ভোলা।

নন এসি

সিঙ্গেল - ১০০/-

ডাবল - ২০০/-

০১৭১৬০০০৪৬০

হোটেল আলমগীর

সদর রোড আলমগীর বোডিং, ভোলা।

নন এসি

সিঙ্গেল - ৪০/-

ডাবল - ৮০/-

০৪৯১-৬১৩৫৪

হোটেল রয়েল প্যালেস

চক বাজার রোড, হক মার্কেট ২য় তলা, ভোলা।

সিঙ্গেল - ১০০/-

ডাবল - ২০০/-

০১৭৩৫২৫১০০৮

হোটেল প্যারাডাইস

চক বাজার রোড, হক মার্কেট ২য় তলা, ভোলা।

নন এসি

সিঙ্গেল - ১০০/-

ডাবল - ২০০/-

০১৭১৬০৮৩১৮১

হোটেল আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল

মহাজনপট্রি সদর রোড, ভোলা।

নন এসি

সিঙ্গেল - ২০০/-

ডাবল - ৫০০/-

০১৭৪৬৩৯৮৪১১

হোটেল নিরালা

নতুন বাজার, ভোলা।

নন এসি

সিঙ্গেল - ৮০/-

ডাবল - ২০০/-

০১৭২৩২০৩৮৪০

হোটেল টি হোসেন

নতুন বাজার, ভোলা।

নন এসি

সিঙ্গেল - ৬০/-

ডাবল - ১০০/-

০১৭১২৪১৬৮৫৭

তথ্যসূত্র :

জেলা প্রশাসন, ভোলা ।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

ভ্রমণ সংক্রান্ত আরো তথ্য জানতে ফেসবুকে আমাদের সাথে যোগ দিন

বিষয়: বিবিধ

২১৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File