বঙ্গবন্ধুকে " বঙ্গশত্রু " বানাল বাংলালিংক
লিখেছেন লিখেছেন সত্য বয়ান ২১ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:০৮:৩১ রাত
বঙ্গবন্ধুকে " বঙ্গশত্রু " হিসেবে আখ্যায়িত করে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে বিদেশী মালিকানাধীন মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলালিংক । শুধু তাই নয় তারা উক্ত কুইজ প্রতিযোগিতায় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে আপত্তিকর অপশন রেখে কুইজ প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে ।
উক্ত প্রতিযোগিতার কয়েকটি প্রশ্ন হচ্ছে এ রকম -
১. বঙ্গবন্ধু মানে হল - ক) বাংলার বন্ধু খ) বাংলার শত্রু ।
২. বাংলাদেশের জাতির জনক কে - ক) শেখ মুজিবুর রহমান খ) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ।
৩. স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিচের কোন দেশ বংলাদেশকে সহায়তা করেছে - ক) ভারত খ) পাকিস্তান’ ।
৪. স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী সংগঠন ছিল - ক) রাজাকার খ) মুক্তি বাহিনী ।
৫. বিটিভির পূর্ন রুপ কি - ক) ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল খ) বাংলাদেশ টেলিভিশন চ্যানেল ।
উল্লেখ যে, এই লেখক বিগত ১৮-০৪-২০১৩ ইং তারিখে স্বীয় বাংলালিংক নাম্বারে *১২৪# ডায়াল করে ব্যালেন্স চেক করলে সেই সাথে একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পায় । যার মূল ভাষ্য হলো - প্রতিদিন ৫০ জন সৌভাগ্যবান " গ্যালাক্সি ওয়াই " বিজয়ীর অন্যতম একজন হওয়ার জন্য *৪৪৬৬*১# ডায়াল করে কুইজে অংশগ্রহন করুন । অতঃপর কুইজের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করলে ২ টি করে অপশন দেওয়া এম.সি.কিউ আকারের প্রশ্ন আসতে থাকে । প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১০ পয়েন্ট করে যোগ হতে থাকে । পরপর কয়েকটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ার পরই একের পর এক বিতর্কিত অপশন যুক্ত প্রশ্নগুলো আসতে থাকে । এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় ।
এখন প্রশ্ন হলো - বঙ্গবন্ধু অর্থ " বাংলার শত্রু " কিভাবে দেওয়া হলো ? হয়তোবা তারা এর বদলে " বঙ্গবীর " কিংবা " বাংলার বাঘ " দিতে পারত । কিন্তু যার আপোষহীন নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, তাকে " বঙ্গশত্রু " হিসেবে তরুণ সমাজের নিকট উপস্থাপন করার কোন অধিকার বিদেশী কোম্পানীর আছে বলে আমরা মনে করিনা ।
আমরা মনে করি স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী সংগঠন হিসেব " মুক্তিবাহিনীর " নাম অন্তর্ভূক্ত করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সকল বীর যোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে । কেননা এটা কোন অপশন হতে পারেনা ।
তাছাড়া স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে আখ্যায়িত করে বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে তরুণ সমাজের নিকট উপস্থাপন করার মধ্য দিয়ে বংলালিংক রাষ্ট্রদ্রোহ মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলেই আমার ধারনা ।
সুতরাং বাংলালিংকের এমন রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এবং দেশের জনগনকে অবহিত করার লক্ষ্যে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল " জাস্ট নিউজ বিডি " কে জানালে উক্ত নিউজ পোর্টালের প্রতিবেদক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া জানতে চান ।
প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাস্ট নিউজকে বলেন, ‘এটা খুবই গর্হিত কাজ। এটি রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতীয় নেতা ও স্বাধীনতাযুদ্ধকে বির্তকিতভাবে উপস্থপনের ঘৃণ্য অপচেষ্টা । যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না । কুইজ প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধার বিকাশ ঘটায়; কিন্তু বাংলালিংকের কথিত এ প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত সত্য ও ডাহা মিথ্যাকে এক করে ফেলার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে । এভাবে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যমূলক ।’
দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার জাস্ট নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি এতোই ঘৃনিত যে, এ নিয়ে মন্তব্য করার কোনো ভাষা আমার নেই । এটাকে আমি তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও ঘৃনা জানাই । বঙ্গবন্ধু, জাতীয় নেতা ও স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো প্রতিষ্ঠিত সত্য নিয়ে বিতর্ক তৈরির জন্যই পরিকল্পিতভাবে এমন কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে । এর পিছনে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।
রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ইলিয়াছ খান জাস্ট নিউজকে বলেন, এটি চরম নিন্দনীয় কাজ । এ ধরনের তৎপরতা সমাজে বুদ্ধিভিত্তিক চর্চাকে উৎসাহিত করার বদলে আরো বাধাগ্রস্ত করবে ।
উক্ত কুইজের ব্যপারে বাংলালিংক কর্তৃপক্ষের মতামত জানতে চায় জাস্ট নিউজ । বাংলালিংকের হেড অব কমিউনিকেশন্স শরফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জাস্ট নিউজকে বলেন, এধরনের কর্মকান্ড কোনোভাবেই বাংলালিংকের সঙ্গে যায় না। এটা কিভাবে হলো তা অতি দ্রুত তদন্ত করে বন্ধ করার ব্যবস্থা করছি। বাংলালিংকের সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির চুক্তি হয় কুইজ প্রতিযোগিতার এটা তারই একটি অংশ।
মোবাইলের ব্যালেন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ঘোষণা দিয়ে অন্য কোম্পানির ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এমন অন্যায় একটি বিষয় সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছেন এখন আমরা প্রতিযোগিতাটি বন্ধ করার ব্যবস্থা করছি ।
বাংলালিংকের সিনিয়র কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার মো. শেহজাদ জাস্ট নিউজকে জানান, আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিই বাংলালিংক কর্তৃপক্ষের অজান্তে এসব প্রতিযোগিতা পরিচালনা করছে । কুইজের বিষয়বস্তু আমাদের জানা নেই ।
রিপোর্টটি বিস্তারিত দেখুন নিচের লিংকে
Click this link
এই ব্যপারে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশিষ্ট গনমাধ্যম গবেষক ও সাংবাদিক হাসান শান্তনুর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন - ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের অনুগত সংবাদ মাধ্যমগুলোর ধারাবাহিক মিথ্যাচার এবং আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর শিষ্টাচার বহির্ভূত কর্মকান্ডের জন্যই আজ বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীগুলো এই ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পেয়েছে । আর সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্র বিরোধীদল দমনে ব্যস্ত থাকায় এসকল বিষয় মনিটরিং করতে পারছেনা ।
তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে জাস্ট নিউজের প্রতিবেদক বাংলালিংক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার কিছুক্ষন পরই কুইজে অংশ নেওয়ার জন্য ৩০ টাকা বোনাস (!) দেওয়ার একটি ক্ষুদ্রবার্তা আসে আমার ফোনে । কিন্তু এটি ছিল একটি প্রতারণামূলক বার্তা । সুতরাং আমরা বাংলালিংকের বিরুদ্ধে সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং কুইজে অংশগ্রহনকারী সকল গ্রাহকের ব্যালেন্স থেকে কেটে নেওয়া চার্জ ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি ।
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন