সরকারের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছে হেফাজতের লংমার্চ : সিএনএন

লিখেছেন লিখেছেন সত্য বয়ান ১১ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:২৪:১৫ রাত

হেফাজতে ইসলামের ৬ এপ্রিলের লংমার্চ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ক্ষমতার মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম সিএনএনডটকমে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, শাহবাগ আন্দোলনের নেপথ্যে থাকা ‘' ধর্মের বিরুদ্ধে অপরাধী '’ কিছু ব্লগারকে আওয়ামী লীগ সরকারের দেয়া প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতাই মূলত এ সরকারবিরোধী গণজাগরণ উসকে দিয়েছে। সিএনএনের অনলাইনে ৬ এপ্রিল রাতে

প্রকাশিত ওই নিবন্ধে হেফাজতের লংমার্চকে ঘিরে গড়ে ওঠা মহাজারণকে ‘বাংলা বসন্ত’ এবং ‘স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একটি’ জনসমাগম বলে অভিহিত করা হয়। নিবন্ধে আরও বলা হয়, ‘এই বিশাল ঘটনাটি আওয়ামী সরকারের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে।’

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এ জাগরণকে ‘সন্দেহাতীতভাবে আওয়ামী জোটের ধর্মনিরপেক্ষ এজেন্ডার প্রতি ‘মারাত্মক গণবিস্ফোরণ এবং পরিষ্কার হুমকি’ বলে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, সরকারের বহুমুখী বাধা ও হুমকি উপেক্ষা করে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ সমবেত হয়। অরাজনৈতিক ও দলনিরপেক্ষ সংগঠন হেফাজতে ইসলামের পরবর্তী কর্মসূচি কী হতে পারে, সে ব্যাপারে দেশের বেশিরভাগ মানুষ আগ্রহ সহকারে অপেক্ষা করছেন বলেও নিবন্ধটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাঠকদের সুবিধার্থে নিচে নিবন্ধটির পূর্ণ অনুবাদ তুলে ধরা হলো।

“গত রাত থেকে আজ সন্ধ্যা (৬ এপ্রিল) পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র এবং আরও কিছু মফস্বল শহরে বিশাল গণজমায়েতের মধ্যে দিয়ে দেশটিতে গণজাগরণের এক নতুন ইতিহাস রচিত হলো। এ গণজমায়েত স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্। অনেকে এ গণজারণকে সাম্প্রতিক আরব বিশ্বের বিপ্লবী গণজাগরণের সঙ্গে তুলনা করছেন। কিছু ইতিবাচক দিক বিবেচনায় কেউ কেউ এটিকে ‘আরব বসন্তের’ সঙ্গে মিলিয়ে ‘বাংলা বসন্ত’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন। ধর্মবিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতে হেফাজতে ইসলাম নামক সাম্প্রতিক গঠিত একটি অরাজনৈতিক ও দলনিরপেক্ষ সংগঠনের ডাকে লংমার্চে এতো ব্যাপক সংখ্যক লোকের অংশগ্রহণ এটিই প্রমাণ করে যে, দেশটির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এখনও ‘ধর্মের বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের’ বিপক্ষে ঐক্যবদ্ধ। ওইসব ধর্মদ্রোহীরা স্বয়ং আল্লাহকে নিয়ে অশ্লীল বাক্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছে।

বাংলাদেশের মতো একটি দেশে, যেখানে মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ জন্মগতভাবে মুসলিম, সেখানে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করা অত্যন্ত অবিবেচনাপ্রসূত কাজ। বলা যায়, এটা গহীন জঙ্গলে মৌচাকে ঢিল ছোড়ার মতো। বহু জাতি, বহু ধর্ম এবং বহু সংস্কৃতির একটি সমাজে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করতে পারাই হচ্ছে গণতন্ত্রের সত্যিকারের সৌন্দর্য। কিন্তু ধর্মবিদ্বেষীদের যদি তাদের অসত্ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্টের সুযোগ দেয়া হয়, তবে জনজীবনে শান্তি নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

গত বছর ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ নামক একটি কুিসত ফিল্মের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠলে সারা বিশ্বে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। নবীকে (সা.) অবমাননা করে ওই ফিল্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জেরে ছড়িয়ে পড়া সেই দাঙ্গা আমাদেরকে এ বিষয়টি দেখিয়ে দিয়েছে যে, যদি এখনই আমরা ‘ধর্মের বিরুদ্ধে অপরাধের’ বিষয়টি মোকাবিলা না করি তবে দীর্ঘ মেয়াদে পরিস্থিতি কত ভয়াবহ হতে পারে!

বর্তমানে যখন বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে ধর্মবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারটি একটি ‘বৈশ্বিক প্রয়োজনীয়তা’য় পরিণত হয়েছে, তখন শাহবাগ আন্দোলনের নেপথ্যে থাকা কয়েকজন ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট আল্লাহ, নবী ও ইসলামের কিছু বিষয়ের অবমাননা করে আবারও দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এটা আমাদের বুঝে আসে না যে, ‘আদালত অবমাননা’ বা সাধারণ ‘মানহানির’ জন্য একজনকে শাস্তি দেয়া হলে ‘আল্লাহর অবমাননা’ ‘নবীর অবমাননা’ অথবা ‘ধর্মের অবমাননা’ করার পরও দোষীদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে না কেন?

শাহবাগ আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতাই মূলত আজকের এই সরকারবিরোধী লংমার্চ ও জমায়েতকে উস্কে দিয়েছে, যা ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার মসনদে কাঁপন ধরিয়েছে।

প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ সরকারের নানা বাধা উপেক্ষা করে লংমার্চে অংশ নেয়। সরকার লংমার্চে আসা মানুষকে বাধা দিতে ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করে দেয়। কিন্তু প্রতিবাদী মানুষের কাছে সব ধরনের সরকারি পদক্ষেপ ভেস্তে যায়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের এই বিশাল গণজমায়েত বৃহত্তর অর্থে আওয়ামী লীগ সরকারের সব ধরনের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। নিশ্চিত করেই বলা যায়, এটি মহাজোট সরকারের ‘ধর্মনিরপেক্ষ এজেন্ডা’র প্রতিও একটা মারাত্মক গণবিস্ফোরণ ও পরিষ্কার হুমকি।

দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখন হেফাজতে ইসলামের পরবর্তী কর্মসূচির দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন। যদিও সাধারণ মানুষের হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন কাজ। এটা পরিবর্তন করাও খুব অনিশ্চিত একটা ব্যাপার, এবং তা নির্যাতনকারীদের পক্ষে যাওয়াও খুব অস্বাভাবিক।”

সূত্র : আমার দেশ

বিষয়: বিবিধ

৯৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File