সিডনী টু কায়ামা ডে ট্রিপ

লিখেছেন লিখেছেন ওরিয়ন ১ ০৯ নভেম্বর, ২০১৬, ০৫:৫৮:১৩ সকাল



কখনো পাহাড়ী উঁচু নীচু রাস্তা আবার কখনো বা প্রশান্ত মহাসাগরের কোল ঘেঁষে সর্পিল গতিতে চলছে গাড়ী। সামান্য অসর্তকতায় মহূর্তে হতে পারে দূর্ঘটনা। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সতর্ক হয়ে চলছি। দূর্গম এই পথের মাঝে মাঝে লুক আউট। মানুষ গাড়ী থামিয়ে দেখছে, উপভোগ করছে পাহাড়, প্রকৃতি আর মহাসাগরের বিশালতা। আমাদের গন্তব্য "কিয়ামা-ব্লো হোল"। যেখানে সাগরের পানি গর্ত দিয়ে উপরে উপছে পড়ে। আমরা ফ্রি ওয়ে অ্যাবয়েট করলাম, উদ্দেশ্য সাগরের কোল ঘেঁষে পথ চলা। তাসনীম -তাসনোভা গাড়ীর পিছনের সিটে, যতক্ষন ট্যাবলেটে চার্জ আছে ততক্ষন ট্যাবলেট নিয়াই ব্যস্ত দুজন। প্রকৃতি ওদের টানে না, যত না টানে ট্যাবলেট, ডি এস আর আ্যাই প্যাড। আর ট্যাবলেটের চার্জ শেষ হলে শুরু হবে কোশ্চেয়ন। হাউ লং দ্যা ডেস্টিনেশান? ফিল্ বোর। এই পৃথিবীতে একমাএ ট্যাবলেট আর কম্পিউটার গেম ছাড়া ওদের কাছে সবকিছুই বোরিং।

এবার আমরা ও একটা লুক আউটে গাড়ী থামালাম।



ইতিমধ্যে প্রায় দেড় ঘন্টা গাড়ী ড্রাইভ হলো। বাসা থেকে আনুমানিক ৭৫ কি:মি: আসলাম। প্যাসিফিক মহাসাগরের নীল ঢেউ আঁচড়ে পড়ছে তীরে। আবাহাওয়াটা ও ছিল চমৎকার। মৃদুমন্দ বাতাস আর কোম্পোট এ্যাবল রোদের ঝলকানী। মানে মিষ্টি-মৃদু-রোদের ছটা।



অফিসিয়ালি শীতের ছুটি, এখন অস্ট্রেলিয়ায় স্প্রিং। কিন্তু এবার শীত যাচ্ছে অতি ধীর লয়ে। মনে হয় অনেকদিন থাকতে থাকতে আপন করে নিয়েছে সবাইকে। যেতে নাহি দিব না তোমায়.....

বছরের এই সময়টাতে বাচ্ছাদের শীতের কাপড় পরানো ভীষন দায়। বলছি, আজকে বাহিরে অনেক কোল্ড, সুয়েটার পরো। " নো, উইংটার ফিনিস" এখন স্প্রীং। ওদের ধারনা সেপ্টম্বরের ৩০ তারিখে যেহেতু উইংটার ফিনিষ সেহেতু অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে শীত একেবারে পালিয়ে গিয়ে ঐ প্রথম দিন থেকেই বসন্তের হাওয়া বইতে শুরু করবে। সো স্প্রীং এ কোন শীতের জামা নয়। আমি কি করে বুঝাই ঐ ক্যলেন্ডারের দিন-ক্ষন মেনে ঋতু বদল হয় না।

লুক আুটে নেমে মহাসাগরের বিশালতা আর অন্যপ্রান্তে সুবিনিস্ত পাহাড়ের সৌন্দর্ষে প্রকৃতি প্রেমীরা মোবাইলে ছবি তুলছেন টপাটপ। সিডনী থেকে আমাদের সাথে এই ট্যুর এ আরো দুই ফ্যামেলী এসেছেন। হাতে হাতে সবাই মেন্ডারিং খাচ্ছি আর সৈকত দেখছি। ফাঁকে ফাঁকে সেলফি ও হচ্ছে। মহাসাগরের কোল ঘেঁষে দাঁড়াতেই কোন এক কন্ঠশিল্পীর দুলাইন মনে পড়ে গেল।

" সাগরের নীল ঢেউয়ে আকশের নীল, মিলে মেশে একাকার।"

সুবাহান আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লালাহ্"



এবার আমাদের গাড়ী নিয়ে ছুটতে শুরু করলাম কিয়ামা ব্লো হোল এর উদ্দেশ্যে। গাড়ী চলছে সাগরের কোল ঘেঁষে। কিছুদূর যেতেই আবারো প্রকৃতির প্রেমে পড়ে গেলাম। জায়গাটার নাম লেক ইলোয়ারা, যেখানে লেক আর সাগর মিশে গেছে একেবারেই রাস্তার সাথে। বিরাট লেক, তারি সাথে সুবিশাল পার্ক।



সিদ্বান্ত নিলাম এখানেই দুপুরের খাবার হবে। বাচ্চারা ইতিমধ্যেই পানিতে নেমে গেছে। কাটুক না কিছুটা সময় একান্ত নিজের মত। আমি নরম তুলতুলে ঘাসের উপর চাদর দিয়ে খাবারের আয়োজন করতে লাগলাম। মেন্যু ছিল, ভূনা খিছুড়ি, গরুর মাংস, ড়িমের রোস্ট, আর গ্রীল চিকেন মানে তান্দুরী চিকেন। সাথে সালাদ আর ড্রিংকস তো থাকছেই।

নামাজ পড়লাম যোহর আসর একসাথে। এবার খাবার পালা। বিসমিল্লাহ বলে যত পারো খাও আর খাওয়ার পরে আলহামদুলিল্লাহ। বরাবরের মতই খাবার দাবার বেঁচে গেল। কি আর করা। পার্কের এক পার্শ্বে ছিল জিমের ব্যাবস্হা। ব্যস, খাবার যেহেতু বেশী খেয়েছি এবার ছেলে বুড়ো সবাই মিলে জিম শুরু করলাম।





কিছুক্ষন পর পার্কের এক পার্শ্বে থামল আইসক্রীমের গাড়ী। ব্যস, আর যাই কোথায়! বাচ্চাদের আইসক্রীম খাওয়া চাই।

এবার ছুটে চলছি কায়ামার উদ্দেশ্যে। কায়ামার মূল আকর্ষণ হলো ব্লো-হোল, এটা আগ্নেয়শীলার তৈরী। আগ্নেয়গীরীর অগ্নুৎপাতের কারনে এ শীলার সৃস্টি। ধূসুর ও কালো রঙের কঠি শক্ত এই শীলা। সবাই মিলে শক্ত এই শীলার গায়ে হেটে বেড়ালাম, মনে হচ্ছিল চাঁদের দেশে হাঁটছি নীল আমস্ট্রং এর সাথে।





দেখতে অনেকটা ডোর কিংবা গেটের মত প্রাকৃতিকভাবে এখানে তৈরী হয়েছে একটি গর্ত, যার নীচের দিকটা সাগরের সাথে মিশে গেছে। সমুদ্রের সুবিশাল ঢেউ যখনই সেই দরজা দিয়ে ঢোকে ঠি তখনি পানি সেই দরজা দিয়ে ওপরে ২০ মিটারের ও বেশী উঠে।



পাহাড়ী এই জায়গাটা কিছুটা ঢালু এবং সবুজ ঘাসে আবৃত। প্রাকৃতিক শীলার উপর দাঁড়িয়ে সাগরের নীল ঢেউ দেখে যখন কিছুটা ক্লান্ত তখন ঐ সবুজ ঘাসের উপর মাদুর দিয়ে বিকেলের চায়ের আয়োজন। ছবিতে যাকে দেখছেন কালো চশমা পরে শুয়ে আছেন, উনি হচ্ছেন শহীদ।



না মানে উনি নিজে শহীদ নন, উনার নাম শহীদুল ইসলাম শহীদ। সিডনীর বিশিস্ট ব্যবসায়ী। উনি শুয়ে আছেন যার উপর উনি এক সময়কার চট্রগ্রাম ওয়াসার ডাক সাইটে প্রকৌশলী চৌধূরী শাহরিয়া মাহমুদ। তবে শহীদুল ইসলাম নিজে শহীদ না হলে উনি শহীদ পরিবারের সন্তান। চট্রগ্রাম পলিটেকনিকের শহীদ বাকি উল্লাহর ছোট ভাই।



এবার ফিরতে হবে বাসায়। কিন্তু আবারো সিদ্বান্ত হলো যাবার পথে উলংগং সিটি হয়ে সীবীচ দেখতে যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ উলংগং সীবীচ। প্রকৃতির সাথে আরো কিছুক্ষন মাখামাখি।



হাইওয়ে ধরে প্রায় ১২০ কি:মি: বেগে ধেয়ে চলছে আমাদের গাড়ী। বাসার কাছাকাছি আসতেই রেড়িও থেকে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ভেসে আসলো মাগরিবের আজানের ধ্বনি " লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুল আল্লাহ"

বিষয়: বিবিধ

১৪৭২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379606
০৯ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:২৭
রাইয়ান লিখেছেন : বাচ্চাদের ট্যাবলেট প্রেম আর আমাদের প্রকৃতি প্রেম , আপনার তখনকার গাড়ির ভেতরের প্রকৃতির সাথে শতভাগই মিলে গেছে দেখছি ! Tongue
আসলেই শীত এবার যেতেও চাইছেন, আবার বাচ্চারা শীতের কাপড় পড়তে পড়তেও টায়ার্ড। খুবই সুন্দর বর্ণনা করেছেন এটি।
শহীদ ভাই খুবই ভালো একজন সঙ্গী। এত্ত মজা করে কথা বলেন ! বুঝতেই পারছি , এত্ত ভালো ভালো সফরসঙ্গী থাকলে সফর আনন্দের না হয়ে আর উপায় কি !
সালাম রইলো ...
১০ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:১৮
314291
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহামাতুল্লাহে ওয়া বারকাতুহু।
ব্লগে তেমন আসি না, আপনার সুন্দর সুন্দর লিখা ও পড়া হয় না। আপনাদের স্বপরিবারে সিডনী আসার দাওয়াত থাকলো।
১০ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:১৪
314295
রাইয়ান লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ , কর্তা তো মাসের দুটো উইকএন্ড সিডনিতেই কাটিয়ে দেন ! Tongue
আপনার দাওয়াত আনন্দের সাথেই গৃহীত হল ! যে কোন সময় হাজির হয়ে যাব , ইনশা আল্লাহ ! Smug
379609
১০ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১২:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার ছবিগুলির জন্য ধন্যবাদ।
বাইরে বের হলে ট্যাব বন্ধ করে দেবেন!
শেষ ছবির দুই জন কে আগে দেখেছি কিন্তু পরিচয় নাই!!!
১০ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:১৯
314292
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : যাযাকুল্লাহ খায়ের পরামর্শের জন্য। আল্লাহ আপনার ভালো করুক, আমীন।
379702
১৪ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৮:২৫
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : Beautiful Spot! enjoyed !
379875
২১ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১১:০৫
দ্য স্লেভ লিখেছেন : মেন্যু ছিল, ভূনা খিছুড়ি, গরুর মাংস, ড়িমের রোস্ট, আর গ্রীল চিকেন মানে তান্দুরী চিকেন। ...এই লাইন দুটো অসাধারন হয়েছে....

দারুন লাগল আপনার ঘোরাঘুরি। আমি ওলংগং এবং কায়ামাহ গিয়েছিলাম। বড় ব্লো০হোলের পাশে আরেকটা ছোট ব্লোহোল আছে। সেটাতে পানি উঠে আরও বহু উপরের। কিন্তু একেবারে ছোট হোল।.....যাবার পথে সবগুলো লুকআউট অসাধারন ....

ইচ্ছা আছে পুটির মাকে নিয়ে সিডনীতে যাব। আমার ভাগনী বেশ জালাচ্ছে যাবার জন্যে...Happy
২২ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:৩৩
314489
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : মিস্টির দাওয়াত থাকলো ভাবী সহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File