যাকাত কিভাবে আদায় করবেন?
লিখেছেন লিখেছেন ওরিয়ন ১ ২২ জুন, ২০১৫, ০৮:৫৬:১৫ সকাল
মুফতী ত্বাকী উসমানী
الحمد لله نحمده ونستعينه…………..
اعوذ بالله من الشيطان الرجيم. بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ. وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ (34) يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ (35) سورة التوبة
امنت بالله، صدق الله العظيم………………..
আয়াতের সরল অর্থ: আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তার এ সম্পদ উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে সেক বা দাগানো হবে। (সেদিন বলা হবে) এগুলো সেই সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং যে সম্পদ জমা করে রেখেছিলে এক্ষুণে তার বিনিময়ে কঠিন শাস্তি আ্বাদ গ্রহণ কর। ( সূরা আত তাওবাহ: ৩৪-৩৫) আজকের আলোচনার মূল বিষয় হল: যাকাতের গুরুত্ব, ফাযায়েল ও বিধি-বিধান সম্পর্কে, যেন এ বিষয়ে আমরা কিছু ঈমান ও আমল বৃদ্ধি করতে পারি।
যাকাত না দেয়ার পরিণাম
এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমি কুরআন মাজীদের দুটি আয়াত আপনাদের সামনে তিলাওয়াত করেছি। আয়াত দুটোতে বলা হয়েছে, যাকাত না দেয়া শুধু অপরাধই নয়, বরং এর পরিণতি খবই ভয়াবহ। বলা হয়েছে, যারা নিজেদের সোনা-রম্নপা জমিয়ে রাখে অথবা যাকাত দেয় না, তাদেরকে আপনি ভয়াবহ শস্তির সংবাদ দেন। তাদের পুঞ্জীভূত এসব সোনা-দানা টাকা-পয়সা অর্থ সম্পদের যাকাত না দেয়ার কাষে সেগুলো তাদের জন্য রূপান্তরিত হবে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক উপকরণ হিসাবে। কেয়ামতের দিন এগুলো দিয়ে তাদের কপাল, পার্শ্বদেহ ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। আর বলা হবে-
هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ
এটাই সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রাখতে। আজ তার মজা বুঝে নাও। যাকাত ছিলো তোমাদের জন্য একটি ফরয বিধান। এ বিধান পালনে তোমাদের গাফলীত আজ আস্বাদন করে নাও। এমর্মে আল্লাহ তা‘য়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেছেন-
وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ (1) الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ (2) يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ (3) كَلَّا لَيُنْبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ (4) وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ (5) نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ (6) الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ (7) إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُؤْصَدَةٌ (8) فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ (9)
অর্থাৎ- ১• প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ। ২• যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে (প্রতিদিন সে গুনে দেখে তার সঞ্চিত মাল কত বাড়ল এবং তা থেকে সে আত্নতৃপ্তি লাভ করে)। ৩• সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে! ৪• কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে। ৫• আপনি কি জানেন, পিষ্টকারী কি? ৬• এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি, ৭• যা হৃদয় পর্যন্ত পৌছবে। ৮• এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে, ৯• লম্বা খুটিতে। (সূরা হুমাঝাহ)
যাকাত অনাদায়ী থকলে আল্লাহ এমন কঠিন শাস্তির কাথা বলেছেন। আল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানকে এ শাস্তি থেকে হিফাজাত করুণ।
এ সম্পদ কার?
যাকাত না দেয়ার শাস্তি এত ভয়াবহ কেন? এর কারণ হলো ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরি-বাকুরি বা কৃষি যে মাধ্যমেই হোক না কেন যেসব সম্পদ আমরা জমাচ্ছি, এগুলো কি আমাদের গায়ের জোরে করছি? এসব তো আলস্নার দান। তিনি বিশ্বব্যবস্থাকে এমন ভাবে সাজিয়েছেন, যাতে আমরা এগুলো অর্জন করতে পারি। রিযিকের মালিক তো রাযযাক তথা একমাত্র আল্লাহ তা‘য়ালা।
গ্রাহক পাঠায় কে?
আপনাদের ধারণা হলো, আপনার পূঞ্জিভূত সম্পদ দোকান-পাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, সব আপনার নিজেস্ব। এটা দেখলেন না, আপনার দোকানে গ্রাহক পঠালেন কে? যদি এমন হতো যে আপনি দোকান খুলে বসলেন; কিন্তু কোন গ্রাহক এলো না, তহলে কি আপনার দোকানে বেচা-বিক্রি হতো? আয় আমদানি কি হতো? সুতরাং কে পাঠায় আপনার দোকানের গ্রাহক? মূলত এটাতো আল্লাহই করছেন। মানুষ মানুষের জন্য এ নিয়মের ছকে তিনি গোটা বিশ্বব্যবস্থাকে চালাচ্ছেন। একজনের প্রয়োজন হয় অপরজনের কাছে। একজনের প্রয়োজন পূরণ হয় অপরজনের মাধ্যমে। একজনের অন্তরে তিনি দোকান খোলার ইচ্ছা তৈরী করেন। আর অপরজনের অন্তরে ইচ্ছা তৈরী করেন সে দোকান থেকে ক্রয় করার।
কর্মবন্টন আল্লাহর পক্ষ থেকে
মোট কথা এই ব্যবস্থাপন মূলত আল্লাহরই। তিনি আপনার কাছে গ্রহক পাঠন। গ্রাহকের অন্তরে দোকানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করেন।
জমি থেকে শস্য উৎপাদন করেন কে?
ব্যবসা-বণিজ্য, জমি-জিরাত ইত্যাকার সবকিছু আল্লাহরই দান। তিনিই এগুলো থেকে অর্থ-সম্পদ বের করেন। দেখুন একজন কৃষকের কাজ হলো জমিতে হাল দিয়ে বীজ বপন করে আসা। প্রয়োজনে সেখানে সার পানি দেয়া। কিন্তু এ বীজকে কিশলয়ে পরিণত করেন সেতো আল্লাহ তা‘য়ালাই। দূর্বল, নগণ্য ও অতি ক্ষুদ্র একটি বীজ কিভাবে এমন শক্ত জমি ফেঁড়ে বের হয়ে আসে? তারপর সে অংকুরে রূপ নেয়। তিরতিরে এ অংকুরটিই রোদ-বৃষ্টি ও বাতসের ঝাপটা মোকাবেলা করে পরিণত হয় চারাগাছে। সেই চারাটিই একদিন বড় হয়। ফলে-ফুলে ভরে ওঠে। দুনিয়ার মানুষকে উপকার করে। কে সেই সত্তা, যিনি এসব কিছু করেন? আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি এ সব কিছু সুনিপূণভাবে করেছেন।
দিবেন শুধূ আড়াই ভাগ
আল্লাহ যদি বলতেন, আমার দেওয়া অর্থ সম্পদ থেকে আমার রাহে ব্যয় করবে সাড়ে সাতানব্বই ভাগ আর আড়াই ভাগ রাখবে নিজের জন্য তাহলে এটা ইনসাফ বিরোধী হতো না মোটেই। কেননা অর্থ সম্পদ সবইতো তাঁরই দান। তিনিইতো এগুলোর প্রকৃত মালিক। কিন্তু তিনি এমনটি বলেননি বরং নিজের বান্দাদের উপর দয়া করেছেন। বলে দিয়েছেন, আমি জানি, তোমরা দূর্বল, অর্থ সম্পদের প্রতি রয়েছে তোমাদের প্রবল আকর্ষণ। তাই সাড়ে সাতানব্বই ভাগ তোমরা রেকে দাও। বাকি আড়াই ভাগ আমার রাস্তায় খরচ করবে। তখন সাড়ে সাতানব্বই ভাগ তোমাদের জন্য হলাল হবে, যা তোমাদের জন্য হবে বরকতপূর্ণ। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে বৈধ উপায়ে খরচ করতে পারবে।
যাকাতের গুরুত্ব
একশ ভাগের মধ্যে মাত্র আড়াই ভাগ হলো যাকাতের সম্পদ, যার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কুরআনে বারবার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন-
وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ
অর্থাৎ- সালাত কয়েম কর এবং যাকাত দাও
যেখানে সালাতের কথা এসেছে, সাথে সাথে সেখানে যাকাতের কথাও এসেছে। যাকাতের গুরুত্ব এতটাই দেয়া হয়েছে। করণ এ সম্পদ তো আল্লাহরই। তিনি দয়া করে আমাকে মালিক বানিয়েছেন। আর তার রাস্তায় খরচ করার জন্য মাত্র আড়াই ভাগ চেয়েছেন। কজেই এখন মুসলমানদের উচিৎ এটি ঠিক ভাবে আদায় করে দেয়া। যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে কোন ধরনের গড়িমসি না করা। এতো অল্প সম্পদ দান করে দিলে আপনার উপরতো আর আকাশ ভেঙ্গে পড়বে না।
যাকাত আদায়ে পার্থিব লাভ
যাকাত দিতে হবে। নিয়ত থাকতে হবে এটা আল্লাহর বিধান। এটি একটি মহান ইবাদাত। তাই পার্থিব লাভ থাক বা না থাক আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যাকাত দিচ্ছি। অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম পালন করাই যাকাতের উদ্দেশ্য। কিন্তু আল্লাহ তা‘য়অলার দয়া দেখুন, বান্দা যাকাত দিলে আল্লাহ তাকে পার্থিব লাভও দিবেন। আর তা হল তিনি যাকাতের উছিলায় সম্পদে বরকত দান করেন। এ মর্মে তিনি ইরশাদ করেনঃ
يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ (276) سورة البقرة
অর্থাৎ- তিনি সুদকে মিটিয়ে দেন আর যকাত ও সদকাকে বাড়িয়ে দেন।
এক হাদীসে রাসূল স. বলেছেন: যখন কোন বান্দা যাকাতের সম্পদ আলাদা করে নেয়, তখন আল্লাহ তা‘য়ালার ফেরেস্তারা তার জন্য এ দোয়া করতে থাকেন-
اللهم اعط منفقا خلقا واعط ممسكا تلفا
অর্থাৎ- হে আল্লাহ যে লোকটি আপনার রস্তায় খরচ করে, তার সম্পদ আরো বাড়িয়ে দিন। আর যে লোটি নিজের কাছে সম্পদ ধরে রাখে, তাকে ধ্বংস করে দিন। (বুখারী শরীফ, যাকাত অধ্যায়)
এ কারণেই হাদীস শরীফে এসেছে-
مَا نَقَصَتْ صَدْقَةٌ مِنْ مَالٍ
অর্থাৎ-আল্লাহর পথে দান করলে সম্পদ কমে যায় না।
খোলাসা কথা হলো, যাকাতে বরকত আসে। একদিক থেকে যদিও কিছু সম্পদ যাকাত প্রদানে কারণে চলে যায়, কিন্তু অন্য দিকে আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে আরো কয়েক গুণ পুষিয়ে দেন। কিংবা গণনার দিক থেকে সম্পদ বাড়ে না কিন্তু এ সম্পদে আল্লাহ এমন বরকত দান করেন, যার ফলে অবশিষ্ট সম্পদ দ্বারাই সে সুখের জীবন পার করে দিতে পারে।
বরকত শূন্যতার পরিণাম
আজকের দুনিয়া হল গণনার দুনিয়। বরকতের অর্থ মানুষ বোঝে না। অল্প বস্তু থেকে অধিক উপকৃত হওয়াকে বরকত বলা হয়। মনে করুন, আপনি আজ অর্থ উপার্জন করলেন বিপুল পরিমাণে। কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখলেন, আপনার সন্তান অসুস্থ। তাকে নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে। আর একবারের ডাক্তারী পরীক্ষাতেই শেষ হয়ে গেল আপনার আজকের উপার্জিত সকল টাকা। এই অর্থগুলো আপনার আজকের উপার্জনের বরকত ছিল না। অথবা মনে করুন, আপনি টাকা উপার্জন করে বাসায় ফিরছিলেন। পতিমধ্যে ছিনতাইকারীর কবলে পড়লেন। সে পিস্তল ঠেকিয়ে আপনার সর্বস্ব নিয়ে গেলো। এর অর্থ হলো আপনার উপার্জিত টাকাতে বরকত ছিলো না। কিংবা মনে করুন আপনি উপার্জন করেছেন। সেই টাকা দিয়ে খাবার খেয়েছেন। কিন্তু এতে আপনার পেটের অসুখ হলো। তাহলে বুঝতে হবে এখানেও আপনি বরকত পাননি।
এই বরকত হলো আল্লাহর দান। যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম মেনে চলে, তাকেই তিনি এ মহান সম্পদ দান করেন। এ জন্যই আমাদেরকে যাকাত দিতে হবে। যাকাতের হিসাব সঠিক ভাবে বের করতে হবে। কারণ, এটাও তো আল্লাহর এক মহান হুকুম।
যাকাত হিসাব করে আলাদা করে নিন
অনেকেই এ গুরুত্বপূর্ণ বিধান নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তারা যাকাতের হিসাবই করে না। তারা চিন্তা করে, যাকাত দিতে যাবো কেন? সম্পদ আসবে শুধু আসবে। যাকাত আবার কী? অপরদিকে অনেকে এমনও আছেন, যারা যাকাত দেয়অর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন বটে, দেনও। কিন্তু যাকাত বের করার সঠিক পদ্ধতিটা অবলম্বন করেন না। যেহেতু একশ ভাগের আড়াই ভাগ হলো যাকাতের সম্পদ, সুতরাং উচিত হলো যথাযথ হিসাব করে এ অংশটুকু বের করে নেয়া। তারা মনে করে সঠিক হিসাব বের করার এত ঝামেলা পোহাবার কে? কে যাবে সব স্টক খোঁজ করতে? সুতরাং একটা অনুমান করে দিয়ে দিলেই হলো। কিন্তু এটা ভাবেন না যে, এ অনুমানের মধ্যে তো ভূলও হতে পারে। এমনও তো হতে পারে যে, যাকাত কয়ে গেছে। যদি বেশি হয়, তাহলে তো ভালো কথা। তখন সে এর জন্য পাকড়াও হবে না। কিন্তু যদি কম হয়, এমনকি এক টাকা কম হলেও মনে রাখবেন, এই এক টাকা আপনার জন্য হারাম আর এ এক টাকাই সমস্ত সম্পটদকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
এক হাদীসে রাসূলুলস্নাহ স• বলেছেন, সাধারণ সম্পদের সঙ্গে যাকাতের অর্থ মিশে গেলে সেই অর্থই ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। এটাই আপনার জন্য বিপদ ডেকে আনবে।
যাকাতের নিসাব
নিসাব বলা হয় শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত নি্নতম সীমা বা পরিমাণকে। এ নিসাবের মালিক না হেল তার উপর যাকাত ফরয নয়। নিসাবের মালিকের উপর যাকাত ফরজ। প্রয়োজনীয় ব্যয় বাদে সাড়ে বায়ান্না তোলা রম্নপা বা সাড়ে সাত রোলা সোনা বা এর সমপূল্যের ব্যবসায়িক সম্পদ ইত্যাদি যার কাছে থাকে, সেই মালিকে নিসাব বা নিসাবের মালিক।
সম্পদদের মালিকানা এক বছর থাকা
কারো কাছে কমপক্ষে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই সেই সম্পদদের উপর যাকাত দিতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের সমাজে একটি ভূল ধারণা আছে তাহলো, মানুষ মনে করে প্রতিটি টাকাই পূর্ণ এক বছর থাকতে হবে। এ ধারণা মূলত সঠিক নয়। বরং কোন ব্যক্তি বছরের শুরুতে একবার নিসাবের মালিক হলেই তাকে নিসাবের মালিক ধরা হবে। যেমন মনে করুন এক ব্যক্তি পহেলা রামাযান নিসাবের মালিক হলো, তারপরের বছর যখন পহেলা রামাযান এলো তখনও সে নিসাবের মালিক থাকলো। তাহলে এ ব্যক্তিকে ছাহিবে নিসাব বা নিসাব ওয়ালা বলা হবে। বছরের মাঝখানে যেসব টাকা-পয়সা আসা যাওয়া করেছে, সে গুলো ধর্তব্য নয়। শুধু দেখতে হবে পহেলা রামাযানে তার নিকট কত টাকা আছে। তার উপরই যাকাত দিতে হবে। এমনকি এই টাকাগুলোর মধ্যে ওই টাকাও যোগ হবে, যা মাত্র একদিন পূর্বে এসেছে।
যাকাত হিসাব করার তারিখে যে পরিমাণ সম্পদ হাতে থাকে, তার উপরই যাকাত
মনে করুন, এক ব্যক্তির কাছে রামাযানের এক তারিখে ছিলো এক লাখ টাকা। পরবর্তী বছর প্রথম রামাযানে দুদিন পূর্বে আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা তার হাতে এসে গেলো। এখন এই দেড় লাখ টাকার উপরই যাকাত ফরজ হবে। এটা বলা যাবে না, এ পঞ্চাশ হাজার টাকা এলো মাত্র দুদিন আগে। এ পঞ্চাশ হাজার টাকা তো এক বছর ব্যাপী ছিল না। সুতরাং এর উপর যাকাত হবে না। বরং যাকাত হিসাব করার তারিখে যত সম্পদ আপনার মালিকানায় থাকবে এর থেকেই যাকাতের পূর্ববর্তী রামাযানের প্রথম তারিখ থেকে পরিমাণে কম হোক বা বেশি হোক। যেমন পূর্ববর্তী রামাযানের প্রথম তারিখে আপনার কাছে ছিল এক লাখ টাকা। এখন হিসাব করার দিন আছে দেড় লাখ টাকা। তাহলে যাকাত দিতে হবে দেড় লাখ টাকার। অনুরূপভাবে মনে করুণ, পূর্ববর্তী রামাযানের প্রথম তারিখে আপনার কাছে ছিল দেড় লাখ টাকা। এখন হিসাব করার দিন আপনার কছে আছে পঞ্চাশ হাজার টাকা। মাঝখানে আপনার যে টাকা ব্যয় হয়েছে এর কোন হিসাব নেই। সেই ব্যয়িত টাকার হিসাব বের করার প্রয়োজন নেই। অনুরূপভাবে মাঝখানে আপনার যে টাকা আয় হয়েছে, তার হিসাব রাখাও আপনার জরম্নরী নয়। কারণ মাঝখানের আয়-ব্যয় যাকাতের হিসেবে বিবেচ্য নয়। বরং দেখতে হবে, যেদিন আপনার বছর পূর্ণ হয়, সেদিন আপনার মালিকানায় কত সম্পদ আছে। সেটার উপর যাকাত আসবে। হিসাব-নিকাশের ঝক্কি ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘য়ালা বিষয়টিকে এতোটা সহজ করে দিয়েছেন। এটাই এক বছর পূর্ণ হওয়ার অর্থ।
যাকাতযোগ্য সম্পদ
এটাও আল্লাহ তা‘য়ালার একান্ত দয়া যে, তিনি সব ধরনের সম্পদদের উপর যাকাত ফরজ করেন নি। অন্যথায় সম্পদ তো কত ধরণের আছে। যেসব সম্পদের উপর যাকাত ফরজ, তাহল-
১• নগদ অর্থ তথা নোট, একাউন্ট যেভাবেই থাক এর উপর যাকাত ফরজ।
২• সোনা-রূপা। এটি অলংকার হোক কিংবা কয়েন হোক।
কিছু লোক মানে করেন, মাহিলাদের ব্যবহৃত অলংকারের উপর যাকাত নেই। এ ধারণা সঠিক নয়। বরং সোনা-রূপা দ্বারা তৈরি যে কোন অলংকারের উপরই যাকাত দিতে হবে। তবে হ্যাঁ, সোনা-রুপা ছাড়া অন্য কোন ধাতু দ্বারা তৈরি অলংকারের উপর যাকাত আসবে না। যেমন, হীরা-জওহরের অলংকারের উপর যাকাত আসবে না, যাদি এগুলো ব্যবসায়ের জন্য না হয়।
যাকাত যোগ্য সম্পদের ক্ষেত্রে যুক্তি খোঁজা যাবে না
এক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদেরকে বুঝতে হবে যাকাত একটি ইবাদত। আল্লাহর পক্ষ থেকে আরোপিত একটি ফরজ বিধান। অথচ অনেকে এক্ষেত্রে বুদ্ধি-যুক্তি দেখাতে চায়। তারা বলে অমুক জিনিসের উপর যাকাত ওয়াজিব কেন এবং অমুক জিনিসের উপর যাকাত ওয়াজিব না কেন? সোনা রম্নপার উপর ওয়াজিব, হীরা জওহরত এর উপর ওয়াজিব নয় কেন? প্লাটিনামের উপর কেন যাকাত নেই? এ জাতীয় প্রশ্ন ঠিক এমনই যে, মুছাফির জোহুর, আছর ও ইশার সালাত কছর পড়ে কিন্তু মাগরীবের সালাত কছর পড়েনা কেন? কিংবা এক ব্যক্তি উড়োজাহজে উড়ে বেড়ায়। তার সফর কত আরামদায়ক। তার জন্য কছর অথচ আমি করাচির রস্তায় কত কষ্ট করে বাসে চলাফেরা করি আমার জন্য কছর নয় কেন? এসব প্রশ্ন অবান্তর। এগুলোর একটাই উত্তর। তাহলো, এসব আল্লাহর ইবাদাত। আর ইবাদাতের মাঝে বিদ্যমান বিধানাবলী আল্লাহই বলে দিয়েছেন। সে সব বিধানের পাবন্দি জরুরী। অন্যথায় ইবাদাত থাকবে না। এক্ষেত্রে যুক্তির ঘোড়া দৌড়ানো যাবে না।
ইবাদাত করা আল্লাহরই নির্দেশ
মনে করুণ, এক ব্যক্তি বললো, জ্বিলহজ্বের নবম তারিখে হজ্ব করতে হয়। অথচ আমার জন্য সহজ হলো এখন গিয়ে হজ্ব করে আসা। প্রয়োজনে একদিনের পরিবর্তে আমি আরাফাতে তিন দিন অবস্থান করবো। বলুন, এ ব্যক্তির কি হজ্ব হবে? একদিনের পরিবর্তে তিন দিন অবস্থান করলেও হজ্ব তো হবে না। কেননা সে আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে হজ্ব করেনি। সুতরাং সোনা রুপাতে যাকাত কেন? আর হীরার ক্ষেত্রে যাকাত নেই কেন? এ জাতীয় প্রশ্নও ঠিক এমনই। ইবাদাতের মাঝে যুক্তি চালানো যাবে না।
ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি
ব্যবসাপণ্যের উপরও যাকাত ফরয। যেমন, বিক্রির জন্য দোকানে যেসব পণ্য স্টক আছে, সেগুলোর উপর যাকাত ফরয। তবে এসব পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে এ স্বাধীনতা আছে যে, যাকাত দানকারী তার ব্যবসাপণ্য হিসাব করার সময় এভাবে হিসাব করবে যে, যদি সে তার স্টকের সব পণ্য মার্কেট থেকে ক্রয় করে, তাহলে মূল্য কত হবে? যাকাতদাতা সেই মূল্যমানের উপরই যাকাত দিবে। দেখূন, মূল্যমান দু‘ধরণের হতে পারে।
১• রিয়্যাল প্রাইস বা প্রকৃত মূল্য
২• হোলসেল প্রাইস বা পাইকেরী মূল্য। সতর্কতা হলো, হোলসেল বা পাইকেরী মূল্য তথা বিক্রির পাইকেরী মূল্য ধরেই তা থেকে আড়াই শতাংশ যাকাত দেয়া।
কোন কোন জিনিস ব্যবসাপণ্য
বিক্রি করার উদ্দেশ্যে ক্রয় কৃত পণ্য ব্যবসাপণ্যের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং বিক্রির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত ফ্লাট, প্লট ও গাড়ি-বাড়ি ব্যবসাপণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। সুতরাং এগুলো কেনার সময় যদি মুনাফা অর্জন উদ্দেশ্য থাকে, তহলে এগুলোর উপর যাকাত দিতে হবে। অনেকের প্লট ক্রয়ের শুরুতেই এ নিয়াত থাকে যে, লাভে বিক্রি করতে পারলে বিক্রি করে দিব। এধরণের প্লটের মূল্যমানের উপর যাকাত দিতে হবে। আবার অনেকের নিয়ত থাকে, সুযোগ সুবিধা হলে বসবাসের জন্য সেখানে ভবন বানাবে। আবার সুবিধামতো তা ভাড়াও দিয়ে দিতে পারে। কিংবা বিক্রিও করে দিতে পারে। অর্থাৎ-স্পষ্ট ও নির্ধারিত কোন নিয়ত তার নেই। বরং এমনিতেই খরিদ করেছে আর কি। তাহলে এ অবস্থায় ঐ প্লটের উপর যাকাত দিতে হবে না। সারকথা হল, কেবল বিক্রর উদ্দেশ্যে ক্রয় করলেই যাকাত ওয়াজিব হবে অন্যথায় নয়। সুতরাং কেনার সময় যদি বসবাসের নিয়ত থাকে এবং পরবর্তীতে নিয়ত পাল্টে যায়, পরবর্তীতে সে ভেবেছে, বিক্রি করে মুনাফা ভোগ করবে। তাহলে শুধু নিয়ত ও ইচ্ছা পরিবর্তনের কারণে ক্রয়কৃত প্লটের উপর যাকাত আসবে না। তবে হ্যা, ইচ্ছার পরিবর্তনের পর যদি তা বাস্তবেই বিক্রি করে দেয়, তাহলে যাকাত আসবে। মোদ্দাকথা খরিদ করার সময় পুনরায় বিক্রি করার নিয়ত থাকলে ঐ পণ্যের উপর শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত আসবে।
কোন মুল্যমান বিবেচিত হবে
এখানে মনে রাখতে হবে, যেদিন আপনি যাকাতের হিসাব করবেন, সেদিনের দামই ধরতে হবে। যেমন, এক লাখ টাকা দিয়ে আপনি একটা প্লট খরিদ করেছেন। কিন্তু বর্তমানে তার বাজার মূল্য হল দশ লাখ টাকা। তাহলে যাকাত দিবেন দশ লাখ টাকার আড়াই ভাগ। শুধু এক এক লাক টাকার হিসাবে যাকাত দিলে যথেষ্ট হবে না।
কোম্পানীর শেয়ারের উপর যাকাতের বিধান
অনুরূপভাবে কোম্পানীর শেয়ারও ব্যবসা পন্যের অর্ন্তভূক্ত। শেয়ার দু-ধরনের হয়ে থাকে।
১. আপনি কোন কোম্পানীর শেয়ার এ উদ্দেশ্যে ক্রয় করলেন যে, এর দ্বারা আপনি কোম্পানীর মুনাফা ভোগ করবেন। অর্থাৎ আনুপাতিক হারে কোম্পানীর বাৎসরিক মুনাফা হাসিল করাই আপনার উদ্দেশ্য।
২• আপনি কোম্পানীর শেয়ার কিনেছেন ক্যাপিটাল গেইনের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ বাৎসরিক মুনাফা আপনার উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য হল দাম বাড়লে শেয়ারটা বিক্রি করে মুনাফা লাভ করবেন। এই দ্বিতীয় অবস্থায় শরীয়তের দৃষ্টিতে মার্কেট ভ্যালু অনুযায়ী শেয়ারের পুরো মূল্যের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। যেমন, আপনি পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কোম্পানীর একটি শেয়ার কিনলেন। উদ্দেশ্য ছিল, এটির মূল্য বেড়ে গেলে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করবেন। তারপর যেদিন আপনি যাকাতের হিসাব বের করেছেন, সেদিন সেয়ারটির মার্কেট ভ্যালু ষাট টাকায় দাড়াল। তাহলে শেয়ারের দাম ষাট টাকা ধরেই যাকাত দিতে হবে একশ ভাগের আড়াই ভাগ।
আর যদি বার্ষিক মুনাফা অর্জনই আপনার আসল লক্ষ হয়, এই অবস্থায় শেয়ারসমূহের কেবল ঐ অংশের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে, যেটা যাকাতের যোগ্য মালের মোকাবেলায় হবে।
বিষয়টি এমন-
ধরা যাক, শেয়ার মার্কেটে ভ্যালু ১০০টাকা। এর মধ্যে ৬০ টাকা বিল্ডিং ও মেশিনারীর মোকাবেলায়। ৪০ টাকা কাঁচামাল, উৎপাদিত দ্রব্য ও নগদ টাকার মোকাবেলায়। এখানে যেহেতু এ শেয়ারের ৪০ টাকা যাকাতযোগ্য অংশসমূহের মোকাবেলায়, সেহেতু শতকরা আড়াই টাকা হিসেবে ৪০ টাকার উপর যাকাত ওয়াজিব। বাকি ৬০ টাকার উপর যাকাত ওয়াজিব হবেনা। যদি কম্পানীর বিল্ডিং ও মেশিনারীর বিস্তারিত বিবারণ জানা না থাকে, তাহলে যেকোন ভাবে তা জেনে নিতে হবে। এটা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে সতর্কতা সরূপ পুরা শেয়ারের মার্কেট ভ্যালুর উপরই যকাত দেয়া উচিত।
কারখানার যেসব মাল যাকাতযোগ্য
ফ্যাক্টরির উৎপাদিত মালের উপর যাকাত ফরজ। সুতরাং উৎপাদিত মালের মূল্য ধরে যাকাত দিতে হবে। অনুরূপভাবে উৎপাদিত দ্রব্যেও কাঁচামালের মূল্যের উপর যাকাত আসবে। কেননা, এগুলো যাকাতযোগ্য সম্পদ। কিন্তু ফ্যাক্টরির বিল্ডিং, মেশিনারী, ফার্নিচার, গাড়ি ইত্যাদি যাকাতযোগ্য নয়। সূতরাং এগুলোর উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না।
কোন ব্যক্তি যদি কোন কারবারের অংশিদার হওয়ার জন্য টাকা লাগিয়ে রাখে এবং ঐ কারবারের আনুপাতিক অংশের মালিক হয়, তাহলে সে যতটুকুর মালিক ততটুকু এর বাজারমূল্য হিসাবে তাকে যাকাত দিতে হবে।
সারকথা, ব্যাংক ব্যালেন্স, প্রাইজবন্ড, ডিফেন্স, সেভিং সার্টিফিকেট সহ নগদ টাকার অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং এগুলোর উপর যাকাত ফরজ হবে। আর উৎপাদিত দ্রব্য, কাচামাল ও উৎপাদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন মাল ব্যবসাপণ্য হিসেবে ধরা হবে। কম্পানীর শেয়ারও ব্যবসাপন্যের অন্তর্ভূক্ত। অনুরূপভাবে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত যেকোন জিনিসই ব্যবসাপণ্য হিসেবে ধরা হবে। সুতরাং এগুলোর মূল্যমানের উপর যাকাত দিতে হবে।
ঋণ হিসেবে লাগানো টাকার যাকাত
প্রাপ্তির নিশ্চয়তা সম্পন্ন ঋণের টাকা যেমন, যেই ঋণ কোন ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে কিংবা ব্যবসায়ী বাকিতে মাল বিক্রি করেছে যার মূল্য অবশ্যই পাওয়া যাবে। যাকাতের হিসেবের সময় উত্তম হল এ ঋণও মোট মালের সাথে যোগ করে নেয়া। যদিও শরীয়তের হুকুম হল, যে ঋণ এখনও উসূল করা হয়নি, যতক্ষণ পর্যন্ত তা উসূল না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ ঋণের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে যখন উসূল হবে তখন যত বছর এ ঋণের উপর অতিবাহিত হয়েছে তত বছরের যাকাত দিতে হবে। যেমন ধরুন, আপনি একজনের কাছে এক লাখ টাকা রেখেছেন ঋণ হিসেবে। পাঁচ বছর পর এ টাকাটা আপনি ফেরত পেলেন। এখন যদিও প্রতি বছর এর যাকাত আপনাকে দিতে হয়নি কিন্তু যখন পেয়েছেন, তখন এ বিগত পাঁচ বছরের যাকাতই আপনাকে দিতে হবে। আর যেহেতু এক সাথে পাঁচ বছরের যাকাত দেয়া অনেক সময় কষ্টকর মনে হয়, তাই আপনার জন্য উত্তম হল, প্রতি বছরই এ এক লাখ টাকার যাকাত আদায় দিয়ে দেয়া। সুতরাং যাকাতের হিসাব বের করার সময় যাকাতযোগ্য মোট সম্পদের সাথে এ এক লাখ টাকাও যোগ করে নিবেন। এটাই উত্তম ও সহজ।
দায়-দেনা দুই প্রকার
ঋণ তথা দায় দেনা সম্পর্কে আরেকটি বিষয় বুঝে নিতে হবে। তাহলো, দায় দেনা দুই প্রকার।
এক: সাধারণ দায়-দেনা। মানুষ নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে যে ঋণ করে তাকে বলে সাধারণ দায়-দেনা।
দুই: বড় বড় শিল্পপতিরা নিজেদের প্রোডাক্ট বা ক্যাপিটাল বৃদ্ধির জন্য লোন নিয়ে থাকে।
যেমন, ফ্যাক্টরী করার জন্য বা মেশিনারী ক্রয় করার জন্য অথবা ব্যবসা পণ্য ইম্পোর্ট করার জন্য তারা ঋণ নিয়ে থাকে। এ ধরণের ঋণকে বলা হয় কমার্শিয়াল লোন। যেমন ধরুন, একজন পূজিপতি বর্তমানে দুটি ফ্যাক্টরির মালিক। কিন্তু সে ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছে তৃতীয় আরেকটি ফ্যাক্টরী করার জন্য। এখন যদি তার এ ব্যাংক লোনকে তার মোট সম্পদ থেকে বিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে তার উপর তো যাকাত আসবেই না বরং সে নিজেই যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যাবে। দৃশ্যতা সে একজন ঋণগ্রস্থ ফকীরে পরিণত হবে। এ কারণেই ইসলামী শরীয়াতে লোন তথা দায়-দেনা বিয়োগ করার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে।
কমার্শিয়াল লোন বিয়োগ দেয়া হবে কখন?
এক্ষেত্রে ব্যাখ্যা হলো, প্রথম প্রকারের ঋণ যা সাধারণ ঋণ নামে অবহিত, যাকাতের হিসোব করার সময় তা মোট সম্পদ থেকে বাদ দেয়া হবে। বাদ দেয়ার পর অবশিষ্ট সম্পদই যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসোবে বিবেচিত হবে।
আর দ্বিতীয় প্রকারের ঋণকে কমার্শিয়াল লোন বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা হলো, দেখতে হবে, এঋণটা সে কোন খাতে ব্যয় করেছে। যদি যাকাত যোগ্য সম্পদ যেমন- কাঁচামাল খরিদ কিংবা ব্যবসাপণ্য ক্রয়ের জন্য সে ব্যয় করে থাকে তাহলে তার মোট সম্পদ থেকে এ ঋণকেও বিয়োগ দিয়া হবে। আর যাদি যাকাত প্রদানযোগ্য নয় এমন খতে ব্যয় করে, যেমন- সে ঋণের টাকা দিয়ে ফার্নিচার খরিদ করল, তাহলে তার মোট সম্পদ থেকে এ ঋণকে বিয়োগ দেয়া যাবে না।
যেমন ধরুন, এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ নিলো। এ টাকা দিয়ে বিদেশ থেকে একটি প্ল্যান্ট (মেশিনারী) ইম্পোর্ট করলো। যেহেতু এ প্ল্যান্ট যাকাত যোগ্য সম্পদ নয়, সুতরাং যাকাতের হিসাব করার সময় মোট হিসাব থেকে এ ঋণটাকে বাদ দেয়া যাবে না। কিন্তু যদি এ টাকা দিয়ে কাঁচামাল খরিদ করে, তাহলে কাঁচামাল যেহেতু যাকাতযোগ্য সম্পদ, তাই যাকাতের হিসাব করার সময় ঋণের এ টাকাকে বাদ দেয়া হবে। কেননা এ কাঁচামাল তো যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসেবে মোট সম্পদের সাথে এমনিতেই যোগ করা হয়েছে।
সারকথা হল, সাধারণ ঋণ সম্পূর্ণটাই মোট সম্পদ থেকে বিয়োগ দেয়া হবে। আর কমার্শিয়াল ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা হল, যদি তা যাকাত প্রদানযোগ্য নয় এমন খাতে ব্যয়িত হয়, তাহলে তাকে মোট সম্পদ থেকে বিয়োগ দেয়া যাবে না। তবে যাকাত প্রদানযোগ্য খাতে ব্যয়িত হলে তাকেও বিয়োগ দেয়া হবে। (সংক্ষিপ্ত)
(বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ইসলামী ব্যক্তিত্ব বিচারপতি মাওলানা মুফতী ত্বাকী উসমানী এর অমূল্য বক্তৃতামালা ইসলাহী খুতুবাত এর বাছাইকৃত অংশের সংকলন)
অনুবাদ
মুহাম্মাদ উমায়ের কোব্বাদী
বিষয়: বিবিধ
১৮২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন