এক মহিয়সী নারীর ঐতিহাসিক হ্রদয় নিংড়ানো গল্প।

লিখেছেন লিখেছেন ওরিয়ন ১ ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:৩৩:০১ রাত

তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাস।

বদর প্রান্তরের অসম লড়াইয়ে নির্মম পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মদীনা অভিমুখে ধেয়ে আসছে কাফিরের দল। নেতৃত্বে আবু সুফিয়ান। সঙ্গে আবু সুফিয়ানের ২ স্ত্রী সহ ১৫জন নারী, ২শত অশ্বারোহী, ৭শত উষ্ট্রারোহী ও ২১শত পদাতিক সৈন্য সহ মোট ৩ হাজার জনের সেনাদল। দলের সঙ্গে আছে তাদের প্রিয় দেবতা হুবল-এর প্রতিমাটিও।

সংবাদ পেয়ে রাসূল (সা) মুসলিমদের উদ্দেশ্যে জিহাদের ডাক দিলেন- ‘তোমাদের মধ্যে কে আছো, যে রাসূলের ডাকে সাড়া দিবে! জিহাদ করবে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জন্য জান ও মাল দিয়ে; বিনিময়ে পাবে জান্নাত, যার পাদদেশে সুমিষ্ট পানির নহর প্রবাহিত।’রাসূলের (সা) ডাকে লাব্বাইক বলে একে একে মু’মিনগণ জমায়েত হতে লাগলেন শাহাদাতের তামান্না নিয়ে।

এদের মধ্যে শিশু বাচ্চা কোলে এক মহিলাকেও দেখা গেলো। মহিলাকে দেখে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, ‘ওহে বোন আমার! আপনি কি জানেন না শিশু, বৃদ্ধ, অক্ষমদের জন্য জিহাদের হুকুম প্রযোজ্য নয়? আপনার ঘরে কি কোন সক্ষম পুরুষ নেই যে আমাদের সাথে ময়দানে জিহাদে শরীক হতে পারে?

জবাবে মহিলা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা) জিহাদের হুকুম সম্পর্কে আমি অবশ্যই অবগত আছি। ইতিপূর্বে পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য শিশুটির বাবা আপনার আনীত দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেছে। আমারও মন চায় শিশুটির বাবার মতো আপনার সাথে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জিহাদে শরীক হই। কিন্তু দুগ্ধপোষ্য শিশুটিকে রেখে আমার নিজের পক্ষে জিহাদে শরীক হওয়া সম্ভব হবেনা চিন্তা করে শিশুটিকেই আপনার হাতে সোপর্দ করার মনস্থ করেছি। আমি জানি হে রাসূল (সা) একথা শোনার পর আপনি হয়তো বলবেন, একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুর পক্ষে কিভাবে শত্রুর মোকাবেলা করা সম্ভব? হ্যাঁ, হয়তো সম্ভব নয়; কিন্তু হে আল্লাহ্র রাসূল (সা) দয়া করে আমার উপর রহম করুন! আমার এ শিশু বাচ্চাটিকে আপনি গ্রহণ করুন। আর তা এজন্য যে, যখন কোন কাফিরের তীর আমার রাসূলের (সা) দিকে ধেয়ে আসবে চুড়ান্ত আঘাত হানার জন্য তখন শিশুটিকে যেন তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। শত্রুর নিক্ষিপ্ত তীরের আঘাতে রক্তাক্ত-ক্ষত-বিক্ষত হোক কলিজার টুকরো সন্তানের কুসুম-কোমল দেহ; আমার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই! কিন্তু আমার রহমতের নবীর (সা) গায়ে কাফিরের এতটুকুন আঁচড় লাগবে তা আমি কিছুতেই বরদাশ্ত করতে পারবো না।

সুবহানাল্লাহ্ ! কী এক জান্নাতী সুগন্ধীর খোঁজ পেলেন এই মা, কী এমন হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার আকর্ষণে স্বীয় সন্তানের জীবনকে তুচ্ছ ভাবতে পারেন এক মা!

উপস্থিত সাহাবীদের হৃদয়কে এ বিরল ঘটনা প্রবলভাবে নাড়া দিলো।

সবার সম্মিলিত কণ্ঠে ধ্বনিত হলো-নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবার সাবিলুনা, সাবিলুনা-আল জিহাদ, আল জিহাদতরিকুনা, তরিকুনা-মুহাম্মাদ, মুহাম্মাদ।অতঃপর অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে, সান্তনা দিয়ে শিশুসহ মহিলাকে রেখেই ৭শত মুজাহিদের এক কাফেলা নিয়ে রাসূল মুহাম্মাদ (সা) ঘাঁটি স্থাপন করলেন ওহুদের পাদদেশে।

বিষয়: বিবিধ

১৫২২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

290813
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৩৬
যা বলতে চাই লিখেছেন : আল্লাহু আকবার। ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ। Good Luck Rose
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৩২
234458
ওরিয়ন ১ লিখেছেন :
290819
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:০৩
শেখের পোলা লিখেছেন : সুবহানাল্লাহ৷ এমন মা ই প্রয়োজন৷
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৩২
234459
ওরিয়ন ১ লিখেছেন :
290821
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৪১
কাহাফ লিখেছেন :
জিহাদ কে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাখ্যায় রুপায়িত করার কারণেই মুসলিম সমাজের আজ এই দূর্দশা!
ভাল লাগল লেখনী!জাযাকাল্লাহু খাইরান! Praying Praying
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:০৬
234462
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : ঝাঝাকুমুল্লাহ খায়ের। || আল্লাহ আপনাকে জান্নাত বাসী করুক, আমীন
290893
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯
হতভাগা লিখেছেন : এটা বলে কি আজকালকার ইসলামমনষ্ক আপুদেরকে অনুপ্রানিত করতে প্রয়াস চালাচ্ছেন ?
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩
235071
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : ভাইজান, হতভাগা যেন আখিরাতে না হতে হয়, সেই দোয়া করি।
290916
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৩৭
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : তাকবীর-আল্লাহু আকবার। অনেক ভালো লাগলো । জাযাকাল্লাহু খাইরান ।
291643
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:৪৪
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : সুন্দর লেখা।
ফেসবুকে আমাদের আলোর মিনার পেজে শেয়ার করলাম।
https://www.facebook.com/alorminar24

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File