শবে বরাত নিয়ে বাংগালী ভাইটির সাথে যে কথোপকথন।

লিখেছেন লিখেছেন ওরিয়ন ১ ১২ জুন, ২০১৪, ০৭:৫৬:২৮ সকাল

অফিসে যাওয়া আসার পথে ট্রেনে এক বাংগালী ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হলো কিছুদিন আগে। প্রায়ই আমরা একই কম্পার্টমেন্ট এ বসি। দুই দিন আগে ট্রেনে উঠে উনার সামনের সিটে গিয়ে বসলাম। ইশারায় সালাম বিনিময় হলো। এদেশের ট্রেনে মানুষ সাধারনত খুবই কোয়াইট থাকে। কেউবা বই, ট্যাবলেট, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি নিয়ে যে যার মত ব্যস্ত। যেচে গিয়ে কেউ কারো সাথে কথা বলে না। বাংগালী ভদ্রলোক আমাকে পেয়ে যেন কিছুটা উৎসাহিত হয়ে উঠলেন। সামনে এগিয়ে বললেন, "ভাই, বলতে পারেন শবে বরাত কবে? অফিস থেকে শবে বরাতের জন্য আজকেই ছুটি নিতে হবে।" ভদ্রলোক আরো বললেন, "আমার বৌ এ ব্যাপারে বেশ এগিয়ে, দুজন মিলে সারারাত ইবাদত করবো" ভাই তারিখ টা যেন কবে?

আমি কিছুটা ইতস্তত বোধ করতে লাগলাম। কারন, তারিখ টা আমি জানি না। যেহেতু শবে-বরাত নিয়ে আমার তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই তাই তারিখ টা মনে রাখিনি। তবে ভদ্রলোককে মিষ্টি হেসে বিদাতের কুফল সম্পর্কে কিছু কথা বললাম।

রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর গুনাহগার উম্মাতের শাফায়াতের ব্যাপারে হাশরের ময়দানে খুব আগ্রহী হবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে অনুমতি লাভ করার পর তিনি বহু গুনাহগার বান্দা-যাদের জন্য শাফাআত করতে আল্লাহ তা'আলা অনুমতি দিবেন-তাদের জন্য শাফাআত করবেন। কিন্তু বিদ'আত প্রচলনকারীর জন্য তিনি শাফাআত করবেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

“শুনে রেখ! হাউজে কাউছারের কাছে তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব করব। সেই দিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিওনা। জেনে রেখ! আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাব। কিন্তু তাদের অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব : হে আমার প্রতিপালক! তারা তো আমার প্রিয় সাথী-সংগী, আমার অনুসারী। কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে? তিনি উত্তর দিবেন : আপনি জানেন না যে, আপনার চলে আসার পর তারা ধর্মের মধ্যে কি কি নতুন বিষয় আবিস্কার করেছে।“ (ইবনে মাজাহ)

(১) এ রাতকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের 'আমল করার সমর্থনে কোন সহীহ হাদীস নেই।

(২) এ রাত সম্পর্কে যা কিছু আকীদাহ বিশ্বাস প্রচলিত আছে তা পোষণ করা জায়েয নয়।

(৩) এ রাতে ইবাদাত বন্দেগী করলে সৌভাগ্য খুলে যায় এমন ধারণা একটি বাতিল আকীদাহ।

(৪) এ রাতে হায়াত, মউত ও রিয্ক বন্টনের বিষয় লেখা হয় বলে যে বিশ্বাস তা কুরআন ও হাদীসের বিরোধী। তাই তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

(৫) এ রাতকে কেন্দ্র করে যেমন সম্মিলিতভাবে ইবাদাত বন্দেগী করা, রাত্রি জাগরণ করা ঠিক নয় তেমনি ব্যক্তিগত ইবাদাত বন্দেগী করাও ঠিক হবে না। তবে নিয়ম বা রুটিন মাফিক ইবাদাত বন্দেগীর কথা আলাদা। যেমন কেহ সপ্তাহের দু দিন রাত্রি জাগরণ করে থাকে। ঘটনাচক্রে এ রাত সেদিনের মধ্যে পড়লে অসুবিধা নেই। কিন্তু এ রাতে ইবাদাত-বন্দেগী করলে অধিক সওয়াব হবে এমন ধারণায় ব্যক্তিগতভাবে বা চুপিসারে কিছু করাও ঠিক হবে না।

(৬) ১৫ শাবানের রাতই দ'ুআ কবূলের রাত নয়। বরং প্রতি রাতের শেষ অংশ দু'আ কবূলের সময়।

(৭) শুধু ১৫ শাবানের রাতেই আল্লাহ রাব্বুল 'আলামীন প্রথম আকাশে অবতরণ করেন না, বরং প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তিনি প্রথম আকাশে অবতরণ করে বান্দাদেরকে তাদের প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রার্থনা করতে আহ্বান জানান।

(৮) শবে বরাতের 'আমল সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো কোনটা জাল, আবার কোনটা যয়ীফ বা দুর্বলসূত্রের।

ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন ঃ আমাদের কাছে আহমাদ ইবনে মুনী’হাদীস বণর্ন া করেছেন যে তিনি ইয়াযীদ ইবনে হারূন থেকে, তিনি হাজ্জাজ ইবনে আরতাহ থেকে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির থেকে, তিনি উরওয়াহ থেকে, তিনি উম্মলু ম’ু মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বণর্ন া করেন যে তিনি বলেছেন ঃ আমি এক রাতে রাসলূ লু া− হ সালা− লা− হু ‘আলাইহি ওয়া সালা− মকে বিছানায় পেলাম না তাই আমি তাকে খঁজু তে বের হলাম, ‘বাকী নামক কবর¯া’ নে তাকে পেলাম। তিনি (সালা− লা− হু ‘আলাইহি ওয়া সালা− ম) বললেন ঃ তুি ম কি আশংকা করেছো যে আলা− হ ও তার রাসলূ তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করবেন? আমি বললামঃ হে আল−াহর রাসূল! আমি মনে করেছি আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আল−াহ রাব্বুল আলামীন মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন, অতঃপর কালব গোত্রের পালিত বকরীর পশমের পরিমানের চেয়েও অধিক পরিমান লোকদের ক্ষমা করেন। ইমাম তিরমিযী বলেন ঃ আয়িশা (রাঃ) এর এই হাদীস আমি হাজ্জাজের বর্ণিত সনদ (সূত্র) ছাড়া অন্য কোনভাবে চিনি না। আমি মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারী) বলতে শুনেছি যে, তিনি হাদীসটিকে দুর্বল বলতেন। তিরমিযী (রহঃ) বলেন ঃ ইয়াহ্ইয়া ইবনে কাসীর উরওয়াহ থেকে হাদীস শুনেননি। এবং মুহাম্মদ (ইমাম বুখারী) বলেছেন ঃ হাজ্জাজ ইয়াহ্ইয়াহ ইবনে কাসীর থেকে শুনেননি। এ হাদীসটি সম্পকের্ ইমাম বখু ারী ও ইমাম তিরমিযীর মন্তব্যে প্রমাণিত হয় যে, হাদীসটি দুটো দিক থেকে মুনকাতি অর্থাৎ উহার সূত্র থেকে বিচ্ছিন। অপর দিকে এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হাজ্জাজ ইবনে আরতাহ মুহাদ্দিসীনদের নিকট দুর্বল বলে পরিচিত। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! যারা শবে বরাতের বেশী বেশী ফাযীলাত বয়ান করতে অভ্যস্ত তারা তিরমিযী বর্ণিত এ হাদীসটি খুব গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করেন অথচ যারা হাদীসটির অবস্থা সম্পকের্ ভাল জানেন তাদের এ মন্তব্যটুক ু গ্রহণ করতে চাননা। এ হাদীসটি ‘আমলের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য হওয়ার জন্য ইমাম তিরমিযীর এ মন্তব্যটুক ু কি যথেষ্ট নয়? যদি তর্কের খাতিরে এ হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলে ধরে নেয়া হয় তাহলে কি প্রমাণিত হয়? আমরা যারা ঢাকঢোল পিটিয়ে মাসজিদে একত্র হয়ে যেভাবে শবে বরাত উদযাপন করি তাদের ‘আমলের সাথে এ হাদীসটির মিল কোথায়? বরং এ হাদীসে দেখা গেল রাসূলুল−াহ সাল−াল−াহু ‘আলাইহি ওয়া সাল−াম বিছানা ছেড়ে চলে গেলেন, আর পাশে শায়িত আয়িশা (রাঃ) কে ডাকলেন না। ডাকলেন না অন্য কাউকে। তাকে জাগালেন না বা সালাত আদায় করতে বললেন না। অথচ আমরা দেখতে পাই যে, রামাযানের শেষ দশকে আল−াহর রাসূল সাল−াল−াহু ‘আলাইহি ওয়া সাল−াম নিজে রাত

জেগে ইবাদাত-বন্দেগী করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। বেশী পরিমাণে ইবাদাত-বন্দেগী করতে বলতেন। যদি ১৫ শাবানের রাতে কোন ইবাদাত করার ফাযীলাত থাকত তাহলে আল−াহর রাসূল সাল−াল−াহু ‘আলাইহি ওয়া সাল−াম কেন আয়িশাকে (রাঃ) বললেন না? কেন রামাযানের শেষ দশকের মত সকলকে জাগিয়ে দিলেন না, তিনি তো নেক কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে আমাদের সকলের চেয়ে অগগ্র ামী ছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি তো কোন অলসতা বা কৃপণতা করেননি।

একদল লোক কোন একটা বিদ‘আতী কাজের ‘আমল শুরু করে দিল, অন্য একদল আলেম তার প্রতিবাদ করলেন। ব্যাস শুরু হল ফিরকাবাজী; শেষ পর্যন্ত মারামারি খুনাখুনি। অতঃপর ঐ বিদ‘আতপন্থীদে র আ॥োশ আরো বেড়ে গেল। তারা এ কাজটাকে তাদের দলের শে−াগানে পরিণত করল। এরপর তারা এ তরবারি দিয়ে ॥মাগত আঘাত করে মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় বন্ধনকে রক্তাক্ত করতে থাকল। মুসলিমগণ হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ল। কেন তারা আল−াহ তা’আলার হুকুমের প্রতি একটু খেয়াল করে না যেখানে

তিনি বলেছেন “কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ হলে তা উপস্হাপিত কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূেলর নিকট। এটাই উত্তম ও পরিণামে উৎকৃষ্ঠতর। (সূরা নিসা, ৫৯)”

অতএব এ রাত উদযাপন করা থেকে মানুষদেরকে নিষেধ করতে হবে। যে কোন ধরনের বিদ‘আতী কাজ থেকে মানুষকে সাধ্যমত বিরত রাখা ‘আল-আমর বিল-মারূফ ওয়ান নাহয়ি আনিল মুনকার’ এর অন্তর্ভুক্ত। আর এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করতে পারেন মুহতারাম উলামায়ে কিরাম, শ্রদ্ধেয় আইয়েম্মায়ে মাসাজিদ, দায়ী‘গণ ও ইসলামী আন্দোলনে শরীক ব্যক্তিবগর্।

বিষয়: বিবিধ

১৭২০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

234063
১২ জুন ২০১৪ সকাল ০৮:৫৪
ইমরান ভাই লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খায়রান ভাই ওরিয়ন১১। Rose Rose
234079
১২ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:৫১
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : কোনো হাদীস গ্রন্থে সংকলিত যয়ীফ এমনকি জাল বা বানোয়াট হাদীসও এ মর্মে নেই যে, এ রাত ভাগ্য রজনী।

দু একটি হাসান বা যয়ীফ হাদীস আছে লাইলাতুল নিসফে মিন শাবান যেগুলিতে আল্লাহ তায়ালা নিকটবর্তী আসমানে আসেন এবং রহমতের দৃষ্টি দেন মর্মে বর্ণিত আছে। কিন্তু সহীহ হাদীসে ‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াশে’ আল্লাহ তায়ালা নিকটবর্তী আসমানে এসে বান্দার দোআ কবুল করার কথা বর্ণিত আছে। সুতরাং উপরোক্ত হাদীসগুলি অতিরিক্ত কিছু নির্দেশ করেনা।
এখানে ঢুঁ মারতে পারেন। http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/1838/President/47081#.U5kiI3a3TDc
234084
১২ জুন ২০১৪ সকাল ১০:১৫
চোরাবালি লিখেছেন : সুন্দর বিশ্লেষণ
234091
১২ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৪২
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান। তিরমিযি বর্ণিত প্রথম হাদীসটি বুখারীতে এভাবে এসেছে যে-যখন হাউজে কাওসারে অনেক সংখ্যক উম্মত আসবে,তখন ফেরেশতারা তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবে বা তাড়িয়ে দিবে। তখন রসূল(সা: ) বলবেন,ওরা আমার উম্মত ওদেরকে আসতে দাও। ফেরেশতারা বলবে আপনি কি জানেন আপনি আসার পর ওরা আপনার দ্বীনকে বিকৃত করেছে?? ....তখন তিনি বলবেন, ওদেরকে দূর করে দাও...

অনেক ভাল লিখেছেন। আর শবে কদরের আয়াত,হাদিস শবে বরাতে কপি পেস্ট হয়
234103
১২ জুন ২০১৪ সকাল ১১:১৫
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : এক-দুই বলে পয়েন্ট ভিত্তিক সুন্দর বিশ্লেষন করেছেন। এতো সুন্দর উপস্থাপনের জন্য সাধুবাদ পেতেই পারেই তাই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি লেখনীর জন্য।
234362
১২ জুন ২০১৪ রাত ১১:১৯
সমালোচক লিখেছেন : আপনার কথা শুনে উনার প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিলো তা তো জানালেন না !

মানুষদের এক পক্ষীয় কথা বলে বিভ্রান্ত করার আগে শব-ই-বারা'আত সম্পর্কে আরো ভালো করে পড়াশুনা করুন । কতগুলো ব্লগ পোষ্টে (বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শাবান ও শবেবরাত : মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক দামাত, শবে বরাত ও প্রাসংগিক কিছু কথা জেনে নিন। -এই পোষ্টের মন্তব্যগুলো পড়ুন, শবে বরাত এর মূলেই গলদ- এটি নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন - -এই পোষ্টের মন্তব্যগুলো পড়ুন এই বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে । সেগুলো দেখে নিন এবং তারপর মানুষকে সঠিক নসিহত করুন ।

প্রকৃত সততা এটা-ই দাবী করে যে, যে সব ব্যাপারে উলামাবৃন্দ বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন, সে সব ব্যাপারে প্রশ্নকারীকে বিভিন্ন মতামতসমূহ নিরপেক্ষভাবে অবহিত করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায় প্রশ্নকারীর উপর ছেড়ে দেয়া ।

আপনি ইসলাম সম্পর্কে স্বল্পজানা একজন-কে সুযোগমত পেয়ে তার মগজ ধোলাই করে দিলেন বিদাতের কুফল বলে (কিন্তু শব-ই-বারা'আত যে বিদ'আত সেটা কি স্পষ্ট করে বলেছিলেন?) । এই লোক একদিন যদি শব-ই-বারা'আত সম্পর্কে যে ভিন্ন আরেকটি মত আছে তা জানতে পারে তখন আপনার সম্বন্ধে কি ধারণা পোষণ করবে ? লোম বাছতে গিয়ে পুরো কম্বল উজাড় করে ফেলা নিশ্চয়-ই বুদ্ধিমানের কাজ নয় ।

অবশ্য-ই আমাদের আতশবাজি, ফিরনী, আলোকসজ্জা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে এবং একাকী আমল করতে হবে । কিন্তু শব-ই-বারা'আত পালনের বিরুদ্ধবাদীরা তাদের অবস্থানকে শক্ত ভিত্তির উপর স্থাপন করার জন্য অতিরঞ্জনের আশ্রয় নিচ্ছেন। যেমন, ঢালাওভাবে শব-ই-বারা'আত পালনকারীদের বিদ'আতী, ধর্ম-ব্যবসায়ী, মিষ্টিমন্ডা-লোভী, ইত্যাকার অভিধায় ভূষিত করে বগলদাবা বাজাচ্ছেন -- ভাবখানা এমন যেন তারা যে হকের উপর আছেন সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছ থেকে খাছ সনদ পেয়ে গেছেন । ধন্যবাদ ।
১৩ জুন ২০১৪ সকাল ০৬:৫৮
181106
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : যদি শা‘বানের মধ্যরাত্রিকে উদযাপন করা বা ঘটা করে পালন করা জায়েয হতো তাহলে অবশ্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে আমাদের জানাতেন। বা তিনি নিজেই তা করতেন। আর এমন কিছু তিনি করে থাকতেন তাহলে সাহাবাগণ অবশ্যই তা উম্মাতের কাছে বর্ণনা করতেন। তারা নবীদের পরে জগতের শ্রেষ্টতম মানুষ, সবচেয়ে বেশী নসীহতকারী, কোন কিছুই তারা গোপন করেননি’। (আত্‌তহযীর মিনাল বিদা‘১৫,১৬)।
১৩ জুন ২০১৪ সকাল ০৬:৫৯
181107
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : শাবানের মধ্যরাত্রির কি কোন ফযীলত বর্ণিত হয়েছে?

শাবান মাসের মধ্য রাত্রির ফযীলত সম্পর্কে কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে:

১. আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন: এক রাতে আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খুঁজে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানে পেলাম। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন: ‘তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবেন?’ আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোন স্ত্রীর নিকট চলে গিয়েছেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: ‘মহান আল্লাহ তা’লা শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন।

হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বর্ণনা করেন (৬/২৩৮), তিরমিযি তার সুনানে (২/১২১,১২২) বর্ণনা করে বলেন, এ হাদীসটিকে ইমাম বুখারী দুর্বল বলতে শুনেছি। অনুরূপভাবে হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৯) বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদ দুর্বল বলে সমস্ত মুহাদ্দিসগণ একমত।

২. আবু মূসা আল আশ’আরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আল্লাহ তা‘আলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে আগমণ করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে দেন। হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৫৫, হাদীস নং ১৩৯০),এবং তাবরানী তার মু’জামুল কাবীর (২০/১০৭,১০৮) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

আল্লামা বূছীরি বলেন: ইবনে মাজাহ বর্ণিত হাদীসটির সনদ দুর্বল। তাবরানী বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে আল্লামা হাইসামী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) মাজমা‘ আয যাওয়ায়েদ (৮/৬৫) গ্রন্থে বলেনঃ ত্বাবরানী বর্ণিত হাদীসটির সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী শক্তিশালী। হাদীসটি ইবনে হিব্বানও তার সহীহতে বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে দেখুন, মাওয়ারেদুজ জাম‘আন, হাদীস নং (১৯৮০), পৃঃ (৪৮৬)।

৩. আলী ইবনে আবী তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন শা‘বানের মধ্যরাত্রি আসবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর নামায পড়বে, আর সে দিনের রোযা রাখবে; কেননা সে দিন সুর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: ক্ষমা চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করব। রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি রিযিক দেব। সমস্যাগ্রস্ত কেউ কি আছে যে আমার কাছে পরিত্রাণ কামনা করবে আর আমি তাকে উদ্ধার করব। এমন এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কি আছে? ফজর পর্যন্ত তিনি এভাবে বলতে থাকেন”।

হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) বর্ণনা করেছেন। আল্লামা বূছীরি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাহ (২/১০) গ্রন্থে বলেন, হাদীসটির বর্ণনাকারীদের মধ্যে ইবনে আবি সুবরাহ রয়েছেন যিনি হাদীস বানাতেন। তাই হাদীসটি বানোয়াট।

উল্লিখিত আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে, শা‘বানের মধ্যরাত্রির ফযীলত বিষয়ে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোই দুর্বল অথবা বানোয়াট, আর তাই গ্রাহ্যতারহিত।

প্রাজ্ঞ আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, দুর্বল হাদীস দ্বারা কোন আহকাম- বিধান প্রমাণ করা যায় না। দুর্বল হাদীসের উপর আমল করার জন্য কয়েকটি শর্ত লাগিয়েছেন তারা। শর্তগুলো নিম্নরূপ -

১. হাদীসটির মূল বক্তব্য অন্য কোন সহীহ হাদীসের বিরোধীতা করবেনা, বরং কোন শুদ্ধ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
২. হাদীসটি একেবারেই দুর্বল অথবা বানোয়াট হলে চলবে না।
৩. হাদীসটির উপর আমল করার সময় এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত বলে বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ রাসূল থেকে প্রমাণিত বলে বিশ্বাস করলে রাসূলের উপর মিথ্যাচারিতার পাপ হবে, ফলে জাহান্নাম অবধারিত হয়ে পড়বে।
৪. হাদীসটি ফাদায়িল তথা কোন আমলের ফযীলত বর্ণনা সংক্রান্ত হতে হবে। আহকাম (ওয়াজিব, মুস্তাহাব, হারাম, মাকরূহ) ইত্যাদি সাব্যস্তকারী না হতে হবে।
৫. বান্দা ও তার প্রভুর মাঝে একান্ত ব্যক্তিগত কোন আমলের ক্ষেত্রে হাদীসটির নির্ভরতা নেয়া যাবে। তবে এ হাদীসের উপর আমল করার জন্য একে অপরকে আহবান করতে পারবে না।
এই শর্তাবলীর আলোকে যদি উপরোক্ত হাদীসগুলো পরীক্ষা করে দেখি তাহলে দেখতে পাই যে, উপরোক্ত হাদীসসমূহের মধ্যে শেষোক্ত _ আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)বর্ণিত — হাদীসটি বানোয়াট। সুতরাং তার উপর আমল করা উম্মাতের আলেমদের ঐক্যমতে জায়েয হবে না।

প্রথম হাদীসটি দুর্বল, দ্বিতীয় হাদীসটিও অধিকাংশ আলেমের মতে দুর্বল, যদিও কোন-কোন আলেম এর বর্ণনাকারীগণকে শক্তিশালী বলে মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কেবলমাত্র বর্ণনাকারী শক্তিশালী হলেই হাদীস বিশুদ্ধ হওয়া সাব্যস্ত হয়না।

মোট কথাঃ প্রথম ও দ্বিতীয়, এ হাদীস দুটি দুর্বল। খুব দুর্বল বা বানোয়াট নয়। সে হিসেবে যৎকিঞ্চিৎ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে এ রাত্রির ফযীলত রয়েছে।

এই সূত্রেই অনেক হাদীসবিদ শাবানের মধ্যরাতের ফযীলত রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেনঃ

ইমাম আহমাদ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)। [ইবনে তাইমিয়া তার ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীমে (২/৬২৬) তা উল্লেখ করেছেন]
ইমাম আওযায়ী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)। [ইমাম ইবনে রাজাব তার ‘লাতায়েফুল মা‘আরিফ’ গ্রন্থে (পৃঃ১৪৪) তার থেকে তা বর্ণনা করেছেন]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)। [ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীম ২/৬২৬,৬২৭, মাজমু‘ ফাতাওয়া ২৩/১২৩, ১৩১,১৩৩,১৩৪]।
ইমাম ইবনে রাজাব আল হাম্বলী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)। [তার লাতায়েফুল মা‘আরিফ পৃঃ১৪৪ দ্রষ্টব্য]।
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) [ছিলছিলাতুল আহাদীস আস্‌সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯]
২১ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৪৮
183661
সমালোচক লিখেছেন : @ওরিয়ন-

বিভিন্ন ব্লগাররা আগে-ই উল্লেখ করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শা'বানের রাত্রের ফজিলত বর্ণনা করেছেন এবং বিভিন্ন আমল করেছেন । উনি তো প্রতি রাতে-ই জান্নাতুল বাকীতে যেয়ে মৃতদের জন্য মাগফেরাত কামনা করতেন না । তিনি যদি অন্যান্য রাতের ন্যায় এই রাতে-ও তাঁর অভ্যাসগত ব্যাপারগুলো করে থাকেন কিন্তু সেগুলো আমাদের অভ্যাসগত ব্যাপার নয় (যেমন, তাহাজ্জুদ, কবরস্থান যিয়ারত, দীর্ঘ রুকু-সেজদা সহকারে দীর্ঘ সময়ব্যাপী নফল নামায পড়া, ইত্যাদি) সেক্ষেত্রে-ও আমাদের মতো অনভ্যস্তদের জন্য শুধুমাত্র ঐ রাতে অধিক নফল ইবাদত করায় কোনো অসুবিধা নেই । বরং এক রাতের জন্য হলে-ও তাঁর ইত্তেবা করা হলো । তিনি যে ঐ কাজগুলো করেছেন তার সাক্ষী স্বয়ং হযরত আয়েশা (রাঃ) যিনি রাসুলুল্লাহ-র আমলগুলো আমাদের জানিয়ে দিয়ে গেছেন । সব সাহাবী-ই রাসুলুল্লাহ-র সব কিছু সম্বন্ধে অবগত ছিলেন না ।

একটা রাতের ফজিলত আছে কিন্তু তার জন্য কোনো আমল করার দরকার নাই । এটা কেমন ধরণের কথা ? শুধুমাত্র ফজিলত জেনে "হুম" বলে রাখা ! মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধি-বিবেচনা কি বলে ?

রমযানের শেষ দশ দিনের এতো ফজিলত অথচ তিনি শুধুমাত্র তাঁর স্ত্রীদেরকে-ই ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন ; অন্যান্য সাহাবীদের জাগাতে বা বলতে গেলেন না কেনো ?

তারাবীর নামাযের ব্যাপারে আমরা জানি যে, তিনি কয়েক দিন মসজিদে জামাতে পড়ানোর পর ঘরে একাকী পড়তে শুরু করেন এই ভয়ে যে, ঐ নামায পড়া-ও যদি ফরয করে দেয়া হয় আল্লাহ-র পক্ষ থেকে । শব-ই-বারা'আতের বেলায়-ও এক-ই যুক্তি আনা যায় !

ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা যদি এমন-ই গুরুত্বপূর্ণ (ফজিলত) হয়ে থাকে, তবে কুর'আন-হাদীসে তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বারবার সরাসরি, সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন (direct, clear and unambiguous) ভাষায় নির্দেশ পাওয়া যায় না যেমন পাওয়া যায় নামায বা যাকাতের ক্ষেত্রে ? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মারা যাবার সময় কেনো তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা বা খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি সম্বন্ধে বলে যাননি ? অথচ তাঁর মুখনিঃসৃত শেষ কথা ছিলো নামাযের ব্যাপারে যত্নবান হবার ! এতো বড় ফজিলতের কথা তিনি কেনো বলে গেলেন না ?
234493
১৩ জুন ২০১৪ দুপুর ০১:২৯
মুিজব িবন আদম লিখেছেন : আমরা নফল ও মুস্তাহাব বিষয় নিয়ে অনেক বেশী বিতর্ক করি। অথচ কুরআন অনুযায়ী জীবন চালানোর প্রয়োজন অনুভব করি না। সমাজের প্রাতিটি মানুষের হক আদায়ে আমরা অত মনোযোগী নই। বেশী বেশী আচার অনুষ্ঠান করি।
234588
১৩ জুন ২০১৪ রাত ০৯:২৭
তারেক_১৩৭ লিখেছেন : শবে বরাতের দিনে রোযা রাখা - হাদীসের সনদ বিশ্লেষণ এবং মুহাদ্দিসীনে কেরামের মতামত

http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9146/Tarek_ctg/47241
235487
১৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৩
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File