কি দেখার কি দেখছি! কি বুঝার কি বুঝছি! আরাম-আয়েশ আর আভ্যিজাত্যের ভিড়ে, আন্দোলন টাকে খুঁজছি!!!
লিখেছেন লিখেছেন ওরিয়ন ১ ০৯ মে, ২০১৪, ০৬:০৯:২৯ সকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলায়কুম।
আজকাল আমাদের কি যেন হয়েছে! সব কিছুতেই যেন কিছুটা কৃতিমতার ছোঁয়া। হ্রদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর আন্তরিকতা কেবল যেন ফাঁকা বুলি। বলছিলাম পশ্চিমা সোসাইটির বাংলাদেশীদের কথা। আমরা যারা বাংলাদেশী, সামান্য একটু ভালো থাকা-খাওয়া, স্যিকুরিটি, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ এসব চিন্তা করে এই পশ্চিমা সোসাইটিতে চলে এসেছি তথা ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় হিজরত করেছি বলছিলাম তাদের কথা। ভোগ আর বস্তুবাদী সমাজে এসে আমরা অনেকেই এবং এককালের অগ্রসরমানের আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ও ভেসে যায় ভোগ-বিলাসিতার স্রোতে, আবার অনেকেই আন্দোলনটাকে ও নিজেদের খেয়াল-খুশী আর অবসরের বিনোদনের উপায় হিসাবে বেছে নেয়। এসব কোন অলস মস্তিকের কল্পনা প্রসূত কথা নয়, একেবারে কাছথেকে দেখা নিজের এক্সপেরিয়েন্স এর কথা বলছি। আজকাল অনেকের বক্তব্যই নিজের মধ্যে কোন আছর পড়ে না, ফানি মনে হয়। বিশেষ করে যখন দানের ওয়াজ শুনি, গীবত, আনুগত্য আর চোগলখুরীর বক্তব্য শুনি। আমি কেবল শুনি আর মুখ টিপে টিপে হাসি। মনটা বেদনায় ভরে ও উঠে। এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। রাসূলের হাদীস ও খোলাফায়ে রাশেদীনের কর্ম ও জীবনীর প্রতিচ্ছবি যাদের মাঝে আমরা খুঁজে পাবো, যাদের কথা ও কাজ একই হবে, কুরআন-হাদীসের যেটা বক্তব্য দিবেন সেটা নিজে করে দেখাবেন! কিন্তু বাস্তবতা যেন কিছুটা অন্যরকম। নাকি পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামী আন্দোলন করতে হলে, কিছুটা ভোগবাদী হতে হবে, মিথ্যার সাথে কিছুটা আপোষ করে চলতে হবে,শুধুমাএ অবসর পেলে এবং ভালো লাগলে সংঘঠনকে সময় দিতে হবে!! অবশ্য খুবই সচতুর ভাবে অনকেই নিজের দূর্বলতাকে কৌশল বলে ও চালিয়ে দেন ইদানিং। সুন্নত খুঁজতে গিয়ে ফরয,ওয়াজিব, হালাল, হারাম বাদ পড়ে যায়। ভাবছেন তা কি করে হয়! আগে ফরয তারপর তো সুন্নত। আমি ও তো তাই বলি। এবার না হয় একটা উদারন দিয়েই বলি। মাঝে মাঝে অন্য বাসায় দাওয়াত দিলে আমাদের মাঝে যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়, সংঘঠনের কাজের বেলায় ঠিক তার উল্টো। শুধুমাএ দাওয়াত খাওয়ার জন্য সংঘঠন থেকে ছুটি ও নেওয়া হয় বৈ-কি! ইস!সংঘঠনের কাজের ব্যাপারে এইরকম উদ্দীপনা যদি আমার মধ্যে দেখা যেত।। মাঝে মাঝে তো ব্যক্তিগত দাওয়াতের তোড়ে সংঘঠনের নিয়মিত প্রোগাম ও ভেস্তে যেতে দেখেছি। আর ভোগ-বিলাসের কথা বলছেন? আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের ভালৈ রেখেছেন। আমাদের আলীশান বাড়ী, দামী গাড়ী, দামী আসবাপএ তো আছেই। আর স্বর্নালংকার ৪০-৫০ ভরিতো থাকতেই হবে। পশ্চিমা কান্টি তে বাস করি বলে কথা! আর ড্রয়িং রুমে বড় পর্দা টিভির সাথে সাথে বেড রুমে ও কিন্তু এল, ই,ডি থাকা চাই। বলছিনা এইসব কিছু হারাম, অবৈধ বা থাকতে নাই। এমন কথা আমি বলছি না। এর সবই কিন্তু হালাল পয়সায় কিনা এবং যাকাত ও দেয়া হয়। কিন্তু আমার কেমন জানি মনে হয় যখন কুরানের এই আয়াত দেখি: "এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী। (২৫:৬৭) " আর আল্লাহর রাসূল বলছেন: " আমাকে যদি ভালোবাসো, তবে পানি যেভাবে নীচের দিকে নেমে আসে, ঠিক তেমনি দ্ররিদ্রতা ও তোমাদের দিকে ধেয়ে আসবে"। স্বাভাবিক ভাবে মনে প্রশ্ন উদিত হয়, আমদের এই সুবিধাবাদী আন্দোলন আমাদেরকে কি জান্নাত পর্যন্ত পোঁছে দিতে পারবে? এই উওর আমার জানা নেই। আনুগত্যের কথা বলে যখন কর্মীদেরকে শরিয়া ওজর ছাড়া প্রোগাম ত্যাগ করলে কঠিন থমক দেই, তখন একবার ও কেন মনে করি না আমীরল মোমিনের কতটুকু দায়িত্ব আমি পালন করি! উমর ফারুক (রা) না হয় রাতের গহীনে শহরের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াতো সাধারন মানুষের অবস্হা জানার জন্য, আর আমি সেই দায়িত্ব নিয়া মাসে না হউক বৎসরে আমার গুটি কয়েক কর্মীর খবর নিতে পারি না। অবশ্য মাঝে মাঝে আমি সেই আশায় বসে থাকি, কেউ একজন আমাকে খবর দিবে, তারপর আমি দেখবো কর্মীটির কি অবস্হা। আমি যে সংঘঠনের বড় দায়িত্বশীল, সংঘঠনের একেবারে সাধারন কর্মীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ আমার শোভনীয় হবে কি!?? আজকাল সালামের ব্যাপারে ও আমাদের যথেষ্ট কৃপনতা দেখা যায়। রাসূল সাল্লেলাহু আলায়হে ওয়াসাল্লাম বলেছেন: " যে আগে সালাম দেয়, সে অহংকার মুক্ত"। দুঃখের সহিত বলতে হয়, আমি যেন আজকাল সালাম দেওয়ার চেয়ে সালাম নিতেই বড় বেশী ভালোবাসী। ফোন কিংবা টেক্সট মেসেজে সালাম দিয়ে যে কথাবার্তা শুরু করতে হয় সেটা ও আমাকে বলে দিতে হয়। আফসোস!! অবশ্য বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অনেক দেশে আমার আন্দোলনের কাজের এক্সপেরিয়েন্স । সময় ও সুযোগ মত সে সব কথা কর্মীদের শুনিয়ে দিতে ও কার্পণ্য করি না। তাছাড়া পৃথিবীর অনেক বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী ও আমার ঝুলিতে, প্রফেশনাল জব করছি দীর্ঘদিন। আর সেই ছোটবেলা থেকে মানে স্কুল লাইফে থেকে আজ অবধি আমার জীবনের সাথে মিলে মিশে আছে ইসলামী সংঘঠন। আর তাই যেকোন সেক্টরে কমান্ড করার দায়িত্ব আমার হাতে থাকা চাই। আমার মত সংঘঠন বুঝে এমন লোক আছে নাকি এখানে? মাঝে মাঝে আবার এই বিষয়ে চেলেন্জ চ্ছুঁড়ে বসি। যদিও তাকওয়া টা আল্লাহ সুবাহানাতাল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশী অগ্রগন্য, কিন্তু আমার সেদিকে বিন্দুমাএ নজর নেই। সহায়-সম্পদ আর প্রভাব ও দুনিয়াবী যোগ্যতায় আমি যেহেতু সেরা, সেহেতু নেতৃত্ব টা ও আমার হাতে থাকা চাই। আজকাল স্বজনপ্রীতি ও আমাকে বেশ পেয়ে বসেছে। পূর্ব পরিচিত, একই জেলার, নিকট আত্নীয় স্বজন কিংবা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বা ইনস্টিউট হলে আমার কাছে সংঘঠনের কাজ বা দায়িত্ব বন্টনের সময় আলাদা সুবিধা পেয়ে যায় বৈকি!একেবারে নতুন হয়ে ও পূর্ব পরিচিতির সূএ ধরে গাছের মগডালে উঠে বসে। ফলসূতিতে যা হবার তা হয়, সামান্য বাতাসেই ঝড়ে পড়ে মহুর্তে। অনেক সময় কারো কারো ব্যাপারে আমি একেবারে অন্দ্ব হয়েই যাই। অথচ স্বজনপ্রীতি যে ইসলামে একটা খুবই খারাপ কাজ সেটা আমার মনে আসে না। এই স্বজনপ্রীতির কারনে আমি নিজে তো ক্ষতিগ্রস্ত হবোই, যেহেতু এটা একটা দূর্নীতি, পাশাপাশি সংঘঠন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার যে ভাইটির জন্য স্বজনপ্রীতি করলাম সে ও একদিন আমার এই দূর্নীতির কথা বুঝতে পেরে আমার থেকে দূরে সরে যায়। পশ্চিমা বিশ্বে বিরোধীদের সাথে মারামারি, হানাহানি নাইবা থাকলো, তাই বলে একেবারে হাত-পা গুটিয়ে তো বসে থাকা যায় না আর তাই সংঘঠনের মধ্যে নিজেদের পচ্ছন্দ মত লোক নিয়ে গ্রুপিং শুরু করে দিয়েছি। ভালো কথা আপনার কারো সাথে সম্পর্কটা একটু বেশী থাকবে, কাউকে না হয় একটু বেশী পচ্ছন্দ হবে, দাওয়াত না হয় একটু বেশী খাওয়াবেন, তাই বলে সেটার রেশ সংঘঠনের প্রোগামে নিয়ে আসবেন কেন? আর আপনার পচ্ছন্দের লোকের পাল্লাটা যদি একটু ভারী হয়, তাহলে তো নিজেদের সুযোগ সুবিধামত পোগ্রামের দিন, ক্ষন, সময় চেন্জ করে এজেন্ডা পর্যন্ত বদলিয়ে পেলেন। বাহ! চমৎকার আমাদের কৌশল আর ক্ষমতার অপব্যাবহারের নমুনা।
মাঝে মাঝে আমি সংগঠনের জন্য একেবারে নিবেদিত প্রান হয়ে যাই, মরিয়া হয়ে উঠি। তখন ইসলামের সীমারেখার মধ্যে আছি কিংবা নাই আমার সেন্স থাকে না। সংগঠনকে সেভ করতে গিয়ে নিজে হয়ে যাই আনসেভ। বৈধ-অবৈধ খেয়াল থাকে না। হালাল-হারাম বাচ-বিচার করি না। প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হয় নিজেকে, আমি কি সংগঠনের জন্য সংগঠন করি! নাকি আল্লাহর সন্তোস্টির জন্য সংগঠন করি!!
পরিশেষে বলতে চাই:
"সংগঠনকে ভালবাসতে যেয়ে যদি আল্লাহর ভালবাসা কমে যায় তাহলে বিজয় কিভাবে কামনা করব ।" "কৌশলের নামে মিথ্যার সাথে আপোষ সেতো সত্য বিমূখতার প্রথম ধাপ ।" "কিছু কৌশল মানুষকে সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে, দিতে পারে জয়ের স্বপ্ন কিন্তু এর মাধ্যমে চুড়ান্ত জয় তথা সাফল্য এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব না ।"
আমি সেই সংগঠনের স্বপ্ন দেখি যেটি ইসলামের রঙ্গে রঙ্গিন। যার কর্মী বাহিনীর মাঝে ইসলামী মুভমেন্ট এবং রাজনীতির পার্থক্যের সম্যক ধারণা থাকবে। যাদের মাঝে ভোগ আর বিলাসিতার পরিবর্তে ত্যাগ আর ভালোবাসা স্থান লাভ করবে। যারা সবক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিতে পারবে। কোন পার্থিব বিষয়কে নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বোকো হারাম, আল শাহাব, আল জিহাদ, আল কায়দা, তালেবান....... এরাই তো ইসলামের রঙ্গে রঙ্গিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন