যার বিয়ের ব্যবস্হা করেছিলেন স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সঃ),আফ্রিকার বিশাল দেহী কালো মানুষ, সেই প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সাদ সালমী (রাঃ) কথা বলছি:
লিখেছেন লিখেছেন ওরিয়ন ১ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৫:৫১:২২ সকাল
হযরত সাদ সালমী (রাঃ) আফ্রিকার বিশাল দেহী কালো মানুষ। চেহারার গঠনও তেমন সুন্দর নয়। কিন্তু হৃদয় তাঁর আল্লাহ ও তাঁর নবীর প্রেমে পরিপূর্ণ। একদিন তিনি নবী করীম (সা) এর কাছে লজ্জা জড়িত কন্ঠে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার বিয়ের প্রয়োজন, কিন্তু আমি কালো কুত্সিত বলে কেউ আমার সাথে মেয়ে বিয়ে দিতে আগ্রহী নয়। আপনি অনুগ্রহ পূর্বক আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন।
আল্লাহর নবী তদানীন্তন সমাজের সম্মানিত ধনী ...ব্যক্তি হযরত আমর (রা) এর কাছে পত্র পাঠালেন। পত্রে লিখা হলো, আমর! পত্র বাহকের সাথে তোমার মেয়েটির বিয়ে দাও।
হযরত সাদ আনন্দিত চিত্তে আল্লাহর রাসূলের পত্র নিয়ে হযরত আমরের হাতে দিলেন। পত্র পাঠ করে হযরত আমর বিচলিত হয়ে উঠলেন। তিনি হযরত সাদ সালমীকে বললেন, তুমি এখানে অপেক্ষা কর, আমি আমার মেয়ের মতামত জেনে তোমাকে জানাবো।
হযরত আমরের মেয়ে আড়াল থেকে তাঁর পিতা ও পত্র বাহকের কথপোকথন শুনলো এবং পিতার মনোভাব বুঝতে পারলো যে, তাঁর পিতা ঐ কালো মানুষটির সাথে বিয়ে দেবেন না। মেয়েটি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। হযরত আমর মেয়ের কান্না দেখে স্নেহ মাখা কন্ঠে বললেন, 'মা' তোমার মত সুন্দরী মেয়ের সাথে ঐ কুৎসিত মানুষটির বিয়ে আমি দেবনা। তুমি কেঁদনা, আমি পিতা হয়ে তোমার জীবন নষ্ট করতে পারিনা।
হযরত আমরের মেয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো, আব্বা! আফ্রিকার ঐ কালো কুৎসিত দর্শন মানুষটির সাথে আমার বিয়ে দেবেন, এ জন্য আমি কাঁদছি না।
পিতা বিস্মিত দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, তাহলে তোমার কান্নার কারণ কি?
মেয়েটি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে পিতাকে জানালো, আব্বা কাঁদছি এ জন্য যে, আমার কত বড় সৌভাগ্য যে, স্বয়ং আল্লাহর রাসূল আমার বিয়ের জন্য পাত্র নির্বাচন করে প্রেরণ করেছেন। আজ যদি আল্লাহর রাসূলের (সা) নির্বাচিত পাত্রকে আপনি ফেরত্ দেন, তাহলে পুনরায় কি আমার ভাগ্যে স্বামী হিসাবে আল্লাহর নবীর নির্বাচিত কোন পাত্র জুটবে?
হযরত আমর তাঁর মেয়ের কথা শুনে বিস্ময়ের ধাক্কা খেলেন। তিনি বিস্ময়াভিভূত দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নত মস্তকে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
আল্লাহর রাসূলকে ভালোবাসার প্রতিযোগীতায় তিনি পিতা হয়ে মেয়ের কাছে হেরে গেলেন। গর্বে তাঁর বুকের ভেতরটা ভরে উঠলো। কিয়ামতের ময়দানে এই মেয়ের কারণে তিনি গর্ববোধ করবেন।
হযরত আমর কিছু অর্থ সাদ সালমীর হাতে দিয়ে বললেন, যাও, বাজার থেকে বিয়ের সরঞ্জামাদি ক্রয় করে নিয়ে এসো। আজই তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেবো।
হযরত সাদ সালমীর অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। মনে রঙিন কল্পনার জাল বুনতে বুনতে তিনি বাজারে গিয়ে বিয়ের সামগ্রী ক্রয় করে হযরত আমরের বাড়ির দিকে ফিরছেন। এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন কে যেন উচ্চকন্ঠে ঘোষনা করছে, 'প্রস্তুত হও', জিহাদে অংশগ্রহণ করে আল্লাহর জান্নাতের দিকে চলো।
জিহাদের আহ্বানে ইসলামী আন্দোলনের জিন্দাদিল মুজাহিদ হযরত সাদ সালমী পৃথিবীর যাবতীয় অস্তিত্ব ভূলে গেলেন। তিনি বিয়ে উপলক্ষে ক্রয় করা সামগ্রী দোকানীকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, ভাই, এগুলোর বিনিময়ে আমাকে একটি ভাল তরবারি দাও।
তরবারী হাতে হযরত সাদ সালমী (রাঃ) আল্লাহু আকবার বলে গর্জন করে যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। অবিশ্রান্তভাবে তিনি তরবারী চালিয়ে যাচ্ছেন। নবী করীম (সা) সিপাহসালার হিসাবে যুদ্ধের ময়দান পরিদর্শনে এসেছেন। তিনি দেখলেন হযরত সাদ সালমীর কালো হাত আল্লাহর দুশমনদের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে। তিনি হযরত সাদের নাম ধরে আহ্বান করলেন।
অনেক সময় গত হয়েছে, আল্লাহর নবীকে হযরত সাদ দেখেননি। নবীর সুমধুর কন্ঠের আওয়াজ কর্ণকুহরে প্রবেশ করার সাথে সাথে হৃদয়ের মধ্যে নবী প্রেমের স্রোত প্রবাহিত হলো। "আমি উপস্থিত হে আল্লাহর রাসূল!" হযরত সাদ আল্লাহর নবীর আহ্বানে সাড়া দিলেন। নবী কন্ঠের আওয়াজ লক্ষ্য করে হযরত সাদ পেছনের দিকে ফিরছেন। এই সুযোগে আল্লাহর এক দুশমন নবীর এই প্রেমিককে তরবারী দিয়ে আঘাত করলো। হযরত সাদ শাহাদাতের পেয়ালা পান করলেন।
যুদ্ধ অবসানে শহীদের জানাযা হচ্ছে। উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম হযরত সাদ সালমীর জন্য নিরবে অশ্রু বিসর্জন করছেন। নবী করীম (সা) হযরত সাদ সালমীর লাশের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছেন। তাঁর পবিত্র মুখে ফুটে উঠেছে জান্নাতী হাসি। সাহাবায়ে কেরাম কাঁদছেন আর আল্লাহর রাসূলের মুখে হাসি! উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম বিস্ময় বোধ করলেন। তাঁরা জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সাদের বিচ্ছেদে কষ্ট অনুভব করছি। কিন্তু আপনার মুখে হাসি!!
বিষয়: বিবিধ
১৬৮০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সাদ সালমী (রাঃ) কি আবিসিনিয়ার ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন