যে আযান কাঁদালো উমারকে, কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় আনল সকল মদীনাবাসীকে

লিখেছেন লিখেছেন ওরিয়ন ১ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:০৪:১৫ সকাল

রাসুলুল্লাহ (সা) এর ওফাতের পর বিলাল (রা) খলীফা আবু বকর (রা) এর নিকট যেয়ে আরজ করলেন "হে খলিফাতুর রাসুলিল্লাহ! আপনি কি আমাকে আযাদ করেছেন আল্লাহর ওয়াস্তে না আপনার সংগী করার জন্যে?" খলীফা বললেনঃ "আল্লাহর ওয়াস্তে"বিলাল (রা) বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সা) এর মুখে শুনেছি মুমিনের উত্তম কাজ হলো আল্লাহর পথে জিহাদে অংশ নেওয়া। আমি তাতে অংশ নিতে চাই, একে আমি আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করতে চাই"আবু বকর (রা) বলেনঃ " বিলাল, তুমি রাসুলুল্লাহ (সা) এর মনোনিত আহবায়ক, তুমি আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে বিচ্ছেদ বেদনা দিও না আমাকে"হযরত আবু বকরের এই অনুরোধে তিনি কোন যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন নাই

আবু বকর (রা) এর পর খলীফা উমার (রা) বিলাল (রা) তাঁর কাছেও অনুমতি চাইলেন জিহাদ করার জন্য। উমার (রা) ও তাকে ঠেকিয়ে রাখতে চাইলেন। কিন্তু তাঁর অত্যধিক উৎসাহ, আকাঙ্ক্ষা আর অনমনীয় মনোভাব দেখে উমার (রা) বাধ্য হলেন সিরিয়া অভিযানে অংশগ্রহন করতে।১৬ হিজরী সনে হযরত উমার (রা) এর সাথে তিনি জেরুজালেম ও বাইতুল মুকাদ্দাস (প্রথম ক্বিবলা) সফরে তার সাথে সংগী হন। সফরের এক পর্যায়ে উমার (রা) বিলাল (রা) কে অনুরোধ করলেন "আযান'' দেওয়ার জন্য। বিলাল (রা) বললেনঃ "আমি যদিও অঙ্গিকার করেছি, রাসুলুল্লাহ (সা) এর পর আর কারো জন্য আযান দিব না, দিতেও পারব না, রাসুলুল্লাহ (সা) এর জন্য কষ্টে বুক ফেটে যায়, তবুও আপনার আল ফারুকের ইচ্ছা আজকে আমি পুরণ করব, ইনশাআল্লাহ"এই কথা বলে তিনি এমন হৃদয়গ্রাহী আযান দিলেন যে উপস্থিত জনতা আবেগে অস্থির হয়ে গেল। আমীরুল মু'মিনীন উমার (রা) এত কাঁদলেন যে তাঁর বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, আবু উবাইদা (রা), মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা) সহ সকলেই সেদিন কেঁদেছিলেন অঝোরে- সবারই মনের দৃশ্যপটে ভেসে উঠেছিল রাসুলুল্লাহ (সা) এর জীবিতকালের ছবি

এরপর তিনি অনুমতি নিয়ে সিরিয়ায় বসবাস করতে শুরু করেন, বিলাল (রা)। একদিন স্বপ্নে দেখলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) তাঁকে দাকছেন এবং বলছেনঃ " হে বিলাল! এমন নিরস জীবন আর কতকাল? আমাকে জিয়ারতের সময় কি তোমার এখনো হয় নি?"তখুনি তিনি মদীনা মুনাওয়ারার দিকে রওনা হলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা) এর রোজা মুবারকে গিয়ে অঝোরে কাঁদে থাকলেন। রাসুলুল্লাহ (সা) এর কলিজার টুকরা শাবাব-ই আহলুল জান্নাহ হাসান ও হুসাইন (রা) রাও ছুটে আসেন তার কাছে এ দৃশ্য দেখে, তাঁরা তাকে জরিয়ে ধরে আবদার করতে থাকেন ফজরের আযান দেওয়ার জন্য। তাঁদের এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারেন নাই।

সুবহে সাদিকের সময় যখন তিনি আযান দিচ্ছিলেন, তাঁর অসাধারণ কন্ঠে "আল্লাহু আকবার" বলে- তা মুখরিত করে তুলেছিল মদীনার প্রত্যেকটি অলি গলিকে যখন তিনি "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্ললাহ" বললেন, তখন মদীনার নারী পুরুষেরের সকলেই অস্থির ভাবে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে আসলেন মসজিদে নববীর দিকে...

এরকম দৃশ্য রাসুলুল্লাহ (সা) এর হিজরতে মদীনা আগমনের পর আর কোন দিন দেখা যায় নি।

সূত্র: আসহাবে রাসুলের জীবন কথা

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

177299
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৩১
আবু আশফাক লিখেছেন : চক্ষু অশ্রুসজল করার মতো পোস্ট দেয়ায় অনেক অনেক ধন্যবাদ।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৫:৩৪
131298
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে জান্নাত বাসী করুক, আমীন।
178296
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:৪৬
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : আমিতো এখনও কেঁদেছি। আলহামদুলিল্লাহ
ঘটনাটি পড়লেই চোখে পানি এসে যায়।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:৫৯
131300
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে জান্নাত বাসী করুক, আমীন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File