ভাবনা গুলো যখন একান্ত আপন....................

লিখেছেন লিখেছেন ওরিয়ন ১ ০৪ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:৪১:০২ সন্ধ্যা



আজ মনটা কেমন উদাসীন, কাজে মন বসছেনা। অফিসে কাজের ফঁাকে অংক কযতেছিলাম মনে মনে। জীবনের অংক। বড় জটিল এই অংক। বয়সের সীমা ৩০ পেরিয়ে ৪০ ছঁুই ছঁুই। রাসুলের হাদীস মতে জীবনের শেয ভাগ। জীবনে কি পেলাম আর কি পেলাম না, তারই হিসেব খঁুজতে লাগলাম। কিছুতেই কিছু হল না। মনটা আবার ও উদাস হয়ে গেল, বাবার কথা মনে পড়ল। আমার বাবা নেই। গত হয়েছেন অনেক বছর আগে। বাবা এই আধুনিক জীবনের অনেক কিছু দেখেননি। সেলুলার ফোন, ইন্টারনেট, স্কাইপি। বাবাকে আমার সেকেলে মনে হলো। আধুনা বিশে্বর অনেক কিছু দেখার আগে তিনি চলে গেলেন পরপারে। আলল্াহ উনাকে জান্নাত নসীব করুক, আমিন। আস্তে আস্তে নিজের কথা ভাবতে লাগলাম। আমার ইয়ার টু পড়ুয়া ছেলের কাছে আমিও সেকেলে, পুরানো, ড্যাম, ইংরেজী জানি না। ভাবতে লাগলাম আজ থেকে ১০ - ২০ বছর পরের কথা, যখন এই পৃথিবীতে আমার অস্তিত বিলীন হয়ে যাবে। শতবার ফোন করলেও আমার মোবাইল ফোন কেউ রিসিভ করে বলবে না, আমি আলতাফ বলছি। যে আমি সকালে ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে ঘুমুতে যাওয়া অবথি ইন্টারনেট এ থাকি, সেই আমাকে আপনি শতবার এ-মেইল করলেও কোন ঊওর পাবেন না। ফেইস বুক, স্কাইপি, ইয়হু আমার আইডি নিশ্চয় থাকবে, শুধু আমি চলে যাব বাবার মত পরপারে। ঠিক ছোট বেলায় যেভাবে গিয়েছি বাবার হাত ধরে ঈদগাহে। আগামী পৃথিবীতে মানুয হয়তবা মংগল এ বসতি গড়ে তুলবে, কে জানে হয়ত সমু্দ্রের অতল গভীরে গড়ে উঠবে সুরম্য অট্টালিকা। এলিয়েনরা দখল করে নিবে আমাদের সুন্দর এই ধরনী। কিংবা বিঘ্ঞানীদের সম্প্রতিকালের "মেটাল টান্সপার" গবেষনা যদি সফলকাম হয়, তাহলেইতো কথাই নেই; স্কাইপিতে ফাইল/ছবি টান্সপার এর মত সিডনীতে ঈদের দিন সকালবেলা গোসল সেরে সেকেন্ডে পোঁছে যবো আমার গ্রামের বাড়ীতে মায়ের সাথে নাস্তা খেতে।

এইসবের হয়তবা কিছুই আমার দেখা হবে না। কারণ আমি তখন অন্য জগতের বাসিন্দা - আলমে বারযাখ। শীত, গ্রীস্ম, বরযা ধরণীর কোন ঋতু আমাকে তখন আর স্পশ করবেনা। আমার আত্ম কোথায় থাকবে? ইল্লীনে না সিজ্জিনে, ইল্লীনে থাকবে ইনশাল্লাহ। যদি সিজ্জিনে থাকে, নাহ্ আমি আর ভাবতে পারছি না। আমার চোখ দুটি বন্দ্ব হয়ে আসছে। চোখের কোনে জমে উঠছে এক ফোটঁা জল। নিজের অজান্তে গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে মেঝেতে।

চোখ বন্দ্ব করে আছি অনেকখন। ভাবতে থাকলাম নিজেকে একজন কবর বাসিন্দা হিসাবে। এইমাএ আমাকে কবর দেয়া হয়েছে। জানাযা শেযে লোকজনের চলে যাওয়ার জুতার শব্দ পাচ্ছি। এত ঘুটঘুটে অন্দ্বকার, ভয়ে সজোরে চিৎকার করলাম, আমার চিৎকার এর প্রতিধ্বনি কবরের দেয়াল হয়ে আমারি কানে সজোরে বাজতে লাগল। পৃথিবীর কেউই আমার চিৎকার এ সাড়া দিল না। এক্ষুনি হয়তবা মুনাকার নাকির ফেরেশতা প্রশ্ন করতে আসবে।



রাসুল ( স্ঃ) বলেছেন, কবরের ফিতনা হবে সবচেয়ে ভয়াবহ। দাজ্জাল এর ফিতনার মত। তাইতো রাসুল ( স্ঃ) আমাদের দোয়া শিখাচ্ছেন " আল্লাহুমা ইনী আউযুবিকা মিন আজাবি জাহান্নামা, ওয়া আউযুবিকা মিন আজাবিল কবরি, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দজ্জাল, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাইয়ে ওয়াল মামাতি"। আমি কি প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারব? আমি কি বলতে পারব " আল্লাহ আমার রব, ইসলাম আমার দ্বীন, ইনিই মুহাম্মদ (সঃ) আমার নবী"। ইনশাল্ললাহ পারব। যদি না পারি, নাহ্, ঐ আজাবের ফেরেশতার কথা আমি ভাবতে চাই না, যার হতুড়ীর আঘাতে ধুলা হয়ে যাবে শরীর, ভাবতে চাই না বিযদর সাপ আর লেলিহান আঙুনের কথা। আমি এখন কি করব? আর কিছুই যে ভাবতে পারছি না।

তওবার দরজা কি বন্দ্ব হয়ে গেছে? আমার কি আর কিছুই করার নাই? ভাবতে ভাবতে মনের ঈশান কোনে ঘন কালো মেঘ দুর হয়ে সোনালী সুষের্র আভা উকঁী দিল। আচমকা খুশীতে মনটা ভরে উঠল। এখন ও শেষ হয়ে যাই নি, দিব্যি বেঁচে আছি, এখন ও জীবনের কিছুটা সময় বাকী আছে। হে আল্লাহ তোমার দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া এখন ও আমি সুস্হ আছি, সবল আছি, স্বচ্ছল আছি।

অনেক দিন পর আজ মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠলাম চুপিসারে। অজু করে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ে নিলাম। অবনত মস্তকে সিজদায় রত হয়ে বললাম " হে আল্লাহ, হে বিশ্ব জাহানের মহান অধিপতি, হে রাজাধিরাজ, হে আমার প্রতিপালক, হে জীবন মৃত্যুর একমাএ মালিক, তুমি আমার অতীত জীবনের সকাল ভূলের জন্য আমাকে মাফ করো। হে আল্লাহ, তুমি আমার সকল প্রকারের বড় এবং ছোট গুনাহ সমূহ মাফ করে দাও। আমি আমার এমন রবের কাছে প্রাথনা করছি , যিনি তঁার বান্দার অতি কাছাকাছি থাকেন, যিনি বান্দার গুনাহ মাফ করতে ভালোবাসেন। "কে আছো, আমার কাছে রিযিক চাও, আমি তাকে দিব, কে আছো আমার কাছে গুনাহ মাফ চাও, আমি তাকে মাফ করে দিব" দু'চোখের জল গাল বেয়ে টপ টপ করে পড়তে লাগল, দুহাত উঁচু করে মনের আকুতি নিয়ে বললাম " হে আল্লাহ, নশ্বর এই দুনিয়ার আমার কোনো চাওয়া নেই, আমি শুধু চাই মৃৃত্যর পর তুমি আমায় জান্নাতবাসীদের একজন করে নিও"। বুকের মধ্যে প্রশান্তির এক ঢেউ খেলে গেল। মনে পড়ে গেল সূরা সফের ১১ - ১২ নং আয়াত, আল্লাহ বলেন, " তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান আন এবং আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো এটাই তোমাদের জন্য অতিব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জান । আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমনসব বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নীচে দিয়ে ঝর্ণাধারা বয়ে চলবে৷ আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে সর্বোত্তম ঘর দান করবেন৷ এটাই বড় সফলতা । " মনে মনে ভাবলাম যদি ঈমান আনার পর আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করাই হয় আমাদের জন্য অতিব কল্যাণকর, এটাই যদি হয় বড় সফলতা,এটাই যদি হয়, জান্নাতে যাওয়ার একমাএ পথ, তাহলে আল্লাহর পথে জিহাদ ই হউক আমার জীবনের একমাএ লক্ষ্য, একমাএ কাজ, একমাএ পেশা, একমাএ নেশা, এবং একমাএ গন্তব্য। কে কি করল না করল সেটা খঁুজে দেখার আমার সময় কই? কাকে কোন কাজ করতে দিব? আমি নিজে করলেই তো আমার সওয়া্ব। তাই আজ থেকে আমি সিন্দান্ত নিলাম, কঠিণ শপথ নিলাম, মনে মনে প্রতিঞঘা করলাম " কেউ না করুক আমি করব কাজ, আল কুরানের আহ্বানে, দ্বীন কায়েমের প্রয়োজনে, শপথ নিলাম আজ; কেউ না করুক, কেউ না করুক, আমি করব কাজ"

" হে আল্লাহ তুমি আমায় আমৃতূ ইসলামী আন্দোলনের কাজ করার তৌফিক দান করো। হে আল্লাহ তুমি আমায় শহিদী মৃত্যু দান করো। তুমি আমায় উমর, উসমান, হামযা, খোবায়েব, খাব্বাব এর উওরসূরী করে নিও। মৃৃত্যর পর তুমি আমায় জান্নাতবাসীদের একজন করে নিও" আমীন।

বিষয়: বিবিধ

৩৫০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File