আমাদের সেনাবাহিনী, আমাদের গর্ব হয়ে থাকুক।
লিখেছেন লিখেছেন শিশিরবাবু ২৮ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৪৭:৫৫ রাত
সেনাবাহিনীকে নিয়ে সম্প্রতী বেশ কথাবার্তা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন এই আর্মি সেই আর্মি নয়। অনেকে সদুপদেশ দিচ্ছেন সেনাবাহিনীকে বিতর্কে না জড়াতে। সেনাবাহিনীতে যে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে তার পক্ষে কোন কোন মহল থেকে উদাহরণ দেওয়া হয়, এই সেনাবাহিনী তারেক জিয়ার মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গেছে, সুতরাং এই আর্মি সেই আর্মি নয়। এই ধরনের মন্তব্য দলীয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। প্রাতিষ্ঠানিক রিপোর্টও হচ্ছে, যেমন টি আই বি র রিপোর্ট অনুযায়ী ১/১১ কেন্দ্রিক মঈন-মাসুদ গং এর আমলে সেনাবাহিনী দুর্ণীতিতে জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যেই বি ডি আর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি সেনাবাহিনীর অফিসাররা তাদেরই অধীনস্হ জওয়ানদের হাতে কি নৃশংসতায় সপরিবারে নিহত ও নির্যাতিত হয়েছে। কথা হল, উল্লেখিত ঘটনাবলী যদি পরিবর্তিত ভাবমূর্তির নির্দেশক হয়, তবে তা আমাদের জাতীয় সেনাবাহিনীর একটি রুগ্ন ইমেজই প্রকাশ করে। আর্মি যদি দুর্ণীতিগ্রস্হ, দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয়, প্রাতিষ্ঠানিক শৃংখলাবিহীন এবং হীনবল হয়ে পড়ে, তাহলে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের শেষ ভরসাটুকুও জনগণ হারিয়ে ফেলবে।
বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীসমূহ গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি রাজনৈতিক সংগ্রামও। তদুপরি গঠনপ্রক্রিয়ায় নিঃসন্দেহে ভারত সরকারের ভূমিকা ছিল। তাই বিজয়ের পরবর্তী প্রায় এক যুগ আমরা সেনাবাহিনীতে পেশাদারিত্বের অভাব ও রাজনীতিকরণের কুফল দেখেছি। শেখ মুজিবের রাজত্বে সেনাবাহিনীর সমান্তরালে গঠিত রক্ষীবাহিনী সশস্ত্রবাহিনীসমূহের বিকাশে অন্তরায় ছিল। পরবর্তীতে এই বাহিনী মানসিক ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক এবং ব্যক্তি চেতনায় বিচ্ছিন্নভাবে অফিসাররা বহু রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের জন্ম দেন। এই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়কালে সেনাপ্রধাণ জিয়াকে আমরা কঠোর হাতে বিদ্রোহসমূহকে দমন করতে দেখেছি। রক্ষীবাহিনীকে বিলুপ্ত করা হয়েছিল এবং মূলতঃ জিয়ার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় একটি পেশাদারী আর্মির পত্তন হয়। জিয়া হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে এই প্রচেষ্টায় ছেদ পড়লেও শেষ পর্যন্ত পেশা ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশেরই জয় হয়। ১৯৯০ এর গণঅভূত্থান ও পরের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় তার প্রমাণ মিলে। ১/১১ তে মঈন-মাসুদ গং এর ভূমিকা যদিও আবার প্রশ্নের উদ্রেক করেছে, কিন্তু জনগণ এখন ১/১১ কে দেখতে চায় একটি বিভ্রম বা দুঃস্বপ্ন রুপে। সব ভুল বোঝাবুঝি ও ষড়যন্ত্রের মুখে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীসমূহ দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় পেশাদারিত্বের সাথে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা রাখবে আমরা তাই আশা করি। আমরা চাই তারা কারো পোষা বিড়ালের ভূমিকাও নেবে না, অকারণে বণ্য বিড়ালেও পরিণত হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার অপরাজনীতি দলীয়করণের হিংস্র ছোবলে আমাদের জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগকে মুমূর্ষ করে ফেলেছে। তারা সেনাবাহিনীতেও ছোবল দিতে কুন্ঠিত হবে না। সাবধান! দিকে দিকে নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন