কতিপয় বিভ্রান্তি, পর্ব-১ : নির্বাচনকালীন নির্দলীয় কার্যকর নিরপেক্ষ সরকার বি এন পি- জামায়তের নয়, আপনার আমার গণমানুষের ভোটের অধিকারের সংগ্রাম।

লিখেছেন লিখেছেন শিশিরবাবু ২৩ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:২২:৫৬ রাত

১। অনেকে বলতে চান কে এম হাসানের প্রধাণ উপদেষ্টা নিয়োগের সম্ভবনা তৈরী করে বি এন পি প্রতিষ্ঠিত কেয়ার টেকার সরকারকে প্রথম বিতর্কের মুখে ফেলেছে। এটা সর্বৈব মিথ্যা। ২০০১ সালে সাবেক বিচারপতি লতিফুর রহমানকে বা ১৯৯৬ সালে সাবেক বিচারপতি হাবিবুর রহমানকে যে কেয়ার টেকার সরকার প্রধাণ করা হয়, তা আওয়ামী লীগের ইচ্ছা অনুযায়ীই হয়েছিল। এই দুইজন সাবেক বিচারপতিকেই আওয়ামী লীগ নিজেদের লোকই বিবেচনা করতো। পারিবারিক প্রেক্ষাপট, ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, অতীত বিবেচনায় নিলে উনাদের আওয়ামী বলয়ভূক্ত বলে চিহ্নিত করাই স্বাভাবিক হবে। তবে নিঃসন্দেহে তাদের ব্যক্তিত্ব ছিল দলবাজীর অনেক উর্ধ্বে। আইন ও বিধি বিধানের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে উনারা ছিলেন কার্যকর নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব। জানা মতে কে এম হাসানের ব্যক্তিত্বও লতিফুর রহমান ও হাবিবুর রহমানেরই সমান্তরাল ছিল। তাকে যদি বি এন পি বলয়ভূক্ত ধরাও হয়, তিনি কার্যকর নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারতেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে সে সুযোগ না দিয়ে গণতন্ত্র ধ্বংসের আয়োজন মেতে উঠে। এই ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগ পাশবিক সমর্থন প্রদান করে। আমাদের গৌরবের সেনাবাহিনীকে কালীমা লিপ্ত করে মঈন-মাসুদ গং গণতন্ত্র বিরোধী ও অসাংবিধানিক অধ্যায়ের সূত্রপাত ঘটায়। সুতরাং বি এন পি কেয়ার টেকার সরকারকে বিতর্কিত করেছে, কোনভাবেই এটাকে সত্য বলা যায় না।

২। নিঃসন্দেহে মঈন- মাসুদ গং এর সমর্থন পুষ্ট ফখরুদ্দিনের সরকার স্বাভাবিক, সাংবিধানিক সরকার ছিল না। তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের নির্বাচনও ছিল প্রচুর প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু আমরা দেখলাম বি এন পি- জামায়াত জোট সবকিছুই মেনে নিয়ে সংসদীয় রাজনীতে যোগদান করে। সাময়িকভাবে গণতন্ত্র রক্ষা পায়। আমার ধারণা অনুরূপ পরিস্হিতিতে আওয়ামী লীগ রাজপথে সহিংসতাকেই প্রাধাণ্য দিত।

৩। একতরফা অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করেছে। গণভোটের ধারে কাছেও তারা যায় নি। বর্তমান সংবিধান জনগণের নয়, একটি দলীয় সংবিধানে রুপান্তরিত হয়েছে। সুতরাং এই দলীয় ভাবাদর্শের দলিলকে সাংবিধানিক ভিত্তি ধরে রাজনৈতিক সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

৪। আওয়ামী মিডিয়া প্রচারণা চালায় আওয়ামী-বি এন পি উভয় পক্ষই অনড়। বাস্তবতা হল আওয়ামী লীগই অনড়। বি এন পি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্হায় ছাড় দিতে দিতে প্রায় ৯০ শতাংশ ছাড়ই দিয়েছে। শুধুমাত্র সরকার প্রধানের নির্দলীয় চরিত্রটুকুতে তারা ছাড় চাচ্ছে। আওয়ামী লীগ তাতেও রাজী নয়। বাস্তবতা হল এ মহূর্তে জন প্রশাসন, পুলিশ-RAB, বিচার বিভাগের যে সর্বগ্রাসী দলীয়করণ হয়েছে, যে ভাবে একটি আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন কাজ করছে তাতে শেখ হাসিনাকে বাদ দিলেও একটি দুর্বল চরিত্রের সরকার গঠিত হবে। ঐ সরকারের পক্ষে এ’ মুহূর্তে সুষ্ঠ, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না।

৫। বি এন পির লাঠিয়াল চরিত্র শ্রেণী চরিত্রের কারণেই নাই। আওয়ামী লীগ হল জমিদার, জোতদার শ্রেণীর অবশেষ। এই সামন্ত প্রভূদের প্রাইভেট লাঠিয়াল বাহিনী আছে। বি এন পি পেশাজীবি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দল। এরা মাস্তানী ও পেশী চর্চায় খুব দক্ষ হয় না। বর্তমান সময়ে ঢাকা শহরে লাখ লাখ লোকের রাস্তায় সমাবেশ করতে হলে লাঠিয়াল বাহিনীও প্রয়োজন। এবারকার আওয়ামী সরকার অতীতের যে কোন সরকারের চেয়ে গণমানুষের আন্দোলন দমনে প্রচন্ড হিংস্র। এদের শুরুই হল দেখামাত্র গুলি। এই কারণেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বিবর্তিত হচ্ছে ককটেলবাজীতে। হরতালে ঢাকার রাস্তায় আমরা দেখছি সীমিত বিক্ষোভ। তবে এই আপেক্ষিক নীরবতা দীর্ঘস্হায়ী অস্হিরতা ও ধ্বংসযজ্ঞের পূর্বাভাস।

৬। আমাদের বুঝতে হবে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় কার্যকর নিরপেক্ষ সরকার বি এন পি- জামায়তের নয়, আপনার আমার গণমানুষের ভোটের অধিকারের সংগ্রাম। গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম। গণতন্ত্র না থাকলে স্হিতিশীলতা,আমাদের স্বাধীনতা, উন্নয়ন সবই ধ্বংস হবে।

বিষয়: বিবিধ

১২৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File