আওয়ামী লীগকে প্রীতির চোখে দেখতে অভ্যস্ত বুদ্ধিজীবীদের চৈতন্যদোয় আর কবে হবে ?
লিখেছেন লিখেছেন শিশিরবাবু ২৪ মে, ২০১৩, ১০:২৯:৫১ সকাল
গতকাল ওসমানী মিলনায়তনে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী আরেকবার গণতন্ত্র, বিরোধী মতের মূল্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাজনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে তার মনোভাব সুস্পষ্ট ভাবে বিবৃত করেছেন। আমাদের দেশে শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশের মাঝে এক ধরনের আওয়ামী প্রীতি কাজ করে। তাদের দৃষ্টিতে এই সংঘটি অনেক পরিশীলিত, আধুনিক, গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত ও সভ্য-ভব্য। তুলনামূলক ভাবে জামায়াত তো বটেই, বি এন পি ও নিম্নস্তরের অসৎ, দুর্নীতিপরায়ণদের আড্ডাখানা। বাংলাদেশের গত ৪০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস তাদের সামনে ঝুলানো আছে, তবুও এনারা নিজেদের বিশ্বাসের শূণ্যতা স্বীকার করতে ইতস্তত: করেন। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ শাসন ও ব্যবস্থাপনায় শেখ মুজিবর রহমান সর্বতোভাবে ব্যর্থ হন।। এই ব্যর্থতার দায়ভার যেমন শেখ মুজিবের ঠিক সমানভাবে তার দল আওয়ামী লীগের। পাহাড় সম ব্যর্থতার পটভূমিতে তিনি ও তার দল আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের কবর রচনা করেন। জন্ম দান করেন বাকশালতন্ত্রের। আমাদের আওয়ামী বুদ্ধিজীবীরা যুক্তি খুঁজেন যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের বিধ্বস্ত অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে। ভুলেও বলেন না এ'দেশের মানুষের চাওয়া খুব বেশী কিছু ছিল না। দেশ পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক বিশ্বের আর্থিক, কারিগরি ও নৈতিক সাহায্যও কম ছিল না।
অতঃপর নানা ঘটনা প্রবাহের মাঝে জেনারেল জিয়ার হাত ধরেই গণতন্ত্র পুনর্জীবিত হয়। অর্থনীতি ফিরে পায় প্রাণশক্তি। এমন কি আজকের প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন হয়। আজ যখন জিয়াকে সামরিক স্বৈরাচার, খুনি বলে গালি পাড়তে দেখি, তখন কৃতঘ্ন শব্দের অর্থের ব্যাপকতা যেমন উপলব্ধি করি, আবার এদের মতলব নিয়েও আশংকিত হই।
প্রকৃত প্রস্তাবে সামরিক স্বৈরাচার বলা যায় জেনারেল এরশাদকে। এরশাদের জমানায় আওয়ামী লীগের ভূমিকা কি ভাবে ভুলে যান ! নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় বেঈমান আখ্যা দেওয়ার একরাতের মাথায় জামায়াত সহ আ'লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
৯১ এর নির্বাচনে হেরে গিয়ে কারচুপির ধূয়া তোলেন। জামায়াত উত্থাপিত কেয়ার টেকার সরকারের আন্দোলনে যুক্ত হয়। শুধু তাই নয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারনা হাসিনার ব্রেইন চাইল্ড বলে মিথ্যাচার করে। অবশ্যই আমাদের দেশের বাস্তবতায় নির্দলীয় নির্বাচন কালীন কেয়ার টেকারের দরকার আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যে সৎ উদ্দেশে আন্দোলন করে নাই তা আজকের বাস্তবতায় দিবালোকের মত পরিষ্কার। ইতিহাস থেকে এই দলটি অন্তত একটি শিক্ষা নিয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ২০০১ সালের মত শাহবুদ্দিন-লতিফুর রহমানের হাতে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর কখনই করতে চাইবে না।
২০০৬- ০৭ এ তত্ত্বাবধায়ক প্রধান, নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নির্বাচন ভণ্ডুল করা। ক্ষমতা হস্তান্তরের শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করে তারা বি এন পি- জামায়াত জোটকে কলঙ্কিত ও এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল যাতে আ'লীগের বিজয় নিশ্চিত হয়। আওয়ামী আন্দোলনের ফসল মঈন-ফখরুদ্দিনের উদাহরণ দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ব্যর্থ ও বিতর্কিত প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টার মধ্যেই তাদের অসৎ অগণতান্ত্রিক উদ্দেশ্য প্রকাশ পায়।
আজকের আওয়ামী লীগ ইনু-মতিয়াদের মন্ত্রী বানাতে দ্বিধাহীন। অথচ এরাই '৭২ - '৭৫ এপিসোডে আওয়ামী লীগের শাসনকালকে পদে পদে বাঁধাগ্রস্হ করেছে, নাশকতা চালিয়েছে, এক মুহুর্ত শান্তিতে থাকতে দেয় নাই। ইনুগং গণবাহিনী গঠন করেছিল, সেনা অফিসারদের হত্যা ও ব্যালেট নয় বুলেটে বিপ্লব করতে চেয়েছেন।
রাজনৈতিক অনাচারের পাশাপাশি আর্থিক দুর্নীতিতেও আ'লীগ কক্ষনই পিছিয়ে ছিল না। চলতি সময়ের পদ্মা সেতু কেলেংকারী, ডেসটিনি-হলমার্ক উপাখ্যান, শেয়ার বাজার জালিয়াতি, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের কারসাজি, দেশ জুড়ে টেন্ডারবাজী/চাঁদাবাজি ইত্যাদি হাজারো দৃষ্টান্তের মাঝে তাদের লুটেরা চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যাবে।
আওয়ামী লীগকে প্রীতির চোখে দেখতে অভ্যস্ত বুদ্ধিজীবীদের চৈতন্যদোয় আর কবে হবে ? তবুও আসুন, অন্তত: একটি সুনির্দিষ্ট এজেন্ডায়, ' নির্বাচন কালীন কার্যকর নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার'- এর অধীনে জনগণের অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সবাই যার যার অবস্থান সর্বাত্মক চেষ্টা চালাই।
বিষয়: বিবিধ
৯৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন