মুমূর্ষু গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আই সি ইউ- তে, জনগণের ভবিষ্যৎ নিকষ কালো অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা তৃণমূল নাগরিকদের কি কিছুই করার নেই ?
লিখেছেন লিখেছেন শিশিরবাবু ২০ মে, ২০১৩, ১১:০৯:৪৭ রাত
আমরা সবাই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের কবর খনন করে চলছি। যে কোন সময় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের 'ক্লিনিকাল ডেথ' হতে পারে। প্রজাতন্ত্রের মুমূর্ষু অবস্থা, কিন্তু আমরা ব্যস্ত বৈধ, অবৈধ প্রাপ্তির ভাগ ও লাভের হিসাব মেলাতে। প্রতিষ্ঠান হিসাবে কেউই দায়িত্বশীল ও প্রজাতন্ত্রের প্রতি আনুগত্যশীল নই। দুই নেত্রীর হাত দিয়ে লুটেরা দুর্নীতিবাজরা রাজনীতিকে পচিয়ে ফেলেছে। মূলধারার বাইরের রাজনীতি হয় কথিত পাবলিকের গণ-সমর্থনে শক্তিমান নয়, না হয় একেবারেই গণ-বিচ্ছিন্ন। তদুপরি যে কোন বিকল্পের উত্থানকে কায়েমি স্বার্থ বাদীরা হত্যা করতে দ্বিধা করছে না। রাষ্ট্রের মেশিনারি দুষ্টের সুরক্ষা করছে, শিষ্টকে নির্মূল। সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়া আপোষকামিতা, সুবিধাবাদ ও ভীতি ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করছে। গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার বধের সব আয়োজনই নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হচ্ছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলিতে কেউ ব্যক্তিগতভাবে গণতান্ত্রিক আদর্শবাদী হলেও দলের স্বার্থে, স্বীয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রতিবাদী হন না। আদর্শের চেয়ে কোটারী স্বার্থ বড় হয়ে দাঁড়ায়। মূলধারার পচা রাজনীতির হাত ধরে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী এবং বিচার বিভাগও প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত। যে দু'চারজন ব্যক্তি এখনো আছেন, যারা চান দলের লেজুড়বৃত্তি নয়, প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিধি ও আইন মোতাবেক দায়বদ্ধতা থাকুক, তারা অসহায়।
নির্বাহী বিভাগ আপাদমস্তক ঘুষখোর, অর্থ আত্মসাৎ কারী, অদক্ষ। গত ৪০ বছরে সরকারী আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে এরা হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। প্রতি বছর আরও হাজার কোটি টাকা লুটে সহায়তা করছে। এদের দেশপ্রেম, রুচি, সৃজনশীলতা খুবই নিম্নমানের।
বিচার বিভাগ মন মানসিকতায় যথেষ্ট স্বাধীনচেতা, আত্মমর্যাদাশীল হতে পারে নি। দলীয়করণের কালো থাবা বিচার বিভাগেও ছোবল মেরেছে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম হাতিয়ার নির্বাচন কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পৃষ্ঠদেশে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মীমাংসাকে সংবিধানের মূলনীতির সাংঘর্ষিক প্রতিপন্ন করার জন্য বিচারি কূটতর্কের প্রয়োগ আমরা দেখেছি। ফলশ্রুতিতে গণতন্ত্রের মই বেয়ে স্বৈরাচারী একদলীয় ফ্যাসিবাদের উত্থান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। আমার আশংকা ' বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা'- রবীন্দ্রনাথের এই পঙক্তিটি অচিরেই বিচারক আদেশে নিষিদ্ধ হতে পারে।
রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম সত্যাশ্রয়ী ও বস্তুনিষ্ঠ নয়। গড়পড়তায় তাদের অবস্থান দুর্নীতিবাজ, অগণতান্ত্রিক সংঘগুলোর পক্ষে। গণমাধ্যমের অর্থের যোগানদাতা স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে তৈরি হওয়া লুটেরা ধনীকশ্রেণী। এরা দুর্গন্ধময় মূলধারার রাজনীতিরও পৃষ্ঠপোষক। নিয়োগ লাভকারী সাংবাদিক, কর্মচারীদের বড় অংশই দলীয় রাজনৈতিক এক্টিভিষ্ট এবং সুবিধাবাদী। তারা এতই দলকানা যে সতীর্থ সংবাদকর্মী সরকারী নিপীড়নের শিকার হলেও দেখতে পায় না। আমার দেশ পত্রিকা, এর সম্পাদক জ্বলন্ত উদাহরণ। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সামাজিক দাংগা হাংগামার উস্কানির অভিযোগ তোলা হয়। ব্লগিং ও ফেসবুকের মাধ্যমে যেখানে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের উপর নজিরবিহীন আক্রমণ চলে, জঘন্য কুৎসা গালিগালাজ বর্ষিত হয়, সেখানে মূলধারার সংবাদপত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই অন্ধকার দিক সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিং অবশ্যই জনস্বার্থের কথা বলে। সরকারের দায়িত্ব ছিল রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্হা নেওয়া। কিন্তু গণ বিরোধী সরকার উল্টো মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের পক্ষ না নিয়ে লঘিষ্ঠ কুৎসা রটনাকারী উস্কানিদাতাদের পক্ষ নিলেন। সাধু হয়ে গেল চোর আর চোর সাধু বটে। মিডিয়ার বৃহত্তর অংশ সরকারের সমর্থনে সক্রিয় ভূমিকা নিলো। সুতরাং চতুর্থ স্তম্ভের মাধ্যমে গণতন্ত্র, জনস্বার্থ আইন ও সুশাসনের লড়াই চালানোর আশাবাদ মরুভূমির মরীচিকাতূল্য।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা গণতন্ত্র রক্ষায় ও দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় করতে কে কি ভূমিকা রাখতে পারি সেটা বলা কঠিন। তবে ফেসবুকে বা ফেস টু ফেস সাক্ষাতে বা ব্লগিং- এ জনমত সৃষ্টি করার চেষ্টা চলতে পারে। দেশ, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের জন্য নির্যাতন ও মৃত্যুকে তুচ্ছ করে লড়াই সবাই পারে না। তবুও আসুন, অন্তত: একটি সুনির্দিষ্ট এজেন্ডায়, ' নির্বাচন কালীন কার্যকর নির্দলীয় সরকার'- এর অধীনে জনগণের অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সবাই যার যার অবস্থান সর্বাত্মক চেষ্টা চালাই।
বিষয়: বিবিধ
১১১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন