৫ ও ৬ মের নৃশংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের মূল দায়-দায়িত্ব সরকারের। দায় এড়াতে চাইলেও জনগণ কখন বিশ্বাস করবে না।

লিখেছেন লিখেছেন শিশিরবাবু ০৭ মে, ২০১৩, ১১:০৭:৩৪ রাত

৫ ও ৬ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে যে নৃশংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে তার মূল দায়-দায়িত্ব সরকারের। প্রথম বুঝতে হবে কেন হেফাজতে ইসলামের উত্থান। হেফাজত সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় মহলগুলোর এক ধরনের সাংগঠনিক কাঠামো পূর্ব থেকেই ছিল। তবে আকারে, আয়তনে, প্রভাবে এত বিশাল ছিল না। বর্তমান আওয়ামী মহাজোটের সরকার ক্ষমতা দখলের পর দেশে ধর্মবিরোধী প্রচারণা বাড়তে থাকে। মহাজোটের অংশ পতিত বামপন্থীরা, যারা প্রকৃত প্রস্তাবে লুটেরা পুঁজির উচ্ছিটভোগী, তাদের কথায় ও কাজে ইসলামী আকীদা ও মূল্যবোধ বিরোধী তৎপরতা ব্যাপক পরিসরে বেগবান হয়। এরা ইসলাম বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারকে প্ররোচিত করে। এর প্রতিফলন ঘটে সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থার মূলনীতি বিসর্জনের মধ্যে। যদিও সরকার বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্মের ধারা বজায় রেখে ধর্মপ্রাণ জনগণকে প্রবোধ দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু সরকারের এই চতুরতা সহজেই মানুষের উপলব্ধিতে ধরা দেয় এবং সরকার বিরোধী মনোভাব দানা বাধতে শুরু করে। ইসলাম বিরোধী তৎপরতা বাড়তেই থাকে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম গুলোতে মুহাম্মদ (দঃ), তাঁর জীবন, ধর্মীয় বিধি বিধান সম্পর্কে লাগাম ছাড়া কূটুক্তি, মন্তব্য প্রকাশিত হয়। এই ধরণের মন্তব্য বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কোন বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণ ছিল না। ছিল বিদ্রূপ ও বিদ্বেষের কথামালা। সরকারের নজরে আনা হলেও প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নির্বিকার ও প্রশ্রয়মূলক। ধর্মপ্রাণ মানুষ ঘটনাগুলো ভালভাবে নিচ্ছিল না। এক পর্যায়ে আসে তথাকথিত 'গণজাগরণ মঞ্চ' নাটক। শাহবাগীরা এখন যতই অস্বীকার করুক এই নাটকের আরম্ভে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার দাবীর সাথেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের শ্লোগান তোলা হয়। পাকিস্তানী রাজাকারের ফাঁসির প্রতীকী উপস্থাপন করা হয় টুপি, দাঁড়িধারীদের গলায় ফাঁস ঝুলিয়ে। এ'ছাড়াও নানা ধরনের বিজাতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয়। যার বহু কিছুই সনাতন ধর্মীয় মূল্যবোধকে আহত করে। অনেক চিহ্নিত ধর্মদ্রোহী গোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং তাদের সাথে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সহমর্মিতা প্রকাশ ধর্মপ্রাণ জনগণকে আতংকিত করে। প্রসঙ্গক্রমে বলা প্রয়োজন সরকারের মানবতা বিরোধী বিচার কার্যক্রম সমাজের বড় একটা অংশেই বিশ্বাস যোগ্যতা পায় নাই। তারা এটাকে দেখেছে ইসলামী রাজনীতিকে নির্মূলের নীল নকশা হিসাবে। তাই শাহবাগীদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই জাতীয় জঙ্গী শ্লোগান মানুষকে উদ্বিগ্ন, হতাশ ও বিক্ষুব্ধ করে তোলে। বিন্দু বিন্দু ক্ষোভ, হতাশা ও আতংক মিলিত হয়ে সমুদ্রে রূপান্তরিত হয়। জন্ম লাভ করে হেফাজতে ইসলাম।

হেফাজতের কর্মসূচিতে চাপ প্রয়োগের উপাদান সংযুক্ত হওয়ার নেপথ্যে দু'টি কারণ কাজ করেছে। একটি হল তাদের প্রতি সরকারের এক ধরনের নমনীয় আচরণ। যদিও এটা ছিল সরকারের চাতুরী। তারা জামায়াতে ইসলাম বিরোধী একটি ধর্মীয় প্ল্যাটফর্ম হিসাবে হেফাজতকে ব্যবহার করতে চায়। ক্ষমতাসীনদের আচরণে হেফাজতের একটি অংশ উৎসাহিত বোধ করে। দ্বিতীয়ত শাহবাগীরা তখন ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে শাহবাগ মোড়ের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখলে রেখে বিনা বাধায় তাদের নানাবিধ আইনি, বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকে। তাদের আহবান, নির্দেশ এমন ভাবে পালিত হতে থাকে যেন তারাই রাষ্ট্রের সরকার। এই ব্যাপারটি সমাজের সর্বস্তরে ভুল মেসেজ পাঠায় এবং অরাজকতা উস্কে দেয়। সর্বোপরি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারসহ নানা বিষয়ে আওয়ামী মহাজোট সরকারের একগুঁয়েমী, বেপরোয়া স্বৈরাচরী দৃষ্টিভংগী ও কার্যক্রম বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়ায় আগ্রাসী চেতনার জন্ম দেয়।

বর্তমান সরকারের ইসলাম বিরোধী ভূমিকা এবং ইসলাম বিরোধী শাহবাগীদের অবৈধ, বেআইনি জঙ্গি তৎপরতাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ারই পরিণতি ৫/৬ মের মর্মান্তিক ঘটনাবলী। ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটনে সরকার, সরকারী দলের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। এখন দায় এড়াতে চাইলে জনগণ কখন বিশ্বাস করবে না।

বিষয়: বিবিধ

১২৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File