বাংলাদেশের সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীরা নিজেদের পরিচয় প্রথমত রাজনৈতিক কর্মী, দ্বিতীয়ত মিডিয়াকর্মী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

লিখেছেন লিখেছেন শিশিরবাবু ১৩ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:১৩:১৬ রাত

আধুনিক কালে গণমাধ্যম বা মিডিয়া একটি ব্যয়বহুল প্রতিষ্ঠান। মিডিয়াকে সেবাধর্মী কর্মক্ষেত্র ভাবা হলেও, এখানে মুনাফারও বিশাল প্রাপ্তির সুযোগ আছে। গণমাধ্যম বা মিডিয়া একটি বহুমাত্রিক ধারণা। কেবলমাত্র খবর সংগ্রহ এবং পরিবেশন এর একটি দিক মাত্র। বিনোদন, শিক্ষা, সামাজিক-রাজনৈতিক সম্পর্ক নির্ধারণ ইত্যাদি নানাবিধ ক্ষেত্রে মিডিয়ার নিবিঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশাল আকারের বাজেট ছাড়া বিভিন্নমুখী বৈচিত্রের সৃজনশীল কর্মষজ্ঞ চালান কঠিন। তাই ধনীক বিত্তশালী শ্রেণীর অংশীদারিত্ব ছাড়া যে কোন ধরণের মিডিয়ার অস্তিত্ব রক্ষা, প্রচার, প্রসার এক কথায় সম্ভব নয়। এই অংশীদারিত্ব বিনিয়োগ অথবা বিজ্ঞাপণ দুই ভাবেই হতে পারে।

ভূমিকা করলাম এ' কারণে যে আমরা প্রতিদিন গণমাধ্যম বা মিডিয়ার সংস্পর্শে তথ্য অবহিত হই, মতামত তৈরি করি। আমাদের গণমানস, জীবন-দর্শন, আচার-আচরণেও মিডিয়ার প্রভাব বিদ্যমান। সুতরাং আমাদের এটা জানা জরুরী যে মিডিয়া সমাজের বিত্তশালী ও ক্ষমতাবান শ্রেণীর উপর নির্ভরশীল। অস্তিত্বের স্বার্থেই বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকার, বিজ্ঞাপণী সংস্হা এদের সাথে গণমাধ্যমের সুসম্পর্ক রক্ষা করতে হয়, তাদের স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখতে হয়। বিত্তবানদের রাজনীতি আছে, সেই রাজনীতিও মিডিয়া প্রতিপালন করে। সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীদের পেশাগত চরিত্র অনেক সময়েই ঐ রাজনীতির কাছে পরাভব মানে।

অবাধ ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রবাহ বলে বাস্তবে পৃথিবীর কোথাও কিছু নেই। অনেক ক্ষেত্রেই আপোষকামিতা ও সুবিধাবাদ প্রবল হয়ে উঠে। আবার রাজনৈতিক অভিলাষীরা মিডিয়াকে নিজ উদ্দেশ্য সাধনে কৌশলে কাজেও লাগাবার চেষ্টা করতে পারে। রাজনৈতিক এক্টিভিষ্টরা সাংবাদিক রূপে মিডিয়া জগতে তৎপর থাকে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে মিডিয়াকর্মীদের রাজনৈতিক চরিত্র উৎকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে। শাহবাগ ইভেন্ট, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারে সাংবাদিকদের বিভক্ত প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি ঘটনায় বাংলাদেশের সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীরা নিজেদের পরিচয় প্রথমত রাজনৈতিক কর্মী, দ্বিতীয়ত মিডিয়াকর্মী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আমাদের পাঠক, শ্রোতা ও দর্শককূলকে সতর্ক হতে হবে। মিডিয়ার প্রতিটি শব্দচয়ন, চিত্রের ব্যবহার, খবর পরিবেশন, কলাম বা বিশ্লেষণ তাদের সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিচয় স্মরণে রেখেই জানা ও বোঝার চেষ্ঠা করা জরুরী। অন্যথায় আপনি বিভ্রান্ত হবেন, সত্য অজানা থেকে যাবে। মনে রাখতে হবে গণমাধ্যমে অনেক গণসম্পৃক্ত খবর ও স্বার্থ ব্ল্যাক আউট হতে পারে। আবার সাধারণ জনগণের কাছে তিল গুরুত্বের ঘটনাকে তাল আকারে উপস্হাপন করতে পারে।

বাংলাদেশে ধনীকশ্রেণীর উত্থানের প্রধাণ ধারা অসততা ও জনগণের সম্পদ লুটপাটের মাধ্যমে। এই শ্রেণী প্রতি বছর সরকারী ব্যয়ের, উন্নয়ন বাজেটের অর্থের বৃহৎ অংশ আত্মসাৎ করে, ব্যাংকের আমানত সুকৌশলে লোপাট করেছে। গণমাধ্যমেও তাদের বিনিয়োগ আছে। তাদের বিজ্ঞাপন অস্ত্র ব্যবহার করে মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। লুটেরারা কোনদিন গণতন্ত্র, তথ্যপ্রবাহ, বস্তুনিষ্ঠতার বন্ধু হয় না। আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মিডিয়ার কাজ হল জনগণের নিত্যদিনের সমস্যাজনিত ক্ষোভ প্রশমনে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, ডাইভার্টেড তথ্য উপস্হাপন ও বায়বীয় আলোচনায় জনগণকে ব্যস্ত করা। কারণ তাতে লুটেরা ধনীক শ্রেণীর দল ও রাজনীতি জনরোষ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। সাংবাদিকদের ভূমিকা একজন রাজনৈতিক দলীয় কর্মীর চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।

স্বাধীন, গণমুখী, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠায় কেউ আগ্রহী হলে তাকে প্রচন্ড প্রতিকূলতায় বাধা-বিঘ্নের পাহাড় অতিক্রম করতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১২৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File