চেইন অব কমান্ড
লিখেছেন লিখেছেন সত্যই সুন্দর ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:২৩:২৮ রাত
এক
অফিসে বের হবো, এমন সময় মলি বললো, জানো, তুলি বৃত্তি পেয়েছে। শুনে আমি খুবই খুশি হলাম কিন্তু মণি মোটেই খুশি নয়। কারণ আমাদের মেয় রুনা বৃত্তি পায়নি।
এ জন্য আমাকে শতভাগ দায়ী করে ঝাঝালো কণ্ঠে বললো, আগেই বলেছিলাম, একজন হাউজ টিউটর রাখো।
আমিও কনো দ্বিধা না করে উত্তর দিলাম,তুলির তো কনো হাউজ টিউটর ছিল না।
আমার যুক্তির কাছে পরাজয় স্বীকার করে মলি চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।
আমি সব সময় আনন্দে থাকতে ভালবাসি, তুলিকে নিজের মেয়ে মনে করে গুন গুন করতে করতে বাসা থেকে বের হলাম। আমি নিশ্চিত, মলি এতোক্ষণে বিছানায় শুয়ে দুই চোখের পানিতে সদ্য কেনা বালিশের অর্ধেকটা ভিজিয়ে ফেলেছে।
বাসা থেকে বের হতেই ভাগ্যক্রমে কাবিলের সাথে দেখা।
সে সালাম দিয়ে হাসি মুখে বললো, স্যার,আমার মেয়ে তুলি বৃত্তি পেয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ! খুবই আনন্দের সংবাদ। কিন্তু মিষ্টি কোথায়? দোয়া তো খালি মুখে হয় না। আগে মিষ্টি, তারপর দোয়া।
আমার কথা শুনে সে একটু লজ্জা পেল। হাসি মুখে বললো, মিষ্টি আজই পেয়ে যাবেন।
আমার মনে হলো এভাবে বলা ঠিক হয়নি।আমি কিছু বলার আগেই কাবিল দ্রুত চলে গেল।
দুই
আমাদের বাসার পূর্ব দিকে টিনসেড বাড়িতে কাবিল বাস করে। প্রায় ছয় বছর আগে কাবিলের বাড়ির পাশে তিন তলা বাড়ির নিচ তলায় ভাড়াটিয়া হিসাবে আমাদের আগমন।কাবিল পেশায় চোর। এ তথ্যটি বাড়িওয়লা প্রথমে আমদের জানিয়ে দিলেন। তার সম্পর্কে অনেক গল্প শুনিয়ে আমাদের সতর্ক করে দিলেন।
আমার ছোট মেয়ে সকল সতর্ক বাণী অমান্য করে তুলির সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুললো। এই সূত্র ধরে তুলির মায়ের সাথে মলির একটা সুসম্পর্ক সৃষ্টি হলো। ধীরে ধীরে ওদের মধ্যকার সম্পর্কটা গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগলো।
এটা বাড়িওয়ালা মোটেই ভালো মনে করলেন না। এ জন্য তিনি আমাকে ডেকে আবারও অনেক কথা শুনিয়ে দিলেন। কিন্তু আমি এসবের কিছুই মলিকে বলার সাহস করলাম না।
সে যেখানে যায় সেখানেই গরিব আর বস্তির মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু এবারের বিষয়টা একেবারেই অসহ্য। চোরের বৌয়ের সাথে মাখামাখি! তার উপর বাড়িওয়ালার অপমান। এটা কনো ভদ্রলোক মানতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
ইতিমধ্যে আমি বেশ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু একদিনের ঘটনা আমার মনে দারুণ ভাবে আঘাত করলো। তারপর থেকে আমিও মলির মতো কাবিলের পুরো পরিবারের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়লাম।
তিন
সেদিন ছিল বুধবার। ব্যাংক থেকে বের হয়ে একটা অটোবাইকে চেপে বসলাম। কিছুদুর যেতেই একটা মেয়ে গাড়ি থামিয়ে আমার পাশে বসলো।
মেয়েটিকে মডার্ন বলেই মনে হলো। তবে আমি যে তাকে মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছি না এটা বোঝানোর জন্য উল্টো দিকে মুখ করে বসে থাকলাম। রাস্তার বেহাল দশার কারণে মাঝে মেয়েটির কোমল দেহের স্পর্শে শরীর ও মনে এক ধরনের শিহরণ অনুভব করছিলাম। এ ধরনের একটি রাস্তা উপহার দেয়ার জন্য মনে মনে যোগাযোগ মন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ জানালাম। মন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করতে করতে নির্দিষ্ট গন্তব্যে এস পড়লাম।
গাড়ি থেকে নেমে শার্টের পকেট থেকে দশ টাকা ড্রাইভারের হাতে দিয়ে মেয়েটির দিকে একবার আড়চোখে তাকালাম। তারপর বাসার দিকে পা বাড়ালাম।
বাসায় এসে প্যান্টের পকেটে হাত দিলাম। এ কি! কোনো টাকা নেই।
চোখের সামনে ভেসে উঠলো শ্যামলা মেয়ের আনন্দময় মুখচ্ছবি। ট্রেন বা বাসে ভিড়ের মধ্যে পকেপমারের গল্প শুনেছি। অটোবাইকে আমার পাশে বসে প্যান্টের পকেট থেকে কিভাবে টাকা বের করলো তা আমার কল্পনায় এলো না।
ফেলে আসা রাস্তার মতো আমার চেহারার বেহাল দশা দেখে মলি বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে। শান্ত গলায় বললো, কি হয়েছে?
বললাম, পকেটমার।
মুহূর্তের মধ্যে মলির সুন্দর মুখখানা মলিন হয়ে গেল।
আমার মাথার মধ্যে তখন নানান চিন্তা, বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল আর পুরো মাসের বাজার। কি করবো, কিছুই বুঝতে পাড়লাম না।
টেনশন থেরক বাচার জন্য আপাতত একটা কোসিয়াম ট্যাবলেট খেয়ে মুয়ে পড়লাম।
রাত দশটার সময় মলি খাওয়ার জন্য ডাকলো।
আমি কোনো রকমে একটা চেয়ার টেনে বসলাম।
মলি খাবার গুলো একেএক করে টেবিলে দিচ্ছিল। কিন্তু ওর মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখছিলাম না। ব্যাপার কি! ওর মধ্যে কোনো টেনশন নেই কেন? জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার মনে কোনো দুশ্চিন্তা নেই, বিষয়টা কি?
মলি বললো, টাকা হারানোর বিষয়টা তুলির মাকে সব খুলে বলেছি। আমরা সম্ভবত টাকাগুলো পেয়ে যাবো।
বললাম, তুমি নিশ্চিত হচ্ছো কিভাবে?
মলি কোনো কথা না বলে আমার প্লেটে ভাত তুলে দিল। ভাবটা এমন যেন টাকা হাতে পেয়েই গেছে।
সকালে তুলির মা সত্যি সত্যিই টাকাগুলো দিয়ে গেল।
আমি গুনে দেখলাম, সব ঠিকঠাক।
চোরদের মধ্যে এমন চেইন অফ কমান্ড থাকে তা আমার জানা ছিল না।
আমি এক হাজার টাকা তুলির মাকে দিতে চাইলাম। কিন্তু সে কিছুতেই নিল না। এভাবে ওদের সাথে আমার সম্পর্কটা আরো গভীর হলো
বিষয়: বিবিধ
১৯৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন