ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এখন ‘অনুতপ্ত’

লিখেছেন লিখেছেন সত্য সবার উপর ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৬:২৭:৪৫ সন্ধ্যা



শাহবাগ জাগরণ মঞ্চে একাত্মতা ঘোষণা করায় আওয়ামী সমর্থক হিসেবে পরিচিত শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এখন ‘অনুতপ্ত’। শাহবাগের আন্দোলকারীদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তিকারীও রয়েছে, এমন তথ্য জানান পর তিনি বিভিন্ন জায়গায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে ‘অনুতপ্ত’ হয়েছেন।

ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, জামায়াত-বিরোধিতা থেকে তিনি শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। ব্লগার রাজীব খুন হওয়ার পর ব্লগে ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তির খবর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে তিনি জানতে পারেন, শাহবাগ আন্দোলনকারী ব্লগারদের অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। এ খবর জানার পর তিনি নিজের ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তার ‘অনুতপ্ত’ হওয়ার বিষয়টি জানান।

গত বুধবার বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে হামদ-নাতের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ব্লগারদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বক্তব্যের একপর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে দোয়া করেন, “হে আল্লাহ! যারা ইসলামের নামে ব্লগে কুৎসা রটাচ্ছে, তাদের হেদায়েত দান করুন। আর হেদায়েত কপালে না থাকলে, তাদের ধ্বংস করে দিন।”

ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া এবং ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের ঘনিষ্ঠ একজন নতুন বার্তাকে জানান, একান্ত আলাপচারিতায় তিনি শাহবাগ আন্দোলন সম্পর্কে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ জানান, তিনি আগে থেকেই জামায়াত ও মওদুদির বিরোধিতা করে আসছেন। সে হিসেবে শাহবাগে যেহেতু আন্দোলনকারীরা জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এ জন্য তিনি তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। কিন্তু ব্লগারদের ‘কুৎসিত’ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে আর নেই। প্রকাশ্যে না বললেও তিনি বিভিন্নভাবে এই আন্দোলনের প্রতি নিজের ‘সমর্থন’ প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন।

ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের ছোট ভাই আরীফ উদ্দীন মারুফ ঢাকা সার্কিট হাউস মসজিদের ইমাম ও খতিব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক মুসল্লি জানিয়েছেন, তিনিও ভাইয়ের কর্মকাণ্ডে বিব্রত। তবে মাওলানা আরীফও জানান, তার ভাই শাহবাগ আন্দোলনে নিজের একাত্মতা ঘোষণা করে অনুতপ্ত হয়েছেন।

এদিকে, ব্লগারদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে শুক্রবার সারা দেশের আলেম-ওলামা, ইসলামি দলগুলোর নেতা-কর্মী এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমান ফুঁসে উঠেছেন। তাদের অনেকেই ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের শাহবাগ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণায় সমালোচনা করেছেন। একটি ইসলামি দলের একজন শীর্ষ নেতা নতুন বার্তাকে বলেন, “তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি সংবেদনশীল, সেটা আমরা জানি। তাই বলে তিনি শাহবাগের মতো ইসলামবিদ্বেষী কোনো আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করবেন, সেটা মেনে নেয়া যায় না।” ফরীদ উদ্দীন মাসঊদকে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ আন্দোলনের প্রতি নিজের সমর্থন প্রত্যাহারের আহ্বানও জানান ওই ইসলামি নেতা।

মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের সঙ্গে মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

উল্লেখ্য, জামায়াতের নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ চত্বরে চলমান আন্দোলনে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সমর্থন জানাতে যান দেশের শীর্ষ আলেম ও বৃহত্তর ঈদের জামাত শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি সেখানে আন্দোলনকারীদের নির্ভয় দিয়ে বলেন, “‘আমি সব মুসলিম ও ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানাতে এসেছি। জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে। হিটলার-নাৎসিপন্থীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক।” তিনি আরো বলেন, “হে আল্লাহ, যারা ৭১-এ আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করেছে, তাদের বিচার তুমি করো। বিচারপতিরা জালিম। তারা সঠিক বিচার জানে না। তাদের বিচার আল্লাহ করবেন।”

প্রসঙ্গত, মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দেশের অন্যতম শীর্ষ আলেম। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ছিলেন। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে। বরাবরই আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সদ্ভাবের কথা শোনা যায়। আলেমদের মধ্যে তিনি কট্টর জামায়াতবিরোধী হিসেবে পরিচিত। মওদুদি আকিদার (বিশ্বাস) বিরুদ্ধে তিনি সব সময়ই সোচ্চার। রাজধানীর হাজিপাড়ায় তার মাদরাসা। ইসলাহুল মুসলিমীন নামে তার একটি এনজিও রয়েছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জঙ্গি কানেকশনের অভিযোগে তিনি বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেছেন। তার অভিযোগ, জামায়াত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে এ মামলায় ফাঁসায়। এ জন্য তিনি জামায়াতের প্রতি ক্ষীপ্ত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বৃহত্তর ঈদের জামাত শোলাকিয়ার ইমাম হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।

সুত্রঃ এখানে ক্লিক করুন

বিষয়: বিবিধ

১৮৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File