গ্রানাডা ট্র্যাজেডি দিবস: এপ্রিল ফুল নয় (April Fool)
লিখেছেন লিখেছেন ফেলানি ৩১ মার্চ, ২০১৩, ১০:২৬:৩৮ রাত
১ এপ্রিল। ঐতিহাসিক গ্রানাডা ট্রাজেডি দিবস। মুসলমানদের জন্য এটি একটি বেদনা বিধুর দিন। প্রায় ৫শত বছর আগে এই দিনে রাজা ফার্ডিনান্ড বিশ্ব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম প্রতারণার মাধ্যমে স্পেনের রাজধানীতে হাজার হাজার মুসলমান নারী-পুরুষকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল। বিশ্ব খ্রীষ্টান সম্প্রদায় এই দিনকে ‘এপ্রিলের ফুল (এপ্রিলের বোকা)’ হিসেবে সাড়ম্বরে পালন করে থাকে। দুর্ভাগ্য যে, বিশ্বায়নের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে মুসলামানদের মধ্যেও বিশেষ করে তরুন-তরুনীদের ‘এপ্রিল ফুল’ পালন করতে দেখা যায়।
১৪৯২ সালে মুসলিম শাসনের গৌরবোজ্জল জনপদ স্পেনে খ্রীষ্টানদে সম্মিলিত বাহিনী অসংখ্য নিরীহ নারী-পুরুষকে হত্যা করে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে উল্লাস করতে করতে ছুটে আসে রাজধানী গ্রানাডায়। এ সময় ফার্ডিনান্ডের নির্দেশে আশপাশের সব শস্যখামার জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় শহরের খাদ্য সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র ভেগা উপত্যকা। অচিরেই গোটা শহরে দূর্ভিক্ষ দেখা দেয়। দূর্ভিক্ষ যখন প্রবল আকার ধারণ করলো তখন প্রতারক ফার্ডিনান্ড ঘোষণা করলো, “মুসলমানরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় গ্রহণ করে তাহলে তাদের বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেয়া হবে।”
সেদিন দুর্ভিক্ষতাড়িত গ্রানাডাবাসী অসহায় নারী ও নিষ্পাপ শিশুদের সম্ভ্রম ও জীবনের দিকে তাকিয়ে খ্রীষ্টানদের আশ্বাসে বিশ্বাস স্থাপন করে খুলে দেয় শহরের প্রধান ফটক। সবাই আশ্রয় গ্রহণ করে আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদে। কিন্তু হায়! মানব সভ্যতার কলঙ্ক, বিশ্বাসঘাতক ফার্ডিনান্ড মুসলমানদের সরল বিশ্বাসের সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করে। শহরে প্রবেশ করে খ্রীষ্টান বাহিনী মুসলমানদের প্রতিটি মসজিদে একযোগে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর মসজিদগুলোর চারদিকে আগুন ধরিয়ে বর্বর উল্লাসে মেতে ওঠে মানুষরূপী হায়েনাগুলো। অগণিত পুরুষ মহিলা ও শিশু সেদিন অসহায়ভাবে আর্তনাদ করতে করতে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায়। মুসলমানদের সেদিনকার আর্তচিৎকার যখন গ্রানাডার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তুলেছিল সেদিন রানী ইসাবেলা হেসে বলেছিলেন “হায়রে মুসলমান! তোমরা এপ্রিলের বোকা” (April Fool)। শত্রুর আশ্বাসে কি কেউ বিশ্বাস করে।
১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল গ্রানাডা ট্রাজেডির পাঁচশ বছর উদযাপন উপলক্ষে স্পেনে আড়ম্বরপূর্ণ এক সভায় মিলিত হয়েছিল বিশ্ব খ্রীষ্টান সম্প্রদায়। সেখানে তারা নতুন করে শপথ নেয় একচ্ছত্র খ্রীষ্টান বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করার। এরই ধারাবাহিকতায় গোটা বিশ্ব নানা অজুহাতে ইরাক, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়াতে একের পর এক আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। ‘জাবাল আল তারেক’ অর্থাৎ তারেকের পাহাড় সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে ৭১১ সালে উমাইয়া শাসনামলে মুসলমানরা তারেক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে ভূ-মধ্যসাগরের উত্তর তীরস্থ স্পেনকে রক্ষা করেছিল রাজা রডরিকের দু:শাসন থেকে। আজ মুসলিম বিদ্বেসী ইউরোপীয়রা তার নাম বদলে রেখেছে জিব্রাল্টা। নাম বদলালে কি ইতিহাস বদলে যাবে?
ইংরেজরা ভারতীয় উপমহাদেশের রাজক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল দীর্ঘ দু’শ বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্বাধীন ফিলিস্তিনে তারা অবাঞ্জিত ইহুদীদের পুষে রেখেছে। বিগত ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে ট্ইুন টাওয়ারের হামলার পর পুরো মুসলিম জাতিকে দায়ি করা হয়। নতুন নামে মুসলমান সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আবিষ্কার যেন সা¤্রাজ্যবাদী বিশ্বের প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরাককে ধ্বংস করার পর ২৩টি মুসলিম দেশের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এই তালিকার ভিতরে বাংলাদেশও আছে। নব্য ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলারা এখনও বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আজ মায়ানমারে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মুসলমান রহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা করে বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। শ্রীলংকায় মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করার পাশাপাশি মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্দেষ ছড়ানো হচ্ছে।
এটা কোন ধরনের সভ্যতা, এ কি সাম্প্রদায়িকতা নয়, এটা জঙ্গিবাদ নয়! মুসলমানরা অন্যকোন ধর্মের লোকদের অপরাধের কারনে মারলে বা আহত করলে তা হয়ে যায় জঙ্গিবাদ। অথচ অন্য ধর্মের লোক হিংসাত্মক কার্যক্রম চালালে তা হয় বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ব্যাপারে আমাদের দেশের সাংবাদিক মহল অবগত নয়। তারা জানে না কোনটা জঙ্গিবাদ আর কোনটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কোনটা সাম্প্রদায়িক, কোনটা অসম্প্রদায়িক। এ সব বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। আসুন, আমরা অপসংস্কৃতির এই অবগাহন থেকে বেরিয়ে এসে মুসলমানদের সঠিক সংস্কৃতি সবার কাছে পৌঁছে দিয়ে মুসলিম ঐতিহ্য রক্ষা করি।
শেখ হুমায়ুন কবির
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
০১৬৮৫৪৯১৩৯৫
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন