বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আমার কিছু কথা।
লিখেছেন লিখেছেন আবু ফারিহা ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:১৩:৫৩ রাত
একটি মুভি boy in stripped pyjama দেখছিলাম আর শংকিত হয়ে ভাবছিলাম কিছু কথা। মুভিটির কাহিনী হল দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে। মুভিটিতে দেখানো হয়েছিল তখনকার সময়ে ইহুদী নির্যাতন। ছোট ছোট শিশুদের শিখানো হত ইহুদীরা খারাপ। তাদের উপর নির্যাতন কোন খারাপ কথা নয়। তাদের উপর অমানুসিক নির্যাতনই নরমাল ব্যাপার। এতে এবনরমালিটির কিছু নেই। এ দিকে খ্রিষ্টানদের একটি শিশু অন্য এক ইহুদী শিশুর সাথে বন্ধত্ব গড়ে তোলে। সে ইহুদী শিশুকে জিজ্ঞাসা করে ''তুমি কি তোমার বাবাকে নিয়ে প্রাউড ফিল কর? সে কি ভালো মানুষ?'' ইহুদী শিশু বলে ,'' হ্যা''।
কিন্তু খ্রিষ্টান শিশুটি এত আভিজাত্বের মাঝে থেকেও তার বাবাকে নিয়ে প্রাউড ফিল করে না। বরং শিশু মন কেঁদে উঠে নিষ্ঠুরতায়। অন্য দিকে শিশুটির বড় বোনও ইহুদীদের ঘৃণা করে। কিন্তু নিষ্পাপ শিশু তার অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি দিয়ে সঠিককে খুঁজে নেয়। সে চলে যায় ইহুদী শিশুটির সাথে তার গুম হয়ে যাওয়া বাবাকে খুঁজে আনতে। খুঁজতে গিয়ে ঢুকে পড়ে ইহুদী নির্যাতন কক্ষে। পরে খ্রিষ্টানরা বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ করে ঘরের সবাইকে মেরে ফেলে। মারা যায় শিশু দুটিও।
মুভিটি দেখে ভাবছিলাম বর্তমান বিশ্বে মুসলিমরাও কি এভাবে নির্যাতিত নয়? অনেক দিন আগে পেপারে একটি ছবি দেখেছিলাম। ছবিটি ছিল ইজরাইলের। তাতে এক ইজরাইলি শিশু মিলিটারিদের মিসাইলে লিখছে ফিলিস্তিনি শিশুদের নাম। ঐ শিশুটিকে ছোটবেলা থেকে ছোবক দেয়া হয়েছে মুসলিমরা খারাপ তাই সে মুসলিমদের মৃত্যুকামনা করছে। আজ বাংলাদেশেও মনে হচ্ছে সেই পরিস্থিতি। ৫জন মুসলিম মারা গেল তাতে ব্যাথিত না হয়ে উল্লাস প্রকাশ করছে মুক্তমনা নামের কিছু প্রগতিশীল!
এসব দেখে শংকিত না হয়ে পারা যায় না। এত ঘৃণার বীজ কবে বপিত হল আমাদের মাঝে? আমরা সবাই এক দেশের নাগরিক সে হিসেবেও তো আমাদের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন থাকার কথা। ভালোবাসার বন্ধন না হোক অন্তত সহানুভুতির বন্ধন তো থাকবে। কিন্তু সে বন্ধনও যেন নেই। আমরা আজ কয়েকটা মতাদর্শে বিভিক্ত! আমি বুঝি না কিসের জন্য এত সব মতাদর্শ এসেছে। মানুষের জন্য মতাদর্শ নাকি মতাদর্শের জন্য মানুষ? যদি মতাদর্শের জন্য মানুষ হয় তবে ছুড়ে ফেল সেই মতাদর্শ যা মানুষকে মানুষ বলে স্বীকৃতি দেয় না। এক ভাইয়ের মৃত্যুতে অন্য ভাই করে উল্লাস!
মত প্রকাশের অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার। এই অধিকার হনন মানবাধিকার লঙ্ঘন। অথচ এই অধিকার হনন করার জন্য আজ প্রকাশ্যে হয় মিছিল মিটিং। আমাদের সমাজের কিছু শিক্ষিত লোকও যোগ দিচ্ছে তাতে! হচ্ছে ঘৃণার তীব্র বিস্তার। এর ফলাফল সুখকর হবে কি? প্রতিটি বিবেকবান নাগরিকের কাছে আমার প্রশ্ন।
এ দেশে আওয়ামী লীগ, বি এন পি, জামায়াত সব রাজনৈতিক দল জনগনের সাপোর্ট নিয়ে রাজনীতি করে। তাই এক পক্ষকে অন্য পক্ষের অস্বীকার করার বা অন্য পক্ষের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেবার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক নেতারা কি করে ভুলে যান জনগণের প্রতিনিধিরা জনগণের ভোটেই নির্বাচিত?
রাজনীতি তো জনগণের কল্যাণের জন্য। যেই রাজনীতি জনগণের মতামতকেই শ্রদ্ধা করে না জনগণ অদূর ভবিষ্যতে সেই রাজনীতিকে সমর্থন করবে কি? সামগ্রিক দৃষ্টিতে মনে হয় রাজনীতি আজ রাজার নীতি যা শুধু রাজাদের ভোগের জন্য তৈরি করছে আদর্শ। রাজনীতি আজ দেশের সর্বস্তরের মানুষের কথা বলছে না। শুধু নিজেদের দলের এবং দলের লোকদের কথা বলছে! ফলে প্রতিপক্ষ হচ্ছে লাঞ্ছিত। এভাবে একটা সুস্থ সমাজ তৈরি হবে কি? নাকি দিন দিন সুস্থ সমাজের চিন্তা হবে অকল্পনীয়। অস্বাভাবিক পাবে স্বাভাবিকের মর্যাদা!
ইতিহাস সাক্ষী চোখ রাঙ্গানি দিয়ে কখনো মত প্রকাশের অধিকার হরণ করা যায় নি। অন্তত বাঙালি জাতিকে তো না ই। এ জাতি সেই ইংরেজদের আমল থেকে সত্যের জন্য লড়ে আসছে। এ জাতি তিতুমীরের বংশধর। এ জাতি শাহ জালালের উত্তরসরী। এ জাতির মধ্যে বইছে শাহ পরানের রক্তধারা। ভীরু কাপুরুষ এ জাতি নয়। তাই এ জাতির কাছে এক পাক্ষিকভাবে কোন মত চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করলে তাতে হবে হিতের বিপরীত।
বিঃদ্রঃ এ লেখাটি আমার নিজের নয়। ভাল লাগায় সবাইকে শেয়ার করলাম। লেখাটি শেয়ার করায় শ্রদ্ধেয় লেখকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৮৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন