ইসলামের দৃষ্টিতে রোগ ও তার চিকিৎসা

লিখেছেন লিখেছেন সত্যবাক ০১ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:০১:৫৩ সকাল

রোগ নিরাময়ের মালিক আল্লাহ। মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন আল্লাহই তাকে আরোগ্য দান করেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘আর আমি (ইব্রাহীম) যখন অসুস্থ হই তখন তিনিই (আল্লাহই) আমাকে আরোগ্য দান করেন।’’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ (পৃথিবীতে) যে রোগই নাযিল করেছেন, রোগের সাথে সাথে তার ঔষধও নাযিল করেছেন; কেউ তা জানে আবার কেউ জানে না।” অর্থাৎ আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ তিনি সৃষ্টি করেননি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, বার্ধক্য ছাড়া সকল রোগেরই ঔষধ রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এও বলেছেন, “হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা ঔষধ সেবন কর। কেননা যিনি রোগ সৃষ্টি করেছেন তিনি ঔষধও সৃষ্টি করেছেন।” এজন্য সাহাবীগণ রোগ হলে সে সময়ে প্রচলিত চিকিৎসা নিতেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও চিকিৎসার জন্য লোকদের আরবের প্রসিদ্ধ চিকিৎসক হারিস ইবনে কালদা আস-সাক্বাফী-এর কাছে চিকিৎসা নিতে পাঠাতেন। একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন রোগী দেখতে গিয়ে তার জন্য চিকিৎসক ডাকতে বললেন। তখন রোগীর কাছে থাকা জনৈক ব্যাক্তি বললেন, “ আপনিও এ কথা বলছেন, হে আল্লাহর রাসূল, মহানবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,“হ্যাঁ।” এজন্য রোগ হলে রোগের চিকিৎসা নেয়া ইসলামসম্মত।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন- তিনটি জিনিসের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে, (১) মধু পান করা (২) শিঙ্গা লাগানো (৩) সেঁক দেয়া। বিশেষজ্ঞগণ বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ হাদীসে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান তিনটি শাখার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। মধু পান করা দ্বারা ঔষধ সেবন তথা মেডিসিন , শিঙ্গা লাগানো দ্বারা সার্জারি এবং সেঁক দেয়া দ্বারা বিভিন্ন ধরনের থেরাপী চিকিৎসার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।

চিকিৎসার ব্যাপারে ইসলামের এরূপ বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সোনালী যুগে মুসলমানদের মধ্যে বহু বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসকের জন্ম হয়েছিল। ইমাম ফখরুদ্দিন রাযি একাধারে পৃৃথিবীর শীর্ষ স্থানীয় তাফসীরকারক ও দার্শনিক হওয়ার পাশাপাশি যুগের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। আবু আলী ইবনে সীনা (জন্ম ৩৭০ হিজরী) পবিত্র কুরআনের হাফেজ হওয়ার পাশাপাশি একাধারে ইসলামী ফিক্হ, সাহিত্য, দর্শন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুগের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপরই তিনি ২০০ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তার অসামান্য অবদানের জন্য তাকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। ইসলামের উল্লেখিত নীতির কারণেই প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের মধ্যে এরূপ বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসক ও বিরাট বিরাট হাসপাতাল গড়ে উঠেছিল। এ েেত্র বাগদাদের আল-আদুদী হাসপাতাল (৩৭১ হিজরী), দামেস্কের আন-নূরী হাসপাতাল (৫৪৯হিজরী), কায়রোর আল-মানসূরী হাসপাতাল (৬৮৩ হিজরী) প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া শুধু মুসলিম শাসিত স্পেনের কর্ডোভাতেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল পঞ্চাশের বেশি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র। মুসলিম দেশে পরিচালিত তৎকালীন বিখ্যাত হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত বিভাগ যেমন অভ্যন্তরীণ রোগ বিভাগ, সার্জারি বিভাগ, চর্মরোগ বিভাগ, চু বিভাগ, অর্থোপেডিক বিভাগ ও মানসিক চিকিৎসা বিভাগ ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ বিভাগও চালু করা হয়েছিল। এসব হাসপাতাল শুধু রোগীদের চিকিৎসালয় ছিল না বরং চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (মেডিক্যাল কলেজ) হিসেবে গড়ে উঠেছিল। চিকিৎসকগণ সকালে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের পরিদর্শন ও পর্যবেণের জন্য রাউন্ড দিতেন এবং তাদের সঙ্গে একদল শিানবিশ চিকিৎসকও থাকতেন। এরপর তারা বিরাট হলরুমে যেয়ে বিভিন্ন রোগ ও তার চিকিৎসা সম্পর্কিত পাঠ্য বই পড়ে বক্তব্য রাখতেন ও উপস্থিত শিানবিশদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতেন। এসব হাসপাতালে বিরাট লাইব্রেরীও ছিল। যেমন তৎকালীন কায়রোর বিখ্যাত ইবনে তুতুল হাসপাতালের লাইব্রেরীতে ১ লরেও বেশি বই ছিল।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের সূরা বা আয়াত অথবা সুন্দর দোয়া পড়েও রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিকে ফুঁ দিতেন বা তার শরীর মুছে দিতেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় রোগ সেরে যেতো। তবে সবসময় তিনি এটা করতেন না। সাহাবীগণ যুদ্ধে আহত হলে আয়াত বা দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হতো না, বরং তাদের তস্থান ভাল হওয়ার জন্য প্রচলিত চিকিৎসা ও সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করতেন। চিকিৎসার ব্যাপারে ইসলামের এ বাস্তবমূখী নীতির কারণেই মুসলিম বিশ্বে অনেক বিরাট বিরাট হাসপাতাল গড়ে উঠেছিল কিন্তু ঝাঁড় ফুঁক দিয়ে চিকিৎসা করার জন্য কোন একটি হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রও গড়ে ওঠেনি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্বিন দিয়ে চিকিৎসা করার কথা বলেননি। তাবিজ-তুমার করাকে শিরক আখ্যা দিয়েছেন। যাদু-টোনা ইত্যাদি কুফরী ও শয়তানী কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। গণকের কাছে যাওয়াকে শিরকী কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তথাকথিত আধ্যাতিœক চিকিৎসার নামে একশ্রেণীর অসাধু লোকের কুসংস্কার ও প্রতারণামূলক ব্যবসার সাথে ইসলামের নীতি ও আদর্শের কোন মিল নেই।

রোগপ্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার গুরুত্ব

ইসলাম চিকিৎসাকে গুরুত্ব দিয়েছে; তারচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রতি। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন, “তুমি পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে গণিমত (সুবর্ণ সুযোগ) মনে করবে; বার্ধক্যের পূর্বে তোমার যৌবনকে, অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের পূর্বে তোমার সচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসর সময়কে এবং তোমার মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনকে।” সুতরাং রোগ হওয়ার পূর্বেই রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

পরিমিত খাবার খাওয়া, রোগ-জীবাণু ছড়ানোর মত অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বর্জন করা, হাত ধোয়া, পরিবেশ ও শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণু মুক্ত রাখা ইত্যাদির প্রতি ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেট কানায় কানায় ভরে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন; বরং তিনি খবার গ্রহণের সময় পেটের তিনভাগের একভাগ খালি রাখতে বলেছেন। অতিরিক্ত আহার করা অনেক রোগের কারণ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলে আখ্যা দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের চলার পথ, বিশ্রামস্থল, উন্মুক্ত স্থানে নদীর তীরে মল ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি পানির ঘাট, রাস্তা ও ছায়া দেয়ার গাছের নিচ- এ তিনটি স্থানে মল ত্যাগ করাকে লা‘নতযোগ্য ঘৃণ্য কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি দুর্গন্ধকে অত্যন্ত অপছন্দ করতেন। এমনকি কাচা পিঁয়াজ ও রসূন খেলে মুখে যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় তা নিয়ে মসজিদে যেতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং এর কারণ বর্ণনা করে বলেছেন, কেননা মানুষ যাতে কষ্ট পায় তাতে ফেরেশতারাও কষ্ট পায়। অতএব, উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা থেকে যে দুর্গন্ধ ছড়ায় তা তো কাঁচা পিঁয়াজ-রসূন খাওয়ার ফলে সৃষ্ট দুর্গন্ধ থেকে অনেক গুণ বেশি কষ্টদায়ক ও দুষিত। নামাযের পূর্বে অযু করার নিমিত্তে হাত, পা ও মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা, নিয়মিত গোসল করা, নিয়মিত দাঁত মিসওয়াক করা (ব্রাশ করা)-ইসলামের এসব নিয়ম-নীতি মানুষের শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়তা করে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে তাকিদ দিয়েছেন। তিনি খাবার ঢেকে রাখতে বলেছেন। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “তোমার কাপড় পবিত্র (পরিষ্কার) করো।” মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে ভালবাসেন, তিনি পরিচ্ছন্ন, পরিচ্ছন্নতাকে ভালবাসেন। ইসলামের আরও সুন্দর বহু অনুশাসন রয়েছে যেসব মেনে চললে রোগমুক্ত সুস্থ সুন্দর জীবন লাভ করা যায়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এসব মেনে চলতেন বলেই সারা জীবনে তিনি রোগাক্রান্ত হননি বললেই চলে।

শরীরের যথাযথ যতœ নিতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “তোমার প্রতি তোমার শরীরেরও হক্ব (অধিকার) রয়েছে। এজন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.)কে প্রতিদিন রোযা রাখতে ও প্রতি রাতব্যাপী ইবাদত করতে নিষেধ করে বলেছেন,“এরূপ করো না; তুমি রোযা রাখবে এবং বিরতি দিবে, রাতে জেগে ইবাদত করবে এবং ঘুমাবে। কেননা তোমার প্রতি তোমার শরীরের হক্ব (অধিকার) আছে, তোমার প্রতি তোমার চোখের হক্ব(অধিকার) রয়েছে, তোমার প্রতি তোমার স্ত্রীর হক্ব (অধিকার) রয়েছে এবং তোমার প্রতি তোমার দর্শনার্থীদেরও হক্ব (অধিকার) রয়েছে।

সংক্রামক ব্যাধি প্রসঙ্গ

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থ উটকে রোগাক্রান্ত উটের সাথে একঘাটে পানি পান করাতে নিষেধ করেছেন। কেননা তাতে সুস্থ পশুর মধ্যে আক্রান্ত পশুর রোগ সংক্রমিত হতে পারে। সংক্রামক ব্যাধি ও মহামারী কবলিত এলাকায় অবাধে প্রবেশ করতে ও আক্রান্ত এলাকায় লোকদের অবাধে আসা যাওয়া করতে নিষেধ করেছেন। কারণ এতে রোগ সংক্রমিত হতে পারে। হযরত ওমর (রা) সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশের েেত্র বিধি নিষেধ আরোপ করলে লোকেরা তাকে প্রশ্ন করলেন, আপনি কি তাকদীরে বিশ্বাস করেন না? জবাবে তিনি বললেন, সংক্রমিত হওয়াটা যেমন তাকদীর; উক্ত এলাকায় প্রবেশ না করাও তাকদীর (আল্লাহর নির্ধারণ) অর্থাৎ সংক্রামক ব্যাধির ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করাটা ইসলামসম্মত। তবে আতঙ্কিত হওয়া বা বাড়াবাড়ি করা ইসলামসম্মত নয়। অর্থাৎ সংক্রামক ব্যাধিতে অন্যের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে-এটা ঠিক কিন্তু নিশ্চিত আক্রান্ত হবে এটা জরুরী নয়। আল্লাহ যদি কাউকে হেফাযত করতে চান সে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত এলাকায় আবস্থান করেও আক্রান্ত হবে না। যার রোগ প্রতিরোধ মতা বেশি তিনি আক্রান্ত নাও হতে পারেন।

কারো রোগ হলে যা করা উচিত

রোগাক্রান্ত হওয়াটা মানুষের জীবনে আপতিত একটি বিপদ। আর বিপদে মানুষের করণীয় সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্দর উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমার জীবনে কোন বিপদ এলে তুমি তাই কর যাতে তোমার উপকার হতে পারে এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর আর দুর্বলচিত্ত হয়ো না (মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ো না)। তাই রোগ হলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বার্ধক্য ছাড়া কোন রোগই স্থায়ী নয়। রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ ভাল হয়ে যায়। এটা আল্লাহর দেয়া নিয়ম। তাই সাধ্যমত উপযুক্ত চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করতে পারলে ও যথার্থ ঔষধ নির্বাচন করতে পারলে রোগ সেরে যাবে। তবে মনে রাখতে হবে, রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ যাতে না হয় তাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে সু-শৃংখল জীবন যাপনের মাধ্যমে রোগমুক্ত জীবন লাভ করা যায়। ধুমপান ও মাদক থেকে দূরে থাকাসহ ইসলামের যাবতীয় অনুশাসন মেনে জীবন-যাপন করে বহু রোগ থেকে মানুষ তার জীবনকে মুক্ত রাখতে পারে। মানুষের কল্যাণে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন ও তাঁর প্রিয় রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে যে সব মূল্যবান বিধি বিধান দিয়েছেন সেগুলো সবার জানা উচিত এবং তদনুযায়ী জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে দুনিয়ায় রোগমুক্ত সুস্থ সুন্দর জীবন ও মৃত্যুর পর পরকালে চিরস্থায়ী সুখময় জীবন লাভ করতে সর্বাতœক চেষ্টা করা উচিত।

রোগীর সেবা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ

রোগাক্রান্ত ব্যক্তি শারীরিক দুর্বলতার কারণের অন্যের সাহায্য ও সহানুভূতির মুখাপেী হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় রোগীকে সঙ্গ দেয়া ও তার সেবা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। রোগীর প্রয়োজনে সাড়া দিতে যে ব্যক্তি এগিয়ে আসবে, স্বয়ং আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজনে নিয়োজিত হবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, “ বান্দা যতণ তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকবে ততণ আল্লাহ সে বান্দার সাহায্যে নিয়োজিত থাকবেন।” রোগীর সেবা করা ও রোগীকে উঠতে, বসতে, শুতে, চলাচল করতে ও ওষুধ সেবনে সাহায্য করা তার জন্য সদকাহ করার সমতুল্য। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কাউকে তার বাহনে উঠতে সাহায্য করা, তাকে বাহনে উঠিয়ে দেয়া ও তার আসবাবপত্র উঠিয়ে দেয়া সদকাহ হিসেবে গণ্য-(সহীহ মুসলিম)।” সবার প্রতি সদয় হতে নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা ইহ্সান কর, নিশ্চয় আল্লাহ ইহ্সানকারীকে ভালবাসেন।” এ জন্য রোগীর সাথে তার সেবায় যারা নিয়োজিত থাকেন, তাদের ত্যাগ স্বীকার ও সেবা কখনো বিফলে যাবে না। আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়াতে বিপদ-আপদে সাহায্য করেবেন এবং আখেরাতে কঠিন বিপদের সময়ও সাহায্য করবেন।

রোগ নিরাময়ের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা

ডাক্তার রোগীকে ভাল করার চেষ্টা করতে পারেন; কিন্তু ভাল করার নিশ্চয়তা দেয়ার মতা চিকিৎসকের নেই। আল্লাহ যখন কাউকে আরোগ্য দান করতে চাইবেন তখন আল্লাহ চিকিৎসককে সঠিক রোগ নির্ণয় ও সঠিক ঔষধ নির্বাচনের তৌফিক দিবেন আর আল্লাহর সৃষ্ট বস্তু থেকে তৈরী ঔষধ সেবন করে মানুষ সুস্থ হয়ে উঠবে। এখানে চিকিৎসক উসিলা মাত্র। আল্লাহ ভাল করার মালিক। তাইতো দেখি, অনেক সু-প্রসিদ্ধ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা পেয়ে কেউ সুস্থ হন আবার কেউবা অসুস্থই রয়ে যান। কারো েেত্র অপারেশন সফল হয় আবার কারো েেত্র সফল হয় না। তাই শুধু চিকিৎসকের উপর নির্ভর না করে আল্লাহর উপর ভরসা করে চিকিৎসা নিতে হবে ও আরোগ্যের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।

আল্লাহ চিকিৎসককে তৌফিক না দিলে তিনি এ রোগ নির্ণয় ও ঔষধ নির্ধারণের েেত্র সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আল্লাহ পাক কাউকে আরোগ্য দানের ইচ্ছা করলে তাকে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসালয়ে যাওয়ার বা উপযুক্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার তৌফিক দিবেন। তার জন্য আনুষঙ্গিক সবকিছু অনুকূল করে দিবেন। আর আল্লাহ কারো আরোগ্য না চাইলে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগই হয়তো পাবে না, অথবা সঠিক চিকিৎসা তার নসীবে হবে না।

রোগ ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিপন্থি নয়, বরং অত্যন্ত বাস্তবমুখী, ভারসাম্যপূর্ণ ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য পরিপূরক। সবার চিন্তা করা উচিত, চিকিৎসার েেত্র ইসলামের অনুশাসন যেমন সুন্দর, ভারসাম্যপূর্ণ ও মানুষের জন্য উপকারী তেমনি জীবনের সকল েেত্র ইসলামের বিধি-বিধানও অত্যন্ত সুন্দর, ভারসাম্যপূর্ণ ও মানুষের জন্য কল্যাণকর। তাই জীবনের সকল েেত্র ইসলামের অনুশাসন মেনে চললে সুন্দর, সুস্থ ও সুশৃংখল দেহ, মন ও সমাজ গড়ে উঠতে পারে। আসলে ইসলামের মধ্যেই রয়েছে মানুষের দেহ, মন ও সমাজের চূড়ান্ত শান্তি।

বিষয়: বিবিধ

৬৬৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File