মিডিয়া জামাত-শিবির বিরোধীতায় অন্ধ না হয়ে যদি সঠিক চিত্রটা তুলে ধরতো তাহলে সরকার সংঘাতের পথ পরিহার করে সমঝোতার পথে এগিয়ে আসতো।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যবাক ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০৮:০২:২৬ সকাল
বর্তমানে মিডিয়ায় সংবাদ পরিবেশন ও টকশো আলাচনার স্টাইল সরকারকে আরো হত্যাযজ্ঞ চালাতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। মিডিয়া জামাত-শিবির বিরোধীতায় অন্ধ না হয়ে যদি সঠিক চিত্রটা তুলে ধরতো তাহলে সরকার সংঘাতের পথ পরিহার করে সমঝোতার পথে এগিয়ে আসতো। টিভি আলোচকরা বলতে চাচ্ছেন এটা গণহত্যা নয়। তান মানে এটা তেমন বড় কিছু না; এ নিয়ে সরকারের দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। কেউ কেউ বলছেন, সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। তার মানে কি এই নয় যে, তারা বলতে চাচ্ছেন, একদিনে ৭০জিন হত্যা করলে হবে না; আরো অনেক বেশি হত্যা করতে হবে, তাহলে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এভাবে জাতির বিবেক সাংবাদিকরা একটি সরকারকে মানুষ হত্যায় উৎসাহ জোগায় এমন নজীর পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে আছে বলে মনে হয় না।
নিরস্ত্র জামাত-শিবির কর্মীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের হামলাকে বলা হচ্ছে, জামাত-শিবিরের তান্ডব। এরশাদের আমল, পরে খালেদা জিয়ার আমল, এরপর শেখ হাসিনার আমলে জামাত-শিবির বহু সভা-সমাবেশ করেছে, মিছিল করেছে। তাদের মিছিল থেকে পুশিলকে হামলা চালানো তো দূরের কথা, ঢিল ছুড়ারও নজীর নেই। মিছিল থেকে গাড়ী ভাঙারও নজীর নেই। পুলিশই এর সাী। কিন্তু এবারের সরকার জামাত-শিবিরকে সমাবেশ ও মিছিলের অনুমতিই দিচ্ছে না। রাজপথে দাবী নিয়ে আসলে পুলিশের তাড়া। মাঝে মধ্যে জামাত-শিবির পুলিশের এ অন্যায় আক্রমণকে প্রতিরোধ করেছে। ফলে রাজপথে হয়েছে সংঘর্ষ। আর তখনই মিডিয়া জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে প্রচার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে। আর জামাতের এ প্রতিরোধ বা প্রতিবাদের নাম দিয়েছে জামাতের তান্ডব। আবার পুলিশের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে যখনই জামাত-শিবির যেখানে পুলিশ নেই এমন গলিতে শাি ন্তপূর্ণ মিছিল করার চেষ্টা করেছে, পুলিশ খবর পেয়ে তাদের উপর এবারও ঝাপিয়ে পড়েছে, অনুন্যোপায় হয়ে যখন তারা পুলিশের গুলি ও টিয়ারশেলকে ইটপাটকেল ছুড়ে মোকাবিলা করেছে তখন মিডিয়া পুলিশের অন্যায়কে আড়াল করে এর নতুন নাম দিয়েছে শিবিরের চোরাগোপ্ত হামলা! সর্বত্রই প্রথম হামলা করেছে পুলিশ আর শিবির পাল্টা হামলা করে ইটপাটকেল ছুড়েছে পরে। কিন্তু সকল মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, জামাত-শিবিরের তান্ডব ঠেকাতে পুলিশ এ্যাকশনে যায়। সর্বই একই চিত্র। সত্য এড়াতে অধিকাশ মিডিয়াই এখন এক ধরণের সংবাদ ইঞ্জিনিয়ারিং করছে।
সরকার জামাত-শিবিরকে সমাবেশের অনুমতি দিলে বা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বা মিছিলে হামলা না চলালে হয়ত বিগত বছরগুলোর মতই পুলিশের সাথে কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো না। দীর্ঘদিন পর মতিঝিলে পুলিশ শিবিরকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল, বিশ াল সমাবেশ হয়েছে, একটি ঢিলও ছোড়া হয়নি। পরে যখন সরকার দেখলো এভাবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিলে প্রচুর লোকসমাগম হবে, তখন সরকার আর অনুমিতে না দিয়ে পুরোনো কায়দা রাজপথে দাঁড়াতে দিল না। অনুমোতি চাইলে অনুমোতি নেই, পরে অনুন্যেপায় হয়ে অনুমিত ছাড়াই পুলিশের হামলা এড়িয়ে নিরাপদে অল্প সময়ের জন্য দাঁড়াতে গেলেও খবর পেয়ে ছুটে এসে নির্বিচারে টিয়ার সেল, লাঠিপেটা ও গুলি। শিবির পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়লে মিডিয়া একযোগ তার নাম দেয়া শুরুকরলো, শিবিরের চোরাগোপ্তা হামলা বা তান্ডব। কোথাও কি এমন হয়েছে যে, পুলিশ সদস্যরা কোন পাড়া বা মহল্লায় ইউনিফর্ম পরে দায়িত্ব পালন করছিল আর শিবির যেয়ে তাদের উপর অতর্কিতে হামলা করছে? সবই হয়েছে প্রকাশ্য মিছিলে পুলিশি হামলার শিকার হওয়ার পরে। এটাকে মিডিয়া জামাত-পুলিশ সংঘর্ষ বলতে পারত। কিন্তু তা না বলে মিডিয়া আক্রমণকারী পুলিশকে আক্রান্ত আর আক্রান্ত শিবির বা জামাতকে আক্রমণকারী হিসেবে প্রচার করে যাচ্ছে। এভাবে মিডিয়া কর্মীরা মিডিয়া মালিকদের রাজনৈতিক দলের অনুকুলে সত্যকে আড়াল করে যাচ্ছে আর সরকারকে সংযত ও ন্যায়সঙ্গত আচরণে উৎসাহিত করার পরিবর্তে অন্যায় করতেই বরং প্ররোচনা দিচ্ছে।
একদিকে প্রকাশ্য রাজপথে পুলিশ পাহারায় রামদা, কিরিচ, রড, আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মিছিল থেকে “একটা একটা জামাত ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর” এরূপ হত্যার শ্লোগান দেয়া হয়, অপরদিকে খালি হাতে জামাত- শিবির শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে চাইলে পুলিশের ধাওয়া করে। কিন্তু মিডিয়া সংবাদ পরিবেশনের সময় বলে, হরতাল সমর্থকদেরকে মাঠে দেখা যায়নি বরং সরকারী দলের কর্মীরা মাঠে সক্রিয় ছিল, মিছিল মিটিং করেছে, রাজপথ দখলে রেখেছে । এরূপ সংবাদ পরিবেশনের সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের হাতে থাকা রামদা, কিরিচ, রড, আগ্নেয়া¯ কৌশলে আড়াল করে মিছিল-মিটিং এর ছবিও ফলাও করে প্রচার করে।
মিডিয়ার এ আচরণ সরকার ও জনগণকে বিপথগামী করছে। চূড়ান্ত পরিণামে দেশকে ধাবিত করছে সংঘাতের দিকে। দেশের স্বার্থে মিডিয়ার সত্যনিষ্ঠ ভুমিকা পালন করা উচিত। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে পত্রিকা কিনে বা ঘরে টিভি রেখে তার মাধ্যমে সত্য খবর ও সঠিক তথ্য জানা মানুষের একটি ন্যয্য অধিকার। কিন্তু মিডিয়া জেনে বুঝে সত্য গোপন করে সংবাদ বা তথ্য পরিবেশন করছে! এটা কি ভেজাল পণ্য বিক্রির মত নয়? এটা কি নিরিহ গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা নয়?
বিষয়: বিবিধ
১১৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন