মুখে বলছে, “যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই” কিন্তু করছে অন্যকিছু। বাস্তবে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল না করে, করা হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এখন বলা হচ্ছে, (বিচার চাই না ফাঁসি চাই। আসলে কী?
লিখেছেন লিখেছেন সত্যবাক ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:৫৪:৩৭ দুপুর
যুদ্ধাপরাধের বিচার দিয়ে প্রচার শুরু। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম দিয়ে সংঘবদ্ধ প্রচারণা। যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা নির্বাচনী মেনিফ্যাস্টোতে অন্তর্ভূক্তকরণ। নির্বাচনের পর কিছুদিন চুপচাপ। চিন্তাভাবনা করে দেখা গেল, যুদ্ধাপরাধের বিচার তো করা যাবে না, কারণ নাম-পরিচয়সহ চিহ্নিত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী সৈন্যকে তো আওয়ামীলীগ সরকারই চুক্তি করে বিনা বিচারে সসম্মানে ছেড়ে দিয়েছে। তাহলে কী করা যায়? এবার বহু উচ্চারিত যুদ্ধাপরাধ শব্দটি বাদ দিয়ে আদালতের নামকরণ করা হল, আন্তজাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কৌশলে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদেরকে বিচারের আওতার বাইরে রাখা হলো। বলা যায়, এক নম্বর আসামীকে ছেড়ে দেয়া হলো। এভাবে যুদ্ধাপরাধ রূপান্তিরিত হয়ে গেল মানবতাবিরোধী অপরাধে। কিন্তু এখনও মুখে মুখে, টকশোতে, ব্যানারে যুদ্ধাপরাধীই চলছে! শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মেনিফ্যাস্টোতে ঘোষিত যুদ্ধাপরাধের বিচার আর হলো না।
যাহোক, শুরু হলো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। বিচার কাজ শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীরা বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন, বলতে থাকলেন: বিচার দ্রুত শেষ করা হবে এবং রায় কার্যকর করা হবে। রায় কার্যকর কথাটি সরকারের মন্ত্রী এমপিরা সমস্বরে বলতে লাগলেন। সাধারণত রায়ের সাথে কার্যকর শব্দটি দ্বারা ইঙ্গিত দিতে থাকলেন, রায় হবে ফাঁসি। কারণ কারাদন্ড তো কার্যকর করার কিছু নেই। কারাভোগ তো বিচারের আগেই শুরু হয়ে গেছে। তাহলে কী কার্যকর করা হবে? তার মানে ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
যাহোক প্রথমে মাওলানা সাঈদীর বিচারের রায় ঘোষণার পূর্বমুহুর্তে বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ ফাঁস হয়ে গেল। বাধ্য হয়ে বিচারপিত পদত্যাগ করলেন। এরপর মাওলানা আবুল কালাম আযাদের অনুপস্থিতিতে একতরফা বিচারে রায় দেয়া হল “ফাঁসি”। সরকার সমর্থকরা খুব খুশি, মিষ্টি বিরতরণ, বিজয় মিছিল! বলল, বিচারের রায় মানি। এরপর আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় দেয়া হল। প্রথমে কোথাও কোথাও বিজয় মিছিল, মিষ্টি বিতরণ হল। আসলে সরকার সমর্থকরা বুঝতে পারছিলনা কি করা উচিত? ইতোমধ্যে ব্লগার ও ইন্টারনেট একটিভিস্টদের ব্যানারে বামরা শাহবাগে অবস্থানের ঘোষণা দিল। শ্লোগান দেয়া হলো, বিচারের রায় মানি না; ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই। নাটের গুরুরা চালাকি করে শাহবাগ আন্দোলনকে নির্দলীয় গণজাগরণে রূপ দেয়ার জন্য সবাইকে দলীয় ব্যানার বহন করতে নিষেধ করল। সুপরিচিত দলীয় নেতাদের কৌশলে মঞ্চ থেকে আড়ালে রাখা হলো। শুরুহলো মিডিয়ার সংঘবদ্ধ প্রচার । এরপর অরাজনৈতিক ব্যানারে দলীয় লোকদের সংহতি প্রকাশের পালা।
এবার নতুন দাবী, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চাই না; ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই। নিজেদের প্রণীত আইনে বাদীর আপীল করার সুযোগ না থাকায় সমস্যা দেখা দিল, কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া যাচ্ছে না; বরং আসামীরা আপীল করলে উল্টো খালাসও পেয়ে যেতে পারে। সুতরাং বিচারের রায় ঘোষণার পর আইন সংশোধন করে ভুতাপে কার্যকারিতা দেয়া হলো। সরকারের আপীলের সুযোগ যুক্ত করে ফাঁসি দেয়ার রাস্তা খোলা হলো। এ যেন আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী ফাঁসি ট্রাইব্যুনাল করার চেষ্টা। এরপরও সমস্যা হতে পারে, যেভাবে বিচারের পরিবর্তে ফাঁসি ফাঁসি শ্লোগান দেয়া হচ্ছে। এখন ফাঁসি না দিলে শ্লোগানদাতারাই সরকারের প্রতি বিরুপ হবে এবং তারা সরকারকে প্রত্যাখ্যান করবে। সমস্যাটা এখানে। যদি আদালতকে মুত্যদন্ড দিতে বাধ্য করা না যায় তাহলে ফাঁসির শ্লোগানদাতারা হতাশ হবে সরকারের উপর। এদের সমর্থন হারাবে সরকার। এজন্য ব্যাক্তির বিচারের পাশাপাশি দলের বিচার করার ধারা আইনে সংযোজন করা হয়েছে। যদিও এ বিচার রাজনৈতিক এমন অভিযোগের জবাবে প্রথমদিকে আইনমন্ত্রী বার বার বলেছেন, আমরা দলের বিচার করছি না, ব্যাক্তির বিচার করছি। যাহোক শেষ পর্যন্ত ফাঁসির রায় দিতে যদি বিচারকদের বাধ্য করা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত জামাতকে নিষিদ্ধ করে উত্তেজিত সমর্থকদের একটু সান্তনা দেয়া যাবে। এই হলো , বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের আসল চেহারা। এটি যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে স্রেফ রাজনীতি। আবেগী জনগণ যার বলির পাঠা।
বিষয়: বিবিধ
৯৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন