বিদেশীদের জন্য হেফাজতে ইসলামীর ১৩ দফার ব্যাখ্যার সাথে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ আলেমদের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও অবস্থানটিও তুলে ধরা জরুরী।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যবাক ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:১৮:৪৮ সকাল
হেফাজতে ইসলাম সম্প্রতি তাদের ১৩ দফার ব্যাখ্যা আরবী ও ইংরেজীতে বিদেশী দূতাবাসগুলোর কাছে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এজন্য হেফাজত নের্তৃবৃন্দকে ধন্যবাদ। তবে ১৩ দফার সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ও সরকার সমর্থক মিডিয়ার অপপ্রচারের বিষয়টিও উল্লেখ থাকা জরুরী। কেননা হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ ঐতিহাসিক লংমার্চ দেখে জনবিচ্ছিন্ন উগ্র সেক্যুলারদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা এখন বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমদেরকে জঙ্গী আখ্যা দিতে এবার উঠে পরে লেগেছে। বিশেষকরে বিদেশীদের এ কথা বলে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে যে. বাংলাদেশে উগ্র জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান হতে যাচ্ছে; এদের ঠেকাতে বিদেশীরা আমাদের পাশে থাকুন। গত ১২.৪.১৩ একটি টিভি চ্যানেলে (সম্ভবত বৈশাখী টিভি) প্রচারিত এক রিপোর্টে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও দেশের শীর্ষ আলেমদের ব্যপারে চরম মিথ্যাচার করা হয়েছে। এসব সম্মানিত শীর্ষ আলেমদেরকে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জেহাদ, আফগান তালেবান, লস্করই তৈয়্যেবা এমনকি বিন লাদেনপন্থি বলে প্রচার করা হয়েছে। রিপোর্টে প্রথমে উল্লেখিত সশস্্র জঙ্গী সংগঠন ও ব্যক্তিদের ফাইল ছবি, সশস্্র তালেবানদেরদের ছবি, আফগান স্টাইলের বোরকা এবং হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ আলেমদের ছবি (৬ এপ্রিলের মহাসমাবেশে দেয়া বক্তব্যরত ছবিও রয়েছে) দেখিয়ে উক্ত সশস্্র জংগী সংগঠনের সাথে তাদের সংম্পৃকতা/বন্ধুত্ব (?) আছে এমন লেখা স্ক্রীনে দেখানো হয়েছে।
অথচ সত্য কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত সশস্্র জঙ্গী সংগঠন জাময়াতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) যখন সারা দেশে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে প্রচারপ্রত্রে ইসলামী আইন কায়েমের ঘোষণা দিয়েছিল এবং আদালতে বোমা হামলা করে বিচারকদের হত্যা করে দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল তখন এই শীর্ষ আলেমরা জেএমবির এহেন সন্ত্রাসী কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছিলেন। শীর্ষ আলেমদের কেউ ইসলামের নামে জেএমবির সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে সমর্থন করেননি। দেশেরে কওমী ও আলিয়াপন্থি সকল শীর্ষ আলেমদের আহ্বানে সারা বাংলাদেশের সকল মসজিদের ইমাম ও খতীবগণ একযোগে জুমার খুতবায় ইসলামের নামে বোমাবাজি ও মানুষ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন। জেএমবির বোমাবাজি ও মানুষ হত্যার নীতির সাথে শান্তিপূর্ণ পন্থায় ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার সতসিদ্ধ নীতির যে কোন সম্পর্ক নেই তা কুরআন ও হাদীসের দলিল দিয়ে এসব আলেমরাই সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেছিলেন। শীর্ষ আলেমদেও যথার্থ ভূমিকার কারণেই বাংলাদেশে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবেনা ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের এই ঐতিহাসিক ভুমিকার কারণেই জেএমবিসহ সকল সশস্্র জঙ্গী তৎপরতা বন্ধ করা সরকারের পে সম্ভব হয়েছিল।
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমরা একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী ঢাকা ঘোষণা অনুমোদন করেছিলেন। উক্ত সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের সবাই অংশগ্রহণ করেছেন, সমর্থন দিয়েছেন ও সংহতি প্রকাশ করেছেন। এ সংবাদ বিবিসি সহ বাংলাদেশের সকল গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল। উক্ত সম্মেলনের ভিডিও ফুটেজ, ফাইল ফটো, পত্রিকা কাটিং সবই সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাছে এখনো সংরতি আছে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার দেশের শীর্ষ আলেমদেরকে হলুদ মিডিয়া এখন জঙ্গীবাদী বানাতে চাচ্ছে! জনগণ সাবধান!
গত ৬ এপ্রিল হেফাজতের ইসলামের নের্তৃবৃন্দ সরকারের অনুমতি নিয়ে শান্তিপূর্ণ লংমার্চ শেষে মহাজনসমুদ্র থেকে গণতান্ত্রিক নিয়মে সরকারের নিকট দাবী পেশ করেছেন। হেফাজতে ইসলামের অভাবনীয় বিশাল জনসমর্থন দেখে সরকার ও বামপন্থিদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী দূতাবাসের কুটনীতিকদের ডেকে হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে ব্রিফ করেছেন। নিশ্চয় তিনি সমাবেশে আগত টুপি ও সাদাপোশাকধারী বিশাল জনসমুদ্র দেখিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান হতে যাচ্ছে; এদের ঠেকাতে বিদেশীরা আমাদের পাশে থাকুন। উক্ত ব্রিফিংএ বিদেশী কুটনীতিকদেরকে মহাসমাবেশ স্থলের বাইরের দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা (মিছিল নিয়ে আসার পথে মহাখালিতে গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙচুর ও মহাসমাবেশ থেকে ফিরার পথে শাহবাগের ছাত্রলীগ-যুবলীগ-গণজাগরণ মঞ্চ ওয়ালাদের সাথে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া)-এর ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে এবং তাদের বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, হেফাজত ইসলাম সন্ত্রাসী সংগঠন ও তালেবানী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। আজকে দেখলাম, হলুদ মিডিয়াকে ব্যবহার করে বিন লাদেন ও জেএমবি এর মত জঙ্গী সংগঠনের সাথে বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমদের সখ্যতার(?) প্রপাগান্ডা চালিয়ে বিদেশীদের মনে ভয় সৃষ্টি করে জনবিচ্ছিন্ন সরকারের পে বিদেশীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্ঠা করা হচ্ছে এবং দেশের মানুষের কাছে শীর্ষ আলেমদেরকে জঙ্গীবাদী হিসেব চিহ্নত করে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাচ্ছে। এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করা জরুরী। এসব হলুদ মিডিয়ার মিথ্যাচার জনগণকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া এবং বিদেশীদের কাছেও এদের কদর্য চেহারা উন্ম্চেন করা জরুরী।
বিষয়: বিবিধ
১৯১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন