হেফাজতে ইসলামের দাবী মানলে বাংলাদেশ মধ্যযুগীয় বর্বরতায় প্রবেশ করবে! - মাহবুবুল আলম হানিফ।

লিখেছেন লিখেছেন সত্যবাক ০৮ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:৪২:৩৫ রাত

আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পদক মাহবুবুল আলম হানিফ বললেন, হেফাজতের তের দফা মানলে বাংলাদেশ মধ্যযুগীয় বর্বরতায় প্রবেশ করবে! আমার প্রশ্ন, হেফাজতের প্রথম দাবি সংবিধানে আল্লাহ উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পূণস্থাপন করলে কি বাংলাদেশ মধ্যযুগীয় র্ববরতায় প্রবেশ করবে? আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন(ঈমান রাখা) কি মধ্যযুগীয় বর্বরতা? এর আগে বিএনপি আমলে যখন এটি সংবিধানে ছিল তখন কি বাংলাদেশ মধ্যযুগীয় বর্বর রাষ্ট্র ছিল? আওয়ামীলীগের আগের শাসন আমলে (৯৬ সালে) যখন সংবিধানে এটি ছিল তখনকার আওয়ামীলীগের শাসন কি ছিল মধ্যযুগীয় বর্বর শাসন ছিল? এর আগে যখন এ সরকারের নারী নীতি ছিল না তখন কি বাংলাদেশ মধ্যযুগীয় বর্বর রাষ্ট্র ছিল? যে সব দেশ এ নারী নীতি অনুমোদন করেনি তারা কি বর্বর রাষ্ট্র? বরং এ সরকারের নারী নীতি হওয়ার পর নারীর প্রতি সহিসতা বহু গুণে বেড়ে গেছে।

আমার জানা মতে, হেফাজতে ইসলাম নারীদের অবাধ মেলা বন্ধ করার যে দাবী জানিয়েছে তা ইসলাম নারীকে যে সম্মান, মর্যাদা ও নায্য অধিকার দিয়েছে তার আলোকেই বলেছে। জীবিকার তাগিদে যে সব নারী চাকুরী করছেন তারা চাকুরী করতে পারবেন না এমন কথা তো তারা বলেননি। গার্মেন্টস এ নারীরা চাকুরী করতে পারবেন না এ কথা তো বলেননি। নারীরা লেখা পড়া করতে পারবে না এ কথাও তো তারা বলেননি। নারী স্বাধীনতার নামে যে অশ্লীল ও বিজাতীয় সংস্কৃতি আমদানী করে নারীকে আজ পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বিজাতীয় লিভিং টুগেদার তথা অবাধ মেলামেশার যে কালচার আমদানী করা হচ্ছে তা বন্ধ করার দাবী জানিয়েছেন। তারা নারী পুরুষের বল্গাহীন উচ্ছৃখল জীবনাচরণের পরিবর্তে সুশৃংখল ও পবিত্র জীবনাচরণের কথা বলেছেন। তরুণ প্রজন্মের নামে শাহবাগে নারী-পুরুষের দিবারাত্রি সহাবস্থান কালে যে বিজাতীয় নোংরা ও ইয়াবা সংস্কৃতির চর্চা হয়েছে তা তারা বন্ধ করতে বলেছেন। তারা জিনা, ব্যভিচার ও অশ্লিতা বন্ধ করার কথাই বলেছেন। এ সব বন্ধ করলে কি বাংলাদেশ মধ্যযুগীয় বর্বর দেশে পরিণত হবে বলে হানিফ সাহেবরা মনে করেন? তুরষ্ক ও মালয়েশিয়াতে বহু মুসলিম নারী মাথায় স্কার্ফ ও সুন্দর শালীন পোষাক পরে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন তাতে কি তারা মধ্যযুগীয় বর্বরতায় প্রবেশ করেছেন? এমনকি আমেরিকা ও ইউরোপের বহু উচ্চশিতি ও পেশাজীবি নারী ইসলাম গ্রহণ করে ইসলামসম্মত হিজাব (সুন্দর ও মার্জিত পোষাক) পরে কাজ করছেন এবং তারা এ জন্য গর্ববোধ করছেন। মিসেস আমিনা আসলামী নামক জনৈক আমেরিকান নওমুসলিম নারী ইসলামসম্মত পোষাক পরিধান করার পর বলেন, “আমি এখন নিজের শরীরটাকে অন্যের সামনে তুলে ধরার পরিবর্তে আমার ব্যক্তিসত্তাকে তুলে ধরতে পারছি।” এসব উচ্চশিতি নারীরা কি মধ্যযুগীয় বর্বরতায় প্রবেশ করেছেন? তবে কি জনাব হানিফ মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলতে ইসলামােক বুঝিয়েছেন?

দেখলাম, একজন নারী সাংাবাদিককে বারবার টিভিতে দেখানো হচ্ছে আর তিনি বলছেন, “আমি নারী হয়ে ওখানে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়ায় আমাকে হেফাজতের কর্মীরা মেরে ফেলতে চেয়েছিল।” আমি জানি না এটা ঠিক কিনা। তবে মনে হয়, দু’একজন কিছু বললেও অধিকাংশই হয়ত তাকে রা করেছেন। নতুবা লকোটি হেফাজত কর্মীর মধ্য হতে তিনি জীবন নিয়ে অত অবস্থায় ফিরতে পারতেন না। তাছাড়া আমার মনে হয়, যতটা না নারী হওয়ার কারণে তার প্রতি হেফাজত কর্মীরা রুষ্ট হয়েছেন তারচেয়ে বেশি আক্রোশ ছিল তাদের মিডিয়ার একপেশে সংবাদ পরিশেনের কারণে। কারণ আমারা চট্রগ্রামে পুরুষ সাংবাদিকের প্রতি হেফাজত কর্মীদেও রুষ্ট হওয়ার সংবাদও শুনেছি। ঐ সাংবাদিক তো নারী সাংবাদিক ছিলেন না। তাছাড়া অনেক নারীকে দেখা গেছে হেফাজতের সমাবেশে যোগদানকারীদের অযু করার জন্য ঘরের ভিতর থেকে বালতিতে করে পানি এনে দিয়েছেন।

যাহোক, এর আগে সরকারের সমর্থনে বামপন্থিরা শাহবাগ নাটক করে তরুণ প্রজন্মকে ইসলামের মুখোমুখী দাড় করাবার চেষ্টা করেছে। সেটা যখন ব্যর্থ হয়েছে তখন এবার ওরা নারীদেরকে ইসলামের মুখোমুখী দাড় করাবার চেষ্টা করছে। শাহবাগ থেকে সরকারর ও বামদের শিা নেয়া উচিত। সরকার ও বামদের মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশের নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি ধর্মপ্রাণ। ফ্রী মিক্সিং এ বিশ্বাসী কিছু শহুরে এলিট শ্রেণীর নাস্তিক্যবাদী নারীনেত্রী বাংলাদেশের সকল নারীর প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা মনে রাখা উচিত, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জন্য দোয়া করে এদেশের অসংখ্য নারী রোযা রেখেছেন। এমনকি তার ফাঁসির অন্যায় রায় দেয়ার প্রতিবাদে নারীরা রাস্তায় নেমে এসে নিজেদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন। এগুলো স্মরণে না রাখলে শাহবাগের মত আবারো সরকারকে মাশুল দিতে হবে। বাংলাদেশে এখনো স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, পিতা-মাতার পারিবারিক বন্ধন অটুট আছে এবং ইসলাম ধর্ম এখনো এ বন্ধনের কেনদ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করছে।

সরকারের নারী নীতিতে কুরআনে প্রদত্ত মুসলিম উত্তরাধিকারের বিধানকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। অথচ কুরআনে উত্তরাধিকারের বিধান দেয়ার পর বলা হয়েছে, যে এ আইন যে মানবে না তার প্রতি আল্লাহ রুষ্ট হন এবং ঐ ব্যক্তির ঠিকানা হলো জাহান্নাম। উত্তরাধিকার আইন মানার সাথে একজন মুসলিমের ধর্মীয় বিশ্বাসের অধিকার জড়িত। একজন মুসলিম হিসেবে এ আইন অমান্য করে জাহান্নামের পথে যেতে সরকার কাউকে বাধ্য করতে পারে না। কোন ধার্মিক নারীও আল্লাহর বিধানের বাইরে সামান্য সম্পত্তিও বেশি নিতে চাইবেন না। অথচ নারী নীতির মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষকে আল্লাহর অবাধ্য হতে বাধ্য করা হয়েছে। এ আইনের সাথে মুসলিম পরিবার ব্যবস্থার দর্শন জড়িত। ইসলামে পরিবারের সদস্যদের আর্থিক অধিকার ও দায়িত্ব সুবিদিত। এখানে বোনের বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত ভাই অকাতরে বোনের পড়ালেখা ও অন্যান্য ব্যয় বহন করাকে নিজ দায়িত্ব মনে করে। পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেন। পশ্চিমা স্বার্থপর সমাজ ব্যবস্থা থেকে মুসলিম সমাজের ঐতিহ্য আলাদা। এসব উপাদানের কারণে আমাদের পরিবার ব্যবস্থা এখনো টিকে আছে। মনে রাখা উচিত, ধর্মের বিধান পালনে বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে গাফলতি বা দূর্বলতা থাকলেও সরাসরি ধর্মের বিধানের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার মত মানসিকতা তাদের নেই। ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার প্রশ্নই আসে না বরং নিজে ধর্মের পালন করতে না পারার জন্য অপরাধবোধ তাদের মধ্যে কাজ করে এবং ধর্মের প্রতি কতুক্তি তারা বরদাশত করে না।

হেফাজতে ইসলামের দাবীগুলোকে বর্বর দাবী বলে কটা না করে বরং সরকারের উচিত, সম্মানের সাথে বিবেচনা করার চেষ্টা করা। ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগারদের ভাষার সাথে সরকারের কর্তাব্যাক্তিদের ভাষা মিলে যাওয়া উচিত নয়। এতে সরকারের প্রতি ধর্মপ্রাণ মানুষের সন্দেহ আরো বাড়বে এবং দেশের চলমান সংকট আরো ঘনীভুত হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৭৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File