কানাডার দৈনিক পত্রিকায় পদ্মাসেতু দুর্নিতির চাঞ্চল্যকর খবর

লিখেছেন লিখেছেন পাগল হাওয়া ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:৪৪:২৬ সকাল

পদ্মা ব্রিজ চুক্তিঃ SNC-Lavalin ও বাংলাদেশের মধ্যকার গোপন সমঝোতা

বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা সেতু প্রকল্প তদারকির জন্য কানাডার বৃহত্তম ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি SNC-Lavalin এর অনুমোদন চুড়ান্ত করার আগে বাংলাদেশের সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন SNC-Lavalin এর একজন “সাদা চামড়ার” উচ্চ পদস্থ নির্বাহীর সাথে মুখোমুখী বসার দাবী জানিয়েছেন বলে বিশ্বব্যংকের বিশেষজ্ঞ প্যনেলের এক চিঠিতে জানা যায়।

যোগাযোগ মন্ত্রীর দাবী অনুযায়ী SNC-Lavalin ওকভীল অফিসে কর্মরত কোম্পানির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস ২৯ মে ২০১১ তারিখে কানাডা থেকে ঢাকা উড়ে আসেন। সংগে নিয়ে আসেন SNC-Lavalin এর আরেক নির্বাহী ভারতীয় বংশদ্ভুত রমেশ শাহ কে। মন্ত্রীর সংগে কেভিন ওয়ালেস এবং রমেশ শাহ এর মিটিংয়ের পরে দুটি উল্লেখযোগ্য জিনিস ঘটেছে বলে ওই চিঠিতে জানান বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ কমিটি। ওই বৈঠকে ঘুষ হিসেবে মন্ত্রীকে এবং অন্যান্য সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরকে কত দিতে হবে তার ফায়সালা হয় এবং তা সাধারনের অবোধগম্য ‘কোড নম্বর’ দ্বারা গোপন করার সিদ্দ্বান্ত হয়। এর বিনিময়ে টেন্ডারে পিছিয়ে থাকা SNC-Lavalin কে তালিকার শীর্ষে স্থান করে দেওয়া হয়।

উল্লেখিত ঘুষ প্রদানের বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেয়ার ঘটনা গুলিকে "অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র" হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অতীব গুরুত্বপুর্ণ পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে আসে।

বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১.২ বিলিয়ন ডলার ঋণ-প্রত্যাহারের আগে মন্ত্রী আবুল হোসেনের ঘুষের বিষয়টি তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রসিকিউটার Luis Moreno Ocampo এর নেতৃত্যে একটি অপরাধ নিরোধ প্যনেল ব্যপক তদন্ত করে এবং বাংলাদেশের মন্ত্রী আবুল হোসেনের অপরাধ প্রমানিত হয়। Luis Moreno Ocampo তার রিপোর্টে আবুল হোসেন কে দুর্নিতি দমন কমিশনের মামলায় আসামী করার জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু দুর্নিতি দমন কমিশন মন্ত্রী আবুল হোসেন কে মামলা ভুক্ত না করেই SNC-Lavalin এর কেভিন ওয়ালেস সহ তিন কর্মকর্তা এবং আরো অনেকের বিরুদ্দ্বে মামলা করেন। ফলে বিশ্বব্যংকের ঋণ পুর্ণবহালের সম্ভাবনাও নস্যাত হয়ে যায়।

চিঠিতে, Ocampo অভিযোগ করেছেন যে, ঢাকা থেকে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা অনেক আগে থেকেই SNC-Lavalin কে টেন্ডারের অনেক খুটিনাটি গোপন বিষয় বিধি বহির্ভুতভাবে অবহিত করে আসছিল। ওয়ালেস এর ঢাকা সফর এবং মন্ত্রীর সাথে মিটিংয়ের আগে ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি Halcrow ছিল মুল্যায়ন কমিটি কতৃক বাছাইকৃত পদ্মা সেতু প্রকল্প তদারকির জন্য প্রথম দাবিদার। এই সফরের দুই সপ্তাহ পরে সেতু কতৃপক্ষ SNC-Lavalin কে সুপারিশ করে বিশ্বব্যংক এর কাছে রিপোর্ট পাঠায়।

ঘুসের মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেয়ার ততপরতার অপরাধে SNC-Lavalin এর উল্লেখিত কর্মকর্তারা ছাড়াও আরো অনেকের বিরুদ্বে কানাডার ফেডারাল পুলিশ RCMP তদন্ত করে যাচ্ছে। মন্ত্রী আবুল হোসেনের সাথে সাক্ষাত হওয়া ওয়ালেস গত ডিসেম্বর মাসে SNC-Lavalin এর চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।

কানাডায় SNC-Lavalin এর প্রতিনিধি Leslie Quinton বলেছেন "আমরা অন্যায়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদেরকে বিচারের সম্মুখীন দেখতে আগ্রহী" ।

বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ থেকে প্রত্যাক্ষাত হয়ে সরকার তার নাগরিকদের বলছে অন্য কোন উপায়ে তারা পদ্মা সেতুর টাকা জোগাড় করবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্থানের আশংকা থেকে মন্ত্রী আবুল হোসেনকে চার্জভুক্ত করা হয় নি বলে Ocampo তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।

সুত্রঃ দ্যা ডেইলী গ্লোব এন্ড মেইল, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৩।

বিষয়: রাজনীতি

১৭১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File