হামিদকে রাষ্ট্রপতি করায় আ’লীগে শীর্ষমহলে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে!
লিখেছেন লিখেছেন শাহাবউদ্দিন আহমেদ ২৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:৪২:২৭ বিকাল
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : রাষ্ট্রপতি পদে আবদুল হামিদ এডভোকেটকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করায় দলের অভ্যন্তরে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। আবদুল হামিদকে মনোনয়ন দেয়ার পর শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা দল থেকে বিদায় নেয়ার কথা ভাবছেন।
গত ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন, সুযোগ আসলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে একজন নারীকেই বসাবেন।
তার এ বক্তব্যে আশাবাদী হয়ে রাষ্ট্রপতি পদে দলের দুই শীর্ষ নেত্রী সাজেদা চৌধুরী এবং মতিয়া চৌধুরী রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু ১৯ এবং সর্বশেষ ২১ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে আওয়ামী লীগ থেকে স্পিকার আবদুল হামিদকে রাষ্ট্রপতি পদে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়।
এতে দলের এই দুই শীর্ষ নেত্রী ভীষণভাবে মনোক্ষুণ্ন হন। এদের মধ্যে সাজেদা চৌধুরী প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগ থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে মতিয়া চৌধুরী দলীয় কর্মকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জাস্ট নিউজকে নিশ্চিত করেছে।
এদিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদ শপথ নেয়ার পর পরই স্পিকারের পদটি শূন্য হতে চলছে। ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলীকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়ার কথা ভাবছেন। শওকত আলীর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগবান্ধব হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদও ছিলেন রাষ্ট্রপতি পদের একজন প্রত্যাশী। এ পদের জন্য নিজের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবদান রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত দল ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মূল্যায়ন না হওয়ায় তিনিও আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া শূন্য স্পিকার পদে সাবেক ডেপুটি স্পিকার আলী আশরাফ এবং দলের আইন সম্পাদক আবদুল মতিন খসরুর নাম তালিকায় রয়েছে। পদ পাওয়ার জন্য তারাও বিভিন্নভাবে দলীয়প্রধানের নজরে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর চয়েজ লিস্টের শীর্ষে অবস্থান করছেন নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্পিকার অনেক শীর্ষ নেতাদের ডিঙ্গিয়ে শিরীন শারমিন চৌধুরীকে স্পিকার পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিলে দলের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য সকল বিষয় মাথায় রেখেই পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে দাবি সভাপতিমন্ডলীর বেশ কয়েকজন নেতার।
এ বিষয়ে সাজেদা চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, সময় আসলে সবই দেখতে পারবেন।
অবশ্য মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কারণ তিনি একা কোনো সিদ্ধান্ত দেন না। আলোচনার মাধ্যমেই সব হচ্ছে। দল ছাড়ার বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি।
প্রসঙ্গত, ১৯ এপ্রিল দলের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রপতি পদে স্পিকার আবদুল হামিদ এডভোকেটের নাম প্রস্তাব করেন তোফায়েল আহমেদ। এ প্রস্তাবনায় আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং শাজাহান খান সমর্থন দিয়ে বক্তৃতা করেন।
বৈঠকের শেষদিকে সাজেদা চৌধুরী নিজের ত্যাগ ও প্রজ্ঞা তুলে ধরে নিজেকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য যোগ্য হিসেবে বক্তৃতা করেন। পরে তোফায়েল আহমেদ সাজেদা চৌধুরীর ত্যাগের আরো ফিরিস্তি দিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত দলীয় সংসদ সদস্যরা এর তীব্র বিরোধিতা করেন এবং দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তেই সমর্থন দেন। এ সময় সাজেদা চৌধুরী নিজেকে ক্লান্ত উল্লেখ করে দল থেকে বিদায় দেয়ার জন্য নেতাদের অনুরোধ করেন।
বিষয়: রাজনীতি
৯৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন