কর্জে হাসানা মানবতার পূণ্যময় কল্যাণ

লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২২ জুলাই, ২০১৭, ০৬:২১:১১ সকাল

‘কর্জে হাসানা’ হতে পারে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার একটি মাধ্যম



ধনীদের জন্য সুসংবাদ। আল্লাহ পাক উত্তম বিনিময় দেয়ার বিপরীতে কর্জ চেয়েছেন বিত্তবানদের কাছ থেকে। কর্জ তো তারাই দিতে পারবেন যাদের ধন আছে। সুতরাং এ সুযোগ কেবল ধনীরাই নিতে পারেন (অবশ্য কুরআনে বিত্তবানকে মেনশন করে বলা হয় নি)। এটা তাদের জন্য বিশাল ব্যাপার যে স্বয়ং আল্লাহপাক ঘোষণা দিয়ে তাদের কাছ থেকে কর্জ বা ঋণ চেয়েছেন বা ঋণের আহবান করেছেন। মূলত আল্লাহ নিজের জন্য এই ঋণ চান নি। তিনি তো অভাব মুক্ত, তাছাড়া সরাসরি আল্লাহকে ঋণ দেয়ার কোন ব্যবস্থাও নেই। তিনি দরিদ্রদের জন্য এই ঋণ দিতে বলেছেন অবস্থা সম্পন্ন লোকদেরকে। তিনি অভাবগ্রস্তকে সুদমুক্ত ঋণ দেয়াকে আর্থিক এবাদত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আল্লাহপাক কুরআনের মাধ্যমে কর্জে হাসানা প্রদানকারীদের জন্য বিভিন্ন প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনের ৬টি আয়াতে মোট ১২টি স্থানে ‘করজে হাসানা’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেক স্থানেই ‘কর্জ’কে ‘হাসান’ এর সাথে র্বণনা করা হয়েছে। বুঝা গেল কর্জে হাসানা একটি ইবাদত এবং মানবতার পুণ্যময় কল্যাণ। আর কর্জে হাসানা আদায়ের সেতুবন্ধন পাড়ি দেয়ার মাধ্যমে বান্দার সাথে আল্লাহর হয়ে যেতে পারে সুসম্পর্ক। বুদ্ধিমান জ্ঞানী লোকেরা কখনো এই সম্পর্ক হাত ছাড়া করতে চাইবে না।

তিনি (আল্লাহ) পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ২৪৫ নং আয়াতে বলেছেন, ‘কে সে, যে আল্লাহকে কর্জে হাসানা (যে বিনিয়োগ নিঃস্বার্থভাবে দেয়া হয়) প্রদান করবে? তিনি তাহার জন্য ইহা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন।’ আবার সূরা-মায়িদার ১২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি; তোমরা যদি সালাত কায়েম কর, জাকাত দাও, আমার রাসূলদের ওপর ঈমান আন ও সম্মান কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তবে তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করব এবং নিশ্চয়ই তোমাদের দাখিল করব জান্নাতে, যাহার পাদদেশে নহর প্রবাহিত। এর পরও কেউ কুফরি করলে সে তার সরল পথ হারাবে।’ সূরা-হাদিদ, আয়াত-১১ এ উল্লেখ আছে, ‘কে আছে, যে আল্লাহকে দেবে উত্তম ঋণ, তাহলে তিনি বহুগুণে ইহাকে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য আছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ একই সূরার ১৮নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘দানশীল পুরুষ এবং দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে, তাদের (ঐ ঋণ) ফেরত দেয়া হবে বহুগুণ বৃদ্ধি করে এবং তাদের জন্য আছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ অভাবগ্রস্তকে ঋণদানকারীর প্রতি সুসংবাদ দিয়ে আল্লাহপাক সূরা তাগাবুন আয়াত ১৭ তে বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা কয়েকগুণে বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদের ভুল-ত্রুটিও ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী ও ধৈর্যশীল।’ রাব্বুল ইজ্জত সালাত এবং জাকাতের মত ফরজসমূহ আদায়ের সাথে সাথে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেয়ার কথা সমান গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন। তিনি সূরা মুযযাম্মিলের ২০ নং আয়াতে বলেন, ‘অতএব সালাত কায়েম কর, জাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহকে দাও উত্তম ঋণ। তোমরা তোমাদের নিজেদের মঙ্গলের জন্য ভালো যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করবে; তা তোমরা পাবে আল্লাহর কাছে উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসেবে মহোত্তম। আর তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর আল্লাহর কাছে; নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ কর্জে হাসানা দানকারীকে আল্লাহপাক বহুমুখী পুরস্কারে পুরস্কৃত করার কথা বলেছেন। তিনি তাদেরকে ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করার কথা বলেছেন, পাপ মোচন করার কথা বলেছেন, সম্পদকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে তা ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন, সম্মানজনক পুরস্কারে পুরস্কৃত করে জান্নাতে দাখিল করার কথা বলেছেন। সুবহানআল্লাহ!

কোরআন পাকে কর্জে হাসানা প্রদান করলে বহুগুণ সওয়াবের কথা উল্লেখ আছে যা আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম। এবার দেখি কর্জে হাসানা সম্পর্কে হাদিস শরীফ কী বলে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমিয়েছেন, ‘আমি যখন মেরাজে গিয়েছিলাম, তখন বেহেশতের দরজার ওপর লেখা দেখেছি, খয়রাতের সওয়াব ১০ গুণ, আর কর্জে হাসানার সওয়াব ১৮ গুণ। দান বা খয়রাত ফেরত দিতে হয় না কিন্তু কর্জে হাসানা ফেরত দিতে হয়। তবে সূরা বাকারার ২৮০তম আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘যদি খাতক বা ঋণগ্রহীতা অভাবগস্ত হয়, তবে তার(ঋণ গ্রহিতার) সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও বা সদকা করে দাও তবে তা খুবই উত্তম। যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’

কর্জে হাসানা ফেরত দেয়ার পরেও প্রায় দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়ার কারণ আছে। মূলত পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক প্রতিটি মানুষকে স্বাবলম্বী করার জন্য ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে মুসলমানরা, তালির ওপর তালিযুদ্ধ ছিন্নবস্ত্র পরিধান করা, ঋণ গ্রহণ অপেক্ষা উত্তম, যদি তা শোধ করার শক্তি না থাকে’ (মুসনাদ আহমাদ)। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘হে মুসলমানরা ঋণ গ্রহণ থেকে বেঁচে থাক। কেননা, ঋণ রাত্রীকালে মর্ম বেদনা ও দুঃশ্চিন্তা সৃষ্টি করে এবং দিনের বেলায় অপমান ও লাঞ্চনায় লিপ্ত করে’ (বায়হাকি)। তবে রাসূলে পাক সা. এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করে এবং তা পরিশোধ করার ইচ্ছা রাখে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার পক্ষ থেকে তার ঋণ শোধ করে দেবেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঋণ শোধ করার ইচ্ছা রাখে না এবং এ অবস্থায় মারা যায়, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি বোধ হয় মনে করেছিলে, আমি আমার বান্দার হক তোমার কাছ থেকে আদায় করব না। এরপর ঋণ গ্রহীতার কিছু সৎকর্ম ঋণ দাতাকে দেয়া হবে। সে যদি কোনো সৎকর্ম না করে থাকে, তবে ঋণদাতার কিছু গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে (তিবরানি, হাকেম)। হুজুরপাক সা. ঋণ গ্রহণে অনুৎসাহিত করলেও তিনিই আবার বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে একবার ঋণ দিলে এ ঋণ দান আল্লাহর পথে দুইবার সদকা করার সমতুল্য ফজিলত।’ অপর এক হাদিসে হজরত রাসুল সা. বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে উত্তম হলো সে ব্যক্তি, যে মানুষের কল্যাণ করে এবং মানুষের কল্যাণের জন্য চিন্তা ভাবনা করে। কারণ মানবকল্যাণ, মানবসেবা করা মুসলমানের সর্বোৎকৃষ্ট গুণ। মুসলিম শরিফে হজরত আবু ইউসার রা. থেকে বর্ণিত হজরত রাসূল সা. এরশাদ করেন, ‘যে অসমর্থ ঋণীকে সময় দান করবে কিংবা তার ঋণ মাফ করে দেবে, মহান আল্লাহ হাশরের মাঠে তাকে রহমতের ছায়া দান করবেন।

‘কর্জে হাসানা’ নামটি অতি সুন্দর এবং আমরা কমবেশি এ নামটির সঙ্গে পরিচিত। বর্ণিত আয়াত ও হাদিসগুলোর মর্মার্থ হলো- যিনি নামায পড়েন, জাকাত দেন, কর্জে হাসানা দেন এবং আল্লাহ পাকের কাছে কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চান- তাহলে তাকে আল্লাহ কর্জে হাসানার সওয়াব বহুগণে দেবেন, সম্মানজনক পুরুস্কার দিবেন এবং ক্ষমা করে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত। সুতরাং আমরা নির্দিধায় বলতে পারি আর্থিক ইবাদতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত হলো ‘কর্জে হাসানা’ তথা উত্তম ঋণ।

আল্লাহ তায়ালা অমুখাপেক্ষী হওয়া সত্ত্বেও কেন ঋণ চাইলেন? বান্দাদেরকে কর্জে হাসানা প্রদানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার জন্য। স্বতস্ফূর্তভাবে সমস্যার শিকার ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান করা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাকে ঋণ দেয়ার মতো। মহানবীর সা. -এর ভাষ্য অনুযায়ী, দানের চেয়ে ঋণ প্রদানের গুরুত্ব বেশি। দানের সওয়াব দশ গুণ আর ঋণ প্রদানের সওয়ার আঠারো গুণ। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যখন কর্জে হাসানা সম্পর্কে কুরআন কারীমে আয়াত নাজিল হলো তখন হজরত আবুদ্দারদা আনসারী রা. রাসুলুল্লাহ সা. এর দরবারে হাজির হয়ে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল সা.! আল্লাহ তায়ালা কি আমাদের কাছে ঋণ চান? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সা. বললেন হ্যাঁ, তখন আনসারী সাহাবী বললেন, হুজুর! আপনার হস্ত মুবারক সামনে বাড়িয়ে দিন, আপনার হাতে হাত রেখে আমি একটি অঙ্গীকার করব। রাসুল সা. হাত বাড়িয়ে দিলেন। তখন হজরত আবুদ্দারদা রা. রাসূলুল্লাহ সা. এর হাত ধরে অঙ্গীকার করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আমার বাগান আল্লাহ তায়ালাকে কর্জ হিসেবে দিয়ে দিলাম। ওই বাগানে ৬০০ খেজুর গাছ ছিল এবং ওই বাগানে তার স্ত্রী-সন্তানও থাকত। তিনি রাসুলুল্লাহ সা. এর দরবার হতে উঠে নিজ বাগানে চলে গেলেন এবং স্বীয় স্ত্রীকে আওয়াজ দিয়ে বললেন, চল এই বাগান থেকে বের হয়ে এসো; এই বাগান আমি আমার রবকে কর্জ দিয়ে দিয়েছি [তাফসীরে ইবনে কাসীর]। আবুদ্দারদা রা. এর দুটি বাগান ছিল। তন্মধ্যে এই বাগানটিই ছিল তার নিকট খুব প্রিয়। যে বাগানে ৬০০ খেজুর গাছ ছিল এবং ওই বাগানে তার স্ত্রী-সন্তানও থাকত। এটিই তিনি স্বীয় রবকে কর্জ হিসেবে দিয়ে দিলেন। এই সকল ব্যক্তিদের প্রশংসায় আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তারা নিজেদের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেয়।’ [সূরা হাশর : ৯]

বিত্তশালীরা ‘কর্জে হাসানা’ নামক আর্থিক ইবাদতটি ফলো করে সম্পাদন করলে সমাজের অবহেলিত ও দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষগুলো নিজ পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পায়। জাতীয় উৎপাদনে তারা তাদের কর্মশক্তি নিয়োগ করতে পারে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়েপড়া পরিবারগুলো শক্তি অর্জন করে অভাবের তাড়না থেকে মুক্তি পেতে পারে। সাথে সাথে যারা অসহায়ত্বের শিকার হয়ে সুদী ঋণ গ্রহণ করে তাদেরকে সুদ নামক ভয়ানক অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে। আমাদের দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে কর্জে হাসানা চালু থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করজে হাসানা প্রদানের সংস্কৃতি এখনও চালু হয়নি। বিভিন্ন ইসলামী ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ট্রাস্ট বিনা সুদে ছোট ও মাঝারি আকারের ঋণ প্রদান করে অসহায় পরিবারগুলোকে আত্মনির্ভরশীল করার পথ দেখাতে পারে। কর্জে হাসানা হতে পারে দারিদ্র্যবিমোচনের ব্যাপকভিত্তিক শক্তিশালী মডেল এবং সুদী ঋণের উত্তম বিকল্প। তাছাড়া কর্জে হাসানা বা সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র লোকদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। যারা অত্যন্ত অসহায়ত্বের শিকার তাদেরকে কর্জে হাসানা প্রদান করে ছোটখাটো কোনো ব্যবসা ধরিয়ে দিয়ে দারিদ্রবিমোচনের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনা যায়। যেমন পোশাক তৈরি, এমব্রয়ডারি, খাদ্য তৈরি, মোটরসাইকেল মেকানিক, অটোমেকানিক, হাঁস-মুরগির খামার, মৎস খামার, কম্পিউটার সফটওয়্যার, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েল্ডিং, কাঠের সরঞ্জাম তৈরি, কুটির শিল্প, ই-বিজনেস, অনলাইনে ইনকাম, ছাগল পালন ইত্যাদি। তাছাড়া অসচ্ছল পরিবারের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাঋণ দিয়ে নিরক্ষতা দূরীভূত করা যায়। কর্জে হাসানায় কোনো ধরনের সুদ, সার্ভিস চার্জ, লোন প্রসেসিং ফি, মুনাফা, জরিমানা থাকে না। নির্ধারিত মেয়াদের ভেতরে মূল টাকা ফেরত দিতে হয়। দাতা যদি অভাবীকে সাদাকা হিসেবে ক্ষমা করে দেন তাহলে দিতেও হয় না।

মোটকথা, সুদীঋণ প্রথা বিমোচন করার জন্য কর্জে হাসানার ব্যাপক চর্চার মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এতে একদিকে যেমন দরিদ্র মানুষ লাভবান হবে অন্যদিকে সুদের বিষাক্ত ছোবল থেকে সমাজের মানুষকে রক্ষা করা যাবে। সুদ দেয়া-নেয়া এবং আদান-প্রদানের স্বাক্ষী হওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষেধ। মানুষের অভাব মোচনের জন্য আল্লাহ অনেক পথ খোলে দিয়েছেন। ইসলামে সব সময় হালাল রুজি খাওয়া ফরজ। ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হালাল রুজি খাওয়া। হালাল রুজি ব্যতীত ইবাদত কবুল হয় না। ইবনে মাজাহ শরীফে হযরত আবু হোরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, মেরাজের রাত্রে আমি এমন একদল লোকের নিকট গমন করলাম, যাদের উদর একটি গৃহের ন্যায় বৃহৎ। আর তার মধ্যে বহু সংখ্যক সাপ বিদ্যমান যা বের হতে দেখা যায়। আমি জিব্রাঈলকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কোন শ্রেণীর লোক? তিনি বললেন, এরা সুদখোর। যারা আল্লাহকে প্রকাশ্যে ও গোপনে ভয় করবে তারা কখনো সুদের সাথে সম্পৃক্ত হবে না। রাসূল স. বলেন, ‘সুদের গুণাহের ৭০টি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তরটি হল নিজের মা কে বিবাহ (ব্যভিচার) করা’। নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ আমাদেরকে সুদের থেকে হেফাযত করুন, আমিন।

আল্লাহর অনেক বান্দা শেষরাতে তাঁর দরবারে রোনাজারি করে সুদের করাল থাবা থেকে, কর্জের বোঝা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে প্রার্থনা করেন। তাদের মধ্যে অনেক আছেন যারা মানুষের কাছে চাইতে পারেন না চক্ষু লজ্জার ভয়ে। তারা কোন বান্দার কাছে শরমিন্দা হতে চান না। মানুষ মনে করে তারা অনেক স্বচ্ছল, কিন্তু তারা তাদের অভাবের কথা কেবল রবের কাছেই ব্যক্ত করেন। তারা কর্জে হাসানার হক্বদার বেশী। সুতরাং বিত্তবানরা আসুন সমাজে কর্জে হাসানার ব্যাপক প্রচলন করে একদিকে অসহায় বিপদগ্রস্ত মজলুম মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহায় হতে অন্যদিকে মহান আল্লাহর সাথে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়তে। যে ব্যবসায় তিনি তাঁর বান্দাকে লাভসহ বহু পরিমাণে ফিরিয়ে দেবেন, বান্দার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন, পাপ মোচন করে জান্নাত দিবেন এবং সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত করবেন। তাই আল্লাহকে কর্জ স্বরূপ আল্লাহর বান্দাদেরকে কর্জে হাসানা দিয়ে মহান আল্লাহর সাথে সুসম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরী করতে যারা প্রতিযোগিতা করবেন নিঃস্বন্দেহে তারা মো’মিন।

লেখাটি গতকাল ২১ জুলাই, শুক্রবার দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। নিচে লিংক দিলাম:

http://epurbodesh.com/index.php?date=21-07-2017&page=6


--------------------------------------------------

সূত্র:

১. shodalap.org/abdus-samad

২. www .bishorgo.com/নাবীল মুহাম্মাদ

৩. ইন্টারনেট

৪. ফিরোজ আহমাদ/www.dailyinqilab.com

৫. মুহাম্মদ বাছির উদ্দিন/মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ/whatislamsay.wordpress.com

বিষয়: বিবিধ

১৬৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File