কাপ-পিরিচের ভালবাসা........(গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ১৮ জুলাই, ২০১৬, ০৪:১৬:১২ বিকাল
কাপ-পিরিচের ভালবাসা........(গল্প)
-এ.,আর.বাহাদুর বাহার
♥♥♥♥♥
তাদের প্রথম পরিচয় গাজিপুরের কোণাবাড়িতে একটি ফ্যাক্টরীতে। পিরিচটি আরো একগাদা পিরিচের সাথে কয়েকদিন থেকে ফ্যাক্টরীর গুদামে পড়ে ছিল। হঠাৎ ঝনাৎ করে কি যেন পড়ে পিরিচের সাথে বাড়ি থেয়ে ঠুন করে শব্দ হল। পিরিচটি ভয় পেয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, কে গো তুমি, এভাবে নির্লজ্জের মত গায়ে ধাক্কা দিচ্ছ কেন?
পিরিচের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়া কাপটি বলল, সরি বোন, তাল সামলাতে না পেরে তোমার গায়ে ধাক্কা লেগেছে, ডুন্ট মাইন্ড।
ওকে, ওকে, আমি মাইন্ড করিনি। কিন্তু তুমি কে?
আমি কাপ, এই ফ্যাক্টরীতেই আমার জন্ম। গন্তব্য কোথায় কিছুই জানিনা। তুমি ?
আমি পিরিচ, তোমার মত আমারও এই ফ্যাক্টরীতেই জন্ম এবং তোমার মত আমিও জানি না আমার গন্তব্য কোথায়!
বাহঃ আমাদের দুই জনের তো বেশ মিল। আমরা কি পরস্পর বন্ধু হতে পারি না!
পিরিচঃ আমার মনের কথাটাই তুমি বললে, আসলে প্রথম দেখাতেই তোমাকে কেমন আপন আপন মনে হচ্ছিল।
কাপঃ তোমার কোলটা না, ভীষণ আরাম! তোমার সুডোল মধ্যখানটা যেন আমার সাইজেই তৈরী করা।
পিরিচঃ আমারও মনে হচ্ছিল তোমাকে আমার মধ্যখানে বসিয়ে ঘুরাতে পারলেই যেন আমার জীবন সার্থক হয়, কিন্তু......
কাপঃ কিন্তু কি?
পিরিচঃ তোমার পেটটা দেখতে যত মোটা তুমি কিন্তু একেবারেই হালকা। তোমাকে আরো ভারী হতে হবে, তবেই তোমাকে বুকে নিয়ে ঘুরতে ভাল লাগবে।
কাপঃ সেটা কোন সমস্যা নয়, আমাকে যে জন্যে বানানো হয়েছে তাতে আমি ভারী হয়েই তোমার বুকে চড়বো।
পিরিচঃ তাই যেন হয়। এসোনা বন্ধু আমরা দু'জনে দোয়া করি।
কাপঃ কি রকম দোয়া।
পিরিচঃ আমরা যে দোকানেই যাই, যে বাসাতেই যাই, যেন উভয়ে এক সাথেই থাকি।
কাপঃ আমরা যেন এক দেহ এক প্রাণ। যেন এক বাক্সতেই আমাদেরকে প্যাকেট করা হয় আমি সেই কামনা করি।
পিরিচঃ শোন বন্ধু, আমার মনে একটি স্বপ্ন আছে।
কাপঃ তাই নাকি? তাড়াতাড়ি বলনা শুনি!
পিরিচঃ আমি মনে মনে ভাবি, আমাদেরকে বাসাতে অর্থাৎ যে বাসাতে আমাদের ঠিকানা হবে ঐ বাসার যে বধুটি আমাদেরকে যত্ন করে ধুয়ে মুছে ব্যবহার করবে তার দুই হাতে যেন অনেকগুলো চুড়ি থাকে।
কাপঃ কেন, কেন, চুড়ি কেন?
পিরিচঃ চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজ আমার ভীষণ ভার লাগে। তাইতো প্রথম দেখায় তোমার গায়ে বাড়ি খেয়ে ঠুনঠুন শব্দের ছন্দে দুলায়িত হয়ে তোমার উপর রাগ না করে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম।
কাপঃ কিন্তু আমার ভয় হয়।
পিরিচঃ কেন, কিসের ভয়!
কাপঃ আমরা যে ঘরে থাকব তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে আমাদের মত ভালবাসা থাকবে তো? নাকি একজন পালং এ আরেকজন সোফাতে শুবে!
পিরিচঃ ইশ! এজন্যই আমাদের দুজনের মধ্যে এত মিল। ঠিক আমার মনের কথাটাই তুমি বলেছ।
কাপঃ স্ত্রী আপন সৌন্দর্য্যে ভালবাসার ছোয়ায় স্বামীর সামনে যখন আমাদের সাহায্যে চা এগিয়ে দেবে তখন যদি স্বামীটি অর্ধেক চা তোমাতে করে অর্থাৎ পিরিচে নিয়ে স্ত্রীর দিকে এগিয়ে দেয় তখন মনে করব আমাদের জন্ম স্বার্থক। দু'জনের ভালবাসের চুমুকে আমাদের দেহমন শিহরিত হবে, আমরা রোমাঞ্চিত হব।
পিরিচঃ তোমার কথায় আমি আবেগিত হয়ে গেলাম, আমার কণ্ঠ বাস্পরোদ্ধ হয়ে আসছে, চক্ষু মুদে আসছে। আমি আর ভাবতে পারছি না....
কাপ, পিরিচের অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি লাফ দিয়ে পিরিচের বুকের মধ্যখানে বসে পিরিচকে ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে ধরল।
=======
কাচা হাতের লেখা গল্প
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
বিষয়: বিবিধ
১২৪৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
চামুচ-কাবাব এর গল্পটা না হয় আপনিই লিখুন। ~:> 3:-O
অসাধারণ আপনার লিখুনী
বাপ ছেলে কি সৌদি আরব গিয়েছিল ?
আমরা যদি এই দুনিয়াতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করে পরকালে যদি স্বামী স্ত্রী একসাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি, তাহলে দুনিয়া নামের ফ্যাক্টরীতে আমাদের আগমনটাই সারথক হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন