পেশাজীবীদের পিক আওয়ারে ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ জরুরী
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ০৪ জুন, ২০১৬, ১০:৫৫:৪২ রাত
পেশাজীবীদের পিক আওয়ারে ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ জরুরী
পেশাজীবীদের পিক আওয়ারে বা দায়িত্ব পালন কালিন সময় ব্যক্তিগত কাজে মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সামাজিক অগ্রগতিতে প্রাণ ফিরে আসবে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।
ঘটনা-১,
ফজরের পর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে সিরিয়াল নং নেয়ার পর বলা হল সন্ধ্যা ৬টায় রোগী নিয়ে চলে আসবেন। যথা সময়ে অসুস্থ রোগী নিয়ে যাবার ৩ ঘন্টা পর রাত ৯টায় ডাক্তার আসলেন। এরপর সিরিয়াল আসতে আরো ২ ঘন্টা। রাত ১১টার দিকে যখন রোগী ডাক্তারের রুমে ঢুকলেন তখন ডাক্তার সাহেব কার সাথে যেন মোবাইলে জরুরী আলাপ করছিলেন। তিনি মোবাইলে কথা বলতে বলতেই রোগীর সাথেও কথা বলছেন। পরে এক গাদা টেস্ট লিখে দিয়ে বললেন - টেস্টগুলো অমুক জায়গা থেকে করাবেন এবং ২ দিন পর রিপোর্ট দেখে ওষুধ লিখে দিব। ৬০০ টাকা ভিজিট নিলেন এবং রিপোর্ট দেখার সময় আবার ফিস নিলেন। রোগীর মনে সন্দেহ থেকেই গেল যে ডাক্তার তো তাকে দেখার সময় মোবাইলে আরেকজনকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। তিনি আমাকে ভাল করে দেখেছেন তো? টেস্টের লিস্ট দেখে রোগী ভাবলেন মনে হয় আমার এমন জটিল অসুখ হয়েছে যেটা আমিও অনুভব করতে পারি নি।
ঘটনা-২,
ব্যাংকে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে যেই কাউন্টারে গেছেন অমনি ক্যাশিয়ারের মোবাইল বেজে উঠল। তিনি স্ত্রীর সাথে শালীর বিয়েতে কি উপহার দিবেন তা নিয়ে বিশাল লম্বা-চওড়া আলোচনা করতে থাকলেন। এদিকে গ্রাহকের লাইন লম্বা হতে হতে রাস্তায় যাবার অবস্থা সেদিকে ক্যাশিয়ার মহোদয়ের খেয়াল নেই। কিছু বলতে গেলেই উল্টা মারমুখি আক্রমন।
ঘটনা-৩
পুলিশের ডিউটি চলাকালিন সময় জনগণের জানমালের নিরাপত্তার উপর নজরদারী না করে যদি ব্যক্তিগত মোবাইলে কথা বলায় ব্যস্ত থাকে তাহলে জনগণ নিরাপত্তা কিভাবে পাবে? দেখা যায় রাস্তার মোড়ে বা বিভিন্ন পয়েন্টে ডিউটিরত পুলিশ এক একজন বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে মোবাইলে কথা বলতেই থাকে। পুলিশকে জনগণের বন্ধু বলা হলেও পারত পক্ষে এমন বন্ধুর কাছে না ঘেষাই জনগণ শ্রেয় মনে করে। আইনের লোকে বেআইনি কাজ করলে তারা অন্য লোককে আইন পালনে বাধ্য করবে কেমনে?
ঘটনা-৪
বাসায় মাস্টার আসলেন ছেলেমেয়েদের পড়াবার জন্য। বাসায় ঢুকার সময় তিনির কানে মোবাইল লাগানোই ছিল। পড়াতে বসানোর পরও কানে লাগানোই আছে। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ঈশারায় বলে যাচ্ছেন পড়তে। হয়তো কিছুক্ষণ মন দিয়ে পড়া শুরু করলেন সাথে সাথে আবার মোবাইল বেজে উঠল। নানান কিসিমের কথা, ছাত্রছাত্রীরা পড়ার ছলে মনোযোগ দিয়ে শোনছে সবকিছু। স্কুল কিংবা কোচিং সেন্টারেও একই দৃশ্য।
ঘটনা-৫
গাড়িতে কোথাও যাচ্ছেন। শর্ট জার্নিও হতে পারে আবার লং জার্নিও হতে পারে। টেম্পু, টেক্সি, কার, বাস যেটাই হোক ড্রাইভার গাড়ি চলন্ত অবস্থায় মোবাইলে কথা বলতে থাকে। নানান রকম কথা। তারা চিন্তা করে না অনেকগুলো জানের জিম্মাদারি তাদের উপর। এভাবে ইতিমধ্যে এক্সিডেন্ট করে অনেক লোক প্রাণ হারিয়েছেন। সিতাকুন্ডের ট্রাজেডির কথা জাতি কখনও ভুলবে না। খেলা দেখে আসার সময় ট্রাকের ড্রাইভার মোবাইলে কথা বলতে বলতেই গাড়ি খাদে ফেলে দিয়েছিল। নিহত হয়েছিল প্রায় ৫৭জন স্কুল ছাত্র।
উপরের পাঁচটি ঘটনার সবখানে শতভাগ এমনটি হয় তা আমি বলছি না, তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয় আমাদের। অথচ যতদুর জানি দায়িত্ব পালনের সময় পিক আওয়ারে ব্যক্তিগত কাজে মোবাইল ব্যবহারের উপর সরকারের বিধিনিষেধ আছে। কে শোনে কার কথা!
কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম মেডিকেলের আউটডোরে রোগী নিয়ে গেলাম। ১০ টাকার টিকেট নিয়ে যথাস্থানে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ করে ডাক্তার রুদ্ধদার বৈঠক করছেন। আমাদেরকে বলা হল ডাক্তার মিটিং-এ ব্যস্ত আছেন, সবাই অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আমি অধৈর্য হয়ে দরজা ঠেলে দেখি ডাক্তার ওষুধ কোম্পানীর এসআর(SR)-এর সাথে কথা বলে যাচ্ছেন। অথচ বাইরে অনেক রোগী কাতরাচ্ছে। বেলা ১টা পর্যন্ত আউটডোরের রোগীদের জন্য সময় বরাদ্ধ থাকলেও রোগীদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে এভাবে।
বলছিলাম মোবাইল বিড়ম্বনার কথা।
শুধু উপরোল্লিখিত পাঁচ ক্ষেত্রেই নয়। ট্রেন স্টেশন, গ্যাস অফিস, বিদ্যুৎ অফিসসহ আরো অনেক জায়গায় উপরোক্ত মোবাইল রোগটি বিদ্যমান। টাকার বিনিময়ে, বেতনের বিনিময়ে আমাদের মত সাধারন পাবলিকের যে সেবা পাওয়া আমাদের নাগরিক অধিকার তা কি আমরা পাচ্ছি?
এছাড়া চেয়ারম্যান, মেম্বার, কমিশনার, মেয়র, এমপির অফিসেও একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়। দেখা যায় নোটিশ পেয়ে বিচারের আশায় হাজিরা দিয়ে বসে আছেন বিচার প্রার্থীরা অথচ সময়মত আসলেও যথাসময়ে কাজ শুরু করছেন না দায়িত্বশীলরা। কিছুক্ষণ পর পর মোবাইল কল তাদের মনোযোগ নষ্ট করছে, কাজে ব্যঘাত ঘটছে। তাতে করে সময় ক্ষেপন হচ্ছে আর পাবলিকের কষ্ট বাড়ছে।
তাই বলছিলাম, পেশাজীবীদের পিক আওয়ারে বা দায়িত্ব পালন কালিন সময় ব্যক্তিগত কাজে মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সামাজিক অগ্রগতিতে প্রাণ ফিরে আসবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।
আল্লাহ ভরসা।
>
লিখাটি পত্রিকায় প্রকাশের লিংক:
http://epurbodesh.com/index.php?date=19-06-2016&page=6
বিষয়: বিবিধ
১৪০০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রমাদানের প্রস্তুতি নিয়ে চলছে ব্লগ আয়োজন। ২ জুন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৬ পর্বের ব্লগ আয়োজনের ১ম পর্ব। অংশ নিতে পারেন আপনিও। নিজে জানুন, অন্যকে জানান। বিস্তারিত জানতে-
Click this link
আউটগোয়িং কলের চার্জ বাড়ানোর সাথে ইনকামিং কলেও চার্জ বসানো উচিত ।
বাংলাদেশীরা কথা বলতে দিলে মুখে খই ফুটতে শুরু করে যার বেশীর ভাগই অপ্রয়োজনীয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন