রাসেলের ভাবনা.........(গল্প)

লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:০৯:০৫ বিকাল

রাসেলের ভাবনা

এ.আর.বাহাদুর বাহার

Good Luck

ছোট্ট একটি ছেলে, নাম রাসেল। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র, বয়স দশ বছর । যদিও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র কিন্তু ওর মায়ের মতে রাসেল একজন বিজ্ঞ লোকের মতই চিন্তা করতে পারে ।

সে ভাবে পৃথিবীকে নিয়ে, পৃথিবীর মানুষকে নিয়ে । ভাবে-পৃথিবীর মানুষ এত নিষ্ঠুর কেন । কেন মানুষ হয়ে মানুষের বুকে ছুরি চালায় !

আম্মু বলেন পৃথিবীর মানুষ একে অপরের ভাই । তাই যদি হয়- ওরা প্রতি পায়ে পায়ে এভাবে নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেয় কেন ?

কেন ওরা জায়গা জমিন নিয়ে এত মারামারি, কাটাকাটি করে ? দুই পক্ষ সামনে না গিয়ে এক পক্ষ পিছিয়ে গেলে কি সব চুকিয়ে যায় না ? না হয় দুই একটি জায়গা জমিন চলে গেলই বা: মানুষের মনে যে শান্তি ফিরে আসবে সেটাই তো বড় কথা ।

গাড়ির ড্রাইভাররা যেন কেমন ! প্রতিদিন গাড়ির তলায় চাপা দিয়ে কত যে ছেলে মেয়ে বুড়ো মেরে ফেলে তার হিসেব নেই ।সে ভাবে ওরা যখন জানেনা গাড়ি চালাতে তবে গাড়ি চালায় কেন ? পুলিশ কেন ওদের গাড়ি চালাতে দেয় ?

রাসেল ভাবে সে বড় হয়ে যদি পুলিশ হয় তাহলে সব ড্রাইভারকে নিষেধ করে দিবে গাড়ি চালাতে । যাতে তার মত আর একটি প্রাণও গাড়ির নীচে চাপা না পড়ে ।

আজ পাশের বাড়ির পলাশ ও সুমন উঠানে খেলছিল মাটির ঘর বানিয়ে। মাটির ঘরের সীমান্ত নিয়ে ওদের মাঝে ঝগড়া বেধে যায় । এক পর্যায়ে পলাশের ইটের আঘাতে ছোট ভাই সুমন জখম হয় ।

রাসেলের মামা রাজিব খুব ভাল ।শহরের কলেজে পড়ে । এখানে আসলে রাসেলকে সব সময় দেশ বিদেশের গল্প শুনায় । রাসেল মামার কাছ থেকে শুনেছে- পৃথিবীতে নাকি দেশে দেশে যুদ্ধ হয় সিমান্ত নিয়ে । তবে পলাশ আর সুমনের মত ইট পাটকেল দিয়ে নয় । বন্ধুকের গুলি দিয়ে । শত শত মানুষ নাকি গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে থাকে । ওদের রক্তে সীমান্ত রঞ্জিত হয়ে যায় দেশ-মাটি-মানুষ ।

মামার ধারণা আমাদের দেশের সাথেও যুদ্ধ বাজতে পারে ।শক্তিশালী দেশগুলো শুধু বন্ধুকের গুলি দিয়ে যুদ্ধ করে না ।বোমা ফেলে, কামান দাগে । প্রয়োজনে উড়োজাহাজে করে এটম বোমা নিক্ষেপ করে ।

এখন নাকি পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করেছে বড় বড় দেশে । এই পারমানবিক অস্ত্রের শক্তি এমন যে এর বিষক্রিয়ায় প্রতি মিনিটে মৃত্যুবরন করবে লক্ষ লক্ষ মানুষ. . . . . . . . . . . . . . রাসেল আর ভাবতে পারে না ।

যুদ্ধের কথা মনে হতেই তার বুকের ভিতর ধুপ ধুপ করে, পেঠের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে । রাসেল ভাবে বড় হয়ে সে এমন একটি অস্ত্র বানাবে যা পৃথিবীর সব দেশকে এক সাথে ধ্বংস করতে পারে । তবে সে ওই অস্ত্র কোনদিন ব্যবহার করবে না । শুধু সেটার ভয় দেখিয়ে সবাইকে যুদ্ধের কাছ থেকে দুরে সরে রাখবে । কারণ রাসেল ভীষণ শান্তি প্রিয় ।

এসব হত্যা রাহাজানি রাসেলের একেবারে অপছন্দ । রাসেল মামার কাছ থেকে শুনেছে, আমাদের দেশ নাকি একসময় পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত ছিল। পাকিস্তানীরা তখন আমাদের উপর কত অত্যচার করত। এসব অত্যচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশকে মুক্ত করেছে যে, যার আদেশে বাংগালীরা খালী হাতে ঝাপিয়ে পড়েছিল অস্ত্রের মুখে, যে এদেশের মানুষকে মুক্ত করে দেশকে স্বাধীন করে পূর্ব পাকিস্তানকে রুপান্তরিত করল বাংলাদেশে।তিনি এখন কোথায় ? দেশকে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার আগেই তাঁকে খুন হতে হল বাঙ্গালী আততায়ীর হাতে। কি নির্মম, কি মর্মান্তিক !

রাসেল ভাবে তার যদি যুদ্ধের আগে জন্ম হত তাহলে সেই মহান নেতার ডাকে দেশকে মুক্ত করার জন্য বিনাদ্বিধায় ঝাপিয়ে পড়ত। যুদ্ধের সময় সে জন্মগ্রহণও করেনি। এ সবই মামার কাছ থেকে শুনা।

রাসেলের মামা রাজিব কোন রাজনীতি করেনা। তবে যে কোন ব্যাপারে তার কাছে পাওয়া যাবে নিরপেক্ষতা, বাস্তবতা।সবসময় তিনি সত্যকেই দাম দিয়ে এসেছেন।

তিনি বাংলাদেশের বাঙ্গালী মানুষের মন-মানসিকতা সম্পর্কে বলতে যেয়ে বলেছেন- তারপর যদিও বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হল । এরপর যিনি আসলেন, তিনিও অল্প সময়ের মধ্যে কম জনদরদির পরিচয় দিলেন না। অতচ তাঁকেও জান দিতে হল গুলির আঘাতে নিষ্ঠুরভাবে।

মামার এক স্যার, নামটা জানি কি বলেছিলেন । ও হ্যাঁ মনে পড়েছে- ডা: কিউ এম ওহিদুল আলম। উনি বেশ কিছুদিন আগে ইউরোপ গিয়েছিলেন বুলগেরিয়া নামের একটি দেশে। সেখানকার বর্ণনা দিয়েছেন দৈনিক পত্রিকা আজাদীর মাধ্যমে এপ্রিল মাসের শেষ মঙ্গলবার (১৯৮৭সাল)।

লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী সুদুর ইউরোপ মহাদেশের বুলগেরিয়ার ‘বিস-তিরিৎসা’ নামক গ্রামের অধিবাসীর কাছে বাঙ্গালীদের নিয়ে একটিই প্রশ্ন-‘বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট মেরে ফেলে কেন ?’

রাসেল এখনও পত্রিকা পড়েনা । মামার কাছ থেকে একথা শুনার পর থেকে সে আশ্চর্যরকম ভাবে গম্ভীর হয়ে গেছে। সে কি সব চিন্তা করে, শুধুই ভাবনা। লেখা পড়ায় মন নেই, খাওয়া-পরা, গোসলকরা কিছুতেই তার উৎসাহ নেই। মনের মধ্যে কেমন যেন নেই নেই ভাব।

রাসেলের মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে গেছে, অনুভব করা যাচ্ছে তার অস্তিত্ব কিন্তু স্পর্শ করা যাচ্ছে না। আনমনা ভাব নিয়ে রাসেল সারাক্ষন শুয়ে থাকে তার শোবার ঘরে।

মামা শহরে, আগামী সপ্তাহে রমজানের ছুটি, তখন রাসেলের মামা বাড়ি আসবে। সে সময় রাসেল মামাকে বলবে কথাটি- যেটা সে গত এক সপ্তাহ ধরে চিন্তা করে এসেছে। যার কোন বিকল্প দেখেনি। অতচ সে ব্যাপারে মামা তাকে সবসময় নিরুৎসাহিত করে এসেছে।

হ্যাঁ, আদর্শবান মামার উপেক্ষার বস্তুকেই সে গলায় পড়ে নেবে। কারণ রাসেল আট দিন ধরে চিন্তা করে পেয়েছে-জীবনে বেঁচে থাকতে হলে, ঠিকে থাকতে হলে এই ঘুণে ধরা সমাজে। দেশকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের কবল থেকে রক্ষা করতে হলে ওটা করতে হবে।

রাসেল ঠিক করেছে আগে মামা আসুক। তারপর প্রতিবারের মত ‘বিজ্ঞান ভিত্তিক জিঙ্গাসা’ আসরটিই হবে রাসেলের সিদ্ধান্তের কথাটি বলার একমাত্র মাধ্যম। এতে হয়তো রাসেলের কিছু ক্ষতি হবে, কারণ বিজ্ঞানের আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটবে বলে। কিন্তু এই ত্যাগ স্বীকার করেও সে আনন্দ পাবে যদি সে মামার সামনে দাঁড়িয়ে নির্বিক কণ্ঠে বলতে পারে,‘‘মামা আমি রাজনীতি করব’’।

[রচনাকাল:০৯/০৫/১৯৮৭ ইং]


ব্লগে প্রকাশিত আমার আরও কয়েকটি গল্প:

Good Luckপাহাড়ের কান্না...Click this link

Good Luckকান্নার লোনাজল...Click this link

Good Luckউত্তম আবাসের ঠিকানা... Click this link

Good Luckশান্তনা.... Click this link

Good Luckওরা মায়াবিনী...Click this link

Good Luckউপস্থিত বুদ্ধি... Click this link

Good Luckআমি মুসলমান (২)... Click this link

Good Luckআমি মুসলমান (১)... Click this link

Good Luckভাই .... Click this link

Good Luck

বিষয়: বিবিধ

১৩১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File