পাহাড়ের কান্না..... (গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০১:০৮:৩৭ দুপুর
পাহাড়ের কান্না..... (গল্প)
#
আসিফের বাড়ি থেকে মাইল দু’য়েক দুরে তার জনু ফুফুর শশুর বাড়ি, সেখান থেকে আরো আধ মাইল দুরে রশি ফুফুর শশুর বাড়ি।
ছোটকালে যখন আসিফ ফুফুদের বাড়িতে বেড়াতে যেতো তখন দুটি বড় বড় খাল পার হয়ে যেতে হতো। আসলে একটি খাল সামনে গিয়ে বাঁকা হয়ে ইংরেজি ইউ বর্ণের মত ঘুরে আসার কারণে দু’বার পার হতে হতো।
শীতকালে যখন যেতো, যখন অনেকদিন পর্যন্ত বৃষ্টি হতো না, তখনও আসিফ দেখতো ডলুখালে চলমান পানি। অনেকদিন বৃষ্টিহীন থাকলেও দিনে রাতে খালে চলমান পানি দেখলে অবাকই হতো সে।
এখনও অবাক হয়।
আসিফদের এলাকায় জোয়ার ভাটার হিসাব নেই। পানি শুধু একদিক থেকে আসে, পাহাড়ের দিক থেকে। দিনে-রাতে বিরামহীন ভাবে এতো পানি আসে কোত্থেকে? বিশেষ করে যখন বৃষ্টি হয় না !
এ ছিল আসিফের কাছে এক বিস্ময় !!
অনেক খোজ-খবর নিয়ে জ্ঞানে বিজ্ঞ লোকদের কাছে সিজ্ঞাসার জবাবে যেটা সে জানতে পারলো তা হচ্ছে- ঐ সব পানি আসে পাহাড় থেকে।
অবাক কান্ড !!!
এটা হয়তো ঠিক যে নদীগুলোর উৎপত্তি পাহাড় থেকে। তাই মাঝে মাঝে আসিফের ইচ্ছে হতো নৌকা নিয়ে একেবারে পাহাড়ের পাদদেশে চলে যাবে, যতদিন লাগুক। নদীর জন্মস্থান প্রসূতী পাহাড়ী মায়ের আতুরঘরে।
ছেলেবেলার নৌকা ভ্রমনগুলো এখনও আসিফের মনকে আন্দোলিত করে। তখনও মনে অদম্য প্রশ্ন জাগতো, আচ্ছা পাহাড়ে কি শীতকালেও বৃষ্টি হয়? না, তেমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাহলে পাহাড় থেকে এতো পানি বের হয় কেমনে ?
পানি আসে বৃষ্টির মাধ্যমে, পানি আসে মাটির গভীর থেকে, পানি আসে কান্নার জল হয়ে ।
তাহলে কি পাহাড় কান্না করে? হয়তো কান্নাই করে। এত বিশাল পাহাড়, যেখানে কঠিণত্ব ও ভয়ংকরের সমাহার, যার তুলনা বিশালত্বের সাথে সম্পর্কিত, সে পাহাড় কাঁদে! এত কাঁদে যে, মাস, সপ্তাহ, দিন, ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ড সে কান্না থামায় না। অবিশ্রান্ত ভাবে সে কেঁদেই চলে। তাইতো কান্নার জল নদীর পানি হয়ে শান্তি-সুখের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে দু’উপকূলের মানুষের কাছে। মানুষের বেদনার কান্না অনেক সময় বুকের পাঁজর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
কিছু কিছু মানুষের কান্না এমন যে তা বাহির থেকে বুঝার উপায় থাকে না। যেন হৃদয়ে রক্তক্ষরন।
কয়েকদিন থেকে বুকের মধ্যে ফেনায়িত কান্না- বেদনার লোনাজল হয়ে কণ্ঠনালীতে এসে আটকে যাচ্ছিলো আসিফের। আসিফ এমন স্বভাবের ছেলে যার কান্না বাহিরে প্রকাশ পায় না। অন্তরের ভিতরটা শুধু খাঁ খাঁ করছিলো।
আসিফ দেশকে নিয়ে খুব ভাবে। মাঝে মাঝে সে আনমনা হয়ে যায়। সে চিন্তা করে, হতে পারলাম না বাবুর্চি, হতে পারলাম না বাবুর্চির সহকারী কিংবা হেলপার, কেবল খাদকের দলেই থেকে গেলাম। বেদনার লোনাজল ক্ষেভের দাবানল হয়ে স্ফুলিঙ্গের মত লাভা ছড়ার উপক্রম প্রায়।
একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে- অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর। প্রিয় দেশটির জন্য কিছু করতে মনে হয় ব্যর্থই হলাম- এটাই আসিফের টেনশন ও ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু।
আসিফের চিন্তার দিগন্তরেখা উর্ধপানে ছুটে যায়। উঁড়ে বেড়ায় আকাশে। সে বাংলাদেশের উর্ধাকাশে পাড়ি দিয়ে প্রিয় দেশটির দিকে নজর দেয়। সেখানে দেখতে পায় কেবল পাথর আর পাথর।
আসিফের আফসোস হয়; মনের গভীরের রেখাপাতের বর্ণনাগুলো যদি সে কাগজের বুকে লিখে পাঠক হৃদয়ে ফুঁটিয়ে তুলতে পারতো !!!
বিষয়: বিবিধ
১৩১২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দারুণ লিখেছেন।
না হয় বিপুল লিগ সমর্থকেরা দেশের স্বাধিনতার জন্য হুমকি হবে, ভারত কোন উছিলাই ঢুকে পরলে এরা নিশ্চুপ থাকবে।
অনেক ধন্যবাদ
আসিফের একটি ফুফু মারা গেছে । অপর ফুফু শহরে বাসা নিয়ে থাকে । আসিফও পরিবারসহ শহরে থাকে । গ্রামের যাবার ইচ্ছা হয়না আসিফের ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন