রহস্যময় সিন্দুক... ( ইনবক্স থেকে পাওয়া একটি আসমানী মেসেজ পরিবেশনা)
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ০৬ জুলাই, ২০১৫, ০১:২৬:২৮ দুপুর
হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের প্রায় এক হাজার বছর আগের ঘটনা। হযরত মূসা আলাইহিস সালামের পর বেশ কিছু দিন পর্যন্ত বনী ইসরাঈলীরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকলেও ক্রমান্বয়ে তারা সত্য থেকে বিচ্যূত হয়ে গাফেল হয়ে পড়ে । তারা শিরক বেদয়াতের মধ্যে পতিত হয়ে তাদের অন্যায় পাপ যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন আল্লাহতায়ালা তাদের শত্রুদেরকে তাদের উপর জয়যুক্ত করে দেন । সুতরাং তাদের শত্রু আমালিকারা তাদের বহু লোককে হত্যা করল, বহু বন্ধী করল এবং তাদের বহু শহর দখল করে নিল । শুধু তাই নয় বনী ইসরাঈল থেকে সেই " অঙ্গিকার সিন্দুক" ফিলিস্তিনি মুশরিকরা ছিনিয়ে নিয়ে গেল। সিন্দুকটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় বনী ইসরাঈলের মনোবল ভেঙ্গে গেলেও আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় নবীদের স্মৃতি বিজড়িত সেই বরকতময় সিন্দুকটির পাহারায় ফেরেস্তা নিয়োগ করে দিলেন।
এরও বেশ কয়েক বছর পরের ঘটনা ।
সামুয়েল নবী ছিলেন তখন বনী ইসরাঈলদের শাসক। কিন্তু তিনি বার্ধক্যে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন। তাই ইসরাঈলী সরদাররা অন্য কোন ব্যক্তিকে নিজেদের নেতা বানিয়ে তার অধীনে যুদ্ধ করার প্রয়োজন অনুভব করছিল।
একদিন বনী ইসরাঈলের সরদারগন তাদের নবীর কাছে গিয়ে বললেন, শত্রুরা একে একে আমাদের অনেক ভূমি দখল করে নিয়েছে, আমাদের সন্তানসহ মেয়েদেরকে বন্ধী করেছে । আপনি তো বৃদ্ধ হয়েছেন, আপনি আমাদের জন্য এমন একজনকে বাদশা বানিয়ে দেন যেন আমরা আমাদের ভূমি সন্তানদের উদ্ধারের জন্য সত্যের পক্ষে যুদ্ধ করতে পারি ।
নবী তাদেরকে জিঙ্গেস করলেন, ঘটনা এমন হবেনাতো যে আল্লাহ তোমাদেরকে জিহাদের ঘোষণা দিবেন আর তোমরা যুদ্ধ করবেনা ! ভেবে দেখ, এখনও আল্লাহ তোমাদের জন্য যুদ্ধ ফরজ করে দেননি কিন্তু যখন তোমাদের জন্য যুদ্ধ ফরজ করে দিবেন তখন তোমাদের অবস্থা কি হবে ? তখন তো যুদ্ধ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বা পালিয়ে যাওয়া চরম সীমালঙ্ঘন হয়ে যাবে ।
নবীর এ কথার জবাবে তারা যে দৃঢ়তা দেখিয়েছিল আল্লাহতায়ালা তা এভাবে তুলে ধরেছেন:
তারা বলল এটা কি করে সম্ভব যে, আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করব না – অতচ আমাদেরকে আমাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, আমাদের ছেলেমেয়েদের থেকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে । তারা নবীকে আস্বস্ত করল যে তারা কাপুরুষ নয় যে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে বেড়াবে ।
তাদের দৃঢ়তা দেখে নবী বললেন: আল্লাহ তালুতকে তোমাদের জন্য বাদশা নির্বাচন করেছেন ।তারা বলল তালুতের আমাদের উপর রাজত্ব করার কি অধিকার থাকতে পারে । অতচ তাঁর তুলনায় রাজত্ব করার অধিকার ও যোগ্যতা আমাদেরই বেশী ।এছাড়া তাঁর আর্থিক সঙ্গতিও নেই । ইসরাঈলীরা তাদের নবীর আদেশের বিরুধীতা করল ।
নবী বললেন, এটাতো আমার নির্বাচন নয় যে আমি তা পরিবর্তন করতে পারব । বরঞ্চ ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ হয়েছে । আল্লাহর এই নির্দেশ পালন করা তোমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য । তাছাড়া এটাতো প্রকাশমান যে তালুত তোমাদের মধ্যে একজন বড় আলেম, তাঁর দেহ সুঠাম ও সবল, তিনি একজন বীর পুরুষ এবং যুদ্ধ বিদ্যায়ও তাঁর পারদর্শীতা রয়েছে ।
প্রকৃত কথা হচ্ছে আল্লাহই সমগ্র সৃষ্টিকুলের অধিকর্তা, তিনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য ক্ষমতা দান করেন আবার যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন । কে ক্ষমতার যোগ্য তিনি তা ভাল করেই জানেন ।
বনী ইসরাঈলীরা নবীকে বলল, যদি তাঁর বাদশা হওয়ার কোন প্রকাশ্য নিদর্শন আমরা দেখতে পাই তবেই তাঁর নেতৃত্বের প্রতি আমাদের মনে অধিক শান্তি ও দৃঢ়তা আসবে ।
নবী বললেন: আল্লাহর পক্ষ থেকে তালুতের বাদশা হওয়ার নিদর্শন এই যে সেই বরকতময় সিন্দুক যার জন্য তোমরা লালায়িত হয়েই আছো তা তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে তালুতের মাধ্যমে ।
এটি সেই সিন্দুক যার প্রতি বনী ইসরাঈলীদের রয়েছে অগাধ ভালবাসা ও টান । যে সিন্দুকে রয়েছে হযরত মূসা ও হারূন আলাইহিস সালামের স্মৃতি বিজড়িত কিছু জিনিস যা বরকতের কারণ ছিল । এটি ছিল বিজয়ের সিন্দুক । যুদ্ধের সময় সিন্দুকটি বনী ইসরাঈলীরা যুদ্ধের সামনের সারিতে রাখত, ফলে তারা যুদ্ধে জয়লাভ করত ।
অঙ্গিকার সিন্দুক সম্পর্কে আরো বলা হচ্ছে-
“মূসা ও হারুণের পরিবারের পরিত্যক্ত বরকতপূর্ণ জিনিসপত্র” এই সিন্দুকে রক্ষিত ছিল। এর অর্থ হচ্ছে, ‘তূর-ই-সিনাই’-এ (সিনাই পাহাড়) মহান আল্লাহ হযরত মূসাকে পাথরের যে তখতিগুলো দিয়েছিলেন। এছাড়াও হযরত মূসা নিজে লিখিয়ে তাওরাতের যে কপিটি বনী লাভীকে দিয়েছিলেন সেই মূল পাণ্ডুলিপিটিও এর মধ্যে ছিল। একটি বোতলে কিছুটা “মান্না’ও রক্ষিত ছিল, যাতে পরবর্তী বংশধররা আল্লাহর সেই মহা অনুগ্রহের কথা স্মরণ করতে পারে, যা মহান আল্লাহ ঊষর মরুর বুকে তাদের বাপ-দাদাদের ওপর বর্ষণ করেছিলেন। আর সম্ভবত অসাধারণ মু’জিযা তথা মহা অলৌকিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হযরত মূসার সেই বিখ্যাত ‘আসা’ও এর মধ্যে ছিল।
সিন্দুকটি মুশরিকরা ছিনিয়ে নিলেও আল্লাহপাক সিন্দুকটির নিরাপত্তামূলক পাহারা দেবার জন্য ফেরেস্তা নিয়োগ করে দিলেন। এরফলে বনী ইসরাঈল সিন্দুকটি দ্বারা যে উপকার ভোগ করে ছিলেন সেই উপকার তো মুশরিকরা ভোগ করতে পারলেনই না বরঞ্চ এটি তাদের জন্য মুসিবতের কারণ হয়ে দাড়াল।
কারণ বনী ইসরাঈল থেকে সিন্দুকটি মুশরিকরা বিজয় বেশে নিয়ে গেলে কি হবে সেটা নিয়ে তারা পড়ে যায় বিপাকে । সিন্দুকটি নিয়ে তারা যে শহরে রাখে সে শহরেই মহামারি দেখা দেয়। মহামারিতে দলে দলে লোক মারা যেতে থাকে। ভয় পেয়ে তারা সিন্দুকটি অন্য শহরে পাঠিয়ে দেয়। সেখানেও মহামারি দেখাদেয় এবং লোকজন মারা যেতে থাকে। তখন সিন্দুকটিকে তাদের অন্য শহরে পাঠিয়ে দেয়া হয়, সেখানেও একই অবস্থা। এভাবে মহামারিতে পাঁচটি শহর বিরান হয়ে যায়। বনী ইসরাঈলের শত্রুরা সিন্দুকটি নিয়ে মহা বেকায়দায় পড়ে যায়। অবশেষে সিন্দুকটিকে তারা অপয়া হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এটাকে শহর থেকে বের করে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা দুটি গরুকে পাশাপাশি বেধে তাদের উপর সিন্দুকটি রেখে ছেড়ে দেয়। গরুগুলো সিন্দুক তালুতের দরজায় নিয়ে আসে। আল্লাহ বলেন, এই সঙ্গে তাদের নবী তাদের একথাও জানিয়ে দিলঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বাদশাহ নিযুক্ত করার আলামত হচ্ছে এই যে, তার আমলে সেই সিন্ধুকটি তোমরা ফিরিয়ে পাবে, যার মধ্যে রয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য মানসিক প্রশান্তির সামগ্রী, যার মধ্যে রয়েছে মূসার পরিবারের ও হারুনের পরিবারের পরিত্যক্ত বরকতপূর্ণ জিনিসপত্র এবং যাকে এখন ফেরেশতারা বহন করে ফিরছে। যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো তাহলে এটি তোমাদের জন্য অনেক বড় নিশানী। ( সূরা, বাকারা, আয়াত। -২৪৮) এভাবে হারানো সিন্দুক ফিরে পেয়ে বনী ইসরাঈলরা তালুতকে বাদশা হিসেবে মেনে নয় এবং নতুন উদোমে হারানো রাজ্য ফিরিয়ে পাবার জন্য সাহসে বুক বাধে ।
( সূত্র: সূরা আল বাকারার ২৪৬, ২৪৭, ২৪৮)
তাফসির= ফি জিলালীল কোরআন, ইবনে কাছির, তাফহিমুল কোরআন, মারেফুল কোরআন, শব্দে শব্দে আলকোরআন।
ইতিপূর্বে প্রকাশিত আরো কয়েকটি আসমানী মেসেজ পরিবেশনা হল:
কিয়ামত দিবসের পুনরুত্থানের রিহার্সাল
আল্লাহর ফোন নাম্বার, ২ ৪ ৪ ৩ ৪ (টু ফোর ফোর থ্রি ফোর)
হযরত ঈসা (আঃ) এর দোয়ায় আসমানী খাবার
অর্থসহ কোরআন অধ্যায়ন করা কতটা জরুরী
উত্তম আসাবের ঠিকানা...
বেরসিক উইপোকার ষড়যন্ত্র......
আমি একটি মেসেজ পেয়েছি
আব্বা, সব বাড়িতে একই সেইম, চাচার বাড়ি কোনডা ?
ফুফুর স্নেহ, আদর, মহব্বত
শান্তনা
%%
বিষয়: বিবিধ
২৬০৫ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লেখককে অনেক ধন্যবাদ, মেসেটি অতীব সুন্দররূপে পরিবেশন করার জন্য..
আবারো ধন্যবাদ, লিখুন আরো বেশি বেশি..
এজন্যই তারা অভিশপ্ত হয়ে আছে
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
এখানে দরকার প্রত্যেকটি মুসলমানের সিন্দুক পরিমান ঈমানী শক্তি ।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
বেশ ভালো লাগলো জাজাকাল্লাহু খাইরান।
প্রচন্ডরকম ব্যাস্ততার সাথে সময় কাটছে!
কুরআন তিলাওয়াতে ফাকি দিয়ে এখন ব্লগে ঢু দিলাম।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
এই সিন্দুক নাকি এখনও ইথিওপিয়াতে সংরক্ষিত আছে!
একজন বললেন ফিলিস্তিনে আছে।
কোন সূত্র আছে.?
মন্তব্য করতে লগইন করুন