হযরত ঈসা [আ:] এর দোয়ার বরকতে আল্লাহ আসমান থেকে খাবার পাঠালেন
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২০ জুন, ২০১৫, ০৩:৫৮:০২ দুপুর
হযরত ঈসা [আ:] এর দোয়ার বরকতে আল্লাহ আসমান থেকে খাবার পাঠালেন
#
আল্লাহ পাক দুনিয়াকে প্রলংকারী কিয়ামতের মাধ্যমে ম্যাসাকার করে দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় পর, অত:পর একদিন পৃথিবী বিদীর্ন হবে এবং লোকেরা তার ভেতর থেকে বের হয়ে জোর কদমে ছুটতে থাকবে। এরূপে হাশর সংঘঠিত করে সেখানে সকলকে একত্রে জমায়েত করা হবে।
সেদিন বিচার দিবসের মালিক হাশরের ময়দানে রাসূলগনকে একত্রিত করে জিঙ্গেস করবেন : তোমরা কি জবাব পেয়েছিলে? অর্থাৎ রাসূলগন নিজ নিজ উম্মতের কাছে রবের পয়গাম পৌছানোর ফলে উম্মতের পক্ষ থেকে কি জবাব পেয়েছিল- এটাই সেদিন আল্লাহপাক জানতে চাইবেন।
অত:পর রাসূলগন সেদিন রবের সামনে এতই ভীত সন্ত্রস্ত থাকবেন যে আল্লাহর প্রশ্নের জবাবে উনারা বলবেন: আমরা কিছুই জানিনা ! রসূলগন বলবেন, আপনি তো আলেমূল গায়েব! সুতরাং সত্যটা তো আপনার জ্ঞানের মধ্যেই.... এখানে রাসূলগনের এমন অসহায়ত্ব দেখে প্রত্যেক রাসূলের উম্মতের হৃদকম্পন শুরু হয়ে যাবে। আর রাসূলগন তো জানেন যে এখানে দুনিয়ার মত ধারনা বা অনুমানের ভিত্তিতে বিচারকার্য হবে না।
এখানে প্রত্যেকের চুল চেরা কার্যকলাপ হিসেবে আনা হবে। রাসূলগন উম্মতগনের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে সেদিন আল্লাহ কে এমন জবাব দিবেন। সেদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে রসূলগনের প্রতি জবাবদিহীতার আলামত দেখে হাশরের ময়দানের বিচার কার্যের ভয়াবহতা উপলদ্ধি করতে পেরে উম্মতগনের কলজের পানি শুকিয়ে যাবে..।
সেদিন আল্লাহ পাক হযরত ঈসা [আ:] কে জিঙ্গেস করবেন : হে ঈসা ইবনে মারইয়ম! তোমাকে ও তোমার মাকে যে নিয়ামত দিয়েছি তা স্মরন কর.....।রহুল কুদুস বা পবিত্র আত্বা দিয়ে তোমাকে সাহায্য করেছি ।তুমি দোলনায় থাকতেই এবং প্রোঢ় হয়েও লোকজনের সাথে কথা বলেছো।
এখানে হযরত ঈসা [আ:] দোলনায় থাকতে শিশু অবস্থায় যেমন লোকজনের সাথে কথা বলেছিলেন আল্লাহর হুকুমে তেমনি আবার শেষ জমানার দিকে আসমান থেকে এসে প্রোঢ় অবস্থায়ও লোকজনের সাথে কথা বলবেন। কথা বলার দুই অবস্থা-ই হল আল্লাহর পক্ষ হইতে মু'জিজা।
আল্লাহ পাক হযরত ঈসা [আ:] কে আরো বলবেন: তোমাকে কিতাব, কৌশল বা জ্ঞানের কথা, তওরাত, ইঞ্জিল শিখিয়েছি......।
আমার হুকুমেই তুমি মাটি দিয়ে পাখির আকার তৈরী করতে আর ঐ পাখির মূর্তি আমার হুকুমেই পক্ষী হয়ে উড়ত....।আর তুমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আমার হুকুমেই সারাতে...।মৃতকে আমার হুকুমেই জীবিত করে দাড় করাতে...।
আমি বনী ইসরাইলকে তোমাকে হত্যা করা হইতে বিরত রেখেছি...।যখন তুমি বনি ইসরাইয়ীলীদের কাছে পরিস্কার নিদর্শন উপস্থাপন করলে তখন ওদের মধ্য হইতে কাফিররা বলল: এ-তো যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়....।এরাইতো দূর্ভাগাদের অন্তর্ভূক্ত....।
আমি হাওয়ারীদের আদেশ করলে তারা বলল : ঈমান আনলাম। আপনি সাক্ষী থাকুন, আমরা মুসলমান।
হাওয়ারীরা যখন বলল : হে ঈসা ! তোমার রবের আসমান থেকে খাবার পাঠাবার ক্ষমতা আছে কি ?
ঈসা [আ:] বললেন : আল্লাহ কে ভয় করো যদি মোমিন হও...। আল্লাহ কে পরীক্ষা করতে যেওনা.. আল্লাহ যে প্রাকৃতিক নিয়মের বিধান করে দিয়েছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকো... যদি বিশ্বাসী হও। হাওয়ারীরা বলল: আল্লাহর পাঠানো আসমানী খাবার খেয়ে প্রশান্তি পেতে চাই...।যেন আমরা লোকদেরকে বলতে পারি যে আমরা এই রূপ মো'জেজা দেখিয়াছি। ফলে অন্যান্য লোকের সম্মুখে আপনার নবুয়তের প্রমান হইয়া যায় এবং ইহা তাহাদের হেদায়েতের উপায় হইয়া যায়।
হযরত ঈসা [আ:] হাওয়ারীদিগকে বলিলেন- আল্লাহর জন্য ৩০ রোজা রাখিয়া যাহা ইচ্ছা চাহিতে পারো। তাহারা রোজাগুলো রাখিয়া বলিল- কাহারো কাজ করিলে আমরা খাবার পাই। সুতরাং আল্লাহর জন্য রোজা রাখিয়াছি....। আপনি আসমান থেকে সরাসরি আমাদের জন্য খাবার পাঠাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন।
অত:পর হযরত ঈসা [আ:] বললো : হে আল্লাহ! আপনি তো আমাদের প্রতিপালক। আমাদের সকলের জন্য খাবার পাঠাও যেন আমাদের বর্তমান ও পরের সকলের জন্য আনন্দের ও আপনার পক্ষ থেকে নিদর্শন স্বরূপ হয়। আমরা রিজিক চাই.. কারণ আপনি তো মহান রিজিক দাতা...।আল্লাহ পাক জবাবে বললেন : তোমাদের জন্য রিজিক পাঠাবো, কিন্তু এরপরেও অবাধ্য হলে তাকে তেমন সাজাই দেবো যা জগতের আর কাউকেই দেবো না।
অত:পর হযরত ঈসা [আ:] এর দোয়ার পর দুই খন্ড মেঘের মধ্যস্থলে ভর করে লাল আবরনে ঢাকা খাদ্যের খাঞ্জা আসিল। ঈসা [আ:] বললেন : হে আল্লাহ, আমাকে শোকর কারীদের অন্তর্ভূক্ত করুন। অত:পর বিসমিল্লাহ বলিয়া আবরন উঠাইতেই দেখিলেন, ভাজা মাছ, ঘৃতে চপচপে নানা রং এর ব্যঞ্জন ও রুটি গোশত ইত্যাদি। জনৈক শিষ্যের প্রশ্ন অনুযায়ী তিনি একটি মাছে ফুঁ দিতেই উহা লাফাইতে লাগিল, আবার ফুঁ দেওয়া মাত্র পূর্ববৎ হইয়া গেল।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ঈসা [আ:] কে বলবেন- হে ঈসা! তুমি কি লোকজনকে বলেছ যে আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার মাকে উপাস্য হিসেবে মেনে নিতে?
ঈসা [আ:] বললেন: পবিত্রতা শুধু আপনারই জন্য নির্ধারিত। আমার পক্ষে ঐ রকম ঐদ্ধ্যত্যপূর্ন কথা বলা যেমন শোভন নয়, তেমনি আমার অধিকার ও নেই। যদি বলতাম তাহলে অবশ্যই আপনি তা জানতেন ... ।
কেননা আমার মনের সব কিছু আপনি জানেন, কিন্তু আমি আপনার জ্ঞানের খবর কিছুই জানিনা... এমন কি আপনি অপ্রকাশ্য বিষয়াদী ও ভালমত জানেন...।
হযরত ঈসা [আ:] নিজের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে আরো বলবেন- আপনার নির্দেশের বাইরে আমি তাদেরকে কিছুই বলিনি... তাদেরকে বলেছি তোমাদের রবের ইবাদত করো... যিনি তোমাদেরও রব আমারও রব।
হযরত ঈসা [আ:] আরো বলবেন- যতদিন তাদের কাছে ছিলাম ততদিন তাদের সম্বন্ধে জ্ঞাত ছিলাম। অত:পর যখন আপনি আমাকে তুলে নিলেন, তখন আপনিই তো তাদের নিয়ন্ত্রন করেছেন। এসবের স্বয়ং আপনিই স্বাক্ষী।
আপনি যদি তাদেরকে সাজা দেন, তবে তারা তো আপনারই দাস বা গোলাম। অত:পর যদি ক্ষমা করেন তবে আপনিই পরাক্রান্ত, কৌশলী। তাহাদিগকে ক্ষমা বা শাস্তি আপনার যাহা ইচ্ছা তাহাই করিতে পারেন।
প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন হযরত ঈসা [আ:] আল্লাহর এত প্রিয় এবং অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদার একজন রসূল হওয়া সত্বেও হাশরের ময়দানে কত কাকুতি মিনতি, অনুনয় বিনয় করিয়া আল্লাহর সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করিতে তৎপর। তাহলে আমাদের মত সাধারন বান্দার অবস্থা কি হইবে একবার ভাবিয়া দেখুন তো....
আল্লাহ বলিবেন আজ সেই দিন, যেদিন সত্যকে গ্রহনকারীদের উপকারে আসবে। তাদের জন্য এমন চিরস্থায়ী জান্নাত যার নিম্নদেশ দিয়ে স্বচ্চ ঝর্নাধারা প্রবাহিত হতে থাকবে। সেখানে তাহারা অনন্তকাল থাকিবে। মহান আল্লাহ ঐ সব জান্নাতীদের উপর সন্তুষ্ট থাকবেন আর তারাও আল্লাহর রবোবিয়তের উপর সন্তুষ্ট থাকবে। আর এই সাফল্যই তো চুড়ান্ত সাফল্য... ।
গগনধারা ও এর মাঝের সব কিছুর উপর রাজত্ব তো আল্লাহর। তিনি যে সর্ববিষয়ে সর্বময় ক্ষমতার অধিশ্বর... যিনি আমার-আপনার, ইহকাল-পরকাল, জ্ঞাত-অজ্ঞাত সকল কিছুর মালিক।
[একটি আসমানী মেসেজ পরিবেশনা। আল কুরআনের সুরা মায়েদার ১০৯ নং আয়াত থেকে ১২০ নং আয়াত অবলম্বনে।]
তথ্যসূত্র ;
১] আল কুরআনুল হাকিম- মাওলানা আমীমুল ইহসান, মাওলানা আবদুল্লাহিল বাকী, এ এফ এম এ মান্নান অনুদিত।
২] হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী [র:] কর্তক বঙ্গানুবাদে কোরআন ।
৩] ইসলামী ফাউন্ডেশান কর্তৃক অনুবাদকৃত আল-কুরআনুল করীম।
৪] পবিত্র কোরআনুল করীম। মূল: তফসীর মারেফুল কোরআন। অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ( সৌদি বাদশার পৃষ্টপোষকতায় মদীনা মনোয়ারা থেকে প্রকাশিত।)
৫] তাফহীমূল কোরআন : সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রঃ)।
বিষয়: বিবিধ
১৫১৭ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটি কথা বুঝলাম নাঃ কুরআনে হিন্দুদের পরিভাষা এলো কি করে? এরাইতো কপাল পোড়া..
এরাই তো দূভাগা বললে বেশি মাননসই হয়। ধন্যবাদ
কুরআনে হিন্দুদের পরিভাষার আসার কথা বলছেন কেন?
'কপাল পোড়া' কথাটি লেকখের আঞ্চলিক পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। দূর্ভাগাও ঠিক আছে। মূলত দুটিই সমার্থক শব্দ বলে মনে করি।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ
"এতো যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।"
- এটা কুরআনের আয়াত
কপাল হল হিন্দুদের গীতার ভাষা। যেমন কপাল খারাপ, কপালে নেই, কপাল পোড়া, কপাল ভালো ইত্যাদি।
হিন্দু সন্তান জন্মের ৭ম দিন ইশ্বর ওদের কপালে লিখেদেন মৃত্যু পর্যন্ত ভালোমন্দ যা কিছু হবেই সবই। এটা ওদের ধর্মীয় বিশ্বাস।
মুসলিমরা তাক্বদীরে বিশ্বাসী। কপালে নয়। ধন্যবাদ ভাইয়া।
এডিট করেছি।
ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন