অর্থসহ বুঝে কোরআন অধ্যয়ন করা কতটা জরুরী
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ১৯ জুন, ২০১৫, ১২:৩৬:১০ রাত
অর্থসহ বুঝে কোরআন অধ্যয়ন করা কতটা জরুরী:
♣ সূরা আল বাকারা ৩৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন-
আমি হুকুম করলাম, তেমরা সবাই নীচে নেমে যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌছে তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্ত্রস্ত হবে।
দেখা যাচ্ছে আল্লাহ আদম [আ:] ও হাওয়া [আ:] কে বেহেস্ত থেকে দুনিয়ায় পাঠাবার সময়ই বলেছিলেন যে সেখানে (দুনিয়ায়) কিভাবে চলবে সে আদেশ আমি পরবর্তীতে সময়ে সময়ে পাঠাবো।
যারা মানবে তারা সফল, যারা মানবেনা তারা ব্যর্থ।
তাহলে এবার আসুন আল্লাহর পাঠানো সেই নির্দেশ যদি আমরা বুঝতেই না পারি তাহলে মানা নামানার প্রশ্ন কিভাবে আসবে ?
একজন সাধারন ব্যক্তি ও স্বীকার করবে যে মানতে হলে আগে পড়ে বুঝতে হবে।
একজন লোক কোরআন থেকে আরবিতে পড়লেন - وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً
লোকটি উপরোক্ত আয়াতটি আরবিতে পড়লেন বটে কিন্তু কি পড়লেন কিছুই বুঝলেন না। লোকটির অন্তর ঐ আয়াত টা পড়ার আগে যেরকম ছিল তা পড়ার পরও সেরকমই থেকে গেল।
আরবিতে কোরআন তেলাওয়াত করার কারনে নিশ্চয় লোকটি অক্ষর প্রতি দশটি নেকী পেয়েছেন। লোকটির সওয়াব বৃদ্ধি পেল বটে কিন্তু আল্লাহপাক যে সেই আয়াতে মানুষকে উদ্দেশ্য করে একটা কিছু বলেছেন, সেই বলার মধ্যে মানবজাতির জন্য কল্যান নিহীত ছিল। ঐ কল্যান থেকে লোকটি মাহরুম থেকে গেলেন তা না বুঝার কারনে।
অন্যদিকে অপর ব্যক্তি যখন ঐ আয়াতের অর্থ পড়ে জানল যে সেখানে আল্লাহ পাক বলেছেন -
♣ তোমরা ব্যাভিচারের কাছেও যেওনা, কারন এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্টতম পথ।
এটা পড়ে বুঝার সাথে সাথে তার অন্তরাত্মা কেপে উঠল। স্বয়ং আল্লাহ যেটা করতে নিষেধ করেছেন সেটা বুঝতে পেরে সে বারে বারে নিকৃষ্টতম কাজ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে লাগল। আর আল্লাহ তো বান্দার ডাকে সাড়া দিবেনই।
তাহলে দেখেন যে কোরআনের অর্থ বুঝে পড়েছে আর যে বুঝে পড়ে নাই উভয়েই কি সমান হল ?
আপনারাই বলুন।
♣ সূরা আন আম এর ৫০ আয়াতে আল্লাহ বলেন : অন্ধ ও চক্ষুস্মান কি এক ?
♣ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ** যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি সমান হতে পারে ? (সূরা যুমারঃ ০৯) **
♣ অবশ্যই তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকা দরকার যারা সৎকাজের আদেশ দেবে অসৎ কাজে বাধা দেবে.... (আলে ইমরান: ১০৪)
♣ রাসুল (সাঃ) বলেছেন: طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ، অর্থাৎ, ইলম শিক্ষা করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ। (ইবনে মাজাহ)
♣ আবার সূরা কাহফ এর ৫৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন : এই কোরআনে মানুষের জন্য উপমা উল্লেখ করেছি, কিন্তু মানুষ বহু ব্যাপারেই ঝগড়াটে।
আল্লাহ পাক নিজেই যেখানে বলেছেন কোরআনের মধ্যে মানুষের জন্য উপমা উল্লেখ করেছেন।
সেখানে আল্লাহর উল্লেখ করা উপমাগুলো কি আমাদের খুজে খুজে বের করা উচিত নয় ? তাহলে আমরা অর্থসহ অনুবাদ বুঝে না পড়লে সে উপমাগুলো খুজবো কেমন করে ?
এছাড়া আমরা প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজে যে সূরা, দরুদ, তাসবিহ, দোয়া ইত্যাদি পড়ছি এগুলোর অর্থ কি আমাদের পড়া উচিত নয় ?
সূরা ফাতেহার অর্থ,
আত্তাহিয়্যাতুর অর্থ,
দরুদ শরীফের অর্থ,
দোয়া কুনুতের অর্থ
তাসবিহ সমূহের অর্থ জেনে বুঝে বুঝে যদি নামাজ পড়া হয় সে নামাজ মানুষের জীবন ধারাই পাল্টে দেবে।
নামাজ যদি অশ্লীলতা মুক্ত করার মাপকাঠি হয়ে থাকে তাহলে নামাজ পড়ে ও কিভাবে মানুষ বেনামাজীর মতই পাপ করে ? নামাজে আসর হচ্ছে না কেন ?
এখানে অন্যান্য বিবিধ কারন থাকতেই পারে তবে অর্থ বুঝে বুঝে নামাজ পড়লে একজন মুসলমানের অন্তরে খোদাভীরুতা পয়দা হতে বাধ্য।
আমি একজন সম্পূর্ন বাংলা মানুষ ইহা আগেও বিভিন্ন লেখাতে বহুবার বলেছি। একজন আলেমের মত করে যুক্তি, তর্ক, কোরআন, হাদিস, ফেকাহ শাস্ত্র দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী।
কোরআন আল্লাহর দেয়া পথনির্দেশক। এই পথ নির্দেশিকা মেনে চললেই আমাদের আদী বাসস্থান, আমাদের আতুর ঘর, মাতৃসদন, চির শান্তির ঠিকানা জান্নাতে পৌছা যাবে একথা নিয়ে আমি ইতিপূর্বে ও পোষ্ট করেছিলাম।
তাহলে আপনারাই বলুন কোরআন অর্থসহ অনুবাদ খতম দেয়া কতটা জরুরী।
এছাড়া কোরআনের অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেছেন : তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও, অসৎ কাজে নিষেধ কর।
আপনি যদি কোরআন শরীফের অর্থ না বুঝেন তাহলে সৎ ও অসৎ কাজ চিনবেন কি করে। চিনার পরইতো আদেশ ও নিষেধের প্রশ্ন আসবে।
কোন বাংলাদেশী যখন সৌদি আরব বা অন্য কোন দেশে যায় তাহলে সে দেশের ভাষা রপ্ত করতে চেষ্টা করে কেন ?
যারা সে দেশের ভাষা জানে ও যারা জানেনা তারা কি সমান ?
সৌদি আরবে একজন বাঙ্গালীর দোকানে আরবী ও ইংরেজী জানা কর্মচারী ও তা না জানা কর্মচারীর কি সমান গুরুত্ব ?
কোরআন শরীফ হযরত মোহাম্মদ [স:] এর উপর নাজিল হয়েছিল । আরবের ভাষা আরবী ছিল, হযরত মোহাম্মদ [স:] এর ভাষাও আরবী ছিল। আবার যাদের কাছে কোরআনের দাওয়াত এসেছিল তাদের ভাষাও আরবী ছিল। আরবী সহজ ভাষা এবং আরবী আল্লাহর ও ভাষা।
অনারব মুসলমানকে ও আরবী ভাষায় বুৎপত্তি অর্জন করতে হবে শুধুমাত্র কোরআন পড়ার সাথে সাথে তা বুঝে হৃদয়ঙ্গম করার জন্য। তা এমন ভাবে বুঝতে হবে যাতে অন্যদেরকে বুঝানো যায়।
আরবী ভাষার উপর যদি এভাবে বুৎপত্তি অর্জন করা সম্ভব না হয় তাহলে নিজ মাতৃভাষায় অনুবাদ কৃত -
♣ কোরআন পড়ে তা বুঝতে হবে।
♣ কোরআনকে বুঝতেই হবে।
♣ জানার জন্যই বুঝতে হবে।
♣ মানার জন্যই বুঝতে হবে।
♣ চলার জন্যই বুঝতে হবে।
♣ নিজেকে এবং অপরকে শিক্ষা দেবার জন্যই বুঝে পড়তে হবে।
♣ সৎ কাজ নিজে করে অন্যকে তা করতে উৎসাহিত করার জন্য কোরআন অর্থসহকারে বুঝে পড়তে হবে।
♣ অসৎ কাজ থেকে নিজে পরহেজ থেকে অন্যকে নিষেধ করার জন্য কোরআন বুঝে পড়তে হবে।
এলম কি শুধু অর্জন করলে হবে ? তা আমল করতে হবে না ? আর আপনি যদি কোরআন না বুঝেন তাহলে আমল করবেন কিভাবে ?
♣ সে ব্যাক্তিই উত্তম যে নিজে কোরআন পড়ে ও অন্যকে কোরআন শিক্ষা দেয়।
এখানে আমি বলব আমাদের মাঝে একটি ভূল ধারনা প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে আর তা হচ্ছে-
আলিফ লাম যবর = আল
হা মিম যবর = হাম =আলহাম
দাল পেশ = দু
আলহামদু
এভাবে আরবী শিখিয়েই আমরা নেকীর ষোল কলা পূর্ন করে চলেছি।
আজকে নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে।
আবার, বাচ্চাদের ইংরেজী কিভাবে শিক্ষা দেয় দেখুন-
M a n g o = ম্যাংগু, ম্যাংগু অর্থ আম।
তাহলে একজন ছাত্র Mango শিখার সাথে সাথে তার মনের মধ্যে গেথে যাচ্ছে সে আমের ইংরেজী নাম শিখেছে।
এভাবে একজন মুসলমানের ছেলে যখন 'আলহামদু' শিখেছে তখন সাথে সাথে ওর এটাও শিখা উচিত ছিল যে 'আলহামদু' মানে প্রশংসা।
''আলহামদুলিল্লাহ'' মানে আল্লাহর প্রশংসা।
এ প্রসঙ্গে আমার একটি কথা মনে পড়ে গেল। তখন কলেজে পড়ি। আমার প্রিয় বন্ধু মুহম্মদ শফিকুল আলম যিনি বর্তমানে সৌদি আরব প্রবাসী। তার সাথে দেখা হলে যখন জিঙ্গেস করতাম কেমন আছো ? সে বলত- আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে অনেক দিন পর্যন্ত একই জবাব দেবার পর আমি একদিন রেগে গেলাম। ওকে বললাম- যখনই তোমাকে জিঙ্গেস করি তুমি কেমন আছো ? তুজি জবাব দাও- আলহামদুলিল্লাহ ! এটা কেমন জবাব হল। তুমি ভাল থাকলে ভাল, খারাপ থাকলে খারাপ এভাবেই উত্তর দিবে। তখন সে নিরব ভূমিকা পালন করেছিল। পরে যখন আমি এর অর্থ বুঝেছিলাম তখন নিজে নিজেই লজ্জা পেয়েছিলাম।
ছোট কালে ফোরকানিয়াতে নামাজের জন্য বারটি সূরা মুখস্থ শিখাবার সময় অন্তত এর অর্থসহ যদি শেখানো হত তাহলে এই বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না।
এখন তো মনে হয় ফোরকানিয়ায় যাদের কাছে পড়েছিলাম তারাই এর সঠিক অর্থ জানতো কিনা সন্ধেহ...।
২০০ বছর ইংরেজদের গোলামী করার সময় মুসলমানরা ধর্মের দোহাই দিয়ে ইংরেজী শিক্ষা থেকে নিজেদেরকে পরহেজ রেখেছিল।
আমার মনে হচ্ছে সে সময় থেকেই কোরআনকে অনুবাদ করে অর্থসহ বুঝে পড়ার উপর নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অবশ্য সে সময় বাংলাভাষায় কোরআন অনুবাদ হয়েছিল কিনা আমি জানিনা।
এখানে কোরআন বুঝে পড়ার উপর কারা বেশী নিরুৎসাহী ভূমিকা রেখেছেন আমি সে তর্কে যাব না। আপনাদেরকে ও ঐ দিকে না যাবার জন্য অনুরোধ করবো।
আমার কথা হচ্ছে দীর্ঘ আলোচনায় যদি আমরা বুঝতে পারি যে কোরআনের অনুবাদ অর্থসহ বুঝে পড়া দরকার তাহলে আজ থেকেই আমরা তা শুরু করবো।
যারা ইসলামী আন্দোলন করেন তারা নির্দিষ্ট কয়েকটি কোরআনের আয়াত অর্থসহ মুখস্থ করে রাখেন। যে বিষয়ের উপর দাওয়াত বা বত্তৃতা দিতে হবে সে বিষয়ের উপর স্টাডি করেন বেশী।
তারপরও বলব- ওনারা মোটামোটি কোরআন চর্চা করেন বলেই নিজের বিবেকের মধ্যে একটি তাড়না অনুভব করেন। ঘরে বসে থাকতে পারেন না। ঈমানদারদের জন্য কোরআনের আহবান মধুর চেয়েও মিষ্টি।
তবে এই আন্দোলন কারীদের মধ্যেও কতভাগ স¤পূর্ন কোরআন বাংলা অর্থসহ খতম দেওয়া লোক আছে তা কিন্তু অনুমান করা যাচ্ছে না। তবে খুব বেশী পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
তবে এটা ঠিক যে ইসলামী আন্দোল যারাই করছেন তারা সবাই কোরআনের অর্থবুঝে এর আহবানে সাড়া দিচ্ছেন।
আজ থেকে ২০/২২ বছর আগে ও অনেক আলেম ওলামা ইসলামে রাজনীতি নেই বলে গলা ফাটিয়েছেন। আবার এখন দেখা যায় ওনারাই আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দল করে ইসলামী আন্দোলন করছেন। রাজপথ কাপাচ্ছেন। সত্যকে কতদিন গলা টিপে ধরা রাখা যায় ?
♣বেলুনের মধ্যে গ্যাস ভরলে সে উর্দ্ধমূখী হবেই...
♣হাঁসের বাচ্চাকে পানিতে ফেললে সে ভেসেই উঠবে...
আজকে বিশ্বের সকল মুসলমানদের কাছে নিজ নিজ মাতৃভাষায় অর্থসহকারে কোরআন অধ্যায়ন করাটা সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পবিত্র কোরআনকে তেলাওয়াত করে চুমা দিয়ে জোরদান পরিয়ে কার্নিশে তুলে রাখার দিন শেষ। কোরআন তো নিজেই অশ্রু বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে হাজার বছরের ও বেশী সময় ধরে...
আল্লাহর রাসূল [স:] বিদায় ভাষনে বলেছিলেন : আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে- আল্লাহর কালাম অপরটি আমার সুন্নাহ... তোমরা যতদিন ঐ দুটি জিনিস আকড়ে ধরে থাকবে ততদিন তোমরাই দুনিয়া নেতৃত্ব দিবে।
কোরআন এবং হাদিসকে মুসলমানেরা যতদিন বুকে ধারন করে রেখেছিল ততদিন ঠিকই মুসলমানেরা দুনিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছে।
যখনই মুসলমানেরা কোরআনকে বুক থেকে কার্নিশে তুলে রেখেছে তখন থেকেই মুসলমানদের পতন শুরু হয়েছে...।
কোরআনকে তো কার্নিশে হলেও রেখেছে, হাদিসকে ঘরের মধ্যেও রাখেনি। আজ কজন মুসলমান তাদের ঘরের মধ্যে একটি হাদিসের গ্রন্থ দেখাতে পারবেন ?
হুমায়ুন আহমেদ আর রবীন্দ্র সমগ্র মুসলমানের ড্রয়িং রুমের শোভা বর্ধন করে।
অনেকে অবশ্য বলতে পারেন কোরআন অর্থসহ বুঝে পড়তে হবে এরকম আয়াত তো কোরআনে নেই। তাদের বক্তব্যের জবাব হচ্ছে- কোরআন যখন নাজিল হচ্ছিল তখন সংশ্লিষ্ট সকলের মাতৃভাষা আরবী হওয়ার কারনে সকলেই সাথে সাথে তা বুঝে যাচ্ছিলেন। বুঝতে যেখানে সমস্যা হচ্ছিল স্বয়ং রাসূল [স:] সকলকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
এখন তো আমরা রাসূল [স:] এর হাদিস বাংলাতেই পড়ি। এছাড়া ইসমা, কিয়াস, ফিকাহ এমনকি উর্দূ সাহিত্য ও অনুবাদের উছিলায় বাংলাতেই পড়ি। তাহলে কোরআনের বেলায় ব্যতিক্রম কেন ? কোরআন কেন শুধু আরবীতেই তেলাওয়াত করতে হবে ? আমি অবশ্যই কোরআন আরবীতে তেলাওয়াতের বিরুধীতা করছি না।
আমি বলতে চাচ্ছি যে বুঝে পড়ার ব্যাপাওে অন্যসব গ্রন্থের চেয়ে কোরআনকে তো সকলের আগে রাখা উচিত ছিল অতচ আমরা কোরআনকে সকলের পেছনে ফেলে রেখেছি। এটা কি কোরআনের প্রতি আমাদের অতিভক্তির কারনেই .. ?
সারা বিশ্বের প্রত্যেকটা মুসলমানের নিজ নিজ মাতৃভাষায় অনুবাদকৃত অর্থসহ কোরআন অবশ্যই পড়তে হবে। পড়তে হবে শুধু তা নয়, অধ্যয়ন করতে হবে।
পড়তে দশগুন সওয়াব হলে অধ্যয়ন করলে এর চেয়ে অনেক অনেক বেশী সওয়াব পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
মহান আল্লাহর আমার ভূলত্রুটি ক্ষমা করে আমাদের সকলকে নেক হেদায়াত দান করুন । আমীন।
.................................................
[এই লেখাটি অনলাইন মিডিয়া ‘সোনার বাংলাদেশ ব্লগ’ এ জনৈক বিজ্ঞ ব্লগার কে উদ্দেশ্য করেই লিখেছিলাম। ২০১২ সালের আগষ্ট মাসে অনলাইনে একটি জরিপ দিয়েছিলাম। জরিপের বিষয় বস্তু ছিল অর্থসহ কোরআনের বাংলা অনুবাদ খমত। সেই জরিপের সমর্থনে ব্লগে একটি পোষ্ট ও দিয়েছিলাম। উক্ত পোষ্টে ব্লগার ভাইটি আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন। উনার প্রশ্নছিল কোরআন তেলাওয়াত করলে সওয়াব আছে জানি, কিন্তু অর্থ সহ পড়লে সওয়াব পাওয়ার ব্যপারে উনি দলিল চেয়েছিলেন। উনার প্রশ্নটির উত্তর বিষদ বর্ননাসহ দেওয়া দরকার ছিল বিধায় আমি আলাদা ভাবে এই লেখা লিখেছিলাম। এরপরঐ ব্লগারকে আমি বলেছিলাম আমার যুক্তি তর্ক আপনার কতটুকু মনপুত হয়েছে সেটা ও জানিনা।....... আচ্ছা মনে করুন আপনি জুনিয়র স্কুলে হোষ্টেলে থেকে পড়ালেখা করছেন। দীর্ঘ দিন থেকে বিদেশে থাকা আপনার প্রিয় বাবা আপনার নামে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিটি ভিন্ন ভাষায় হওয়ায় উচ্চারন করে পড়তে পারলেও আপনি ঐ চিঠির মর্মার্থ বুঝেন না। সেজন্য তাড়াতাড়ী হোষ্টেল সুপারের কাছে দৌড় দিলেন ওটার মর্মার্থ বুঝার জন্য । আপনার তর সহ্য হচ্ছিল না কারন আপনার বাবা চিঠিতে কি লিখেছেন তখনও পর্যন্ত আপনি জানেন না। এভাবে আল কোরআনের ক্ষেত্রেও চিন্তা করলে আমার মনে হয় বুঝতে আরো সহজ হবে। আপনি কিন্তু আমার অনেক উপকার করেছেন । আমি আপনার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছি..]
[ইহা একটি আসমানী মেসেজ পরিবেশনা]
বিষয়: বিবিধ
৫৬১৯ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। কুরআন শুধুই মতন পড়লাম আর কিছুই বুঝলাম না তা হলে কি করে কুরআন থেকে আমরা সঠিক পথ খুঁজে পাব??
যারা অর্থ সহ কুরআন না পড়ার উপদেশ দেন তাদের ইচ্ছা বোধহয় কুরআন থেকে মানুষকে দুরে রাখা। ছোটকালেই যদি কুরআন এর সূরা গুলি মুখস্ত করানর সাথে সাথে তার অর্থও শিখান হয় দেখা যাবে সহজেই সে আরবি ভাষাও শিখে যাচ্ছে। কারন বিভিন্ন আরবদেশে একাধিক একসেন্ট থাকা সত্বেও কুরআন এর ভাষা একটি ষ্ট্যান্ডার্ড এবং এই আরবি সবাই বুঝে।
কুরআন নাযিলের মাসে অর্থসহ কুরআন পাঠের ব্যবস্থা ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত ভাবে নেয়া দরকার। অনেক গুরুত্ববহ পোস্ট যা খুবই সময়োপযোগী। আশাকরি যারা পাঠ করে আমল করবেন-তাদের জন্য ভাল রেজাল্ট দেবে।
আমরা দুনিয়ার যত গল্পের বই আছে সব বুঝেই পড়ি । শুধু কোরআনের বেলায় বুঝতে চেষ্টা করিনা । আল্লাহপাক আমাদের সঠিক বুঝদান করুন । আমীন ।
সকলের জন্য আমি একটা সুখবর দিতে চাই(যার জন্য প্রযোজ্য) আর তা পোষ্ট আকারে দিলাম৷
একজন প্রবাসী দেশে এসে আবার চলে যাবার সময় তার পাসপোর্টের ভিসা অনুবাদ করতে হয়। কারন ঐ অনুবাদ দেখেই টিকেট কনফার্ম করা হয় এবং ইয়ারপোর্টে বোর্ডিংপাস মিলে।
আমাদের জান্নাতের বোর্ডিংপাস সংগ্রহ করতে যে কোরআনকে বুঝে পড়ে সে মোতাবেক আমল করতে হবে এই সহজ বিষয়টি আমরা বুঝতে চাইনা।
আমাদের সবাইকে মহান আল্লাহর দরবারে ফিরে যেতেই হবে, এই দুনিয়া খুবই ক্ষনস্থায়ী। আমরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছি কিনা তা আল্লাহ আমাদের জিজ্ঞেস করবেননা, কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই জিজ্ঞেস করবেন, আমরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কে কতটুকু চেষ্টা করেছি। আজ দুনিয়ার সকল নাস্তিক্যবাদী শক্তি ইসলাম নামক বাতিটাকে নিবিয়ে দেওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ, আর আমরা মুসলিম দাবিদারেরা জেগে জেগেই ঘুমাচ্ছি!!!
আপনার লিখাটা খুব খুব ভাল লাগলো, মনোযোগ দিয়েই পড়লাম। ধন্যবাদ আপনাকে
সবকথার সারকথা হচ্ছে শুধু আমাদের জন্য নয়, সারা বিশ্বের সকল মুসলমানকে নিজ নিজ মাতৃভাষায় তরজমাকৃত কোরআন পড়ে বুঝে আমল করতে হবে । এর মধ্যেই আছে মুসলমানদের মুক্তি । কারণ আমরা হচ্ছে মালিকের পাঠানো নির্দেশিকা না বুঝেই তেলাওয়াত করে যাই । এখানেই আমাদের সমস্যা ।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
আরেকটি লেখা দিলাম, সময় করে পড়ে নিয়েন :
http://www.monitor-bd.net/blog/blogdetail/detail/2668/rashic/66287
মন্তব্য করতে লগইন করুন