আমার প্রিয় খাবার ............(প্রতিযোগিতা)
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২১ মে, ২০১৫, ০১:১৮:৩৫ দুপুর
ছোট কাল থেকে প্রিয় খাবার নিয়ে আমার একটু সমস্যা ছিল । সমস্যা হচ্ছে কোন খাবারটি আমার প্রিয় সেটা নির্বাচন করা আমার জন্য যথেষ্ট কষ্টের ছিল । মাঝে মাঝে আম্মার মুখে শুনতাম তোর এটা প্রিয় ওটা খাস বেশী ইত্যাদি । কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোন খাবার আমার প্রিয় সেটা আমি বুঝতে পারতাম না । এর কারণ হচ্ছে খাবার জিনিসের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা ।
খুলেই বলি । আমি মনে করি আল্লাহপাক মানুষ সৃষ্টির ফলে মানুষের খাদ্য হিসেবে যেগুলো পাঠিয়েছেন সেগুলোতে মানবদেহের জন্য রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দিয়েই পাঠিয়েছেন । অর্থাৎ সারা বছর ঘুরে ঘুরে যে খাবার গুলো পৃথিবীতে উৎপন্ন হচ্ছে তাতে মানবদেশের জন্য রোগ প্রতিরোধের প্রতিশেধক আছে, এটাই আমার বিশ্বাস । এই হালাল খাবার গুলো পরিমান মত যে মানুষ খাবে তার শরীরে রোগ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী । যে খাবারটি একজন মানুষ খাবেনা সে খাবারের রোগ প্রতিরোধের প্রতিশেধক থেকে সে বঞ্চিত হবে । ফলে ওষুধের মাধ্যমে তাকে ঐ অপূর্ণতাকে পূর্ণ করতে হয় । তাই আমি হালাল সব খাবারই খেতে চেষ্টা করতাম এবং এখনও করি ।
মৌসূমী খাবার গুলোর প্রতি আমার ধারণা আরো ইতিবাচক । আমি মনে করি যে মৌসুমে মানবদেহের জন্য যে উপাদানের খাবার ফলমুল দরকার আল্লাহ ঠিক সেগুলোই মানুষের জন্য ব্যবস্থা করেছেন । যেমন গরম কালে আম কাঠাল, শীতকালে মুলা বেগুন । এখন অবশ্য বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে বেমৌসুমেও মৌসুমী ফলের চাষ করে সফলতা অর্জন করে যাচ্ছেন । এটা মানব দেহের জন্য ঠিক কতটা উপকারী এ ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে । যেমন এখন বাজারে মুলা পাওয়া যাচ্ছে । অতচ এটা শীতকালীন ফসল ।
যাই হোক ছোটকালে শুনেছিলাম সামনে খাবার থাকাবস্থায় এই খাবার মজা নেই, ভাল নয় ইত্যাদি বললে নাকি খাবারেরা শুনে মাইন্ড করে । তাই খাবারের সামনে কোন খাবারের বদনামী করতাম না । বলতাম না আমি এই খাবার খাইনা । আমার দর্শন ছিল যেহেতু আল্লাহ মানুষের সৃষ্টিকর্তা এবং মানুষের কল্যাণ কামনা করেন তাই আল্লাহর দেয়া মানুষের জন্য খাদ্য মানব দেহের জন্য নিশ্চয় উপকারী । সুতরাং সামনে থাকা সব খাবার আমি অল্প অল্প করে খেতে চেষ্টা করতাম । যদিও কোন খাবার খেতাম না তাতে এমন কৌশল অবলম্বন করতাম যাতে ঐ খাবারই বুঝতে না পারে যে আমি তাকে খাইনি ।
কিছু কিছু মেয়েদের মাঝে খাবারের প্রতি বেশী এলার্জি লক্ষ্য করা যায় । আমি অমুখ খাবার খাইনা এই কথাটি তাদেরকে বেশী বলতে শুনা যায় । যারা যেটা খায়না সেটা তারা এমন গর্ব করেই বলে যে যেন তারা ওটা না খেয়ে সভ্যতার একধাপ উপরে উঠল । আবার কিছু পুরুষ লোকও এর ব্যতিক্রম নয় ।
ছেলেমেয়েরা ছোটকাল থেকে ঠিকমত শিক্ষা পেলে এই ছোয়াছে রোগ অর্থাৎ না খাওয়া রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে ।
সন্তানের গ্রোথ ঠিক ভাবে বাড়ার জন্য এই খাবার সমূহের ভূমিকা অত্যাধিক ।
আবার আমার কথায় আসি, আমি নিজেকে প্রায় সময় জিঙ্গেস করতাম যে আমার প্রিয় খাবার কি ? মনের কাছে সন্তোসজনক কোন জবাব পেতাম না । নাস্তার মধ্যে আমি ঝুইল্লা সেলাই (ঝুল ওয়ালা সেমাই) বেশী পছন্দ করি । মাছ মাংস তরকারীর মধ্যে আমার প্রিয় খাবার যদি বলতেই হয় তাহলে আমি বলব কচুর পোপা এবং কচুর তরকারী আমার প্রিয় খাবার ।
টিঁয়াটুঁইর গেন্ডারিয়ার কথা যদি বলি আবার অনেকে বলবেন জীবনে এই প্রথম নাম শুনলাম !
ইহা ইতিমধ্যে একটি আঞ্চলিক মৌসুমী তরকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে বিধায় এটা সার্বজনীন ভাবে দেয়াটা ভাল মনে করছি না ।
কিন্তু কচুর পোপা এবং কচুর তরকারী বাংলাদেশ ব্যাপী না চেনার কথা নয় । এই কচুর পোপাই আমার প্রিয় খাবার তরকারী হিসেবে । কচুর পোপা শুধু নয় কচু গাছের প্রত্যেকটি জিনিসই আমার প্রিয় যেমন:
কচুর ছড়া,
কচুর ডাটা,
কচুর লতি,
কচুর পাতা ইত্যাদি ।
কচু রাঁধতে জানলে অনেক মজার তরকারী অতচ এই দরকারী জিনিসটি আল্লাহপাক কত সহজলভ্য করে দিয়েছেন । পানিতে শুকনায়, নালায়, খালে বিলে যত্রতত্র এই কচু জন্মায় ও বাড়ে ।
কচুর পোপাকে সাধারণত ভর্তাকারে পাককরা হয় । এত লেবু, টমেটো, অথবা টক জাতীয় কিছু দিলে ভাল মজা হয় । আম্মারা কোনদিন চিংড়ি মাছ দিয়ে রাঁধতে দেখিনি । কিন্তু ইদানীং বউরা ইহাকে চিংড়ি দিয়ে ভাজলে ভালই টেস্ট হয় ।
বছরের প্রায় ৫/৬ মাস বাজারে কচুর পোপা পাওয়া যায় । গতকালও আমি খেয়েছি । হয়তো আজকেও চলবে, লাঞ্চ আওয়ারে কেউ আমার অফিসে চলে আসলে খেতে পারবেন ।
আচ্ছা এমন তরকারী দেখে জিবে পানি আসবে না সেটা কোন বাঙ্গালী ?
[কিছু ছবি চুরি করা হল গু-মামুর এ্যালবাম থেকে ]
বিষয়: Contest_priyo
৩১৭৩ বার পঠিত, ৫৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ খায়ের
'আল্লাহপাক মানুষের খাদ্য হিসেবে যেগুলো পাঠিয়েছেন সেগুলোতে মানবদেহের জন্য রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দিয়েই পাঠিয়েছেন' আর যে গুলো হারাম করেছেন সে গুলো মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক ।
লেখা ভাল হয়েছে ।ধন্যবাদ
আমি আপনাকে পুরনো একটি বাজারের লিস্ট উপহার দিচ্ছি
এখানে কচু জাতিয় কিছু পাওয়া না গেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়!!!
কচু আমার অপ্রিয় হলেও আমার স্ত্রী কচুর কচি পাতা ঝাল দিয়ে রান্না করে খেতে খুবই পছন্দ করে....! সেই সুবাদে মাঝেমধ্যে খাওয়া হয় আর কি!!!!
লেখার গাতুনি চমৎকার হয়েছে ধন্যবাদ।
আরে আপনার দেয়া কবিতাটিতো আমার ঘরনীর লেখা চিঠি!!!
আমাকেও যদি কেউ প্রশ্ন করে প্রিয় সম্পর্কে আমিও থমকে যাই কেনো জানি একক কোন নির্বাচন করতে পারি না ।
আমার নানাবাড়ি এলাকায় কচুর পোপা কচুর লতি বলে । ওল কচু, মান কচু, দুধ কচু , কচুর লতি, কচু শাক, কচুর ছড়া, কচুর ডগা কচুর আছে বহুমুখী রন্ধনপ্রক্রিয়া , স্বাদে অতুলনীয় এবং পু্ষ্টিমানে সমৃদ্ধ!
ছোটবেলায় কচু খেতে গেলে ভয় লাগতো, ভুলেও বলতাম না যদি কখনো গলা চুলকাতো! কারন তাহলে ঝগড়াটে উপাধি গ্রহন করা লাগতো! তাই লুকিয়ে লেবুর রস বা আচার খেতাম!
সংসার জীবনে প্রবেশের পর আমাদের দুজনেরই কচু প্রজাতির সবজি অত্যন্ত প্রিয়! তবে আমার উনি কচুর খাওয়ার আগে বিশাল সাইজের একপিস লেবু নিয়ে ভাতের উপর কচলাতে থাকেন ...
আপনার প্রিয়তে কচু আছে জেনে এবং এ নিয়ে পোস্ট পড়ে খুবি ভালো লাগলো! আন্তরিক ভাবে আপনার সফলতা কামনা করছি!শুভকামনা জানবেন!
সবাই দেখি আপনাকে ব্লগে খুজে । কষ্ট করে হলেও মাঝে সাঝে ঢু মারিয়েন ।
আপনার লিখাটা খুব ভাল হয়েছে, ধন্যবাদ আপনাকে
কচু আমি খাইনা। কচু খাইলে গলাও চুলকায়। কচুতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামে পদার্থ কিছু মানুষের জন্য এলার্জিক। আমি তাদের একজন।
আপনি বেশী করে না দাওয়াতী মেজবানের গোস্ত খায়েন ।
আপানর রুচি কেমন ভাইজান ? কয় প্লেইট খাবার খেতে পারেন ?
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ভাই আমার প্রিয় খাবার এবং আপনার প্রিয় খাবার । এক হয়ে গেলাম.......
<:-P <:-P
কোনো একটি বা দুটি খাবারকে প্রিয় হিসেবে বাছাই করা আসলেই কঠিন। এখানেও আপনার সাথে একমত। অনেক ছেলেমেয়ে এটা খাইনা/ওটা খাইনা বলে সভ্যতার ধাপ উন্নীত করতে পারে কি না আমি জানি না তবে ভাই আমি নিজে এই দোষে দুষ্ট। যেমন মাছের কথাই বলি। হাতেগোণা চার-পাঁচ রকমের মাছা ছাড়া অন্য মাছ আমি খেতে পারি না। এই গুটিকয় মাছে মধ্যে আবার বেশীরভাগই হলো সামুদ্রিক মাছ। কচুর কথা বললেন, ও আমি মন হয় জীবনেও খাইনি! আল্লাহ ক্ষমাকরুন।
আপনার লেখা অসম্ভব ভালো লেগেছ। এই লেখাটার পুরস্কার প্রাপ্তিতে মডারেটরদের বরাবরে আমার সুপারিশ থাকলো।
আমার মনে হয় প্রকৃতিগতভাবে কেউ কোন খাবার খেতে অনিহা প্রকাশ করলে তাকে সেটা খাওয়ানোর ব্যাপারে জোর করা উচিত নয়। হতে পারে সেই খাবারের উপাদানটি তার শরীরের জন্য প্রয়োজন নেই। অথবা ঐ উপাদানটি তার শরীর ভিন্ন সোর্স থেকে কালেকশান করে নিচ্ছে।
আবার খাদ্যোউপাদাগুলো মানব শরীরে খরছ করার ব্যাপারেও মেধার মাত্রার উপর নির্ভর করতে পারে।
আচ্ছা একটি ব্যাপার বুঝতে পারতেছিনা আপনি জীবনে কচু না খেতে পারার কারন কি।
আপনার সুপারিশের জন্য মোবারকবাদ থাকল।
সেই উদর থেকে শুরু করে আতুরঘর এবং মায়ের বুকের দুধের সাথে মায়ের শরীরের গন্ধের সাথে একাকার হয় যাওয়া মায়ের হাতের রান্নাসহ যে কোন কিছু স্বাদ লাগার কারণ, এটা আমার ধারণা।
এমন কি মা যদি ছেলের জন্য বিদেশেও কিছু পাঠায় তাহলে সেখানেও ছেলে মায়ের হাতের স্পর্শ ও মায়ের গন্ধ(খুশবো) পেতে পারে।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
প্রতিযোগীতায় সাফল্য কামনা করছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন