▓== ওরা মায়াবিনী ==▓ ......(গল্প)

লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ১৪ মে, ২০১৫, ১০:১৮:৩৬ রাত

▓== ওরা মায়াবিনী ==▓

জীবন থেকে নেয়া -(৪)

----------------------------------->>>

সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার, সপ্তাহের শেষ দিন । জুন মাসের ২৬ তারিখ ১৯৮৬সাল । মির্জাখীল স্কুলের প্রশিক্ষণ কক্ষ । প্রাইভেট পড়া শেষ হলেও বাহার মিয়া বের হতে পারছিলনা বৃষ্টি হচ্ছিল বলে । বেলা তখন তিনটা বেজে ত্রিশ মিনিট । অন্যদিন হলে এই সময়ে স্কুলই ছুটি হতনা কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার বলে হাফছুটি। প্রশিক্ষন কক্ষে বাহার মিয়া একা নয়, স্কুলের বিজ্ঞানের স্যার রহমত উল্লাহও আছেন । রহমত স্যারের কাছেই কিছুক্ষণ আগে বাহার মিয়ারা বন্ধু বান্ধবীরা মিলে প্রাইভেট পড়েছে । ব্যচের অন্যরা চলে গেলেও বাহার মিয়া স্যারের কাছ থেকে অংক বুঝে নিতে দেরী হওয়ায় বৃষ্টির মাঝে আটকে যায়।

স্যারও বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করছেন, এসময় রহমত স্যার বাহার মিয়াকে বললেন, ফাইনাল পরীক্ষা সামনে আরো আটমাস বাকী আছে । এই সময়টা পড়ালেখার জন্য যথেষ্ট । যদি ডিভিশন নিতে চাও তাহলে কষ্ট করতে হবে । ভালভাবে কষ্ট করে পড়লে ডিভিশন নিতে বেগ পেতে হবেনা ।

বাহার মিয়া বলল: স্যার পড়া মুখস্থ করতে পারিনা ।

রহমত স্যার: ভাল করে মন দিয়ে পড়লেই পড়া মুখস্থ করা যায় ।

বাহার মিয়া: আসলে স্যার কথা হচ্ছে আমি ভালকরে পড়ালেখায় মনই বসাতে পারিনা ।

স্যারের বয়স কম, এখনও বিবাহ করেনি । বাহার মিয়ার সাথে স্যারের সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুরমত বলে সবসময় খোলোমেলা আলোচনাই করে ।

বাহার মিয়া স্যারকে আরো বলল: স্যার পড়তে বসলেই মনটা উড়ো উড়ো করে ।

ব্যস স্যারকে আর বেশী কিছু বলতে হলনা।

এরপর স্যার যা বললেন তা বাহার মিয়ার জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে ।

রহমত স্যার বললেন: তোমাদের এই বয়সটা হচ্ছে খুব কঠিন । তুমি কিছু মনে করনা, স্যার হিসেবে নয় একজন বড়ভাই হিসেবে বলছি, তোমাদের বর্তমান বয়সটা অনেক কঠিন, কল্পনা প্রবণ ও লোভী । মন চাইবে সবকিছু উপভোগ করতে । তোমাকে এ ব্যাপারে বড় মাপের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে । হয়ত অনেক কঠিণ হবে, কিন্তু তোমাকে পারতে হবে কারণ হচ্ছে আমরা তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করি ।

তিনি আরো বললেন, এখানে পড়ালেখা করতে এসেছ এটা সবসময় মনে রাখতে হবে । স্কুলে আসার কারণ কাউকে ভাল লাগতে নয় আবার কাউকে ভাল লাগাতেও নয় এটা ভুলে গেলে চলবে না ।

স্যারের কথায় বাহার মিয়া একটু লজ্জা পেলেও খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল । লজ্জা পাওয়ার কারণ বাহার মিয়া বুঝতে পেরেছে স্যার কি মিন করে কথাগুলো বলছেন ।

বাহার মিয়াদের স্কুলে ছেলেমেয়েরা একসাথে পড়ালেখা করে । আশপাশে বালিকা বিদ্যালয় না থাকায় ছাত্রীরাও অত্র স্কুলে ছাত্রদের সাথেই পড়ালেখা করছে । বাহার মিয়াদের ক্লাসেও ৭/৮জন ছাত্রী আছে তিন গ্রুপে মিলে । স্কুলে ছাত্র/ছাত্রী বেশী না হওয়ায় গ্রুপ ক্লাস ছাড়া বাকী ক্লাসগুলো তিন গ্রুপ এক সাথেই করে ।

বাহার মিয়া দেখতে সুন্দর, ভদ্র, শান্ত এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান । একটু লাজুক টাইপের হলেও মেয়েরা কথা বলতে চাইলে তো আর না করা যায়না । মেয়েরা বাহার মিয়ার জন্য এটা ওটা নিয়ে আসে, শহরে গেলে বিদেশী চকলেটসহ দামী দামী জিনিস নিয়ে আসে । বাহার মিয়ার প্রতি অনুগ্রহের ওদের কোন শেষ নেই । রহমত স্যার এই বিষয়গুলোই ইশারা ইঙ্গিতে বাহার মিয়াকে বুঝাতে চাইছেন ।

তবে এটা ঠিক যে বাহার মিয়ার সাথে কোন মেয়ের কোন রকম প্রশ্নবোধক সম্পর্ক ছিলনা । বাহার মিয়ার বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগও নেই । স্যারদের অতিরিক্ত মহব্বত আর সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে স্যারেরা চাইতেন বাহার মিয়ার আগামীর ফলাফলটা যেন অধিকতর ভাল হয় ।

রহমত স্যার আরো বললেন, পড়ালেখার সময় যদি মন উড়ো উড়ো করে তাহলে মনকে জোর করে ধরে পড়ার টেবিলে নিয়ে আসতে হবে । রাতে শোবার পর যখন তোমার মন আবুল তাবুল চিন্তা করবে তখন তুমি একটি বাংলা বই নিয়ে বাতি জ্বালিয়ে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়বে । তখন আর তোমার ঐ সমস্ত কল্পনা করার অবকাশ থাকবে না ।

হয়তো তোমাকে লোভ দেখানো হবে । কিন্তু লোভে পড়ে তুমি যদি পা দাও মরিচীকার ফাঁদে তাহলে লেখাপড়া তো করতেই পারবেনা বরং ঐ রাহুর কবল থেকে মুক্তি পাওয়াই কঠিণ হয়ে যাবে ।

রহমত উল্লাহ স্যার আবার বললেন, বাহার মিয়া তোমাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক স্নেহ করি বলেই বলছি তুমি পড়ালেখায় আরো সিরিয়াস হও ।

আমরা সবাই তোমার কথা ভাবছি, তোমার কাছ থেকে কিছু আশা করছি । এমনকি প্রধান শিক্ষক পর্যন্ত তোমার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। বিএসসি স্যারও তোমাকে নিয়েই আশা করছে । এ অবস্থায় তুমি যদি কঠিণ সংযত না হও তাহলে ফাইনাল পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের আশা ছেড়ে দাও ।

তুমি সার্বক্ষণিক মনে রাখবে তুমি স্কুলে পড়ালেখা করতে এসেছ, সুতরাং পড়ালেখাই তোমার কাজ, পড়ালেখাই তোমার জীবন । অবশ্যই অবশ্যই পড়ালেখা ছাড়া তুমি অন্যকিছু ভাববেনা, ভাবতে পারনা ।

স্যার আরো বললেন, স্বরণ রাখবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে চাই ধর্য আর কঠিন সাধনা ।

রহমত স্যার বাহার মিয়াকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এমনকি আঙ্গুল দিয়ে পর্যন্ত দেখাতে এবং বুঝাতে চেয়েছেন একটি বিষয় ।

এটা বাহার মিয়ার কাছে অত্যন্ত পরিস্কার যে রহমত স্যার কোন বিষয়টি বাহার মিয়াকে স্বরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন ।

বাহার মিয়া স্যারের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনার পর মনে মনে দৃঢভাবে শপথ নিল যে এরপর থেকে মনের সব রঙ্গিন ফানুসকে ফুটো করে নিস্তেজ করি দিবে।

বাহার মিয়া নিজেকে অন্য দশ জনের মত গড্ডালিকায় ভাসিয়ে দিতে পারেনা। বাহার মিয়ার অনেক সংগ্রামী জীবন।

মনে পড়ে বাহার মিয়া গত ৯/১০ মাস আগে এই স্কুলে এসে ভর্তি হয়েছিল, বাহার মিয়ার জেঠা এলাকার প্রভাবশালী চেয়ারম্যান নিজে এসে হ্যাড স্যারকে বলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। বাহার মিয়ার জেঠা সেদিন হ্যাডস্যারকে বলেছিলেন এটা আমার ছেলে।

বাহার মিয়ার পড়ালেখার মধ্যখানে গ্যাপছিল। সে অষ্টম শ্রেণি মোটেই পড়েনি, সপ্তম শ্রেণিও অল্প দিন পড়েছিল মাত্র ।

ঘটনা হচ্ছে বাহার মিয়া যখন ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ছিল তখন একদিন বাহার মিয়ার আম্মা বলেছিল তুই সারাদিন মার্বেল খেলিস আর ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করিস । আজ তোর আব্বা আসুক তোকে মার খাওয়াবো । বাহার মিয়া মার সহ্য করতে পারতনা আর আব্বার মার সম্পর্কে সে ভাল ভাবেই জানত । তাই আব্বা আসার আগেই সে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল । সে প্রথমে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসে, সেখানে বড় ভাইয়ের চাকরীরত মালিকের বাসায় থেকে পরদিন সোজা ঢাকা চলে গিয়েছিল । সেখানে ক্যান্টনম্যান্টের ভিতর উত্তর কাফরুলে একটি ডিপার্টম্যান্টাল ষ্টোরে চাকরী করছিল ।

এসময়টি ছিল বাহার মিয়ার জন্য একটি কঠিন সময় । তখন আম্মার জন্য খুবই কান্না করত বাহার মিয়া । বিকাল বেলা কর্মিটুলা পুরানা ইয়ারপোর্টের বাউন্ডারী দেওয়ালে বসে বসে বিমান দেখত আর ঢুকরে ঢুকরে কাঁদত । তখন নৌ বাহিনীর ঈসাখাঁতে গ্যারেজে একটি চাকরী হয়েও অষ্টম শ্রেণীর পাশ সার্টিফিকেট দিতে না পারায় চাকরীটি হয়নি । ফলে সে বাড়ি পালিয়ে দুটি জিনিষের মূল্য বুঝতে পারে, একটি পড়ালেখা কি জিনিস, অন্যটি মা কি জিনিস ।

এদিকে বাহার মিয়ার খুঁজে মা তো পাগলিনী প্রায়, বাবাও আধ পাগল । ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন সবাই বাহার মিয়ার খোজ করতে করতে হয়রান হয়েছিল ।

শেষ পর্যন্ত বাহার মিয়ার চিঠি পেয়ে সেজ জেঠা ঢাকা থেকে বাহার মিয়াকে নিয়ে আসে ।

এটা ছিল বাহার মিয়ার পড়ালেখায় প্রথম গ্যাপ ।

বাহার মিয়া আবার স্কুলে গিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে সপ্তম শ্রেণিতে উঠে । তিন মাস পর আবার মাথা ঘুরে যায়, পড়ালেখা আর করবে না । কারণ হচ্ছে ওর কয়েকজন বন্ধু শহরে কাপড়ের দোকানে চাকরী করে । ওরা ৩/৪মাস পর পর বাড়িতে আসে । নতুন জামা পড়ে, তেল মাথায় দিয়ে পকেটে চিরনী নিয়ে ষ্টাইল করে কথা বলে বন্ধুরা । এসব দেখে বাহার মিয়া আব্দার করে সেও শহরে গিয়ে চাকরী করবে । বাহার মিয়ার আব্দার ও জিদের কাছে পরিবার হার মানে ।

টানা তিন বছর সে টেরীবাজার কাপড়ের দোকানে চাকরী করে । সে কাপড়ের পাইকারী বাজার নরসিংদী বাবুর হাট পর্যন্ত গিয়েছে । এ সময় সে লালদিঘীর পাড় থেকে দস্যু বনহুরের সকল বই, মাসুদ রানা সিরিজ, ওয়েস্টার্ণ সিরিজসহ অনেক বই ভাড়ায় এনে পড়ে শেষ করে । বাহার মিয়ার এ সময়ের লেখা অনেক কবিতা আছে । বাহার মিয়ার বন্ধুরা যখন আস্তে আস্তে দোকানের মালিক হচ্ছিল, বাহার মিয়া নিজেও টাকা ইনকামের রাস্তা খুজে পাচ্ছিল ঠিক তখন বাহার মিয়ার মাথায় আবার পড়ালেখা করার ইচ্ছা জাগে ।

কারণ হচ্ছে একবার বাড়িতে গেলে আম্মা বলল তোর ছোট ভাই ছরওয়ারের নাকি পড়ালেখা করলে মাথা ঘুরায়, তাই তোর বড় ভাই বলছিল তোর ইচ্ছা থাকলে আবার পড়ালেখা করতে । এটা শুনে বাহার মিয়া প্রথমে চমকে উঠলেও অনেকক্ষণ পর্যন্ত সে কোন জবাব দিতে পারেনি । আসলে প্রস্তাবটি তারও পছন্দ হয়েছিল । তবে মাকে বলেছিল দেখি আমি ভেবে জানাব ।

বাহার মিয়া শহরে চলে এসে ঐ সপ্তাহেই নবম শ্রেণির কয়েকটি বই কিনে ফেলে । দোকানের মালিক এবং বন্ধুদেরকে বললে তারা কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি বাহার মিয়া আবারও পড়ালেখা করতে পারবে । কিন্তু একমাত্র বাহার মিয়াই জানত সে পারবে । তার সে মনোবল আছে । বাহার মিয়ার এক বন্ধু বলেছিল আমি তোমাকে স্বর্ণাক্ষরে লিখে দিতে পারব তুমি লেখাপড়া করতে পারবেনা, কারণ হিসেবে সে বলেছিল যারা টাকার গন্ধ পেয়েছে তারা আর লেখাপড়া করতে পারেনা । বাহার মিয়া সেদিন নার্ভাস হয়ে বলেছিল তুমি স্বর্ণাক্ষরে না লিখে হস্তাক্ষরে লিখে রাখতে পার । তবে মনে রেখো আমি বলছি আমি আবার পড়ালেখা করতে পারব ইনশাআল্লাহ ।

দোকানে তিন মাস সময় দেয়ার পর যখন বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসল বাহার মিয়া তখন তার আগের স্কুলের বন্ধুরা দশম শ্রেণিতে পড়তেছে । বাহার মিয়া প্রথমে সাতকানিয়া সদর মডেল বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ত । সেখানে যখন আবার ভর্তি হতে গেল তখন স্যারেরা বলল অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হতে । কিন্তু বাহার মিয়ার ইচ্ছা নবম শ্রেণিতে ভর্তি হবে ।

শেষমেষ জেঠাকে বললে জেঠা মির্জাখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দেয় ।

ভর্তি হয়েই বাহার মিয়া পড়ে মহা বিপাকে । একেত সে নতুন, তার উপর সম্তম অষ্টম শ্রেণি না পড়ায় পড়ালেখায় ছিল অনেক গ্যাপ ।

ক্লাসের অন্য পাশে বসা সুন্দর সুন্দর মেয়েরা যখন ওর দিকে আড় চোঁখে থাকায় তখন বাহার মিয়া একেবারেই নার্ভাস । স্যার যখন পড়ালেখা জিঙ্গেস করে তখনত সে কিছুই পারেনা ।

সে যখন দেখল ‍ A,b,c, x, y, z দিয়ে অংক করানো হচ্ছে সে তো আঁকাশ থেকে পড়ল । সে জানত যে ১,২,৩ সংখ্যাসমূহ দিয়ে অংক হয় কিন্তু এতো দেখছি আরেক ঝামেলা । আরো সে নিয়েছে বিজ্ঞান গ্রুপ । সেই সাথে নিয়েছে ইলেক্টিভ ম্যাথ । চারিদিকে এত অন্ধকার কেন ।

তবুও বাহার মিয়া দমবার পাত্র নয় । সে নতুন করে চক তৈরী করে নব উদ্যমে পড়ালেখা শুরু করল । সকালে হ্যাডস্যারের কাছে ইংলিশ প্রাইভেট পড়ে বিকালে ছুটির পর রহমত স্যারের কাছে গণিত প্রাইভেট পড়ে ।

বাহার মিয়া ভোরে স্কুলে চলে যায়, প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে স্কুল, কোন সময় হেটে যায় কোন সময় সাইকেলে যায় । বাড়িতে সময় পেলেই পড়ালেখা করে । ক্লাসে মেয়েদের সামনে যাতে পড়া শিখিনি বলতে না হয় এজন্য বাহার মিয়া ক্লাসের পড়া শিখে যেতে চেষ্টা করত ।

যে বীজ গণিত তার কাছে বার্মিজ ভাষার মত বিদগুটে লাগত সে বীজ গণিত কিছুদিনের মধ্যে বাহার মিয়ার কাছে পানির মত সহজ মনে হল । মনে হল সবার চেয়ে সহজ বিষয়টির নাম বীজগণিত । কোন কোন সময় স্যার বাহার মিয়াকে দিয়ে ব্লাক বোর্ডে বীজগণিত করিয়ে নিতেন । টিফিন ছুটির সময় কয়েকজন বন্ধু বাহার মিয়ার কাছ থেকে বীজগণিত বুঝে নিত ।

এত কিছুর পরও যখন বাহার মিয়াকে বলয় মুক্ত করা যাচ্ছিলনা তখন স্যারেরা কিছুটা শংকিতই ছিল বলা যায় । রহমত স্যারের কথায় তাই মনে হয় ।

রহমত স্যারের দরদমাখা উপদেশ বাহার মিয়ার খুব ভাল লাগে । সে নিজের মনকে শাসন করে নিজেই বলে, আজ থেকে সাবধান হয়ে যা আর ঐ সমস্ত কল্পনার রাজ্য থেকে অবসর নেয় । বাহার মিয়া নিজের দক্ষিন হস্তকে মুষ্ঠিবদ্ধ করে এই অঙ্গিকার মনে মনে ভিড় ভিড় করে কয়েকবার উচ্চারণ করল ।

কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে রহমত স্যার আবার বললেন, স্কুল এবং কলেজের প্রথম দুই বৎসর ওরা ভাল ছাত্রের পিছনে জোঁকের মত লেগে থাকে । তোমাকে কোন দিকে থাকালে চলবেনা । তুমি যখন ভাল ছাত্র হিসেবে পড়ালেখা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে তখন তোমার পিছনে পিছনে লাইন ধরবে ঐ সব মায়াবিনীর দল ।

কাজেই ছাত্রজীবনটা যদি তুমি সাফল্যের সাথে শেষ করতে পার তাহলে তুমি অবশ্যই জীবনে কৃতকার্যতা লাভ করতে পারবে । জীবনকে সম্মানের সহিত উপভোগ করতে পারবে ।

শেষ পর্যন্ত বাহার মিয়া এসএসসিতে তিনটি গণিতেই লেটার সহকারে পাশ করে তিনটি গ্রুপের মধ্যে সর্বোচ্চ মার্ক পেয়ে স্কুল প্রথম হিসেবে স্যারদের মুখ উজ্জ্বল করেছিল ।

##

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৭ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

320097
১৪ মে ২০১৫ রাত ১০:৫১
আবু জারীর লিখেছেন : ছাত্র হিসেবে শেষের দিক দিয়ে ভালো ছিলাম বলে কিনা জানিনা মেয়েরা সাধারণত আমাকে দেখলে পড়িমরি করে পালাত। অবশ্য ছাত্রীদের মধ্যে যারা ভালো ছিল তাদের কয়েকজন বেশ সমীহ করত তবে ভিন্ন চিন্তা কেউ করেনি।
ধন্যবাদ।
১৪ মে ২০১৫ রাত ১০:৫৭
261155
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ সুন্দর ভাবে ছাত্রজীবনের স্মৃতি তুলে ধরার জন্য ।
আপনার সিরিজটি প্রথম থেকেই শুরু করব ভাবছি । Good Luck Good Luck
320101
১৪ মে ২০১৫ রাত ১১:০৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মায়াবিনি!!
এখন কি তাড়া করে??
১৪ মে ২০১৫ রাত ১১:১৫
261161
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : হ্যাঁ এখনও করে । বউ নিয়ে বাসায় যেতে বলে Happy
১৫ মে ২০১৫ সকাল ১১:২৩
261267
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : জগত সংসার সবই মায়া!!!
320110
১৪ মে ২০১৫ রাত ১১:৩৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৪ মে ২০১৫ রাত ১১:৪৭
261168
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ । Good Luck Good Luck
320123
১৫ মে ২০১৫ রাত ০১:০০
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া। মায়াবিনীর মায়ার ভার থেকে মুক্ত হওয়া অণ্ণেক দুঃসাধ্য বুঝি ভাইয়া?
সুন্দর পোষ্টটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
১৫ মে ২০১৫ সকাল ০৯:৫০
261263
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আপুনি মায়াবিনীদের মনে অনেক মায়া । তাদের মায়ার জাল ছিন্ন করে পড়ায় পুরোপুরি মনোযোগ দেয়া কোন যুবকেরই সম্ভব নয়। সেজন্যই ইসলামে সহশিক্কা নিষেধ করা হয়েছে।
যাযাকাল্লাহ খায়ের
320138
১৫ মে ২০১৫ রাত ০১:৩২
আফরা লিখেছেন : যাক তবু স্যারের আদেশ পালন করে মায়াবিনীর ফাঁদে পা দেন নি ।ধন্যবাদ
১৬ মে ২০১৫ দুপুর ০১:০৮
261420
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আসলে এখানে ফাঁদ বলেতে কিছু আবেগ আর পড়ালেখায় অমনোযোগীতাকে বুঝানো হয়েছে । আমার ক্লাসের মেয়েদের প্রতি একপ্রকার শ্রদ্ধাবোধ আমার তখনও ছিল এখনও আছে । গত সপ্তাহেও একজন স্বামীকে নিয়ে আমার অফিসে এসেছিল ।
আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ।Good Luck
320140
১৫ মে ২০১৫ রাত ০১:৩৬
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : বাহার ভাই, ভালো লাগল, ধন্যবাদ।
১৬ মে ২০১৫ রাত ১১:৩৩
261501
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : লেখাটিতে নতুন কিছু যোগকরেছি। আশাকরি ভাল লাগবে। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। Good Luck
১৭ মে ২০১৫ বিকাল ০৫:০১
261641
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আবারো ধন্যবাদ। ভালো আছেন?
১৭ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৪
261660
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ, ভাল আছি, আপনি ভাল আছেন ?
১৭ মে ২০১৫ রাত ০৯:০০
261717
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আল্হামদুলিল্লাহ!ধন্যবাদ।
320174
১৫ মে ২০১৫ সকাল ০৫:৪৫
শেখের পোলা লিখেছেন : বাহার বাহাদুর ভাই জিন্দাবাদ৷ ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়৷
১৭ মে ২০১৫ সকাল ০৮:৩৬
261543
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্যGood Luck
320194
১৫ মে ২০১৫ দুপুর ১২:২৩
হতভাগা লিখেছেন : আমরা কখনও কো এডুকেশনে পড়া হয় নি এই গ্রোয়িং আপ বয়সে । পরে অনার্স লেভেলে গিয়ে পড়তে হয়েছেই ।

এখন আপনি রহমত স্যারদের পাবেন না । পাবেন পরিমল/পান্না মাস্টারদের । এবং এদের কাছ থেকে ছাত্রছাত্রীরা এদের স্বভাবই রপ্ত করে ।

একজন সন্তানের চরিত্র গঠনে বাবা মায়ের যেমন ভূমিকা থাকে তেমনি স্কুল/কলেজের শিক্ষকের ভূমিকা আরও বেশী । কারণ সেখানে সন্তানেরা বাবা মায়ের থেকে দূরে থাকার ফলে নানা কু-প্রলোভন , কু-প্ররোচনা তাদের বিপথে নিয়ে যেতে পারে । একজন শিক্ষকের কাজ ছাত্রদের সঠিকভাবে পরিচালিত করা ।

আজকালকার বাবা মায়েরা নিজেরাও সঠিকভাবে চলেন না , চালিত করেন না নিজেদের সন্তানদেরকেও - ফলে সন্তানেরাও ভাল কিছু গ্রহন করার যোগ্যতা নিয়ে গড়ে ওঠে না।

এসব মায়াবিনী বা কুহকীনিরা আপনার পেছনে ঘুরবে আপনার কাছ থেকে নোট নিতে পড়া বুঝতে । কারণ মেয়েরা কখনই মেয়েদেরকে কোন গঠনমূলক ভাল কাজে সহায়তা করে না আর পড়াশুনার ব্যাপারে তো এটা আরও বেশী ।

বোকা ছেলেগুলো মনে করে যে মেয়েগুলো মনে হয় তাকে ভালবাসে তাই তার কাছে আসে , কথা বলে মিষ্টি মিষ্টি করে । সাহায্য চায় পড়াশুনা বিষয়ক জিনিসগুলোতে । আর সাহায্যপ্রার্থীকে তো ফিরিয়ে দেবার মত কঠিন হৃদয়ের নয় সে !!!

দেখা যায় যে পরীক্ষা শেষে ঐ মায়াবিনীই তার চেয়ে ভাল করেছে এবং সে এতদিন মায়াবিনীর কথা ভেবে নিজেকে অনেক নিচে নামিয়ে ফেলেছে কষ্টের কারণ হয়েছে তাদের যারা এতটা কষ্ট করে তাকে কোলে পিঠে মানুষ করেছে , এতদূর আনিয়েছে ।
১৭ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:২৭
261633
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আপনার মন্তব্যের সমালোচনা করার মত কোন মালমসলা খুজে পেলাম না। সত্যিই আপনার মূল্যায়ন অসাধারণ হয়েছে।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck Tongue
320198
১৫ মে ২০১৫ দুপুর ০১:৩২
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া! মায়াবিনীদের মায়া ত্যাগ করতে পেরেছেন বলেই জীবনে মূল্যায়ন পেয়েছেন! জীবন হয়েছে দামী! ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার বয়ষটাতে মানে (ইন্টার) পর্যন্ত সব রঙিনতাকে পাশ কাটিয়ে আসতে পারলেই জীবনের আসল লক্ষ্যে পৌছানো সহজ হয়! আল্লাহ আপনার সহায় হয়েছেন! বর্তমানে তো এস এস সি পাস করার আগেই বিয়ে পাস করে ফেলে! ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
১৮ মে ২০১৫ দুপুর ০১:৫৯
261880
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য প্লাসিত ধন্যবাদ ।Good Luck
১০
320257
১৫ মে ২০১৫ রাত ১১:৩৮
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ।
একজন শিক্ষক যথাযথ দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করেছেন এবং ছাত্র সেটা গ্রহন করেছে বলেই সঠিক ফলাফল পেয়েছে। ভালো লেগেছে লিখাটি! এরকম শিক্ষকদের আজ প্রয়োজন!

শুকরিয়া!
১৯ মে ২০১৫ রাত ১১:২৮
262225
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : অনেক সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। Good Luck
১১
320426
১৬ মে ২০১৫ রাত ০৯:৫৪
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ।অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
১৯ মে ২০১৫ রাত ১১:৩০
262228
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম
আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File