গল্প পড়লে নেকী ফ্রি....(১)
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫৬:২৫ সন্ধ্যা
ফুফুর স্নেহ, আদর, মহব্বত
------------------------------
আস্সালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ।
বুবু কি ঘরে আছেন ?
কে ? ছোট ভাই ! এসো ভাই এসো, কেমন আছো ? বাড়ীতে সবাই ভাল আছে তো
হ্যাঁ আল্লাহর ইচ্ছায় ভাল আছে ?
পরস্পর কৌশল বিনিময়ের পর ছোট ভাই বলল- বুবু আপনাকে একটি কথা বলতে এসেছি ।
অবশ্যই, সংকোচ করছো কেন ? কি কথা ভাই, বল ।
আমি ইউসুপ কে নিয়ে যেতে এসেছি !
এটা শুনেই বড় বোন চমকে উঠলেন ! হায় হায় বলে কি ভাইটি ।
আমার কলিজার টুকরা, জানের জান, পূর্ণিমার এক ফালি চাদঁ ইউসুপ । তাকে তার পিতা আমার বুক থেকে নিয়ে যেতে এসেছে ?
ছোট ভাইকে প্রথমে দেখেই কেমন জানি সন্ধেহ হয়েছিল ইউসুপের ফুফুর । তার বুকের ভিতরটা যেন কেউ খামছে ধরেছিল । ইউসুপকে ওর আব্বু নিয়ে যেতে আসেনি তো ?
ফুফু নিজে নিজে চিন্তা করতে লাগলো ইউসুপ তো আমার জানের জান । আল্লাহপাক ইউসুপকে এত সৌন্দর্য দিয়েছেন যা বর্ননা করে শেষ করা যাবে না ।
ইউসুপ কে নিয়ে গেলে আমার কি হবে । বোনটি যারপরনাই নার্ভাস হয়ে গেল ।
ভাইকে বলল - কেন ভাই ? ইউসুপকে নিয়ে যেতে চাচ্ছো কেন ?
আপনার কাছে তো অনেকদিন থেকেই আছে । ওদের আম্মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তো ওদের দুই ভাই ইউসুপ আর ইয়ামিনকে আপনিই দেখছেন ।
এখন ইউসুপ একটু বড় হয়েছে, তাছাড়া আমি ইউসুপকে ছাড়া থাকতে পারছি না । প্রতি মূহুর্তে ঝলকে ঝলকে শুধু ইউসুপের কথাই মনে পড়ে ।
বড় বোন বলল: ভাই, আমার অবস্থা তো এর চেয়েও খারাপ । আমিও তো ইউসুপকে একদন্ড না দেখে থাকতে পারিনা ।
এখন তুমি যদি ইউসুপকে নিয়ে যাও আমি তো অর্ধমৃত হয়ে থাকব ।
আপনার কাছে তো ইউসুপের ছোট ভাই বিন ইয়ামিন থাকছেই ।
না ভাই, আমি ইউসুপ কে ছাড়া থাকতে পারবো না ।
না বুবু আমি ইউসুপকে নিয়ে যেতে এসেছি, আপনি না করিয়েন না ।
ভাই যখন এতকরে বলছেন তখন তো আর ভাইয়ের কথার উপর কথা বলা যায় না । হাজার হলেও তিনি তো ইউসুপের পিতা । তাছাড়া আল্লাহর একজন পেয়ারা নবী । হযরত ইয়াকুব নবী [আ:]।
সবদিক চিন্তা করে ইউসুপকে পিতার সাথে দেবার জন্য রাজি হলেন বটে তবে মনে মনে বুদ্ধি করতে লাগলেন কিভাবে শিশু ইউসুপকে আটকানো যায় ।
অবশেষে বুদ্ধি একটা পেলেন বটে তবে কুটবুদ্ধি । ইউসুপকে ওর পিতার সাথে দেবার জন্য সুন্দর করে সাজিয়ে দিলেন ফুফু । হযরত ইয়াকুব [আ:] পুত্র ইউসুপকে নিয়ে রওয়ানা দিলেন ।
ওনারা ফুফুর বাড়ির সীমানার মধ্যে থাকতেই অন্দর মহল থেকে ফুফুর বিলাপ শুনতে পেলেন ।
ওরা পিতা-পুত্র আবার পিছনে ফিরে এসে জিঙ্গেস করলেন কি হয়েছে....?
ফুফু জানালেন পিতা ইসহাক [আ:] এর দেয়া সেই মূল্যবান হাসুলীটি পাওয়া যাচ্ছে না । ইয়াকুব [আ:] বললেন - বলেন কি ? এটা হচ্ছে আমাদের বংশের বরকত ও ঐতিহ্য যা বংশের বড় জনের কাছে থাকে
তাহলে পুরো বাড়ী খোজ করার পর বাড়ীর প্রত্যেক মানুষকেও চেক করা হউক ।
সমস্ত বাড়ী খুজে না পেয়ে এবার আলাদা আলাদা ভাবে প্রত্যেককে চেক করা হল । তল্লাশী থেকে হযরত ইয়াকুব [আ:]ও বাদ গেলেন না ।
এখন বাকী রইল শুধু ইউসুপ ....... ।
অবশেষে ইউসুপের জামার ভিতর লুকানো অবস্থায় ঐ হাসুলী পাওয়া গেল । আর যায় কোথায় ! চুরি যাওয়া মাল ইউসুপের কাছে পাওয়া যাবার সাথে সাথে হযরত ইব্রাহীম [আ:] এর শরীয়ত অনুযায়ী (চোর!) ইউসুপ ফুফুর গোলাম হয়ে গেল ।
অবশেষে বাধ্য হয়ে পুত্র ইউসুপকে আবারো ফুফুর কাছে রেখে যেতেই হল পিতা হযরত ইয়াকুব [আ:] কে ।
এভাবে ফুফু মহব্বতের জোশে আপন ভ্রাতুস্পুত্রকে চোর সাব্যস্ত করে গোলাম বানিয়ে নিজের কাছে স্থায়ী ভাবে রাখার অধিকার পেলেন ।
[ প্রায় একই পদ্ধতিতে হযরত ইউসুপ [আ:] আপন ভ্রাতাকে নিজের কাছে রাখার জন্য(মিথ্যা) 'চোর' সাব্যস্ত করেছিলেন ।
এভাবে দশ সৎ ভাইয়ের কাছ থেকে আপন ভ্রাতা বিন ইয়ামিনকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন । এ ঘঠনা অবশ্য বর্তমান ঘঠনার ৪০ বছরেরও পরে সংঘঠিত হয়েছিল, সেটা নিয়ে আরেকটি গল্প আমি লিখেছি পড়তে চাইলে ক্লিক করতে পারেন [url href="http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/2668/rashic/48562" target="_blank"]হযরত ইউসুপ [আ:] আপন ভাই কে নিজের কাছে রাখার জন্য (মিথ্যা) 'চোর' সাব্যস্ত করলেন.....[/url] ।]
যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ফুফুর স্নেহ, আদর, মহব্বতই জয়ী হল ।
পরবর্তীতে ফুফু যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন শিশু ইউসুপ ফুফুর কাছেই ছিল ।
এই হচ্ছে ফুফুর মহব্বত ।
আমার মনে হয় মা-বাবার পর পৃথিবীতে যাদের স্নেহ-মমতা-ভালবাসা হৃদয় স্পর্শ করে তা হচ্ছে ফুফু ও বোনের ভালবাসা ।
একপক্ষ বাবার বোন অপর পক্ষ নিজের বোন ।
ভাই এবং ভ্রাতুস্পুত্রের জন্য এদের ত্যাগ এবং ভালবাসায় কোন খাঁদ নেই বলেই আমি মনে করি ।
আজকে যেহেতু ফুফুর মহব্বত নিয়ে লিখতে বসেছি তাই বোনের ভালবাসা নিয়ে আরেক দিন লিখব যদি আল্লাহ তৌফিক দেন ।
আমার দাদার বহু বিবাহের সুবাধে মাশা'আল্লাহ আমার ফুফুর সংখ্যা ছয় জন। সেখান থেকে ছোটকাল থেকেই দুইটা ফুফুর বাড়ি একটু বেশীই যেতাম ।
দাদীর হাতের লাঠি হওয়ার কারনে শীত পিঠা, পুকুরের মাছ, মৌসুমী নাস্তা ইত্যাদি নিয়ে দাদী আমাকে দিয়েই বেয়ারারের কাজটা সারতেন ।
কোন সময় দাদীর সাথে আবার কোন সময় একা একা যেতে হতো ।
ফুফু এবং ফুফুর মেয়েরা অর্থাৎ আমার ফুফাতো বোনেরা যখন আমাকে পেত তখন ওদের সে কি আনন্দ ।
ফুফু বুকের সাথে এত বেশী সময় লাগিয়ে রাখতো যে আমার দম বন্ধ হবার উপক্রম হত ।
ফুফাতো বোনেরা যেন হাতে চাঁদ পেতেন । ওদের এত মায়া এত মমতা এত ভালবাসা তা বর্ননা করার যোগ্যতা এখন ও আমার হয়নি । মহান আল্লাহর এক অপূর্ব নিয়ামত ছিল ওদের ভালবাসা ।
ফুফুদের ভালবাসা মহব্বতের বর্ননা দেওয়ার মত ভাষা আমার
জানা নেই
জানা নেই
জানা নেই..............
মানুষকে ভালবাসার জন্য আল্লাহ পাক ওদেরকে অতিরিক্ত কিছু দিয়েছেন ।
শুধু আমার প্রতি ছিল না, সকল মেহমানের প্রতি ওরা খুবই যত্ন বান ছিল এবং এখনও আছে ।
যদিও আমার ঐ ফুফু থেকে একটি ফুফু ইন্তেকাল করেছেন এবং আজকে দোয়া করছি আল্লাহ পাক যেন উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান বানিয়ে নেন ।
যখন ফুফুর বাড়িতে যেতাম আমার ফুফাতো বোনেরা যারা আমার বড়, সমবয়সী এবং ছোট সবাই যদি সম্ভব হতো নিজ নিজ কলিজাটাই যেন আমাকে প্রেজেনটেশান দিতো । আসলে আমার মত ওদের ভাই ছিল না । ভাই গুলো ছিল সকলের ছোট ।
এত ভালবাসা এত মহব্বত, এত মায়ামমতা মানুষের থাকতে পারে তা আমার ফুফু এবং ফুফাতো বোন এবং ছোট ছোট ফুফাতো ভাইদের না দেখলে আইডিয়া করাই সম্ভব নয় ।
কোরআনের সূরা ইউসুপের ৭৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা পড়তে গিয়ে যখন হযরত ইউসুপ [আ:] এর ফুফুর ঘঠনা পেলাম তখন আমার নিজের ফুফুর কথাও মনে পড়ে গেল ।
একবার হল কি আমি মনেমনে শফৎ নিলাম ফুফুর বাড়ীতে আর কোনদিন যাব না । কেন যাবনা শুনবেন ? কারন হচ্ছে ফুফুর ঐ অতিরিক্ত মহব্বত !
দুই ঘন্টার জন্য ফুফুর বাড়ীতে বেড়াতে গেলে একদিন একদিন করে সাতদিন পর্যন্ত রেখে দিত ।
হায়রে ফুফু..........
ফুফুর মহব্বত নিশ্চয় নিশ্চয় আল্লাহ পাকের এক বিরল নিয়ামত ।
.......................................................
সূত্র : [আল কোরানের সূরা ইউসুপের ৭৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা পড়তে গিয়ে উক্ত ঘঠণা বেরিয়ে এসেছে । হযরত ইউসুপ আ: এর ঘঠনা টি তফসীরে ইবনে কাছির এর দ্বাদশ খন্ডের ২১০/২১১ পৃষ্টা দ্রষ্টব্য.. এবং তফসীরে মারেফুল কোরানের ৬৮৩ পৃষ্টায় বর্নিত আছে ।]
লেখাটি ইতিপূর্বে এসবি ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল এবং আমার লেখা ছোট্ট বই ‘আসমানী মেসেজ’ এও স্থান পেয়েছে ।
#
প্রাসঙ্গক আরেকটি পোষ্ট: আমি একটি মেসেজ পেয়েছি...
বিষয়: বিবিধ
১৭০৩ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হযরত ইউসুপ আঃ যে আপন বৈমাত্রেয় দশ ভ্রাতাকে চালাকী করে চোর বানিয়ে নিজের ভাই ইয়ামিনকে কৌশলে নিজের কাছে রেখেছিলেন এসব তো কোরআনেই উল্লেখ আছে । ধন্যবাদ আপনাকে ।
বলছিনা আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট রাইট ।
আমার গলদ থাকতেই পারে । আর থাকাটাও স্বাভাবিক । আমি চাই তা উঠে আসুক ।
আপনাকে আমি ভুল বুঝিনি । পরামর্শ চেয়েছি । আবার ধন্যবাদ আপনাকে ।
মূল ঘটনা তে মনে হয় কোন সমস্যা নাই।
ফুপুরাও আদর করে তবে খালারা আরো বেশী করে ।
বর্ণিত ঘঠণাটি লিংকে ঢুকে ২১০/২১১ পৃষ্টা চার্জ দিলে পাবেন ।
http://ia600700.us.archive.org/2/items/TafsirIbnKasir-0412thPart/TafsirIbnKasir12thPart.pdf
মন্তব্য করতে লগইন করুন