কর্ণফুলী নদীতে সাম্পান ভ্রমণ- এক মজার অভিজ্ঞতা (ছবিব্লগ)
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২৬ নভেম্বর, ২০১৪, ০২:৪৮:৪৪ দুপুর
কয়েকদিন আগে কর্ণফুলী নদীতে এমন কয়েকজন গুণিজনের সাথে হাঁসের মত ভেসে বেড়িয়েছি যাদের সাথে আমার কোন আত্মীয়ের সম্পর্কতো নেই এমন কি স্কুল-কলেজ জীবনেও কখনও কেউ কারো বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলাম না । শুধু মাত্র নেট, ব্লগ, ফেসবুকের পরিচিতিই আমাদেরকে একসূত্রে একত্রিত করতে সহযোগিতা করেছিল ।
এখানে আমাদের সাথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, পেশাজীবি, চাকরীজীবি, ব্যবসায়ী ।
ফিরিঙ্গীবাজার ব্রীজঘাটা থেকে ঘন্টা হিসেবে ইঞ্জিনের সাম্পান ভাড়া করে আমরা কর্ণফুলীতে ভেসেছি । তৃতীয় কর্ণফুলী ব্রীজের নীচ দিয়ে উজান গিয়েছি প্রায়দেড় ঘন্টা পর্যন্ত । আসরের নামাজ পড়ে সাম্পানে চড়ে মাগরিবের নামাজ সাম্পানেই আদায় করল সবাই । কর্ণফুলী ব্রীজের প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার উজানে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হচ্ছে যার উদ্যোক্তা হচ্ছে এনার্জিপ্যাক ও কনফিডেন্স সিমেন্ট যৌথভাবে । ঐ ঘাটে নেমে আমরা সবাই চা-কেক খেলাম । আসার সময় মাঝিকে বললাম ইঞ্জিন ষ্টার্ট দেওয়ার দরকার নেই । আমরা পূর্ণিমার চন্দ্র’র আলোতে গল্প করে করে আবার ঘাটে চলে আসলাম । কত আনন্দ যে পেয়েছি তা বর্ণনা করার ভাষা আমার জানানেই । অল্প টাকা খরছে প্রচুর বিনোদন নিয়েছি সবাই ।
ফ্যামেলী ট্যুুর
আমার এই নদী দর্শন’র খবরটি বাসায় জানার পর ছেলেমেয়ে সবার আব্দার হচ্ছে তাদেরকে নিয়েও কর্ণফুলীতে সাম্পানে চড়াতে হবে। আমি তো নদী সাগর বললে পাগল । ১ সপ্তাহ পর আবার ফ্যামেলী ট্যুর দিলাম কর্ণফুলী নদীতে ।
এবার কিন্তু উপরের দিকে যাইনি । গিয়েছি নীচের দিকে যেদিকে সারি সারি বন্দর বা জেটিগুলো আছে যেখানে বিদেশী জাহাজ থেকে পণ্যখালাশ করা হচ্ছে । এবার জোয়ার থাকায় ইঞ্জিন চালিয়ে স্রোতের বিপরীতেই যেতে হল । নদীর অপর পাড় ঘেষে সাম্পান যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখন দুই পাশের দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম লাগছিল । এস.আলম সিমেন্ট কারখানা, ডায়মন্ড সিমেন্ট কারখানা পার হয়ে আরো কিছু যাওয়ার পর দেখি ঠান্ডা হাওয়া লাগতে শুরু করেছে । অত:পর ইঞ্জিন বন্ধ করে ভেসে ভেসে ফিরে চললাম । মাঝিকে বললাম ফিরিঙ্গী বাজার না গিয়ে মাঝিরঘাটে সাম্পান ভিড়াও ।
১ঘন্টা ২০মিনিটের ভাড়া মাঝি ২৫০টাকা দিতে বললে আমরা ৩০০ টাকা দিলাম । সামান্য টাকার বিনিময়ে অসাধারণ মূহুর্তগুলো এনজয় করলাম স্ব-পরিবারে।
চট্টগ্রামে বিনোদনের জন্য পতেঙ্গা সী-বীচ, বিমান বন্দর, ফ’য়েস লেক, চিড়িয়া খানা, আগ্রাবাদ শিশুপার্ক, কাজির দেওরী শিশুপার্ক, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু, বহদ্দারহাট জিয়া স্মৃতি পার্কসহ আরো কয়েকটি জায়গায় বিনোদন নেয়া যায় । কিন্তু কর্ণফুলীতে পানিতে ভেসে ভেসেও যে বিনোদন নেয়া যায় এটা হয়তো অনেকে জানেন না । সমুদ্র বন্দরগুলো স্থল থেকে সাধারণ পাব্লিক দেখার কোন সুযোগ নেই । নদী থেকে অন্তত অবয়বটা আন্দাজ করা যায় যদিও জেটির দিকে সাধারন মানুষ যাওয়া নিষেধ ।
সাহসী পাবলিকগুলো যেন মিস না করেন এই সুযোগ ।
বিষয়: বিবিধ
১৫৭২ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/2668/rashic/44104
অনেক ভালো লাগলো ছবিগুলো।
শেফালি ঘোষ এর গানটি গাইলাম। কিংবা
ওগো ও কর্ণফূলি!
তুই নারি,তুই বুঝিবি না নদি পাষান নরের ক্লেশ,
নারি কাঁদে- তার সে আঁখি জলের আছে একদিন শেষ।
পাষান ফাটিয়া যদি কোনদিন জলের উৎস বহে,
সে জলের ধারা শাশ্বত হয়ে রহে রে চির-বিরহে!
নারির অশ্রু নয়নের শুধু; পুরুষের আঁখি-জল
বাহিরায় গ'লে অন্তর হতে অন্তরতম তল!
আকাশের মত তোমাদের চোখে সহসা বাদল নেমে'
রেীদ্রের তাত ফুটে ওঠে সখি নিমেষে সে মেঘ থেমে'!
(জাতিয় কবি কাজি নজরুল ইসলাম)
একটু ঢোল পিটাই!
এই কবিতাটি জাতিয় কবি কাজি নজরুল ইসলাম কর্নফুলির তিরে আমার এক মাতৃকুলের পূর্ব পুরুষের বাড়িতে বসে লিখেছিলেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন