আলোকিত মানুষ চাই- সারা বাংলাদেশে
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ১৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:৩৭:২৫ বিকাল
আমার মনমগজে যেটা আসন গেঁড়ে বসেছে তা হচ্ছে সামাজিক সেবাখাত সমূহের মধ্যে শিক্ষাখাত কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া । আমার কেন জানি মনে হয় অভাবীকে একটি মাছ না দিয়ে একটি জাল দিলে যেমন সে প্রতিদিনের জন্য একটি ভরসা স্থল খুজে পায় । আবার এক কেজি চাল না দিয়ে একটি কুড়াল দিলে যেমন সে খেটেখুটে পরিশ্রম করে চলার পথ বের করে নিতে পারে । তেমনি একটি জাতিকে উন্নতির উচ্চতর সোপানে আরোহণ করাতে চাইলেও সে জাতিকে উচ্চশিক্ষার নিশ্চিত গ্যারান্টির ব্যবস্থা করতে হবে ।
আর সে ব্যবস্থা আমাদেরকেই করতে হবে । করতে হবে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে । আমাদের আশপাশের অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী মাঝপথে পড়ালেখা বন্ধ করে দিচ্ছে । এমনও আছে টেষ্ট পরীক্ষায় ভাল পাশ করার পরও শুধুমাত্র ফরম ফিলাবের টাকার অভাবে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেনা ।
যেখানে একজন ধনীর ছেলে স্কুল ছুটির পর বন্ধুদের নিয়ে রেষ্টুরেন্টে বসে ৩/৪ শত টাকা বিল দেয় সেখানে ঐ ছেলেটিরই গ্রামে অপর একটি ছেলে ২০০ টাকা পরীক্ষার ফিস দিতে না পারার কারণে জীবনের জন্য পড়ালেখা বন্ধ করে দেয় । অতচ শহরের ছেলেটির চেয়ে গ্রামের ছেলেটির মেধা অনেক ভাল ছিল ।
একই চালের নীচে একদিকে ধনী লোক বাস করে আরেক দিকে গরীব লোক বাস করে । ধনী লোকটি বছরে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ টাকা জাকাত আদায় করে কিন্তু পাশের গরীব ঘরের ছেলেটি ২০০ টাকার অভাবে স্কুলের মাস্টারের কাছে প্রাইভেট পড়তে পারে না । রক্তের সম্পর্ক হলেও এটাকে স্বজ্ঞানেই এড়িয়ে যাওয়া হয় । এটা এক কঠিণ বাস্তবতা ।
আমার আজকের আবেদন এই আপনার কাছে, আমার লেখাটি যে পড়ছেন তার কাছে । আপনি তো মাসে অনেক টাকা খরছ করেন, আপনার এলাকার, আপনার প্রতিবেশীর, আপনার আত্বীয়-স্বজনের সন্তানেরা যারা লেখাপড়া করছে কখনও কি তাদের খোজ-খবর নিয়েছেন ? ছাত্রজীবনে অভাব থাকলেও লজ্বার কারনে বাইরের কাউকে বলাটা সম্ভব হয়ে উঠেনা । আপনাদেরকেই গায়েপড়ে জিঙ্গেস করে জেনে নিতে হবে ।
একটি ছেলে বা মেয়ে বাড়িতে নিজে নিজে ইংরেজি পড়াটি বুঝতে পারেনা, অংকটি বুঝতে পারেনা । প্রাইভেট ও পড়তে পারেনা আবার টিউটরও নেই, ফলে ঐ ছেলেমেয়ের কাছে পড়ালেখা দূর্বোধ্য মনে হওয়াই স্বাভাবিক । এভাবে ওরা পরীক্ষায় ফেল করে এবং পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে একসময় পড়ালেখা বন্ধই করে দেয় ।
যদি সে ঐ অংক-ইংরেজী গুলো বুঝতো তাহলে তার কাছে পড়ালেখা ভাল লাগতো এবং সে নিজে নিজেই আগ্রহ সহকারে পড়ালেখায় নিজেকে বিলিয়ে দিত । সেখানেই আমাদের উচিত তাদের পাশে দাড়ানো । বিত্তবানেরা যদি প্রতিজনে ৪/৫জন অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নেই তাহলে কি দেশে মেধার শূন্যতা পূর্ণ হবেনা ?
আমি কিছু কিছু শুরু করেছি । আপনাদের পরামর্শ নিয়ে গত মার্চমাসে আমি সফল ভাবে সম্পন্ন করেছি বিনোদনের সাথে মানবতা ।
ভিন্ন স্বাদের সৈকত ভ্রমন, বিনোদনের সাথে মানবতা
এবার আমি আমারই গ্রামে শুরু করেছি আমার স্বপ্নের সিড়িঁ দিয়ে কতটুকু উঠা যায় তার কসরত ।
আমার পরিকল্পনা এলাকার কিছু উদ্যোমী তরুণ, যুবক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবি আমার আহবানে সাড়া দিলে আমি মন উজাড় করে কাজে নেমে পড়ি । প্রথম বারের মত টার্গেট করেছিলাম শুধু আমার ওয়ার্ডটাকে । আমার ওয়ার্ডেই ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, ২টি মাদ্রাসা ও ৩টি স্কুল । প্রথমে ঐ স্কুলগুলোতে গিয়ে আবেদন ফরম দিয়ে আসি ।
শিক্ষকদের বলা হয়েছে অপেক্ষাকৃত অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তানদেরকে অগ্রাধিকার দেবার জন্য । এটাও বলা হল যে জমাকৃত আবেদন থেকে আমরা আবার বাচাই করে আমাদের সাধ্যমত যতজনকে পারি ততজন নেব । প্রায় ৪০০ মত আবেদন জমা পড়ল । এদিকে আমাদের এলাকার বিত্তবানদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে আমার অফিসে এগুলো প্যাকেট তৈরীর কাজ অব্যাহত থাকল । আমাদের প্রদেয় শিক্ষাসামগ্রী কিন্তু অবহেলা করার মতনয় । আমরা ছাত্রছাত্রীদেরকে যা দিয়েছি তা হচ্ছে- চার্জলাইট(১৭ভাল্ব বিশিষ্ট), ডিকশনারী, জ্যামিতি বক্স, সাজেশান গাইড, পেন্সিলবক্স, খাতা, কলম, পেন্সিল, স্কেল, রাবার, সাফনার, সুইসুতা (বইখাতাসেলার), ফাইল ইত্যাদি । এখানে শ্রেণী ভেদে আইটেমের পার্থক্য রাখা হয়েছে, যেমন শুধুমাত্র ৭ম আর ৮ম শ্রেণীকে জ্যামিতি বক্স দেয়া হয়েছে । সেজন্য তাদেরকে আলাদাভাবে পেন্সিল বক্স, রাবার, সাফনার,স্কেল ইত্যাদি দেয়া হয়নি । আবার নবম শ্রেণীকে ২০১৬ সালের পুরো একসেট প্রীতি প্রকাশনীর সাজেশান গাইড় দেয়া হয়েছে । সাজেশান গাইড অনেক দামী বিদায় ৫জন ছাত্রছাত্রীকে ১৩টি গাইড ভাগ করে দিয়েছি । আবেদন ফরমে দেয়া মোবাইল নং এ কথা বলে আগেই জেনে নিয়েছি যে নবম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীরা এখনও সাজেশান গাইড কেউ কিনেনি । অতচ এই গাইড প্রায় ৭মাস আগে বেরিয়েছে । এভাবেই ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখায় পিছিয়ে থেকে যাচ্ছে । দশম শ্রেণীকে চার্জ লাইট খাতা কলমের সাথে বাংলা একাডেমির বড় ডিকশনারী দিয়েছি ।
ইতিমধ্যে ফাকে ফাকে মেহমান দাওয়াতের কাজও সেরে ফেলেছি ।
সিদ্ধান্ত হল ৭ই অক্টোবর’১৪ইং মঙ্গলবার আমরা প্রোগ্রাম করবো । কোরবানের কয়েকদিন আগেই সব নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেলাম । আমাদের অনুষ্ঠান নিয়ে এলাকায়ও একটি উৎফুল্ল আমেজ বিরাজ করছিল । ঈদের জামায়াতে এলাকার সব মসজিদে বলে দেয়া হল পরদিন অনুষ্ঠানে যাতে সবাই গিয়ে এলাকায় কিভাবে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বাড়ানো যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য ।
৭তারিখ সকাল ৯টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হল আমাদের অনুষ্ঠান ।
আমার প্রোগ্রামটি ইতিমধ্যে আমিরাবাদের একটি সামাজিক সংগঠন তাদের এলাকায় বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । আর আমাদের প্রিয় ব্লগার সিটিজি:বিডি জামাল ভাইয়ের এলাকা ফটিকছড়িতেও আমার ফর্মূলাসমূহ নিয়ে গেছেন । আমি চাই সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক এই আন্দোলন । গ্রাম পল্লী মহল্লা থেকে ঝরে পড়া মেধাগুলোকে খুজে বের করে যদি পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়া যায় তাহলে দেশটা ভরে যাবে আলোকিত মানুষের পদভারে ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৪১ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকেও ধন্যবাদ ।
অাল্লাহ তাঅালা অাপনাকে দুনিয়ায় ও অাখেরাতে উত্তম জাযা দান করুন।অামিন
আমার ভাল লেগেছে - মানবতার পাশে বিনোদন। এটা স্লোগান হতে পারে।।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ, দেরীতে জবাব দিলাম বলে ক্ষমা করবেন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন