আজ আমার বাবার মৃত্যু দিবস, হে আল্লাহ তুমি আমার বাবাকে ক্ষমা কর..
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ১৫ আগস্ট, ২০১৪, ১০:৪৩:৫১ সকাল
সেদিন ছিল খুব সম্ভব রবিবার । ১৫ ই আগষ্ট ১৯৯৩ ইং ।
সকাল থেকে সারা বাংলাদেশে অর্ধদিবস হরতাল ছিল বলে চট্টগ্রাম শহর থেকে কোন বড় ডাক্তার আসতে পারেনি ফৌজদার হাট আইডি হাসপাতালে । ডিউটি ডাক্তার যারা ছিল তারা সাধ্যমত বাবার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিল । বাবার খুব কষ্ট হচ্ছিল ।
হরতাল ছিল বিরুধীদল আওয়ামিলীগের ডাকে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী হিসেবে ঐ দিনকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষনার দাবী নিয়ে তারা অর্ধদিবস হরতাল আহবান করেছিল ।
আমার বাবাকে তার আগের দিন শনিবারে ঐ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম । বাবার পায়ে পেরেক বিদ্ধ হওয়ার কারনে শরীরে খিচুনী এসে গিয়েছিল । মাথা পিছনের দিকে বাকা হয়ে ধনুকের মত হয়ে গিয়েছিল । জিহ্বা দু’পাটি দাঁতের মাঝে কাঁমড় খেয়ে রক্ত আসছিল । কথা বলতে পারছিল না । সমস্ত শরীর দিয়ে ঘাম বেরুচ্ছিলো । আমি আর আম্মা সাথে ছিলাম । বড় ভাই গত কাল ভর্তি করিয়ে দিয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছিল ।
সারা রাত আমি বাবার পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাত পাকা নিয়ে বাতাস করে যাচ্ছিলাম । আমাকে বাবা অনেক করে ইশারায় বলেছিল রাতে ঘুমাবার জন্য । আমার কষ্ট হচ্ছিল বলে বাবা কাদছিল । আমার বাবা খুব সহজ সরল একজন মানুষ ছিলেন । দিনরাত মুখে হাসি লেগেই থাকতো । আমাদেরকে খুব বেশী আদর করতেন । আজকে বাবার কথা লিখতে গিয়ে দু’চোখ ভিজে যাচ্ছে- বাবা , তুমি আজ কোথায় আছো ? কেমন আছো ? তোমার ছেলেমেয়েদের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারা জীবন যে কষ্ট তুমি করেছো - তা যে কোনদিনে ভুলতে পারিনি । দুখের সময় কষ্ট করে করে ঝরে গেলে আজ সুখের সময় তুমি কাছে নেই । তোমাকে যে বড় বেশী মিস করি বাবা !!
আজকে যখন নিজেই বাবা তখন তোমার কষ্টগুলো বুঝতে আমার কো্নই কষ্ট হচ্ছে না বাবা ।
আমার বাবা সারারাত যখন কষ্ট পাচ্ছিল তখন বাবাকে শান্তনা দিয়ে রাখছিলাম সকালে শহর থেকে ডাক্তার আসলে আরো ইনজেকশান দিলে অশান্তি চলে যাবে ।
আগেরদিন বিকালে ১৪টা অথবা ১৯টার মত ইনজেকশান মারা হয়েছিলো বাবাকে । টিটেনাস ।
১৫ই আগষ্ট সকালে ডাক্তার আসতে না পারায় বাবা আরো অশান্তি করছিলো । ঢাকা থেকে রাতে আমার ছোট ভাই এসেছে শহরে, সে ও হরতালের কারনে হাসপাতালে আসতে পারছেনা । চট্টগ্রাম শহর থেকে ফৌজদারহাট ১০/১৫ কিলোমিটারতো হবে ।
বেলা তখন একটা বেজে গেছে, জুহুরের আজান হয়েছে একটু আগে । বাবার অন্য রকম অশান্তি এসেছে দেখে আমি বাবার কানে কানে কলেমা পড়ে শুনালাম ।
বেলা ১.১৫ টার দিকে বাবার শরীরটা নড়াচড়া বন্ধ করে দিল ।
হরতালের পরে শহর থেকে ঢাকাগামী গাড়ীগুলো আসতে শুরু করেছে ।
অর্ধদিবস হরতাল শেষ করে বাবা কিয়ামত পর্যন্ত ধর্মঘটের ডাক দিয়ে চলে গেলেন মালিকের কাছে (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাই রাজিউন) ।
[ রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছাগিরা ।]
আমার মা বুঝতে পেরে মেঝেতে মাথা টুকে টুকে কাঁন্না করছিল ।
আমি নির্বাক, নিথর হয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে রাস্তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকলাম । দেখি বড় রাস্তা থেকে যে মেটো পথ হাসপাতাল পর্যন্ত এসেছে সে পথ দিয়ে আমার ছোট ভাই, যে গত রাত ঢাকা থেকে এসে শহরে ছিল সে আস্তে আস্তে আসতেছে ।
আমার ভাইকে দেখে আমার বাধভাঙ্গা জোয়ার আর ধরে রাখতে পারিনি ।
কারন আমার এই ভাইটিকে একটিবার দেখার জন্য বাবা গতরাত অনেক কেঁদেছিল ।
হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রিয় বাবাকে ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করো । আমীন ।
বিষয়: বিবিধ
৪৪৫৪ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
ধন্যবাদ, আপনাকে ।
আপনাকে ধন্যবাদ
আপনাকেও মহান আল্লাহ পরিবারসহ দুনিয়া এবং আখিরাতের মহা কল্যান দান করুক !!!
আর আপনার পরিবারকে ও আপনাকে দুনিয়া এবং আখিরাতের মহা কল্যান দান করুক। আমীন।
আপনাকেও মহান আল্লাহ পরিবারসহ দুনিয়া এবং আখিরাতের মহা কল্যান দান করুক !!!
আপনার আব্বা আম্মার প্রতিও আল্লাহ রহম করুন ।
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আল্লাহ আপনার পিতাকে ক্ষমা করুক ! তার কবরের শাস্তি মাফ করুক ! তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুক !! আপনাকে এবং পরিবারকে দুনিয়া এবং আখিরাতের মহা কল্যান দান করুক !!! আমিন!
আল্লাহ আপনার প্রতিও রহম করুন
আল্লাহ আপনার আব্বাজানকে জান্নাত নসিব করুন।
আমার আব্বাও কবরবাসী, উনার জন্যও দোআ করবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন