চট্টগ্রাম থেকে নদী পথে সাগর পাড়ি দিয়ে কুতুবদিয়া মহেশখালী এবং কক্সবাজার ভ্রমন
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ১৪ মে, ২০১৪, ০৬:০৪:৫৭ সন্ধ্যা
শীতের আর মাত্র একদিন বাকী । এরপরই আসছে এদেশের চির উজ্জল কোকিলের কুহু কুহু ডাক এবং দকিনা বাতাসের মোহময় পরিবেশ সৃষ্টিকারী রীতুর রাজা বসন্ত ।
অবশ্য বেশ কয়েক দিন থেকে দক্ষিন দিক থেকে বাতাস বইতে শুরু করেছে । আম গাছে মূকুল দেখা যাচ্ছে, কূলের প্রায় শেষ সময় ।
প্রকৃতির এই যে প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঠিক তখনই বের হলাম জীবনের প্রথম বারের মত একটি দ্বীপে পা রাখার উদ্দেশ্যে ।
১৯৮৯ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারী, শনিবার । সকালে প্রাইভেট হোস্টেলে লেখাপড়া করে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে তৈরী হয়ে থাকলাম । বিকালে কথা মত যথা সময়ে বাড়ী থেকে সবাই এসে হাজির । হোষ্টেল থেকে আমাদের বাড়ী দুই কিলোমিটারের কিছু কম হবে ।
বিকালে সবাই কোষ্টারে করে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসলাম ।
প্রথমেই গেলাম চাক্তাই ওমর আলী মার্কেট । কারন আগামী কালের লঞ্চের সময় সূচী জেনে নেয়া দরকার । দ্বীপে গেলে তো সাগর পাড়ি দিয়ে যেতে হবে। আর সাগর পাড়ি দিতে হলে লঞ্চের সময় জানা দরকার । আমরা জানলাম সকালেই সব লঞ্চ একসাথে চলে যায়, সারাদিন আর কোন লঞ্চ থাকে না ।
আমরা বদরপাতি আকতার ভাইয়ের কাছে চলে আসলাম । আকতার ভাই হচ্ছে- আমাদের সঙ্গি মুহসিনের বড় ভাই । রাতে আমরা আকতার ভাইয়ের বাসায় কাটিয়ে দিলাম ।
ভোর ছটার আগেই আমরা লঞ্চ ঘাটে গিয়ে হাজির । দেখি পাশাপাশি দুটি লঞ্চ দাড়িয়ে আছে । দুটি লঞ্চের একই নাম - 'শাহী দরবার কুতুবদিয়া' ।
হ্যাঁ, আমাদের গন্তব্যস্থান হচ্ছে- কুতুবদিয়া । গত কয়েক বছর থেকে যাব যাব করে ও যাওয়া হয়নি । সর্বশেষ আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল কলেজে নির্বাচনী পরীক্ষার পরে যাব । গত ৮ ই ফেব্রুয়ারী আমাদের পরীক্ষা শেষ হয়েছে । তাই এই ভ্রমনে বের হওয়া ।
ফেরার সময় কোন পথে আসবো এখনো ঠিক করিনি । কেউ বলছে বাশঁখালী হয়ে আসবো আবার কেউ বলছে ফিরতি পথে চট্টগ্রাম চলে আসবো । তবে আমার ইচ্ছা ছিল সমুদ্র পথে কক্সবাজার পর্যন্ত যাওয়া ।
যাই হোক , ওমর আলী মার্কেট ঘাট থেকে সকাল ছয়টা পঞ্চান্ন মিনিটে আমাদের লঞ্চ ঘাট ত্যাগ করলো ।
প্রথমে পিছনে গিয়ে তার পর বামে ঘুরে সামনে চলতে আরম্ভ করলো লঞ্চ । কর্নফুলীর এখানে সেখানে সব দেশী বিদেশী জাহাজ দাড়িয়ে আছে । উপরে পত পত করে উড়ছে রং বেরঙের পতাকা ।
তাই আমাদের লঞ্চকে খুব সাবধানে চলতে হচ্ছে যাতে বড় জাহাজের সাথে ধাক্কা না লাগে ।
ওয়াল্ড থেসিস, কোজিয়া, স্টল্ট এক্সপোর্টার , বেঙ্গল প্রসেস , ব্লু ওসেন-১, হাইয়াংসান, বাংলার কাকন, বাংলার বানী ইত্যাদি অনেক জাহাজ বড় বড় দালানের আকারে দাড়িয়ে আছে চলন্ত পানির মাঝে ।
আমরা বসেছিলাম চলন্ত লঞ্চের ছাদের উপর যেখান থেকে উভয় পাশই দেখা যায় ।
এক পাশে আনোয়ারা সার কারখানার ও মেরিন একাডেমী এলাকা ।
অন্য পাশে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর এর বিভিন্ন জেটি, যেগুলোতে সারি সারি জাহাজ দাড়িয়ে আছে মাল খালাসের অপেক্ষায় । কোন কোনটাতে বিদেশী লোক দেখা যাচ্ছে ।
জাহাজ ছাড়াও এদিকে সেদিকে শত শত মাছের বোট দাড়িয়ে আছে । সাম্পানতো অগণিত । সব কিছু মিলিয়ে অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে ।
কিছুক্ষন চলার পরই দক্ষিনা হাওয়া গায়ে লাগতে শুরু করেছে । বহিরনোঙ্গরে ও অনেকগুলো জাহাজ দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেল ।
সবাই শীতের কাপড় বাহির করে গায়ে দিচ্ছে । কলিমকে বললাম- তুমি আমার বেটসিটটা গায়ে দাও । আমার গায়ে অবশ্য আগে থেকেই জেকেট ও ক্যাপ ছিল ।
১৫ নং জেটিতে উভয় পার্শ্ব থেকে সাম্পানের সাহায্যে লোক তুলা হল ।
লঞ্চ যখন বাহির দরিয়া অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করল তখন সকাল সাতটা পঞ্চাশ মিনিট । কর্ণফুলীর মোহনা ত্যাগ করে কিছুদুর যাওয়ার পরেই সামুদ্রিক ঢেউ আরম্ভ হল ।
লঞ্চ তীর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দুরত্ব বজায় রেখে দক্ষিন দিকে ছুটে চলেছে ।
তিন দিকেই পানি , পানি আর পানি । বাম পাশে আনোয়ারা-বাশঁখালী ।
আমরা চারিদিকে এমন উতসুক্য দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলাম যেন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কোন প্রবাসীকে খুজে ফিরছি শত শত মানুষের ভিড় থেকে । পানিকে দু'ভাগ করে লঞ্চ এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে । দু'দিকেই লবণাক্ত পানির ফাঁনা সৃষ্টি হচ্ছে । পিছনে সাগরের পানিতে লঞ্চ চলার ফলে একটা রোড তৈরী হয়ে যাচ্ছে ।
ইঞ্ছিনের একটানা ঘড় ঘড় আওয়াজ আর লবণাক্ত পানির সিঁনসিঁনানী এক মোহময় ছন্দের পরিবেশ তৈরী করেছে ।
আমাদের পিছনে পিছনে আরো চার টি লঞ্চ এগিয়ে আসছে । তার মধ্যে দু'টি যাত্রী বাহী ও দুটি মাছের বোট । যাত্রীবাহী দুটির একটি কুতুবদিয়া ও অপরটি মহেশখাঁলীর কালাইরমার ছড়া যাবে ।
আমরা লঞ্চের ছাদের উপর প্রায় ২৫/৩০ জন যাত্রী । নীচে বেশীল ভাগই মহিলা ।
আমার সঙ্গিরা সবাই আলাপ করছে আর কথার মিল না হলেই ঝগড়া করছে । ওদের ঝগড়া আমাকে পর পর মিমাংশা করে দিতে হচ্ছে । এক সময় গনির বিরুদ্ধে মোহসিন নালিশ এনে বলল- গনিকে নিষেধ কর , না হয় আমি এখন সমুদ্রে ঝাঁপ দেব .... এই দিচ্ছি ঝাঁপ , আমাকে তাড়াতাড়ী ধর বলছি ... । আমি তাড়াতাড়ী মোহসিনকে ধরে ফেলায় সে ঝাঁপ দিল না । সমগ্র জল পথটাই ছিল এমনি কৌতুকপূর্ন ।
আমি একটা বই পড়ছিলাম । আমার এই এক রোগ । কোথাইও সফরে বের হলে বই হতে হবে সফর সঙ্গি । এবার ও আমার ব্যক্তিগত পাঠাগার থেকে সাত-আটটি ছোট ছোট বই এনেছি ।
লঞ্চের পিছন দিকে প্রশ্রাবের ব্যবস্থা রয়েছে । একটা ছোট বালতি রশি দিয়ে বাধা । লঞ্চের সাথে সংশ্লিষ্ট এরকম একজন লোক পান-সিগারেট বিক্রি করছে । সাথে করে কলামুড়ি ও বিক্রি করছে । দাম সামান্য বেশী হলেও যাত্রী ভাইয়েরা প্রয়োজন মত ক্রয় করছে । লঞ্চের উপর অন্য একজন লোক লঞ্চের চৌয়াল ধরে বসে আছে । সে যেদিকে ফিরাবে লঞ্চ সেদিকেই যাবে । আর এমন একটি রশি দিয়ে নীচে ইঞ্ছিন চালককে সংকেত দিচ্ছে যে রশির অপর মাথা একটি ক্রিং বেলের সাথে বাধা রয়েছে । এই কলিং বেলের আদেশ অনুসারেই লঞ্চ কমবেশী চলবে । বলতে গেলে উপরের চৌয়াল ধরা ব্যক্তিই আসল চালক বা নাবিক । আর নীচের লোকটি কলের পুতুল মাত্র ।
আমি বই পড়ছি আর মাঝে মাঝে মানচিত্রের বই খুলে কুতুবদিয়ার অবস্থান দেখছি ।
আরো কিছুক্ষন চলার পর লঞ্চ সাগরকে ডানে রেখে একটি প্রনালীর ভিতর ঢুকে পড়ল । প্রনালীর পশ্চিম পাশে কুতুবদিয়া আর পূর্ব পাশে চকরিয়া উপজেলা ।
আরো কিছু যাওয়ার পর লঞ্চ একটি ঘাটে ভিড়ল । এখন ভাটা , তাই লঞ্চ বেশী কাছে ভিড়তে পারেনি । তাছাড়া চট্টগ্রামের মত অত সুবিধার ব্যবস্থা নেই । দেখলাম কিছু উপরে কাঁদার মাঝ থেকে বেশ কয়েকজন পেশাদারী লোক একটি সাম্পান টেনে আর ঠেলে নীচের দিকে নামিয়ে আনছে । সাম্পানের মাঝে মানুষ ভর্তি । সাম্পানটি লঞ্চের কাছাকাছি আসলে লঞ্চ থেকে সিঁড়ি নামিয়ে দেয়া হল । নীচের লোক উপরে এবং উপরের লোক যারা নামবে তারা নীচে সাম্পানে নেমে গেল । তারপর লঞ্চ সিঁড়ি গুটিয়ে নিয়ে সামান্য পিছনে টেনে মুখে সামনের দিকে ঘুরিয়ে নিল । আর নীচের সাম্পানটি নতুন লোক গুলিকে নিয়ে পানি থেকে আবার ঠেলতে ঠেলতে উপরে তুলতে লাগল ।
আমাদের লঞ্চকে আর বেশীদুর যেতে হলো না । কিছুদুর গিয়েই আমাদের ষ্টেশান অর্থাৎ লঞ্চের আখেরী ঘাট । গোনাগরী ঘাট, দরবার ঘাট নামে ও পরিচিত । এখানে ও পূর্বের নিয়মে সাম্পান নিয়ে লঞ্চ থেকে লোকগুলোকে তুলে দিচ্ছে শুকনায় ।
আমরা কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে সাম্পান ছাড়াই নেমে পড়লাম পানিতে । নীচে হাটু অবধি পানি । আমার প্যান্টের নীচের দিকে সামান্য ভিজে গেল আর তাই দেখে আবদুল গনিই হেসেই খুন ! আমরা ঝপাৎ ঝপাৎ করে তীরের দিকে এগিয়ে চললাম । কাঁদা ছিল মহব্বতের আঠার মত । পানি থেকে প্রায় ত্রিশ গজের মত কাঁদা পেরুতে আমাদেরকে " পিঠে বোঁঝা মরুভূমি পাড়ি দেওয়া পরিশ্রান্ত বেদুইন " এর মত লাগছিল ।
আমাদের পায়ের রেডিমেট কাঁদা বিদেশী মৌজার মত মনে হচ্ছে ।
তীরে আসার পর একটা ছেলে বলল- দেখি প্রতিজনে একটি করে টাকা বের করেন । আমি বললাম আবার টাকা কিসের ?
ঘাটের টাকা - ছেলেটি বলল । ছেলেটি আরো বলল- এই ঘাট একলক্ষ ছয় হাজার টাকা দিয়ে ডাকা হয়েছে । সাম্পান করে উঠলে দুই টাকা করে দিতে হত ।
মুহসিন বলল - ধর ধর , একটি করে টাকা নিয়ে নেয় , লাখ টাকার গরম দেখালে ভয় লাগে ।
সামনেই লবনের মাঠ , লবন তৈরী হচ্ছে ।
তারপর উপজেলা পানিরোধক বাধ তথা বড় রাস্তা । বাঁধের উপর কয়েকটা দোকান । আমরা পায়ের জুতা হাতে নিয়ে দোকানের সামনে দিয়ে বাঁধের অপর পাশে একটা পুকুর থেকে ভাল করে পা ধুয়ে নিলাম । পুকুরের পাশ দিয়ে একটা কাঁচা রাস্তা পশ্চিম দিকে চলে গেছে ।
রাস্তার উপর বেশ কয়েকটি রিক্সা দাড়িয়ে - দরবার , দরবার করে যাত্রী ডাকছে ।
কলিম একজন রিক্সাওয়ালাকে জিঙ্গেস করল - দরবার কত ?
রিক্সাওয়ালা বলল- একজন আট টাকা । মোহসিন বলল- ওরে বাব্বা..... আট টাকা দিয়ে রিক্সায় চড়লে আমার আম্মু বকবে , না হয় চড়তাম ।
আমি বললাম - লঞ্চে বসতে বসতে কোমর ব্যথা ধরে গেছে , কিছুটা হাটা দরকার । ততক্ষনে সকলের পা ধুয়া হয়ে গেছে । জুতা মৌজা পড়ে সবাই পশ্চিম দিকে হাটা দিলাম । সামনের দিকে হাটার সময় বুঝার উপায় নাই যে একটি দ্বীপের মধ্যে আমরা হেটে বেড়াচ্ছি যার চারিদিকে সাগর । মনে হচ্ছে যেন - সাতকানিয়ার কোন গ্রাম্য এলাকায় হাটছি । দুই পাশে মুক্ত ধানী জমিন , মধ্যখানে রাস্তা । তবে এখানে ও লবণ তৈরীর মাঠ আছে ।
নতুন জায়গা , নতুন পরিবেশ , নতুনত্বের সমাহারে কখন যে চার কিলোমিটার পথ পার হয়ে গেলাম খেয়াল করিনি । আমরা কুতুবদিয়া দরবার শরীফ পৌছে গেলাম ।
দরবারের আদব মোতাবেক আমরা জুতা , বেগ ইত্যাদি ষ্টোর বিভাগে জমা দিয়ে টুকেন নিলাম । পুকুরে সুন্দর ব্যবস্থা আছে , সবাই গোসল সেরে নিলাম । দরবারে সবাই কানাকানি করছিল চট্টগ্রাম থেকে বিশেষ কেউ এসেছে । বৈঠক খানায় গিয়ে দেখি চট্টগ্রামের পৌর প্রশাসক মাহমুদুল ইসলাম এমপি এসেছেন স্ব-স্ত্রীক ।
দরবারের সকলে জুহুরের নামাজ পড়া শেষ হলে সামনের বড় লম্বা উঠানে লম্বা দস্তরখান দিয়ে সবাইকে দুপুরের খানার ব্যবস্থা করা হল । খুব সুন্দর সুশৃঙ্খল ভাবে সব কিছু সম্পন্ন হচ্ছে দেখে খুব ভাল লাগল । আমরা দ্বীপটা ঘুরে দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়লাম ।
বিকালে বেরিয়ে পড়লাম । সিদ্ধান্ত নিলাম প্রথমেই দেখবো ঐতিহ্যবাহী কুতুবদিয়ার বাতিঘর । যাবার সময় আরো দুজন দরবারী ভাইকে সঙ্গি হিসাবে পাওয়া গেল ।
কুতুবদিয়া শাহী দরবার থেকে প্রায় তিন মাইলের মত পশ্চিমে কুতুবদিয়া বাতিঘর । পাকা দেওয়ালে ঘেরা । প্রধান গেইটে সাইন বোর্ডে লেখা আছে "সাধারনের প্রবেশ নিষেধ " । বাতিঘর থেকে প্রায় দুশোগজ পশ্চিমে সমুদ্র সৈকত ।
সৈকতে দাড়িয়ে সবাই চারিদিকে উদার দৃষ্টিতে থাকিয়ে মন ভরে নি:শ্বাস নিলাম । অনেকক্ষন ধরে হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম । উত্তর দিকে প্রায় একমাইল মত দুরে প্রায় একশত ফিট মত পানির মাঝে একটা আধ ভাঙ্গা পুরানো পাকা মিনার দেখা গেল, অনেকটা ইংরেজ আমলের মঠ এর মত দেখতে । বুঝলাম ওটাই পুরোনো বাতিঘর । যেটা ছাত্র জীবনে কোন একটা সিনেমাতে দেখেছিলাম ।
একসময় নাকি দ্বীপটা সাগরের দিকে আরো প্রসারিত ছিল এবং পুরনো বাতিঘর ছিল দ্বীপের উপরেই । এখন যদিও বাতিঘর ঠিক আগের জায়গায় আছে কিন্তু সমুদ্র দেবীর ভাঙ্গনের ফলে দ্বীপটা নিজেকে সংকোচিত করে ফেলায় পুরনো বাতি ঘর এখন হাটু অবধি পানির মাঝে পরিত্যক্ত অবস্থায় ভেসে আসা জঞ্ছালের মত কাত হয়ে কাবু হয়ে আছে ।
আমরা সমুদ্রের তীর দিয়ে হেটে হেটে পুরনো বাতিঘর পর্যন্ত গেলাম এবং এক বুড়ির বাগান থেকে দুটি তরমুজ কিনে সবাই মিলে চরে বসে এগুলো খেলাম ।
ফেরার সময় ভিন্ন পথে ধুরং বাজার, কুতুবদিয়া উপজেলা সদর সহ দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে যায় । অনেক দুর পথ বলে পথ কমাবার জন্য খোলা জমিন দিয়ে আসতে গিয়ে পথ হারিয়ে অনেক দুর পর্যন্ত ভিন্ন দিকে চলে গিয়েছিলাম ।
আমরা দরবারে ফিরে এসে সেখানে রাত কাটালাম । খাবার এবং শোবার খুব সুন্দর আয়োজন । আমাদের প্রত্যেককে একটি করে বালিশ আর কম্বল দেয়া হল । ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে নাস্তা সেরে দরবার থেকে বলা হল যারা চলে যেতে চাই তারা চলে যেতে পারবে ।
আমরা ষ্টোর বিভাগ থেকে টোকেন দিয়ে আমাদের জিনিস পাতি নিয়ে নতুন অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম । যদিও কুতুবদিয়ায় আমাদের দু'দিন থাকার ইচ্ছা ছিল কিন্তু একদিনেই দ্বীপটির প্রায় দেখা হওয়াই আমরা বিদায় নিলাম ।
আজ ভোর থেকেই প্রচুর কোয়াশা পড়ছিল । কোয়াশার আবছা আবরনে আচ্ছাদিত রেখে দরবার থেকে আমরা হেটে হেটে ঘাঠে গিয়ে পৌছলাম । ওখানে জনাব মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী কে চলে যেতে দেখলাম । উনাকে কুতুবদিয়া থানার ওসি ও অন্যান্য কর্মকর্তারা বিদায় জানাতে এসেছেন । তিনি একটি স্পীড বোট নিয়ে চলে যাবার পর চট্টগ্রাম থেকে আরেকটি স্পীড বোট ঘাটে এসে উনার খোজ নিচ্ছিল, সেখানে ও কয়েকজন অফিসার ছিল । কোয়াশা এত গভীর ছিল য়ে স্পীড বোট গুলো পরস্পরকে দেখেনি । খুব সম্ভব মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী তখন চট্টগ্রাম সিটি কর্রোরেশান মেয়র ছিলেন । প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেব ও বেশ কয়েকবার কুতুবদিয়ার দরবারে এসেছেন বলে শুনেছি।
এবার আমরা কক্সবাজার গামী একটি লঞ্চে উঠে নতুন পথের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম ।
লঞ্চ পূর্ব পাড়ে ঘোনাঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে দক্ষিন দিকে চলতে লাগলো । কিছুদুর যাওয়ার পর কুতুবদিয়ার প্রান্ত সীমানা । তারপরে প্রণালী দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে । একটা দক্ষিন পশ্চিম দিকে গিয়ে বঙ্গোপসাগরের সাথে কোলাকোলী করেছে ।
অপর শাখা দক্ষিন পূর্ব দিকে চলে গেছে । ডানে কুতুবদিয়া, সামনে ডওয়াখালী এবং বামে উজানঠিয়া । আমাদের লঞ্চ বামে উজানটিয়ার দিকে ঢুকে পড়ল । উজান টিয়ার পানি সত্যিই উজান যাচ্ছিল । শুনেছিলাম কোন এক আল্লাহর ওলির নির্দেশে এই প্রনালীর পানি উজান চলতে শুরু করেছিল । তবে পানি ভিন্ন পথে সাগরেই যাচ্ছে ।
আমাদের লঞ্চ ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হেলে দুলে এগিয়ে যাচ্ছে আর আমরা উভয় পাশের সুন্দর দৃশ্যাবলী উপভোগ করে যাচ্ছিলাম । দু'দিকেই গ্রাম, মধ্যখানে প্রণালী ।
এবারো আমরা প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য লঞ্চের উপরেই বসেছি। এই এলাকার লোকেরা অধিকাংশই মৎস জীবি ।
এরা বেশীর ভাগই জলপথে যাতায়াত করে । মাতামুহুরী নদী এই প্রণালীতে এসে পড়েছে ।
বদর খালীর কাছাকাছি যখন আসি তখন মনে পড়ে প্রায় এক বছর আগের আমার সাইকেল ভ্রমনের কিছু কথা, কিছু স্মৃতি । গত বছর রমজানের সময় আমি সাইকেল নিয়ে সাতকানিয়া থেকে চকরিয়া হয়ে এই বদরখালী পর্যন্ত এসেছিলাম । সে আরেক মজার কাহিনী, তা অন্য জায়গায় বলবো ।
বদর খালীর চার ষ্টেশন পরেই আমাদের নির্ধারিত আজকের এই লঞ্চে আমাদের শেষ ঘাট । আর্থাৎ নয়া হাট, জেম ঘাট, বানিয়া পাড়া, শাফলা পুর হয়ে গুরুব ঘাটা, মহেশখালী উপজেলা সদর ।
পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই দ্বীপেই আমরা পরবর্তী অবতরন করবো । বদরখালী হতে দক্ষিন দিকে প্রণালী আরো প্রসারিত হয়েছে । এখানকার মন ভোলানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুখে বা কলমে প্রকাশ করার মত ভাষা আমার ভান্ডারে জমা নেই । লঞ্চ প্রাণালীর পশ্চিম পাশ দিয়ে যাচ্ছিল ।
পূর্ব দিকে বহু দুরে তীর । তার পরেই চৌধুরী পাড়া । পশ্চিম পাশে সুউচ্চ পাহাড়, বন জঙ্গল । তীরে বুক সমান পানিতে এক ধরনের গাছ দৃশ্যের সৌন্দর্য বর্ধন করেছে।
কাকের চক্ষুর মত সচ্চ অতচ নীল পানির মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা সাদা বক । মনে হচ্ছে এখানে চিরদিন যদি থেকে যেতে পারতাম । মন চাই কলা গাছের ভেলা বানিয়ে বকদের সাথে সাঁতার কেটে কেটে মিতালী করি ।
লঞ্চের একটানা ঘড় ঘড় আওয়াজ এবং সেই সাথে দক্ষিনা বাতাসের সাথে যুদ্ধ করে করে হেলে দুলে এগিয়ে চলেছে আমাদের লঞ্চ ।
অবশেষে আমরা যখন মহেশখালী পৌছি তখন বিকাল সোয়া তিনটা । লঞ্চ থেকে সাম্পান যোগে আমরা তীরে গিয়ে উঠি । এখানে এখন জেটির কাজ চলছে , শত শত লোক নিয়োজিত আছে জেটি তৈরীর কাজে ।
মহেশখালীতে নেমে আমাদের প্রথম কাজ ছিল উদর মামাকে ঠান্ডা করা । সেই কখন সকাল বেলা নাস্তা করেছিলাম । মধুবন নামের হোটেলে ঢুকে পড়লাম । এখানে এত উন্নত মানের হোটেল আমরা আশা করিনি । হোটেলে ভাত আর চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম দ্বীপটা দেখার উদ্দেশ্যে ।
দুরে সুউচ্চ পাহাড়ের সারি দেখে সেই গানটির কথা মনে পড়ল ।
" ম হে শ . খা লী র . পা নে র . খি লি . তা রে . বা না ই . খা ও য়া ই তা ম ......"
আমরা মহেশখালীর প্রধান সড়ক হয়ে উপজেলা আদালত ভবন, বড় দিঘী, কলেজ রোড হয়ে নারিকেল গাছ ঘেরা উপজেলা পরিষদ ভবন, সরকারী স্টাপ কোয়ার্টার হয়ে আবার বাজারের ভিতর দিয়ে পূব দিকে নদীর কুল ঘেষে 'ওমেক্স ফিসারিজ লিমিটেড' নামের বরফ কলের পাশ দিয়ে আরো উত্তর দিকে গেলাম । ওদিকে খৃস্টান পাড়ার মেয়েরা কাল সূতা দিয়ে কি সব তৈরী করছে । এরপর দেখলাম দক্ষ কারিগরেরা তৈরী করছে বড় বড় লঞ্চ ।
কয়েকটি লঞ্চ তৈরীর কাজ শেষ পর্যায়ে , আরো তিনটি নতুন ভাবে তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে ।
ফিরতি পথে খৃস্টান পাড়ার এক সুন্দরী যুবতী আমাদেরকে জিঙ্গেস করল - টুপি নিবি ?
আমরা কিছু বুঝতে না পেরে হতবম্ভ হয়ে থাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন । পরে জানতে পারলাম ওরা এক ধরনের পানিয় তৈরী করে বিক্রি করে । সেই সাথে নাকি আরো কিছু চাইলেও পাওয়া যায় । আমরা আর দেরী না করে ঘাটে চলে আসলাম । আর তর সহ্য হচ্ছিল না, কখন মাঝ সাগর থেকে সূর্য্য অস্ত দেখব এই চিন্তায় সবাই বিভোর ছিলাম । অবশেষে আমরা সাম্পান যোগে কক্সবাজারের লঞ্চে গিয়ে উঠলাম ।
তিন ঘন্টার দ্বীপ মহেশখালীকে বিদায় জানিয়ে আমাদের যাত্রীবাহী লঞ্চ আবার দক্ষিন দিকে সাগরের পানে ছুটতে শুরু করলো । সামান্য গিয়েই সাগরের মোহনা, মহেশখালী প্রনালী বঙ্গোপসাগরের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে ।
সমুদ্রের সাথে প্রনালীর কি চমতকার মিলন । যেন দুই সহূদর - আপনহারা ব্যথা নিয়ে পরস্পরকে আলিঙ্গন করছে । বড় বড় ঢেউগুলো যেন তাদের চোঁখের অশ্রূ বিন্দু ।
আমরা ঢেউয়ের সাথে হেলে দুলে নেচে নেচে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি ।
আমাদের ডান পাশে মহেশখালীর বিস্তৃর্ন চর অঞ্চল, পেছনে ফেলে আসা লম্বা চওড়া প্রণালী, বামে বহুদুরে কক্সবাজার এবং সামনে সু-বিশাল বঙ্গোপসাগর । তরঙ্গায়িত সাগরের ঢেউয়ের দানবীয় হুংকার, অবাধ্য বাতাসের সোঁ সোঁ আওয়াজ এবং লঞ্চের একটানা কান ফাঁটা চিৎকার - তাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ শক্তির ঘোষনা দিচ্ছিল ।
ঢেউ বলছে - আমি সর্বগ্রাসী !!
বাতাস বলছে- আমি প্রলয়ংকারী এবং উভয়ের সম্মিলিত শক্তির যৌথ ইশতেহারের ঘোষনা হচ্ছে-লঞ্চকে কোন মতেই সামনে যেতে দেবনা ...!!
সেই রুষে লঞ্চমামু কানফাটা চিৎকার দিয়ে বলছে- দেখ হারামী সাগর কন্যা, আমি সামনে এগিয়ে যেতে পারি কিনা . ।
এরই মাঝে আমরা যাত্রী সাধারন বিশেষ করে যারা পর্যটক আছি তারা সবাই হাড় কাপানো শীতে চারিদিকে যে দৃশ্য উপভোগ করে যাচ্ছিলাম তা কোন দিন মনের দৃশ্যপট থেকে মুছে যাবে বলে মনে হয়না । বুকের বোতাম খুলে দুহাত প্রসারিত করে সাগরের এই মিলন মেলায় নিজেকে বিলিন করে একাকার হয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল , আহা ... আমাদের প্রিয় দেশটা এত সুন্দর . . এত সুন্দর...
তখন ও সূর্য মামা অস্ত যায়নি । সবে লালি মারতে শুরু করেছে । ঠান্ডা শিরশিরে বাতাসে রঙ্গিন কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশটা যেন স্বপ্নপুরী বলে মনে হচ্ছিল । আমার মনে হচ্ছিল আমার যদি বারটা চোঁখ থাকত তাহলে আমি অষ্ট মোকাম ভাল করে তৃপ্তি সহকারে দেখতে পারতাম ।
সমুদ্র আজ বেশ গরম । মোচড়ে মোচড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ঢেউ আসছে । তাই হয়তো জেলেরা বেশী দুর যায়নি । লঞ্চ থেকে দেখা যাচ্ছে মহেশখালী অঞ্চলের দক্ষিন পাশে তীরের খুব কাছেই ছোট ছোট নৌকা নিয়ে জাল ফেলে মাছ ধরছে পেশাদার জেলেরা ।
কোয়াশা সূর্যকে বেশ কিছু উপরে থাকতেই গ্রাস করে ফেলল । তাই শেষ দৃশ্যটা অনেকটা ট্রাজেডী নাটকের মত করুন মনে হল আমার কাছে ।
অবশেষে আমরা স্বপ্নের রাজধানী , সুন্দরী মানস কন্যা , সৈকতের শহর কক্সবাজারে পৌছে গেলাম । কক্সবাজার পৌছে প্রথমেই মাথা গুজার ঠাই করে নিলাম । সারাদিন অনেক দখল গেছে । রাতটা ভাল করে ঘুমাতে না পারলে কালকে সৈকতে মজা করতে পারবো না ।
হোটেল রাচি নামে মাঝারী মানের একটি হোটেলের দুটি রুম ভাড়া নিলাম । খাওয়া পর্বটা সেরে এসে এবার দেব লম্বা ঘুম ।
কিন্তু শান্তিতে ঘুম যাব কেমনে । চির চঞ্চল আমাদের সাথী মুহসিন, গনি, সৈয়দুল আলম, জসিম ওরা পরস্পরকে কাতুকুতু দেবার মতই হাসি ঠাট্টায় মশগুল । আমরা হোটেলের ২১ নং ও ২২ পাশাপাশি দুটি রুম নিয়েছি । প্রথম রুমে কলি, জসিম আর গনি এবং পরের রুমে মুহসিন, ছৈয়দুল আলম আর আমি ।
বেশী হাসাহাসি আর দুষ্টুমি করছে বলে জসিম আপত্তি জানালে সে রুমে ছৈয়দুল আলমকে দিয়ে আমার রুমে গনিকে নিয়ে আসলাম । দুষ্টুমি কিছুটা কমলেও একেবারে বন্ধ হয়নি, ঘুমের মাঝে ও মুখে হাত দিয়ে হাসতেছে ।
আমি ছোট কাল থেকেই একটু রাশভারী টাইপের লোক । খুবই কম হাসতাম, হাসি তামাশা আড্ডা আমার ভাল লাগতো না । প্রায় সময় চিন্তাশীল মনমরা হয়ে থাকতাম । আমার ভাইয়ের এমনকি আমার বড় ভাই পর্যন্ত হাসহাসি করার সময় মাঝে মাঝে আমার মুখের দিকে থাকাতেন । যদি দেখতেন যে আমি একটু হেসেছি তখন ওরা হেসে গড়াগড়ী যেতেন । আমার মনে হতো আমরা হাসাহাসি করার জন্য দুনিয়ায় আসিনি ....
ভোরে উঠেই সবাই তৈরী হয়ে সৈকতে চলে গেলাম । ততক্ষনে সৈকতে জমজমাট উপস্থিতি । অনেকে মজা করে সাগরে গোসল করছে ।
অনেক নব দম্পতি এবং বিভিন্ন ধরনের ছেলেমেয়ের সমাবেশ ঘঠেছে দক্ষিন এশিয়ার শ্রেষ্ট এই সুন্দরতম সৈকতে ।
কক্সবাজার এবারই আমাদের প্রথম আসা নয় কিন্তু কক্সবাজার এমন একটি জায়গা যেখানে শতবার আসলে ও তৃপ্তি মিটবে না ।
আমরাও সাগরে গোসল করলাম , ইচ্ছেমত আনন্দ করলাম ।
আমাদের এই আকর্ষনীয় ভ্রমনে আমাদের একটাই দু:খ যে আমরা সাথে ক্যামেরা আনিনি । আমরা সাগরের পানিতে দৌড়াদৌড়ী , লাফালাফি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একসময় বোর্ডিং এ ফিরে আসলাম । আসতে আসতে আমি বললাম - কতদিন হল বাড়ী থেকে বেরিয়েছি , ঘুরে ফিরে শুধু গ্রামের কথা মনে পড়ছে । আজকেই বাড়ী চলে যেতে হবে ।
মুহসিন বলল- আহা, বাহার ভাইয়ের কথা শুন , যেন ছত্রিশ বছর আগে বিশ্ব ভ্রমনে বেরিয়েছিলাম । আমরা হোটেলে এসে পরিস্কার পানি দিয়ে আবারো গোসল করে নিলাম ।
সবাই নাস্তা করে এবার ইয়ার পোর্টের দিকে গেলাম , ঝাউবাগান ঘুরে আবারো মূল সৈকত লাবনী পয়েন্টে চলে গেলাম ।
এবার ভদ্র লোকের মত পরিস্কার মন , সুস্থ শরীর নিয়ে সাগরের নির্মল বাতাসে ফুসফুস ভরে শ্বাস নিলাম ।
এই বাতাস কত স্বচ্ছ , কত নির্মল , কত পবিত্র । জীবন সায়াণ্হে পরাজীত সৈনিক কে এই জীবনু মুক্ত বাতাস নতুন জীবন দিতে পারে । আমরা আস্তে আস্তে বিদায়ের প্রস্তুতি নিলাম দুপুরে খানা খাওয়ার পরেই প্রিয় সাগর সুন্দরী কক্সবাজারকে বিদায় জানালাম ।
সন্ধ্যা নাগাদ আমরা গ্রামে পৌছে গেলাম ।
গ্রামে ঢুকেই পরিচিত একটা গন্ধ্যা পেলাম । আরে ! নিজ গ্রামের আবার গন্ধ আছে নাকি ? আগে জানতাম নাতো ...
এত দুরে এতগুলো গ্রাম ঘুরলাম কৈ এই গন্ধ তো কোথাও পেলাম না । মায়ের আচলের গন্ধ আছে এটা জানতাম । আচলের ভিতর লুকালেই গন্ধটা পেতাম । কত স্নেহ মাখা আদর সোহাগে পরিপূর্ন সেই গন্ধ । আহারে মা ...দুখিনী মা ... মায়ের সেই আচলের গন্ধ কতই না মধুর ছিল ।
মায়ের আচলের গন্ধ , নিজ গ্রামের মাটির গন্ধ এসব মিলেই তো দেশ মাতৃকার সাথে আমাদের নাড়ীর টান । এই টান সব চেয়ে বেশী উপলদ্ধি করতে পারে দেশ ছেড়ে যারা প্রবাস জীবন যাপন করছেন তারা । সবাইকে সাথে থাকার জন্য শুভেচ্ছা ।
আমার আরো কয়েকটি ভ্রমন কাহিনী
সাগর.... একটি লোমহর্ষক সমুদ্র অভিযান
সৈকত ভ্রমন হোক ... বিনোদনের সাথে মানবতা
শাহ্ পরীর দ্বীপ !! বাংলাদেশের প্রান্ত সীমানায় শেষ কদম
কালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ভ্রমন
বিষয়: বিবিধ
৪৬৫০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে সব চেয়ে সুন্দর অংশটা হলো কর্নফুলির ভ্রমনটা।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য ।
আহ পড়ে মনে হলো এই লেখা যদি না শেষ হতো তাহলে কি যে মজা হতো... হৃদয়ের ভিতর থেকে লেখা। অশেষ ধন্যবাদ
রিক্সাওয়ালা বলল- একজন আট টাকা । মোহসিন বলল- ওরে বাব্বা..... আট টাকা দিয়ে রিক্সায় চড়লে আমার আম্মু বকবে , না হয় চড়তাম ।
ভাল লাগল । পিলাচ
মন্তব্য করতে লগইন করুন